‘অহমিকার পতন অনিবার্য’, এবং বিরোধীশূন্য পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 


চব্বিশের নির্বাচন যদি আমাদের প্রাথমিক একটি শিক্ষা দিয়ে থাকে— সেটি হল, এই নির্বাচন দেখিয়েছে ‘অহমিকার পতন অনিবার্য’। অর্থাৎ, যে মুহূর্তে আপনি কোনও একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে গোটা রাজ্যের মানুষকে ‘চোর’ অথবা ‘ভিখারি’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করবেন, তখন কিন্তু আর যাই হোক না কেন, ভোটবাক্সে আপনারই গণেশ উলটানোর সম্ভাবনা প্রবল। অবশ্যই আপনি ‘শ্রমের বিনিময়ে অনুদান’, এই বিষয়ে আপনার দাবি তুলুন। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে ‘সরাসরি অনুদান’-এর চেয়ে ‘শ্রমের বিনিময়ে অনুদান’ অনেক বেশি সম্মানের। কিন্তু তার বিপরীতে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে ‘চোর’ বা ‘ভিখারি’ বলে ‘সাধারণীকরণ’ করবেন না। করলে ভোটবাক্সে আপনারই জামানত জব্দের ব্যবস্থা করা হবে

 

বেশ কিছুদিন পেরিয়ে এসেছি। যদিও সুখানুভূতি এখনও সজাগ রয়েছে। দশকব্যাপী ঘৃণার সামান্য অবসানেও এই যে পরিতৃপ্তি, তাই বুঝিয়ে দেয় সেই ঘৃণার পরিমাণ কতখানি হয়ে উঠেছিল। এখন ফুরফুরে বাতাসের সময়। তবুও যে কথা মনে রাখা উচিত, ফ্যাসিস্টদের কিন্তু এখনও ক্ষমতা থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা যায়নি। একের বিরুদ্ধে এক লড়াইতে ফ্যাসিস্টদের যে পরাজয় সম্ভব, ঘৃণার বিরুদ্ধে শিকড়ের কাছাকাছি সঠিক সমস্যার কথা জনতার কাছে তুলে ধরা যে ফ্যাসিস্ট-বিরোধী প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার— এই সমস্ত বিষয়েই চব্বিশের নির্বাচন আমাদের ইতিবাচক উত্তর শুনিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ অথবা গো-বলয়, হিন্দি-বলয়ের পূর্বঘোষিত ‘শক্ত জমি’তেও রামমন্দিরের রথ মুখ থুবড়ে পড়েছে। শোনা যাচ্ছে আজ, প্রধানসেবক মহোদয় যে যে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতে সরাসরি প্রচার করেছিলেন, সেগুলির ৫৮ শতাংশ আসনেই মহোদয়ের দলের প্রার্থীদের পরাজয় সুনিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু এখনও ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট লোকসভায় বিজেপিই একক বৃহত্তম দল। সমূলে তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে বিজেপি-বিরোধী, সংবিধানপন্থী, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যে কয়েকটি দল একজোট হয়ে এই লড়াইতে সামিল হয়েছিল, তাদের সেই বোঝাপড়াটিকে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা জরুরি। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যে লড়াই, সেখানে গণতন্ত্রকামী দলগুলির সার্বিক ঐক্য ভিন্ন সাফল্য অসম্ভব। এই সত্যের যেন বিস্মরণ না ঘটে।

এবারে আসা যাক এ-রাজ্যের নির্বাচনের কথায়। এ-কথা অনস্বীকার্য, কেন্দ্রের মতো এ-রাজ্যেও বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে শাসক-বিরোধী কোনও সদর্থক শক্তির উঠে আসা প্রয়োজন। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রয়োজনে যত না, তার চেয়েও বেশি করে যে-কোনও ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিসরে ফ্যাসিস্ট একটি দলকে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে অস্তিত্ব বজায় রাখতে দেখা, সব সময়েই আশঙ্কার। এ-কথা সত্যি, কেন্দ্রে যেমন কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়তে গিয়ে সেই কংগ্রেস দলকেই এখন উপযুক্ত সম্মান সমেত মোদি-শাহ-নাইডু-নীতিশের সরকারকে লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল হিসেবে মেনে নিতে হবে— তেমনই, ২০১১-পরবর্তীতে বিরোধী-শূন্য বাংলা গড়তে গিয়ে বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নীতির কারণেই রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিসরে বিরোধীদের শূন্যস্থান বিজেপির দ্বারা পূরিত হয়েছে। সেই সঙ্কটের নৈতিক দায় তৃণমূল কংগ্রেসকেই বহন করতে হবে। ২৯টি লোকসভা আসনে জিতে, অথবা বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একার ক্ষমতায় জিতে এসে, সেই সমস্যার সমাধান হবে না। পরিবর্তে কোনও না কোনও দিন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতো জনতা যখন তৃণমূল সরকারেরও বিরোধী হয়ে উঠবে (সে যে সময়েই হোক), তখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপিরই এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা সুনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এ তো গেল শাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে বিরোধী আসন থেকে হঠাতে এ রাজ্যের গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ অন্য বিরোধীরাও কি সঠিক আচরণ করেছেন? সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসা বেশ কিছু প্রিয়-অপ্রিয় প্রশ্নের নিরিখেই আলোচনা সাজানো যাক।

প্রথম প্রশ্ন হিসেবে যে-কারও মাথায় যে প্রসঙ্গটি উঠে আসবে, তা হল চাকরি-দুর্নীতির প্রসঙ্গ। নিঃসন্দেহে যে চরম দুর্নীতির আশ্রয় বাংলার শাসকদল নিয়েছে ও সেই লুন্ঠিত সম্পদের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়িয়েছে তার বিরুদ্ধ রায়ের প্রভাব ভোটবাক্সে পড়া উচিত ছিল। কিন্তু পড়েনি। তার প্রধান কারণ হল, বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ‘সম্ভবত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ রায়, ও তার পূর্ববর্তী সময়ে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একাধিক পদক্ষেপ। দেবাংশু বসাকের রায় ‘সম্ভবত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এ-কথা বলার কারণ, রায়দানের অন্তত চব্বিশ থেকে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সংবাদমাধ্যমে কার্যত রায়ের সারাংশটুকু অবিকল উল্লেখ করে বসেন। সেই থেকেই যে কোনও রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের মনে এই রায়ের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ জাগবে। তাছাড়াও, আধুনিক আইনের প্রথম শর্ত বলে, “বিচারের প্রধান উদ্দেশ্যই হল অপরাধী যদি বা শাস্তি নাও পায়, তবুও, একজনও নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে বিনা দোষ অভিযুক্ত না হয়— তা সুনিশ্চিত করা।” বিচারপতি বসাকের রায় আধুনিক আইনের এই প্রথম শর্তটিকেই লঙ্ঘন করে। ৫০০০ জন প্রমাণিত ভুয়ো পরীক্ষার্থীকে শায়েস্তা করতে গিয়ে তিনি কোনও ধরনের প্রমাণ ছাড়াই (এমনকি কোনওরকম circumstantial evidence-এরও উল্লেখ না করেই) আরও ১৪-১৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল করেন, তদুপরি ‘দাগি আসামী’র মতোই সুদসমেত তাদের বেতন ফেরতেরও নির্দেশ দেন। শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ এভাবে ফেরত নেওয়া যায় কিনা, তাই নিয়েই আইনি বিতর্ক রয়েছে, তদুপরি, ১৪-১৬০০০ জন মানুষকে প্রমাণ-ব্যতীত এইভাবে অভিযুক্ত করায় বিচারব্যবস্থার প্রাথমিক দর্শনই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এরই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন বিচারপতি, তথা চাকরিপ্রার্থীদের এককালের ‘মসিহা’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান, বিচারবিভাগীয় ‘নিরপেক্ষতা’র গোটা বিষয়টাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় এবং চাকরি-দুর্নীতির বিষয়টি নির্বাচনী-ইস্যু হয়ে উঠতে সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়।

একেই এবারের ভোট সারাদেশেই বিজেপি-বিরোধী ভোট হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তার উপরে এভাবে ‘নির্দোষ’ মানুষকে ‘রাজনৈতিক’ উদ্দেশ্যে ‘ক্ষমতা’র কাঠগড়ায় তোলা মানুষ ভাল চোখে দেখেনি। এখানে এই বক্তব্যও রাখা উচিত, পশ্চিমবঙ্গে শাসক-বিরোধী বাম অথবা কংগ্রেস দল, তাঁরাও শুরুতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মহত্ব’ প্রচারেই কেবল সহায়তা করেননি, তদুপরি পরবর্তী ক্ষেত্রে চাকরি-দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক সামাজিক-রাজনৈতিক মঞ্চে, ‘চাকরিপ্রার্থী’দের পাশে থাকতে চাই, এই অজুহাতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও মঞ্চ ভাগ করে নিয়েছেন। শুরু থেকেই যদি বাম-কংগ্রেস রাজনীতিকেরা এককভাবে এই চাকরি-দুর্নীতির বিষয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন করতেন, তাহলে হয়তো এই আন্দোলনের রাশ কিছুটা হলেও তাঁদের হাতে থাকতে পারত এবং দেবাংশু বসাকের ‘সম্ভবত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ রায়ের বিরুদ্ধে যে জনরোষ, তার ভাগ অন্তত তাঁদেরকেও ভোটবাক্সে বইতে হত না। এ আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গ, সন্দেশখালির ঘটনা। সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ অংশে শেখ শাজাহানের নেতৃত্বে যে একাধিক বা অজস্র বেআইনি কার্যকলাপ চলেছে, সে-কথা তৃণমূল-নেতৃবৃন্দও স্বীকারে বাধ্য হয়েছেন। যদিও মহিলাদের উপরে অত্যাচার হয়েছে বলে রাজ্যের শাসকনেতারা এখনও অবধি মানতে অস্বীকার করেন। এতদসত্ত্বেও, যেটুকু বেআইনি ঘটনার প্রমাণ বিরোধী তথা বিজেপি নেতাদের হাতে ছিল, কেবল সেইটুকুকে ভিত্তি করেই যদি তাঁরা প্রচার চালাতেন তাহলে হয়তো তাঁরা ভোটবাক্সে লাভ করতে পারতেন। কিন্তু যে-মুহূর্তে টাকার বিনিময়ে মিথ্যে প্রচারের ঘটনা জনসমক্ষে এসে পড়ল, সেই মুহূর্ত থেকে সন্দেশখালির আন্দোলনটিকে শাসকদলের তরফে ‘অসৎ’ হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করে দেওয়া গেল। এর দায়ও বিজেপি দলকেই বহন করতে হবে। সৌভাগ্য যে বাম অথবা কংগ্রেস, এই আন্দোলনের বিষয়ে শুরু থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এলাকার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের ভূমিকাও সদর্থক হিসেবে উঠে এসেছে। তবুও বিজেপির মিথ্যে প্রচারের দায় এখানেও ক্রমশ শাসকের ভোটব্যাঙ্ক সুনিশ্চিত করতেই সহায়তা করেছে। দুর্ভাগ্য এই যে – সন্দেশখালির মহিলাদের উপর যদি সত্যিই অত্যাচার হয়ে থাকে— তাহলেও, মুষ্টিমেয় কিছু মহিলার তরফে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে টাকার বিনিময়ে মিথ্যাভাষণের ঘটনা কোনওভাবে সামনে আসতেই, গোটাগুটিভাবে সকল প্রতিবাদী মহিলারই ‘সততা’র উপর সহজেই প্রশ্ন তুলে দেওয়া গিয়েছে। সামাজিক পরিসরে এমনটা না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। ঠিক যেভাবে প্রমাণ ছাড়াই ১৬ হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনা, চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের উপর থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে সহায়তা করেছে, এমনকি বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্ন তোলার পরিসর উন্মুক্ত করে দিয়েছে, একইভাবে সন্দেশখালির ‘মিথ্যাপ্রচার’ সত্যকারের নির্যাতিতা নারীদেরও দীর্ঘমেয়াদে বিচারপ্রাপ্তির বিষয়টিকেও একেবারেই অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে। ভোটদখলের প্রয়োজনে ‘বিজেপি’ নামক রাজনৈতিক দল, এমন একাধিক দুষ্টকর্মের মাধ্যমে রাজ্য তথা দেশের সামাজিক, গণতান্ত্রিক, প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরকে যে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তার হিসেব কষতেই এখন বহু বছর লেগে যাবে বলে বোধ হয়।

সবশেষে আসা যাক ‘ভাতা-ও-ভিক্ষা’র প্রসঙ্গে। এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে বিরাট আলোড়ন উঠেছে, এমনকি কাছে-দূরের একাধিক বন্ধু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার মতামত জানতে চেয়েছেন, এমনকি এই প্রসঙ্গে আমার নীরবতা নিয়েও হালকা কটাক্ষপাত করেছেন, তাই শেষ অবধি এই প্রসঙ্গ নিয়ে লিখব না ভেবেও, লিখতে মনস্থির করেছি। না লেখার পিছনে অন্যতম কারণ হল, এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই এই বিষয়ে আমার অজ্ঞতার কথাও সরাসরি স্বীকার করতে হবে। নির্বাচনের কিছুকাল আগেই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বিষয়ে আমার এক অগ্রজ বন্ধুর সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে কিছু আলগা মন্তব্য করায়, বলতে গেলে belt treatment-এর সম্মুখীন হয়েছিলাম। উল্লেখ করা উচিত বন্ধুটি কোনওভাবেই তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত নন, এবং সেই আলোচনায় আমার একাধিক বক্তব্যের প্রতি আমি এখনও সমর্থন পোষণ করি— কিন্তু ভোট-রাজনীতি এবং সাধারণ অর্থনীতির প্রশ্নে অবশ্যই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বা এমন ভর্তুকি-সমতুল প্রকল্পগুলিকে অন্যভাবে দেখা প্রয়োজন। সেই বোধ আমারও সেই আলোচনার পরবর্তীতেই ক্রমশ উন্মোচিত হয়েছে।

দারিদ্র্য-দূরীকরণের প্রশ্নে সাধারণ গরিব মানুষের হাতে সরাসরি ব্যয়ের প্রয়োজনে অর্থ তুলে দেওয়ার বিষয়টি অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই স্বীকৃত। একাধিক বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, যথা অধ্যাপক জন মেইনার্ড কেইনস, অধ্যাপক অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশেষত কল্যাণকর অর্থনীতি বা welfare economics-এর বিষয়ে তাত্ত্বিক বরিষ্ঠজন হিসেবে যাঁরা সারা বিশ্বে সম্মানিত, তাঁরা প্রত্যেকেই গরিব মানুষের হাতে এভাবে টাকা তুলে দেওয়ার নীতিকে সমর্থন করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে জনৈক সাহিত্যিককে দেখলাম অধ্যাপক কেইনসের নাম শুনেও, “সে যে তার্কিকই বলুন না কেন, আমি একে ভিক্ষাই বলব”-মার্কা মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে নিজের অজ্ঞতাই প্রকাশ্যে জ্ঞাপিত করেছেন।[1]

এভাবে সরাসরি জনগণের হাতে অর্থ দিলে (ভাতা বা ভিক্ষা, শব্দচয়ন আপনাদের বিষয়) তাহলে অর্থনীতির উন্নতি কীভাবে সম্ভব? সহজ করে যদি বোঝাতে চেষ্টা করি, কোনও দেশে যদি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়— তার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল উৎপাদন কমে আসা। এই উৎপাদনের ক্ষমতা কিন্তু গরিব মানুষের হাতে থাকে না। তাঁরা কেবল উৎপাদনের প্রয়োজনে শ্রম দিয়ে থাকেন। এখন উৎপাদন কমে আসার অর্থ হল, সেই শ্রমের প্রয়োজনীয়তাও কমে আসা। অর্থাৎ, গরিব মানুষের আরও বেশি করে অর্থোপার্জনের উপায় কমে আসা। এর ফলে গরিব মানুষের হাতে অর্থের জোগান কমবে— ফলস্বরূপ যে-কোনও ধরনের উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ আরও কমে আসবে— ফলাফল হিসেবে উৎপাদন আরও তাড়াতাড়ি, আরও বেশি করে কমতে শুরু করবে। জনগণ আরও গরিব হতে থাকবে। অর্থাৎ এই বৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্রমশ অর্থনীতি দুর্বল থেকে আরও দুর্বলতর হয়ে পড়বে। এর বিপরীতে ঘুরে দাঁড়ানোর সমাধান কোথায়?

সরাসরি যদি জনগণের হাতে কিছু অর্থের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তাহলে আবারও সামান্য করে হলেও কিছু উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে। শ্রমের প্রয়োজন বাড়বে। উৎপাদন বাড়ার অর্থই হল কর্মসংস্থান। অর্থাৎ আবারও সেই বৃত্তীয় পথেই অর্থনীতির শ্লথ উত্তরণ সম্ভব হবে। এমন বৃত্তীয় পথে উত্তরণ অথবা অবতরণ কোনওটিই সহজ বা চটজলদি বিষয় নয়। অর্থনীতির জটিল চলনটিকেও এই বক্তব্যের পরিসরে সবটুকু ব্যাখ্যা করা আমার মতো প্রযুক্তিবিদের পক্ষে কেবল অসম্ভব নয় তা ধৃষ্টতারও সমতুল। কিন্তু কোভিড-সময়ের অনেক আগে থেকেই, (মনে রাখতে হবে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষতেই) গোটা ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন এক জায়গাতে গিয়ে পৌঁছেছিল, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে কোভিড-পরবর্তীতে কল্যাণকর অর্থনীতির এই পথ বেছে নেওয়া ভিন্ন উপায় ছিল না। কাজেই কোনও একটি নির্দিষ্ট দল নয়, শাসক হিসেবে প্রত্যেক দলই এমন নানাবিধ কল্যাণকর নীতির ব্যবহার শুরু করেছিল এবং বিরোধী দলগুলিও রাজনৈতিক প্রচারে এমন কল্যাণকর অর্থনীতির প্রয়োগকেই তাদেরও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেছিল। এই প্রশ্নে আবারও উল্লেখ করব, এইভাবে সরাসরি অর্থদান দীর্ঘমেয়াদে সমাধান নয়। কিন্তু খাদের কিনারায় চলে যাওয়া অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সম্ভবত এই প্রক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। অন্তত বিশ্ববরেণ্য একাধিক অর্থনীতিবিদ এই যুক্তিতেই তাঁদের বহুল-প্রতিষ্ঠিত গবেষণা সাজিয়েছেন।

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, এই অর্থ একেবারে সরাসরি হাতে তুলে না দিয়ে কোনওভাবে কি সামান্য কোনও প্রতীকী শ্রমের বিনিময়ে দেওয়া যেত না? যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষটি অন্তত নিজেও সেই অর্থকে ‘সাহায্য’ অথবা ‘অনুদান’ না ভেবে ‘অর্জন’ ভাবতে পারত? আমাদের রাজ্য তথা দেশের বিরোধী-শাসিত অনেক ক-টি রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ মনোভাবের কথা চলে আসে। প্রাথমিকভাবে আশি অথবা নব্বই দশকে মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ার কর্তৃক প্রবর্তিত ও পরবর্তীতে গোটা দেশে ডঃ মনমোহন সিং কর্তৃক ‘জীবিকার অধিকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঠিক এভাবেই ‘অনুদান’কে ‘অর্জন’ হিসেবে প্রদান করা শুরু হয়েছিল। সেই প্রকল্প আমাদের কাছে ১০০ দিনের কাজ নামে পরিচিত। ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে দেশের জিডিপি বাড়ে না। গ্রামীণ এলাকায় কিছু পরিকাঠামোগত উন্নতি হয় কেবল। তবুও অর্থনীতির অধ্যাপক ডঃ সিং, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় বাজেট-ভর্তুকি দিয়ে হলেও এই প্রকল্প চালাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। কারণ সাধারণ, গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছনো সবসময়ে প্রয়োজন। সেই টাকাই পরবর্তীতে বৃত্তীয়-উপায়ে অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে চলতে সক্ষম হবে। এর পাশাপাশিই গরিব সাধারণ মানুষ সেই ‘উপার্জন’কেও সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতে শিখবে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর পাশাপাশিই কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে মোদি-সরকারের অব্যবস্থা ও পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ কোভিডের কারণে অর্থনীতির অবস্থা একেবারে তলানিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে লক্ষীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্পের যথেষ্টই যৌক্তিকতা উঠে আসে। একথাও উল্লেখ করা উচিত, লক্ষীর ভাণ্ডার ছাড়া অন্যান্য যে সমস্ত ‘শ্রী’ প্রকল্পগুলি রয়েছে, সেগুলির অনেক ক-টির ক্ষেত্রেই কিন্তু অর্থের বিনিময়ে শিক্ষালাভ অথবা বিবিধ পরিসরে শ্রমের শর্ত যুক্ত রয়েছে। কাজেই সেই প্রকল্পগুলিকেও সরাসরি অনুদান বলা চলে না। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-কে অনুদান বললেও, ভেবে দেখা উচিত, মাসপিছু হাজার টাকায় গ্রামীণ একটি পরিবারে ঠিক কতখানি সাহায্য সম্ভব, সে কথা সত্যিই কলকাতায় বসে থাকা আমরা হয়তো চিন্তাও করে উঠতে পারি না। খুব সহজে যদি বলতে চেষ্টা করি আবারও, অন্তত এক সিলিন্ডার গ্যাসেরই দাম এখন ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেইটুকুরও যদি ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’-এর মাধ্যমে সাশ্রয় হয়, আমরা কি সেই বিষয়টিকেও আমাদের শহুরে মধ্যবিত্তসুলভ চপলতায় এক কথায় আকাশে উড়িয়ে দিতে পারি? বোধহয় পারি না একেবারেই।

এখন প্রশ্ন উঠবে, কন্যাশ্রীর টাকায় মেয়েরা ট্যাবলেট কিনে নিচ্ছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় মেয়েদের মেক-আপের হাতখরচ চলছে। তার বেলা? এই প্রশ্ন বা অভিযোগগুলির পরিপ্রেক্ষিতে আমি সন্দেশখালি অথবা চাকরি-দুর্নীতির প্রসঙ্গই টেনে আনব ফের। ঠিক যেমনভাবে অভিযোগকারী মহিলাদের একাংশ অর্থের বিনিময়ে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন বলেই সমস্ত মহিলাকে মিথ্যুক বলা চলে না— ঠিক যেমনভাবে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে বলে সকল চাকরিপ্রাপ্তকেই দুর্নীতিবাজ বলা চলে না, ঠিক তেমনই ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’-এর সুবিধাপ্রাপ্ত সকল মহিলাকেই যদি ‘চোর’ অথবা ‘ভিখারি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও বোধহয় সমস্যার অতিসরলীকরণ হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি, চব্বিশের নির্বাচন যদি আমাদের প্রাথমিক একটি শিক্ষাও দিয়ে থাকে— সেটি হল, এই নির্বাচন দেখিয়েছে ‘অহমিকার পতন অনিবার্য’। অর্থাৎ, যে মুহূর্তে আপনি রাজনৈতিক কর্মী বা কোনও একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে গোটা রাজ্যের মানুষ, অথবা সোজাসুজি বললে আপনার সম্ভাব্য ভোটব্যাঙ্ক, তাঁদের প্রত্যেককে ‘চোর’ অথবা ‘ভিখারি’ বলে কটাক্ষ করতে শুরু করবেন, তখন কিন্তু আর যাই হোক না কেন, ভোটবাক্সে আপনারই গণেশ উলটানোর সম্ভাবনা প্রবল। অবশ্যই আপনি ‘শ্রমের বিনিময়ে অনুদান’, এই বিষয়ে আপনার দাবি তুলুন। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করুন যে ‘সরাসরি অনুদান’-এর চেয়ে ‘শ্রমের বিনিময়ে অনুদান’ অনেক বেশি সম্মানের। কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে শিল্পস্থাপনের দাবি করুন। কিন্তু তার বিপরীতে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে ‘চোর’ বা ‘ভিখারি’ বলে ‘সাধারণীকরণ’ করবেন না। করলে ভোটবাক্সে আপনারই জামানত জব্দের ব্যবস্থা করা হবে।

শহুরে মধ্যবিত্তের পক্ষে অবশ্য প্রান্তিক মানুষের অর্থনীতি কেন, অনেক সময় মোদির সরাসরি ধর্মীয় রাজনীতির বিদ্বেষ বোঝাও শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে, গ্রামীণ ভারত ঢেলে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, দিল্লি অথবা বেঙ্গালুরুর মানুষ সেই বিভাজন-রাজনীতিতেই আস্থা রেখে চলে। কাজেই তাঁদের থেকে অধিক বিচক্ষণতা আশা করব না। কিন্তু ভুলটুকু শিখে নেওয়ার মানসিকতা থাকা উচিত।

রাজ্যের বিজেপি নেতারা অধিকাংশ সময়েই কুৎসিত ভাষায় এই ‘ভিখারি’-মার্কা আক্রমণে নেমেছেন। কিন্তু সত্যিই অবাক বোধ হয়, বাম-কংগ্রেসি সমর্থকদের একাংশও সামাজিক মাধ্যমে সেই সুরে সুর মিলিয়েছেন। এই কারণেই ভোট-রক্তক্ষরণ তাদেরও অব্যাহত। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড মহম্মদ সেলিম অবশ্য সরাসরি বলেছেন, যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে ‘লক্ষীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নিয়ে কুৎসিত প্রচার চালিয়েছে বা চালাচ্ছে, তারা সিপিএম দলের সদস্য হিসেবে বিবেচিত নয়। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, বাম রাজনীতিকে সমর্থন করুন, কিন্তু এমন উগ্র সমর্থন বামপন্থী আদর্শের সঙ্গে কোনওভাবেই সমধর্মী নয়। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী কমরেড সৃজন ভট্টাচার্য, তিনিও এই ব্যাপারে একই মত পোষণ করেছেন। বাম কর্মী-সমর্থকদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যের প্রয়োজনে তাদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসা, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে তাদের প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে আসা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এখন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সামান্যতম পদস্থলন রাজ্যের গণতন্ত্রের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের দল আইএসএফের সঙ্গে জোট বাংলার মানুষ মেনে নেয়নি। এবারের লোকসভা ভোটে আইএসএফ কেবল যে আপনাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাই নয়, একাধিক আসনে আপনাদের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে আপনাদেরই ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছে। ইতিপূর্বে, আপনাদেরই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাম অথবা তৃণমূল-বিরোধী ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে গিয়ে পড়তে পেরেছিল। তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক স্বীকার করেছিলেন, ‘বামের ভোট রামে’ অথবা ‘আগে রাম পরে বাম’ তত্ত্ব আদতে বাম-রাজনীতির পক্ষেই ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বামপন্থী আদর্শের কোনও দল কেনই বা বিজেপি অথবা আইএসএফের মতো সাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের দলের সঙ্গে নিজেদের কোনওভাবে একাত্ম হতে দেবে? পাশাপাশি অন্যান্য বাম অথবা left-centric সংগঠনগুলির কাছেও প্রশ্ন রাখতে চাইব, রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিসরে সরকারিভাবে বিরোধী কণ্ঠস্বর যখন ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে, তখন রাজ্যের প্রয়োজনে, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে, ফ্যাসিস্ট-বিনাশের প্রয়োজনে বৃহত্তর বাম-ধর্মনিরপেক্ষ জোট তৈরির ক্ষেত্রেও আপনাদের সদর্থক ভূমিকা নিতে কেন দেখা যাচ্ছে না? সঠিক আদর্শের উপরে ভিত্তি করে সার্বিক ঐক্যের চেয়ে যে বড় শক্তি নেই, একথা আর কতবার সমাজ আপনাদেরকে স্মরণ করাবে?

সবশেষে বলব, আমার খুব কাছের বন্ধুদের অনেকজন— তাঁরা যে কেবল সরাসরি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাই নন, তারা রীতিমতো সেই আদর্শের জন্য পরিশ্রম করেন। আমি তাঁদের শ্রমকে একদিন সাফল্য পেতে দেখতে চাই বলেই, একেবারে ব্যক্তিগত পরিসর থেকে কিছু নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ এই পরিসরে তুলে ধরতে চাইলাম। বিশ্লেষণে ভুল বা খামতি থাকলে, তাঁদের থেকেই আমি গঠনমূলক সমালোচনার অপেক্ষায় থাকব। কেবল শহুরে মধ্যবিত্তদের আবারও বলব, প্রান্তিক দারিদ্র্য সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা-ব্যতীত সামাজিক মাধ্যমে ‘ভিখারি’র মতো শব্দের ব্যবহার করবেন না। তা বড় অশালীন বলে মনে হয় তখন।


[1] স্বীকার করছি এমন কিছু মন্তব্য আমার সেই অগ্রজ বন্ধুর সঙ্গে আলোচনার সময় আমার মুখ দিয়েও উচ্চারিত হয়েছিল, কিন্তু যে বিষয়ে আমি এখনও স্থির, এই অর্থের বণ্টন সামান্য কোনও কাজের বিনিময়ে করা গেলে সত্যিই তা আরও সদর্থক হয়ে উঠতে পারত। তদুপরি এমন পদ্ধতিতে অর্থবণ্টন যে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়, সেই বিষয়ে বরিষ্ঠ অধ্যাপকেরা তো বটেই, এমনকি আমি ও আমার অগ্রজ বন্ধুও ‘বোধহয়’ সহমত হয়েছিলাম। আলোচনা যে যারপরনাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, তা এই শেষ বক্তব্যের দ্বারাই প্রমাণিত— কিন্তু এভাবেই বোধহয় সঠিক দিকে সকলের সঙ্গে অগ্রসর হওয়া চলে।


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. Yes , I do also agree that time has come when self introspection is important than impulsive thought process , looking to age old issue from a new angles may help . Good analysis my young friend. Regards .

    • Thanks Sir, for your kind comments. Indeed we need a thorough introspection of our socio-political activities to ensure proper functioning of a democracy. Rhetoric or short-term success gathering on social media won’t help in ensuring the ballots. Regards,

      Amartya Bandyopadhyay

আপনার মতামত...