শুকদেব পুরকাইত
কাজকর্মের সুযোগ কমেছে। আমার হয়তো কাজ চলছে, কিন্তু করোনার পরে আমাদের এই বইপাড়ার অনেকেরই কাজ চলে গেছে। আগের মতো কাজের সুযোগ নেই। আমার নিজের সমস্যাও ওই কাজেরই সমস্যা। আমাদের এই প্রিন্টিং লাইনে ওরকম স্থায়ী মাইনে নেই। কাজের ওপর পয়সা। সেই কাজ যতটা থাকলে ভাল হত, সেরকম থাকে না
আমার বাড়ি মগরাহাটে। রোজ মগরাহাট থেকেই ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে এই কলেজস্ট্রিট বইপাড়ায় এসে কাজ করি। আসতে মোটামুটি ট্রেনে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট মতো লাগে। কাজ বলতে আমি ছাপাইকর্মী। একটা অফসেট প্রিন্টিং-এ কাজ করি। এই কাজ থেকে মোটামুটি মাসে ১২০০০ টাকা মতো আয় হয়। বারোমাসই কাজ থাকে।
বাড়িতে মা, বৌ আছে। এই তিনজনের পরিবারে সবাই আমার এই আয়ের ওপরেই নির্ভরশীল। আমার দুই মেয়ে। ওদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। বছর দুয়েক আগে আমার মাসে ১০০০০ টাকা মতো আয় হত। এখন আয় একটু বেড়েছে। মেয়েদের বিয়েও দিয়ে দিয়েছি। ফলে সংসারে লোক কমে গেছে। তাই সব মিলিয়ে বলা যায় অবস্থার একটু উন্নতি হয়েছে। ধারদেনা করতে হয় না। মোটামুটি টেনেটুনে চলে যায়।
আমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। রেশন কার্ড আছে। বৌ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পায়। বলতে গেলে সরকারের থেকে পাওয়া যে সুবিধাটা সবচেয়ে কাজে লাগে সেটা হল এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। আমার বৌ মাসে হাজার টাকা করে পায় এতে। রেশনে চালটাও পাই। অনেকেই ঘর-টর পায় দেখেছি। আমি কোনওদিন পাইনি। এছাড়া আমার জিরো ব্যালান্সের জনধন অ্যাকাউন্ট আছে একটা। মাসে সবচেয়ে বেশি খরচ বলতে গেলে খাওয়াদাওয়াতেই হয়। খাওয়াদাওয়ার খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম যা হচ্ছে দিন দিন।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
ভোট এবারও হয়তো দেব। কিন্তু যে-ই সরকারে আসুক, অবস্থার উন্নতি হবে এরকম বিশ্বাস আমার কোনও দলের ওপরেই নেই। আমার খবরের কাগজ পড়া হয় না। তবে টিভিতে তো খবর-টবর দেখি। আমাদের এই দেশ বলুন বা রাজ্য বলুন, যেমনভাবে চলছে তার কোনও কিছুই আমার ভাল লাগছে না। পার্টিবাজি জিনিসটা তো একদম অসহ্য হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে কাজকর্মের সুযোগ কমেছে। আমার হয়তো কাজ চলছে, কিন্তু করোনার পরে আমাদের এখানকার অনেকেরই কাজ চলে গেছে। আগের মতো কাজের সুযোগ আর কই! যদি আমার নিজের সমস্যাও বলতে বলেন, সেও ওই কাজেরই সমস্যা। আমাদের তো ওরকম স্থায়ী মাইনে নেই। কাজের ওপর পয়সা। সেই কাজ যতটা থাকলে ভাল হত, সেরকম থাকে না। ফলে সংসারে দুটো লোক কমলেও যতটা ভালভাবে চলা উচিত ছিল সেভাবে সংসারটা চালানো যাচ্ছে না।
*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বুলবুল ইসলাম