প্রায়-ফ্যাসিবাদ থেকে পূর্ণ ফ্যাসিবাদের দিকে যাত্রাটা আপাতত রুখে দেওয়া গেল

আশীষ লাহিড়ী

 


অযোধ্যা অর্থাৎ ফৈজাবাদে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গত কয়েক মাস ধরে ধর্মের নাম করে যে একটা বিরাট নাটক তারা তৈরি করছিল, রামমন্দির তৈরি করে মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রাতারাতি মহাসমারোহে তা উদ্বোধন করে দিল, কিন্তু নির্বাচনে খোদ অযোধ্যার অধিবাসীরা, যাঁদের অধিকাংশই হিন্দু, তাঁরা একজোট হয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে এই দেখনদারিত্ব, স্তোকবাক্য এবং ধর্ম নিয়ে ঢক্কানিনাদ তাঁরা মোটেই গ্রহণ করেননি। অযোধ্যা তথা আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে বর্জন করেছে

 

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল আমার কাছে কিছুটা স্বস্তির, কিন্তু পুরোপুরিভাবে নয়। বিজেপি সংসদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু এখনও আসনের নিরিখে তারাই এই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনৈতিক দল। দেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের সমর্থন তাদের প্রতি এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে, এটা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি এটাও বোঝা যাচ্ছে যে বিজেপি যে সংখ্যায় বলিয়ান হয়ে সুনিশ্চিত ফ্যাসিবাদের দিকে এগিয়ে চলেছিল, পদে পদে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পাচ্ছিল, সংবিধান বদলে ফেলে হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, যাবতীয় পরিকল্পনার মধ্যে যে নিশ্চিতি ফুটে বেরোচ্ছিল, এই নির্বাচনের ফলাফলে তা ধাক্কা খেল। সহজ কথায় এটা বলা যেতে পারে যে, প্রায়-ফ্যাসিজম থেকে পুরোপুরি ফ্যাসিজমে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়াটা সাময়িকভাবে ধাক্কা খেল। নানারকম পরস্পরবিরোধী স্বার্থ থাকা সত্ত্বেও ভারতবর্ষের বিরোধী দলগুলি এক জায়গায় এসে ভারতবর্ষের সুনিশ্চিতভাবে ফ্যাসিবাদী দেশে পরিণত হওয়াটা আপাতত রুখে দিল। এই নির্বাচনের এটাই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

কিন্তু আমি খুব বেশি আশাবাদী নই এই জন্যে যে এখনও এরাই একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তারা ধাক্কা খেলেও ধাক্কাটা এতখানি নয় যে তাদের ধ্বংস করে দেওয়া গেছে। সুতরাং একটা জনভিত্তি তাদের রয়েই গেল। এসবের মধ্যে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, অযোধ্যা অর্থাৎ ফৈজাবাদে বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়। গত কয়েক মাস ধরে ধর্মের নাম করে যে একটা বিরাট নাটক তারা তৈরি করছিল, রামমন্দির তৈরি করে মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রাতারাতি মহাসমারোহে তা উদ্বোধন করে দিল, কিন্তু নির্বাচনে খোদ অযোধ্যার অধিবাসীরা, যাঁদের অধিকাংশই হিন্দু, তাঁরা একজোট হয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে এই দেখনদারিত্ব এবং স্তোকবাক্য তাঁরা মোটেই গ্রহণ করেননি। ফলে বছরের পর বছর ধরে আন্দোলনের নামে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করে, হিংসার আশ্র‍য় নিয়ে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অযোধ্যায় করদাতার বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে যে রামমন্দির গড়া হল, এবং মিডিয়ায় বিরাট ঢক্কানিনাদ সহযোগে রামমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনকে এক জাতীয় মহাঘটনা হিসেবে প্রচার করা হল, কিন্তু নির্বাচনের বাক্সে এই যাবতীয় আড়ম্বর মুখ থুবড়ে পড়ল। অযোধ্যা তথা আমাদের দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে বর্জন করেছে।

আবার উল্টোদিকে আমার এক বন্ধু, সে আদতে উত্তরপ্রদেশেরই লোক, সে আমাকে বলল, তোমরা বড্ড বেশি আশাবাদী হচ্ছ। যাঁরা অযোধ্যায় ওদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে তাঁরা অত কিছু ভেবে ভোট দেননি। বরং আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র গড়তে গিয়ে যে তাঁদের ঘরবাড়ি দোকানপাট সব ভেঙেচুরে দিয়েছে তা বাসিন্দাদের একদম মনঃপুত হয়নি। এটাই বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার কারণ। আমি উত্তরে বললাম, এটাই তো বড় উজ্জ্বল একটা দিক। মানুষ ধর্ম নিয়ে না ভেবে নিজের বাস্তব সমস্যাটা নিয়ে ভেবেছেন, তাঁরা ভেবে দেখেছেন যে নিজেদের বাড়িঘর, মোড়ের মাথায় ছোট দোকান, এসব ভেঙে দিলে তাঁরা মন্দির নিয়ে কী করবেন! তার মানে ধর্মের চেয়ে ঐহিক স্বার্থটা তাঁদের কাছে অনেক জরুরি বলে মনে হয়েছে, এবং ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটেছে। এদিক থেকে দেখলে ফৈজাবাদের ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে হয়েছে।

পাশাপাশি, প্রতি নির্বাচনের মতোই এবারের নির্বাচনেও আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি অসীম দুর্বলতা আবার চোখে পড়ল। মুখে নীতির কথা বলে যেকোনও রাজনীতিবিদ যখন খুশি দল পরিবর্তন করছে, ক্ষমতার লোভে যেকোনও সময় ডিগবাজি খাচ্ছে, জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে— এই পচন আজও অব্যাহত। না হলে নীতিশ কুমারের মতো এমন একজন চূড়ান্ত নীতিহীন নেতা এত ভোট পান কী করে যে তিনি সরকারকে জরুরি সমর্থন করার মতো জায়গায় চলে যেতে পারেন! এই ধরনের ঘটনা সংসদীয় গণতন্ত্রের শনির ছিদ্র বলে আমার মনে হয়।

একইসঙ্গে বলব, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিলে সারা দেশের প্রেক্ষিতে খুব ছোট আকারে হলেও বামেদের প্রচেষ্টা আমার খুব একটা খারাপ লাগেনি। সিপিআই এম-এলের কথাই যদি ধরি, যেখানে বিহার জুড়ে বিজেপি ঝেঁটিয়ে জয় পেয়েছে, অন্যদিকে রয়েছেন নীতিশ কুমার, সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই বাম দলটি মাত্র তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুটিতেই জয়লাভ করেছে। সংখ্যার দিক থেকে দুই সংখ্যাটি বিরাট কিছু নয়, কিন্তু এরা দীর্ঘদিন ধরে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে আজ প্রমাণ করল যে চেষ্টা করলে এই কাজটিও করা যায়। এই দলটির টাকার জোর নেই, তাদের হাতে কোনও প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া নেই, কর্পোরেট প্রচারযন্ত্র নেই, শুধুমাত্র মানুষের প্রতি বিশ্বস্ত ও আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ থেকে তারা জয় ছিনিয়ে নিল। অর্থাৎ প্রমাণিত হল যে ধর্ম নয়, দক্ষিণপন্থা নয়, সরাসরি মানুষের সাধারণ দাবিদাওয়ার কথা বলে, বামপন্থার কথা বলে, কৃষক-শ্রমিকের অধিকারের কথা বলে, শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতির কথা বলেও এ দেশে এখনও ভোট পাওয়া যায় এবং ভোটে জেতা যায়।

বিহারে সিপিআই এম-এলের এই লড়াইয়ের প্রশংসা করার পাশাপাশি যখন আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বামদলগুলির দিকে তাকাই, বিশেষ করে প্রধান বামদল সিপিআইএম-এর দিকে, তখন রীতিমতো হতাশ হতে হয়। আমরা সবাই জানি, আমাদের রাজ্যে সিপিআইএম কিন্তু এম-এলের দীপঙ্করবাবুদের পথটা নেননি। অর্থাৎ ভারতবর্ষে ফ্যাসিস্ট শক্তি বিজেপিকে আক্রমণ করার লক্ষ্যে রাজ্যের বামশক্তি দ্ব্যর্থহীন হতে পারেনি। লোকসভা নির্বাচনে লড়তে নেমেও সিপিআইএম তাদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য করেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকেই। প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারের শেষে খুব মৃদুস্বরে বিজেপির সমালোচনা করা হয়েছিল প্রায় নমো নমো করে। বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে মানুষও যে সিপিআইএমকে ভরসা করতে পারেননি, তা ভোটের ফলে স্পষ্ট। যদি তৃণমূলকে কোনওরূপ ছাড় না দিয়েও বিজেপির রাজনীতির বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর আরও চড়া করা যেত, কীভাবে কেন্দ্রে শাসক দল দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করছে তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা যেত, তাহলে বামপন্থীদের ফল অনেকখানি ভাল হত বলে আমার বিশ্বাস। সিপিআইএম কর্মীরা সমাজের তৃণমূল স্তরে নেমে গিয়ে গ্রামের কৃষকদের কাছে পৌঁছতে পারলেন না, শ্রমিক-নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের সমস্যাগুলিও তুলে ধরতে পারলেন না। তাঁরা মূলত সোশাল মিডিয়া-কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত-সুলভ রাজনীতি করে বাজিমাত করতে চাইলেন। ফলত গ্রামের ও শহরের গরিব খেটেখাওয়া মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করল। অথচ নিজেদের ভোট শেয়ার বাড়িয়ে কিছু আসন জিতে নিতে পারলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থীরা অনেকখানি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শাসক তৃণমূলকে প্রতিরোধ করতে পারতেন, পাশাপাশি বিজেপিকেও সজোরে ধাক্কা দেওয়া যেত। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিপিআইএম-এর বিরাট সমর্থক নই, কিন্তু দেশ ও রাজ্যের স্বার্থে বামপন্থীদের আসনের দিক থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠা দেখতে পারলে খুশি হতাম।

 

আগামী বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ যখন উঠলই, এই কথাটিও দ্বিধাহীনভাবে বলে রাখা দরকার, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যের শাসক হিসেবে আর এক মুহূর্ত সহ্য করা যাচ্ছে না। এই শাসক দল ও তাদের নেত্রী শুধুমাত্র রাজ্যবাসী নয়, দেশবাসী এমনকি সামগ্রিকভাবে মনুষ্যত্বের পক্ষে একটি চূড়ান্ত অবমাননা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শাসকের আসন থেকে যে করে হোক দূর করা দরকার এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরিব মানুষকে নানা সুবিধে দিয়েছেন, আমি তার নিন্দা করছি না৷ এই চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধি ও অসাম্যের আবহে সামান্য রিলিফটুকু পাওয়া গরিব মানুষের ন্যায্য অধিকার। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার এই রিলিফটুকু সাময়িক সাহায্য হতে পারে, তা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে রাজ্যের বেড়ে ওঠা দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সমাধান হতে পারে না। শাসক দল তৃণমূল গরিব মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারকে নিয়ে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি শুরু করেছে। আর তথাকথিত বামপন্থীদের চেতনাগত দুর্দশা এতটাই প্রকট যে তারা এই রাজনৈতিক সমস্যাটিকে ঠিকভাবে অনুধাবনই করতে পারলেন না৷ তারা সমস্যাটিকে কৃষক-শ্রমিক-গরিব মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করে নিজেদের মধ্যবিত্ত অবস্থান থেকে বিচার করলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, সিপিআইএম তার মূল শ্রেণিভিত্তি শ্রমিক-কৃষক-গরিব মানুষের সমস্যাগুলি বুঝতেই পারল না৷ বামপন্থীদের উচিত ছিল সাধারণ গরিব মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে বোঝানো যে সামান্য এই হাজার টাকার ভাতা নিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। গরিব মানুষের অধিকার তাঁদের শিক্ষার অধিকার, সুস্বাস্থ্যের অধিকার, সবার হাতে কাজ ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার, আর এগুলি যদি শাসক না দিতে চায় বা দিতে না পারে তাহলে দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তা অর্জন করতে হবে৷ তৃণমূলের সুযোগসন্ধানী ডোলের রাজনীতিকে মানুষের সামনে সঠিকভাবে তুলে না ধরে তারা কী করলেন? তারা রাজ্যের গরিব মানুষের কাছ থেকে ভোট না পেয়ে তাদেরই ‘ভিখিরি’ বলে অপমান করতে শুরু করলেন। এ থেকে স্পষ্ট যে সিপিআইএম পুরোপুরি ভুলেই গেছে যে তাদের শ্রেণিভিত্তিটা কী। তারা আজ শুধুমাত্র একটি মধ্যবিত্তদের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য সিপিআইএম-এর এই শ্রেণিগত স্খলন আজকের ঘটনা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থানের পেছনে বাম দলগুলির অনুরূপ ঔদ্ধত্য ও আত্মহত্যাপ্রবণ আচরণই দায়ী৷ এক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যেতেই পারে, দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও কেন বামেরা যথেষ্ট সক্রিয় ও যত্নশীল হতে পারলেন না, যাতে রাজ্যের জনগণকে ‘ভিক্ষুক’ না হতে হয়? আজ রাজ্যের জনগণ যদি ‘ভিখারি’ হয়ে পড়েন, তাহলে দায় কি পূর্ববর্তী শাসক বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএম এড়াতে পারে? পরে অবশ্য এই ‘ভিখিরি’ মন্তব্যে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বিবৃতি দিয়ে সিপিআইএম নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই প্রবণতায় বঙ্গীয় বামপন্থীদের আদর্শগত দেউলিয়াপনা ও বাস্তবতাবিচ্ছিন্ন ‘এলিট’ মানসিকতাই প্রকট করে তুলেছে।

 

যাই হোক, লোকসভা ভোট তো চুকে গেল। এখন আমাদের সামনে নির্বাচনী লড়াই মানে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোট। সেই নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে আমাদের সকলের একজোট হওয়া উচিত। আমার ছিয়াত্তর বছরের জীবনে আমি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এমন ঘৃণ্য আর কোনও শাসক দলকে দেখিনি। গোটা বাঙালি জাতি আজ এক সর্বনাশের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই দলটি আর যতদিন আমাদের রাজ্যের শাসনক্ষমতায় থাকবে, আমাদের রাজ্যের ভবিষ্যৎ তত বেশি করে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে৷ আমরা কি এখনই টের পাচ্ছি না, যে রাজ্যে সমাজবিরোধীদের সংখ্যা কী বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেছে! শিক্ষা, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া— প্রতিটি ক্ষেত্রে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ— এই রাজ্যের ইতিহাসে যা অভূতপূর্ব। কর্মহীনতা প্রতিদিন আরও বেশি সংখ্যক লুম্পেন সমাজবিরোধীদের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। পাড়ায় পাড়ায় এইসব সমাজবিরোধীদের বিরাট বাহিনি তৈরি হয়েছে যাদের একমাত্র উপার্জন সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে তোলা আদায় অথবা পুজো করার নামে জোর করে চাঁদা আদায়। দুর্গাপুজোর নামে টাকা ছড়িয়ে ক্লাবগুলিকে কার্যত কিনে ফেলা হয়েছে, অর্থাৎ যুব সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশকে বংশবদ করে ফেলা হয়েছে। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে এই রাজ্যের যুবসমাজকে এই অন্ধকার থেকে বার করে আনা যাবে না। কেন্দ্রে বিজেপির শক্তিক্ষয় ঘটানো গেছে, এই মুহূর্তে আর বিজেপি প্রধান বিপদ নয়, রাজ্যের মানুষের কাছে এই মুহূর্তে প্রধান বিপদ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বাম কথাটা ব্যবহার না করেই বলছি, রাজ্যের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের আগামী নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য একজোট হওয়া উচিত। বাংলার সর্বনাশ রুখতে বর্তমান শাসকের অপসারণ ছাড়া আমাদের সামনে এই মুহূর্তে আর অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটি অ-তৃণমূল ও অ-বিজেপি শক্তিকে রাজ্যের ক্ষমতায় দেখতে চাই, সেটা যত দ্রুত করা যাবে, তত মঙ্গল।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. আশিসবাবুর লেখা নিবন্ধটীর সংে একমত না হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বিহারে বামপন্থীদের মধ্যে সিপিআই ও সিপিএমও পড়ে এই উল্লেখ থাকলে ভাল হত।

আপনার মতামত...