সুদীপ মণ্ডল
খবরের কাগজ পড়ার সময় পাই না। তবে টিভিতে বাংলা খবর দেখি। খবর পাই আমাদের রাজ্যে কী হচ্ছে না হচ্ছে। আমাদের রাজ্য যেভাবে চলছে, আমি খুশি নই। দেশে কাজ থাকলে সব ছেড়েছুড়ে এখানে এসে দুটো ভাতের জন্য পড়ে থাকতে হত না। আবার এটাও ঠিক এই সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে। বাড়ির কাজে লাগছে। কিন্তু সেরকম সাহায্য সব সরকারই তো করছে এখন
আজ থেকে নয় বছর আগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। আমার দেশ বাঁকুড়ার সোনামুখি। বাড়িতে মা-বাপ-ঠাকুমা-এক ভাই-দুই বোন। আমরা চাষি। তবে জমি বেশি নেই। অন্যের জমিতে খাটতে চাইনি। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। পুরীতে একটা মাঝারি হোটেলে কাজ করি। মানে যাকে রুম সার্ভিস বলে। ঘর পরিষ্কার করা, বিছানা রেডি করা, ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, গাড়ি থেকে মাল নামানো, মাল তোলা, আর হোটেলের সমস্ত ফাইফরমাস। আমাদের গাঁয়ের থেকে আরও অনেকে এরকম নানা দিকে বেরিয়ে গেছে। আমার এক ভাই চলে গেছে বোম্বে, ওখানে ও-ও হোটেলে কাজ করে। ছোটভাই বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করে। বাড়িতে তো একজনের থাকা দরকার। তবে ও-ও বলে দিয়েছে বেশিদিন দেশে-গাঁয়ে পড়ে থাকবে না। বেরিয়ে আসবে।
পুরীতে ন-বছর ধরে নানা হোটেলে কাজ করলাম। এখন যেখানে আছি, পেটখোরাকি পাই, আর পাঁচ হাজার টাকা। বছরে এক মাস বোনাস। আমার খাওয়ার খরচ লাগে না, তাই টাকা জমানোর চেষ্টা করছি। বাঁকুড়া সদরে যদি একটা খাওয়ার দোকান দিতে পারি। এই হোটেলে পাঁচ বছর হয়ে গেল। মালিক ভাল, কোভিডের সময় বসিয়ে খাইয়েছে ক-মাস। তাই এঁকে ছেড়ে যেতে চাই না।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
খবরের কাগজ পড়ার সময় পাই না। তবে টিভিতে বাংলা খবর দেখি। খবর পাই আমাদের রাজ্যে কী হচ্ছে না হচ্ছে। আমাদের রাজ্য যেভাবে চলছে, আমি খুশি নই। দেশে কাজ থাকলে সব ছেড়েছুড়ে এখানে এসে দুটো ভাতের জন্য পড়ে থাকতে হত না। আবার এটাও ঠিক এই সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে বারোশো টাকা দিচ্ছে, বাড়ির কাজে লাগছে। আমার মায়ের নামে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আছে, বোন কন্যাশ্রী পায়। কিন্তু সেরকম সাহায্য সব সরকারই তো করছে এখন। উড়িষ্যায় বিজু পটনায়কের নামে স্বাস্থ্যবীমা আছে, হাসপাতালে এক লাখ টাকা খরচ হলে দশ হাজার টাকা দিতে হয়। এক টাকায় চাল পাওয়া যায়। এখানকার বিপিএল মানুষদের জন্য ইলেকট্রিসিটি ফ্রি করে দিয়েছে। মাধ্যমিক পাশ করলে মেয়েদের ল্যাপটপ দেয়। হোটেলের ওড়িয়া বন্ধুদের কাছ থেকে এসব খবর পেয়েছি। কেন্দ্রের সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভোটের এক মাস আগে আবার একশো টাকা কমিয়ে দিয়েছে, ভোট গেলে আবার বাড়িয়ে দেবে। আমরা সব ধান্দা বুঝি। এখন সরকারে থাকতে গেলে মানুষকে সুযোগ-সুবিধে দিতে হবে। যে সরকার দেশে আর রাজ্যে আমাদের সুবিধে দেবে, হাতে কাজ দেবে, বাজারের দাম কমাবে তাদের ভোট দেব।
*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। নাম পরিবর্তিত