জিনিসপত্রের এত দাম— খাওয়ার খরচ ইদানিং খুব বেড়ে গেছে

যমুনা বেরা

 


আয়টা কিছুটা বাড়লেও কোনও কোনও মাসের শেষে এর-ওর কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়। জিনিসপত্রের এত দাম যে পরিবারের খাওয়াদাওয়ার পেছনেই অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। খাওয়ার খরচ ইদানিং খুব বেড়ে গেছে

 

লোকের ইন্টারভিউ নেয়, সেসব শুধু টিভিতেই দেখেছি। আমার মতো সাধারণ মানুষের ইন্টারভিউ কেউ নেবে তা জন্মেও ভাবিনি। আমার বাড়ি হুগলি জেলার নান্দায়। আমার স্বামী মাঠে চাষ করেন। আমি কলকাতায় লোকের বাড়িতে কাজ করি। আমার মাসিক আয় ৮০০০ টাকা, আমার স্বামীর মাসিক আয় মোটামুটি ৫০০০ টাকা। আমাদের দুজনের আয়ের ওপর আমাদের সংসারের আরও পাঁচজন। আমার হাতে সারা বছর কাজ থাকে, কারণ আমি গৃহপরিচারিকার কাজ করি। আমার স্বামীর হাতে সারাবছর কাজ থাকে না, কারণ চাষের মরশুম আছে। ফলে আমাদের পরিবারের আয় প্রতিমাসে নির্দিষ্ট থাকে না। কমে যায়। এই সামান্য উপার্জনের ওপরে ভর করেই আমাদের সংসার চালাতে হয়।

আমি কিছু সরকারি সুবিধা পাই। যেমন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাধ্যমে মাসিক টাকা, ও রেশন কার্ডের মাধ্যমে কম পয়সায় চাল, আটা। এই দুটো সরকারি সাহায্য আমার খুব কাজে লাগে। এছাড়া আমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। রয়েছে রান্নার গ্যাসের সংযোগ। তবে রান্নার গ্যাসের দাম যা বেড়েছে, কুলোয় না। মাঝেমধ্যে কাঠকুটো জ্বালিয়ে রান্না করি।

আজ থেকে বছর দুই আগে আমার পরিবারের মাসিক আয় ছিল ৫০০০ টাকা। তখন আমার স্বামী একাই কাজ করত। আমি কাজ শুরু করার ফলে আয়টা বেড়েছে। খানিক স্বাচ্ছন্দ্যও বেড়েছে। তা সত্ত্বেও কোনও কোনও মাসের শেষে এর-ওর কাছ থেকে টাকা ধার করতে হয়। জিনিসপত্রের এত দাম যে পরিবারের খাওয়াদাওয়ার পেছনেই অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। খাওয়ার খরচ ইদানিং খুব বেড়ে গেছে। আমার দুই ছেলেমেয়ে। স্কুলে পড়ে। আমার ইচ্ছে ওরা পড়াশুনোটা যতদূর পারে করুক, সরকার যদি সাহায্য করে, তবে কলেজের পড়াটা চালিয়ে যেতে পারবে। নিজেদের টাকা দিয়ে কিছু পড়াতে পারব না। স্বাস্থ্যসাথীর মতো কলেজের পড়ানোর জন্য কোনও সরকারি আর্থিক প্রকল্প আছে কি?

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

আমি টিভিতে খবর দেখি। দেশ বা রাজ্য যেভাবে চলছে, তার ভালমন্দ তেমন বুঝি না। তবে সরকার আমাদের জন্য কিছু করলে ভাল লাগবে। আমাদের মেয়েদের জন্য যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার রয়েছে, তেমনিভাবে পুরুষমানুষদের জন্য কিছু করলে ভাল হত। চাষ থেকে আজকাল আর তেমন কিছু উপার্জন হয় না। তাছাড়া আমাদের গ্রামে খাওয়ার জলের খুব সমস্যা। যথেষ্ট টিউবওয়েল নেই। সরকার এই বিষয়ে কিছু ভাবলে ভাল লাগবে। আমি ভোট দেব। আমি চাই দেশে নতুন সরকার আসুক।

 


*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পায়েল চট্টোপাধ্যায়

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...