সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
আমলা রুইয়া। নামটির সঙ্গে নিশ্চয়ই পূর্বপরিচিতি নেই। না থাকাটাই খুব স্বাভাবিক, কেননা এইসব মানুষেরা নীরবে, নিভৃতে নিরলসভাবে কাজ করেতেই পছন্দ করেন। কখনও কখনও এই কাজের পরিসীমা নিজের একান্ত পরিচিত গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, আবার কখনও কখনও অন্তরের আহ্বান এমন প্রবলভাবে সমস্ত চেতনাকে উজ্জীবিত করে যে ঘর, চেনা পরিসরের পরিচিতি ছাড়িয়ে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে, ঘরের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে ছুটে যান দূরে। আমলা রুইয়াও হলেন এমনি একজন মানুষ যিনি সুখী গৃহকোণের নিরাপদ আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে ছুটে গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যের মানুষের মাঝে, তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সামিল হতে।
আমলা রুইয়ার কর্মকাণ্ডের কথা শুনতে হলে আমাদের আজ থেকে আড়াই দশক কাল পেছনে ফিরতে হবে। ১৯৯৯-২০০০ সাল। ভারতের পশ্চিম প্রান্তীয় রাজ্য রাজস্থান অনাবৃষ্টির কারণে প্রবল খরা পরিস্থিতির সম্মুখীন। অবশ্য ভারতের মতো এক সুবিশাল দেশে খরা আর ঝরা দুই সহোদরার মতো সারাবছরই এখানে ওখানে দাপিয়ে বেড়ায়। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?
মুম্বাইয়ের মালাবার হিলসের নিশ্চিন্ত আবাসে থেকে আমলাও হয়তো চুপচাপ শুয়ে বসে এমনটাই ভাবতে পারতেন। কিন্তু না। তাহলে যে তাঁকে নিয়ে, তাঁর আশ্চর্য কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন কাহিনি তৈরি করা সম্ভব হত না।
সংবাদপত্রের পাতায় এবং দূরদর্শনের পর্দায় খরাপীড়িত মানুষজনের দুঃখ, দুর্দশার করুণ অবস্থার কথা পড়ে আর ঝলক দেখে তিনি তৎক্ষণাৎ রাজস্থান যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই মরুরাজ্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ পারিবারিক সূত্রে। তিনি রাজস্থানের ভূমিপুত্রী। তাই চুপচাপ চোখ উল্টিয়ে বসে থাকাটা হয়তো তাঁর পক্ষে মোটেই সম্ভব ছিল না। ওই রাজ্যে একাধিক সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই যুক্ত তাঁর পরিবার। তাই রাজস্থানের এহেন খরা পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কিছু আপৎকালীন সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা প্রথম থেকেই করেছিলেন। আমলার পূজনীয় শ্বশ্রুপিতা দুর্গত মানুষদের কাছে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে পানীয় জল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন বটে, তবে তা যে কখনওই খরাজনিত পরিস্থিতির স্থায়ী টেকসই সমাধানের পথ নয় সেটা বুঝতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি আমলা দেবীর।
তাঁর রাজস্থান যাত্রার মূল উদ্দেশ্যই ছিল সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে বাস্তব পরিস্থিতিকে খতিয়ে দেখা এবং সেই অনুসারে কার্যকর স্থায়ী সমাধানসূত্র খুঁজে বের করা। কাজটা যে খুব সহজসাধ্য ছিল তেমন তো নয়। তবে আমলা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাননি। বিবাহসূত্রে রাজস্থানে তাঁর যে পারিবারিক পরিচিতি ছিল তাকেই একমাত্র পুঁজি করে কাজে নামেননি তিনি। নিজে কিছু করার একটা অন্তর্লীন তাগিদ তাঁকে যেন তাড়িয়ে ফিরছিল। আর হয়তো তাই মুম্বাই থেকে রওনা দেওয়ার সময় তিনি কয়েকজন অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন যাঁরা এই ধরনের প্রকল্প রূপায়ণের বিষয়ে দক্ষ, সড়গড়। যদিও, আমলা দেবীর মতে প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রস্তাবগুলো খুব কাজে আসেনি কেননা সেগুলো শুধু ব্যয়সাপেক্ষ ছিল তা নয়, সেগুলোকে অনেকটাই অসার, অবাস্তব বলে মনে হয়েছিল আমলার। এই পরিস্থিতিতে তিনি স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা বলেন যাদের ভাবনার মধ্যে সদর্থক সমাধানের আভাস ছিল।
রাজস্থানের অত্যন্ত খরাগ্রস্ত শেখাবতী জেলার রামগড় গ্রাম থেকে শুরু হল তাঁর জলাভিযান। প্রাথমিকভাবে এই গ্রামের অকার্যকর হয়ে পড়েছে এমন জলাধারগুলোকে সংস্কার করা হল। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমলা জানিয়েছেন,
“আমার জন্ম উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌতে হলেও পিতৃসূত্রে আমি রাজস্থানেরই মেয়ে। তাই ওই রাজ্যের বৃষ্টিহীন পরিস্থিতির কথা আমার অজানা ছিল না। তবে স্থানীয় স্তরে এই সমস্যা কতটা গভীর তা খতিয়ে দেখা খুব জরুরি ছিল, কেননা কিছু টাকাপয়সা বা অন্যান্য আপৎকালীন খয়রাতি সহায়তা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধান ছিল না। সেইদিক থেকে ভাবলে আমি এক অজানা ভূখণ্ডে, অজানা লক্ষ্য নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলাম।”
বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে যে-কোনও অঞ্চলের জলসমস্যা সমাধানের কাজে সবার আগে সেই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। আমলা ও তাঁর সহযোগীরা প্রথমেই রামগড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশেষ করে ভূমিঢালের চরিত্র নির্ণয়ের প্রয়াস করলেন। সুপ্রাচীন আরাবল্লী পর্বতের বিচ্ছিন্ন অংশগুলো টিলার আকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে রামগড়কে ঘিরে রেখেছে। মাঝখানে রামগড় গ্রাম, একটা বেসিনের মধ্যে তার অবস্থান। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে জানা গেল গ্রামের মানুষের একমাত্র জীবিকা কৃষি। বর্ষাকালে পাহাড়ের ঢালে গড়িয়ে পড়া জল এসে জমা হয় জমিতে, শুখা মাটি জলের স্পর্শে আর্দ্র হয়ে উঠলে লাঙল বলদ নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে গ্রামের লোকজন। জোয়ার, বাজরা, মকাই, তিলের মতো শুখা ফসলের চাষ করা হয় বছরে মাত্র একবার। বাকি সময় কষ্টেসৃষ্টে দিনাতিপাত। বর্ষার জলে ভিজে ওঠা রুখু মাটিতে হালকা সবুজ ঘাসের প্রলেপ পড়ে। তাকে কেন্দ্র করে চলে গবাদিপশু চারণ। স্থায়ী চারণভূমি নেই। সামান্য পানীয় জলের প্রয়োজনে বাড়ির মহিলারা পাড়ি জমান দূরের ইঁদারার সন্ধানে। এ-কাজে মায়ের সহযোগী হয় বাড়ির ছোট কন্যারা, যাদের জীবনে অন্য কোনও বিনোদনের অবকাশ মাত্র নেই। স্কুলে যাওয়ার কথা স্বপ্নাতীত। তাহলে উপায়?
বিস্তর আলাপ আলোচনার পর খরা পরিস্থিতির সদর্থক মোকাবেলায় ঢালবরাবর চেক ড্যাম বা আঁড় বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল। কেননা আমলার মনে হয়েছিল বাঁধের পিছনে বর্ষার জল ধরে রাখতে পারলে তা হয়তো সমস্যার সমাধানে যথার্থ উপায় হয়ে উঠবে। কিন্তু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যেও রয়েছে যোজন ব্যবধান। গ্রামবাসীদের কাছে যখন এমন ভাবনার কথা বলা হল তখন তাঁদের অনেকেই অসম্মতি প্রকাশ করে বেঁকে বসলেন। আমলা বুঝতে পারলেন যে এই ব্যাপারে অযথা হুড়োহুড়ি করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যাঁদের জন্য এই পরিকল্পনা, তাঁরা যতক্ষণ না সক্রিয়ভাবে প্রকল্পের সঙ্গে নিজেরা যুক্ত হচ্ছেন ততক্ষণ এই কাজে সাফল্য আসতে পারে না। শুরু হল নতুন করে পারস্পরিক সমঝোতার সেতুবন্ধনের কাজ। ভারতীয় গ্রামসমাজের রক্ষণশীল মানসিকতা চিনের প্রাচীরের মতোই দুর্লঙ্ঘ্য, তাকে জয় করা সহজসাধ্য নয়। আমলা হাল ছাড়েননি। গান্ধিবাদী মানসিকতায় ভরসা রেখেছিলেন তিনি। আর সেই অনমনীয় হার না মানা জীবনদর্শন তাঁকে সাফল্যের পথে চালিত করল একটু একটু করে। এই কঠিন লড়াইয়ে সবসময়ই তিনি পাশে পেয়েছেন তাঁর পরিবারকে, বিশেষ করে তাঁর স্বামী শ্রী অশোক রুইয়া, ছেলে অতুল এবং দুই মেয়ে শর্মিলা ও কবিতাকে। এঁদের সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতাই ছিল আমলার সবচেয়ে বড় পুঁজি। আবার কাজের কথায় ফিরি।
খুব বড় পরিসরে কাজ করতে হলে তার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় লোকবল ও অর্থবলের। রাজস্থানের মতো এক স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত খরাপ্রবণ রাজ্যে ঐতিহ্যগতভাবেই জল সঞ্চয় ও সংরক্ষিত রাখার নানান পদ্ধতি একসময় বহুল প্রচলিত ছিল। সেক্ষেত্রে চেক ড্যাম বা আঁড় বাঁধ কতটা ফলদায়ক হবে তা নিয়ে সন্দিহান ছিল কমবেশি সকলেই, বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা। আমলা এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য তৈরি করলেন আকর চ্যারিটিবেল ট্রাস্ট নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই ট্রাস্টের উদ্যোগেই সমস্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল। গ্রামের মানুষজন প্রথমে দ্বিধান্বিত থাকলেও ধীরে ধীরে তাঁরাও এই ট্রাস্টের সদস্যপদ গ্রহণ করতে এগিয়ে আসায় চেক ড্যাম তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়। ২০০৫ সালে আলোয়ার জেলার মান্দাওয়ারে প্রথম বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হল। গ্রামের মানুষজন প্রবল আগ্রহের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে চেক ড্যামের পেছনে ধরে রাখা জল সমস্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল খুশির স্রোতধারা হয়ে। আমলার স্বপ্ন ও শ্রম সফল হল। এই বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন প্রায় একশোজন মানুষ। তাঁরাও এই প্রকল্প রূপায়ণের সফল অংশীদার হয়ে উঠতে পারলেন। এক নিঃশব্দ বিপ্লব সংগঠিত হল রাজস্থানের মাটিতে সামান্য চেক্ ড্যাম বা আঁড় বাঁধের কল্যাণে।
সুধী পাঠকেরা নিশ্চয়ই জানতে চাইছেন চেক্ ড্যাম বা আঁড় বাঁধ কী? আমলাকে নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন এ-সম্পর্কে দু-এক কথা আলোচনা করে নিই।
চেক্ ড্যাম বা আঁড় বাঁধ হল ঢাল-বরাবর গড়িয়ে পড়া জলের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে জলের প্রবাহপথের আড়াআড়িভাবে তৈরি করা একটি ছোট অস্থায়ী বাঁধ। স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ উপকরণকে কাজে লাগিয়েই এমন বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নামতে গিয়ে জল বাধা পেলে জলের প্রবহন বেগ হ্রাস পায়, ফলে মাটির ক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, বেড়ে যায় জলের অনুস্রবনীয় প্রবাহ, বৃদ্ধি পায় মাটির আর্দ্রতা, বাড়ে মাটির জলধারণের ক্ষমতা। এত সব সুবিধার ফলে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় আশাতীতভাবে, যার দরুণ ওই অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবনে নেমে আসে সুখ ও সমৃদ্ধি। সরকারি সেচ বিভাগের উদ্যোগে এমন বাঁধ তৈরির বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজস্থানের মাটিতে সম্পূর্ণভাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে জলের জোগান বাড়ানোর এই প্রচেষ্টা ছিল অনবদ্য।
মান্দাওয়ারের প্রকল্পটির রূপায়ণে ৭০:৩০ শতাংশের আর্থিক ভাগীদারী কার্যকর ছিল। ট্রাস্ট মোট ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করলেও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গ্রামবাসীরা দায়িত্ব পালনে সমান মর্যাদা ও সম্মান পেয়েছেন। যে-কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এমন সহযোগী মনোভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাঁধ নির্মাণের জন্য গ্রামবাসীরা নির্মাণ উপকরণ যেমন পাথর, মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন তাঁদের ট্রাক্টর ও ছোট ঠেলাগাড়িতে করে। অন্যদিকে ট্রাস্টের তরফে সিমেন্ট ও এক-তৃতীয়াংশ মজুরির দায়ভার বহন করা হয়েছে। আমলা নিজে প্রকল্পের কাজে স্থানীয় মানুষদের যুক্ত করতে বিশেষ তৎপর ছিলেন আর তাই প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে তিনি সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন। এই সমস্ত বাঁধের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আজ গ্রামবাসীরা সাগ্রহে পালন করছেন ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায়। আমলা রুইয়ার নেতৃত্বে আকর ট্রাস্ট এখনও অবধি খরাপীড়িত রাজস্থানের ৩০০টিরও বেশি গ্রামের মানুষজনের কাছে সেচন কৃষির সুবিধা পৌঁছে দিয়েছেন। আগে শুখা মরশুম শুরু হলেই গ্রামের কর্মক্ষম যুবকদের অনেকে ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দিত। আজ জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার দৌলতে গ্রামে গ্রামে পর্যাপ্ত জল পৌঁছে গেছে। তাই তাঁদের আর অন্যত্র পাড়ি দিতে হয় না। তাঁদের যোগদানের ফলে গ্রামের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় জোয়ার এসেছে। শুখা ফসলের পরিবর্তে আর্দ্রতর ফসলের চাষ হচ্ছে সমগ্র এলাকা জুড়ে। একফসলি জমি আজ তিনফসলি জমিতে পরিণত হওয়ায় কৃষকদের আর্থিক আয় তিনগুণ বেড়ে গেছে। কেবল মানুষ নয়, পশুদের জন্য জলের সংস্থান করা সম্ভব হওয়ায় পশুপালনে আগ্রহ বেড়েছে। গ্রামের মহিলারা এখন দুধ থেকে ঘি, খোয়া, দই প্রস্তুত করে নিজেদের আয় বাড়াতে পারছেন। পাশাপাশি জল এনে দিয়েছে নারী স্বাবলম্বনের সুযোগ। জলের খোঁজে গ্রামের কিশোরী মেয়েরা আজ আর কলসি নিয়ে দূরের পথ পাড়ি দেয় না। বাড়ির পাশের কুয়োতেই মিলছে সম্বৎসরের পরিশুদ্ধ জল। আমলা দেবীর মনন ও মস্তিষ্কপ্রসূত চেক্ ড্যাম বা আঁড় বাঁধ প্রকল্প রাজস্থানের মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন এনেছে যার প্রচারে চটকদার বিজ্ঞাপনের কোনও প্রয়োজন হয় না। উপকৃত গ্রামীণ মানুষেরাই হলেন প্রকল্পের সফলতার সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞাপন। আমলা রুইয়ার নীরব কর্মকাণ্ডের সুবাদে বিপুলসংখ্যক গ্রামীণ মানুষের জীবন আজ অন্যখাতে বইছে। এর চেয়ে কাজের কথা, প্রশংসার কথা আর কীইবা হতে পারে?
পিপালান্ত্রির শ্যামসুন্দর পালিওয়াল, রাজস্থানের আমলা রুইয়ার কথা যখন পড়ি বা তাঁদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যখন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই তখন বেজায় বিহ্বল হয়ে পড়ি উন্নয়নের সংজ্ঞা ও স্বরূপ নিয়ে। ঢাকঢোল পিটিয়ে যে উন্নয়নের কথা বলা হয়, তা কখনওই টেকসই স্থায়ী লক্ষে মানুষকে পৌঁছে দেয় না। কোথাও যেন তা থমকে যায়। আমলার এই মহতী উদ্যোগের সফল রূপায়ণের পেছনে কোনও সরকারি অনুদানের গপ্পো নেই। আমলাকে অনেক অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তবে তিনি কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। স্থির চিত্তে তিনি সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করেছেন। পিপালান্ত্রির মতো আমলার আলোয়ারও যেন খরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর তাই রাজস্থানের সীমানা টপকে আমলা রুইয়ার চেক্ ড্যাম বা আঁড় বাঁধ প্রকল্প ছড়িয়ে পড়েছে মহারাষ্ট্র (১৬), বিহার (১), ওডিশা (১), বুন্দেলখণ্ড (২), হরিয়ানা (১) রাজ্যে। আকার ট্রাস্টের উদ্যোগে মোট ২৫০টি চেক্ ড্যাম এ পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে তার যার সিংহভাগই (২২৯) নির্মিত হয়েছে আমলার ‘হোম স্টেট’ রাজস্থানে, কেননা ভারতের এই বৃহত্তম রাজ্যে জলসঙ্কট গভীর।
আমলা দেবীর এই কাজ তাঁকে এনে দিয়েছে ‘Water Mother of India’ বা ‘ভারতের জলমাতা’র শিরোপা। একজন যোগ্য মানুষের মাথাতেই এই সম্মানের তাজ উঠেছে— তাতে আর সন্দেহ কী!!
অপূর্ব লেখা,
চোখের জল বাঁধ মানে না
লেখাটা সত্যিই ভালো খবর। নিজের জন্মভূমির প্রতি সবাই এমন দায়বদ্ধতা দেখালে দেশের চেহারা বিলকুল বদলে যায়। এই লেখা আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলে। এমন সত্যিকারের ভালোখবর নিয়মিত প্রকাশিত হোক।