জনগণের রেল আজ কর্পোরেট তোষণের হাতিয়ার

দেবাশিস মিথিয়া

 


রেলবাজেট বন্ধ হওয়ার পর যাত্রীভাড়া এবং মাল পরিবহনের খরচ অনেকখানি বেড়েছে। প্ল্যাটফর্ম টিকিট আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়ায় যে ভর্তুকি ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ব্যয়বহুল হয়েছে রেলভ্রমণ। রেলের অন্যান্য পরিবর্তনগুলি সমাজের দরিদ্র মানুষের জন্য রেলভ্রমণের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে গরিব যাত্রী, দৈনিক যাত্রী ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালনে রেল পিছিয়ে গেছে। ২০১৭ সালের পর থেকে রেলের মূল উদ্দেশ্য ‘লাভ ও রাজনীতি’-তে স্থানান্তরিত হয়েছে। এতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বহুগুণ বেড়েছে

 

আগামী ২৩ জুলাই, সংসদে মোদি-৩ সরকারের প্রথম বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তখনই স্মৃতিতে ভিড় করবে রেলবাজেট। আর সেই স্মৃতি হাতড়েই জনগণ নস্টালজিক হবেন এটাও স্বাভাবিক। বিশেষ করে ৩০-ঊর্ধ্বরা, যাঁরা সংসদে রেলবাজেট পেশ হতে দেখেছেন। রেলবাজেট ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল। সেই কবে, ১৯২৪ সালে অ্যাকওয়ার্থ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রেলবাজেট সাধারণ বাজেট থেকে আলাদা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও একই রীতি মেনে ৭০ বছর ধরে সংসদে আলাদাভাবে রেলবাজেট পেশ হয়েছে। ২০১৭ সালে সাধারণ বাজেটের সঙ্গে রেলবাজেটকে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

স্বাধীন ভারতে রেলমন্ত্রী হিসেবে প্রথম রেলবাজেট পেশ করেন জন মাথাই আর শেষ রেলবাজেট পড়েন সুরেশ প্রভু। এই লম্বা যাত্রাপথে অনেকেই সংসদে রেলবাজেট পড়েছেন, কখনও তার মধ্যে দিয়ে দেশের আমজনতার মন জয় করেছেন, আবার কখনও বিরাগভাজন হয়েছেন। যাঁদের কথা আলাদা করে না বললেই নয়, তাঁরা হলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী, জগজীবন রাম, গনিখান চৌধুরী, মাধবরাও সিন্ধিয়া, নীতিশ কুমার, লালুপ্রসাদ যাদব, মমতা ব্যানার্জি, প্রমুখ। রেলের ইতিহাসে এঁদের নাম থেকে যাবে অক্ষয় হয়ে। রেলমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার সংসদে রেলবাজেট পেশ করেছেন জগজীবন রাম, তারপর সম্ভবত লালুপ্রসাদ যাদব। ২০০৯ সালে, লালুপ্রসাদের সময়েই, রেলবাজেট ১২,২৩৪ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

রেলবাজেটের একটা বিশেষ সুবিধা ছিল যে, এর মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই জনগণের মন জয় করা যেত। খুশি করা যেত তাঁদের। ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে রেল দফতরের একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময় ছিল। আমজনতাকে খুশি করতে গিয়ে অনেক সময়ই রেলমন্ত্রীরা প্রাদেশিকতার দোষে দুষ্ট হয়েছেন। তাঁরা নিজের রাজ্যে রাজনৈতিক জমি শক্ত করতে রেলকে হাতিয়ার করেছেন— যার প্রতিফলন রেলবাজেটেও স্পষ্ট থাকত। এই প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জির কথা উল্লেখ করাই যায়। দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গে রেলের এত প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলেন যা তাঁকে পরবর্তীতে রাজ্যে সরকার গড়তে বেশ খানিকটা সাহায্য করেছে। তবে এইসব প্রকল্পগুলির বেশিরভাগই দিনের আলো দেখেনি।

ফেব্রুয়ারির শেষে সাধারণ বাজেটের ২-৩ দিন আগে সংসদে পেশ হত রেলবাজেট। রেলবাজেটের দিন এগিয়ে এলেই ড্রয়িংরুম থেকে চায়ের দোকান সর্বত্রই এ নিয়ে চর্চা শুরু হত। রাজ্য নতুন কোন কোন ট্রেন পেতে পারে সেই নিয়ে চলত জল্পনা। বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রেলপ্রকল্প নতুন করে চালু হবে কিনা অথবা থেমে থাকা ডাবল লাইনের কাজ কতদিনে শেষ হবে? এই নিয়ে প্রত্যাশার পারদ ক্রমাগত চড়তে থাকত। মেট্রোরেলের বরাদ্দ বেড়ে কাজে গতি আসবে কিনা অথবা দূরপাল্লার ট্রেনের নতুন কোনও হল্ট বাড়ির কাছে হবে কিনা সে নিয়েও গবেষণার শেষ থাকত না। আরও অনেক কিছুর প্রত্যাশা। তবে শেষপর্যন্ত যাত্রীভাড়া না বাড়লেই স্বস্তির নিশ্বাস। এ সবই আজ অতীত।

কী এমন প্রয়োজন পড়ল যে রেলবাজেটের কৌলিন্য মুছে ফেলে তাকে সাধারণ বাজেটের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হল? কেন্দ্রের তৎকালীন মোদি সরকারের বক্তব্য ছিল এর মধ্যে দিয়ে দেশের গোটা আর্থিক ব্যবস্থাকে এক সূত্রে গাঁথা হবে। এই লক্ষ্যেই ২০১৭ সালে রেলবাজেট ও সাধারণ বাজেটকে মিশিয়ে দেওয়া হয় যা কার্যকরী হয় ২০১৭-১৮ আর্থিক বছর থেকে। তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে নীতিনির্ধারক থেকে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত। এক দল বলছেন, বাজেটের একত্রীকরণ দেশের আর্থিক প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে। দুটি বাজেট এক হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সুসঙ্গত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। মানুষকে চমক দিতে জনমোহিনী ঘোষণার বিষয়টি বন্ধ হওয়ায় সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নজর ঘুরেছে সরকারের। একত্রিত বাজেটের বড় সুবিধা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পদের দক্ষ বরাদ্দ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে সামনের সারিতে নিয়ে আসা। যেসব বিশেষজ্ঞরা রেলবাজেটের পক্ষে, তাঁরা মনে করছেন, সম্মিলিত বাজেট পেশ হওয়ার পর ‘রেল এবং সাধারণ’— এই দুই খাতের মধ্যে সম্পদ বণ্টন আরও জটিল হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পদ বণ্টনের দক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। রেলের নির্দিষ্ট সমস্যা এবং সমাধানের ক্ষেত্রেও মনোযোগের অভাব নজরে এসেছে। রেলবাজেট বন্ধ হওয়ার পর দেখা গেছে, এই দফতরের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তার সঙ্গে কর্মদক্ষতার সামঞ্জস্য নেই। বাজেট একত্রিত হওয়ার পর রেলপ্রকল্প নির্বাচনে জাতীয় অগ্রাধিকারের পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থ বেশি কাজ করেছে তার প্রমাণও মিলেছে। গত ৬ বছরে রেলের মৌলিক সুযোগসুবিধাগুলি, যেমন রেললাইন সম্প্রসারণ, নতুন ট্রেন চালু করা, ট্রেনের নতুন স্টপ, খাবারের পরিষেবা, ট্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্টেশন আধুনিকীকরণ প্রভৃতি বেশি করে পৌঁছেছে শাসক দলের এবং আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সাংসদদের নির্বাচনী ক্ষেত্রে। এর সবটাই হচ্ছে জনসাধারণের অজ্ঞাতে।

একইভাবে জনসাধারণকে অন্ধকারে রেখে রেলকে দ্রুত বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভারতীয় রেল, বেসরকারি উদ্যোগে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে লখনউ থেকে নয়া দিল্লি পর্যন্ত তেজাস এক্সপ্রেস চালায়। এই কাজে গতি আনতে, ২০২০ সালের বাজেটে বেসরকারি উদ্যোগে ট্রেন চালানো এবং স্টেশন উন্নয়নের বিষয়টিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়। ওই বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশের পর্যটন রুটে ১৫০টি বেসরকারি ট্রেন চালু করা হবে। এই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে কিনা তার খবর নেই। তবে এই পদক্ষেপ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ট্রেন চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বেসরকারিকরণের অন্য রূপ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে। ২০১৭ সালের পর ভারতীয় রেলের বিভিন্ন প্রকল্পে পিপিপি মডেল গ্রহণ করা হয়েছে। এর  সাহায্যে স্টেশন পুনর্বিকাশ, রেল পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং লজিস্টিক পার্ক তৈরি করা আসলে রেলে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করারই নামান্তর। পণ্য পরিবহনে দক্ষতা বাড়াতে বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে মালবাহী টার্মিনাল স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পিপিপি মডেলে সোনাগর-গোমো সেকশনের ২৬৩.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর (ডিএফসি) তৈরির প্রস্তাব ছিল। ইস্ট-কোস্ট, ইস্ট-ওয়েস্ট, এবং নর্থ-সাউথ রুটেও নতুন ডিএফসি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়াও ভারতীয় রেল রাজস্ব বাড়াতে রেলের জমি ও বাড়িকে বেসরকারি কাজে ব্যবহার করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রেলনীতির উদারীকরণের ফলে বেসরকারি কোম্পানি রেলপ্রকল্প তৈরি এবং রেলের দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছে। এর ফলে রেলে বেসরকারি বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে। রেলের রোজগার বাড়াতে বিজ্ঞাপন, ক্যাটারিং, স্টেশন চত্বরে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিপণী খুলে রেলে বেসরকারি বিনিয়োগের পথকে আরও প্রশস্ত করা হয়েছে। রেলবাজেট বন্ধের পর এটাই রেলের নজরকাড়া পরিবর্তন। তবে সরকারের বক্তব্য ভারতীয় রেলের মূল অপারেশনগুলি সরকারি হাতেই থাকবে।

রেল বেসরকারিকরণের পক্ষে সরকারি যুক্তি, দক্ষতা বাড়িয়ে রেলের আয় বৃদ্ধি। এখন প্রশ্ন হল রেলের দক্ষতা কি সত্যি বাড়ছে? রেলের অপারেশনের দক্ষতা এবং তার লাভজনক দিকটি মূল্যায়ন করতে অপারেটিং রেশিও-র ধারণা ব্যবহার করা হয়। অপারেটিং রেশিও হিসেব করতে প্রথমে মোট অপারেটিং ব্যয়কে মোট রাজস্ব দিয়ে ভাগ করা হয়, পরে সেই ভাগফলকে ১০০ দিয়ে গুণ করা হয়। ধরা যাক, মোট অপারেটিং ব্যয় ১০০ টাকা এবং মোট আয় ১৫০ টাকা, সেক্ষেত্রে, অপারেটিং রেশিও = (১০০/১৫০) x ১০০ = ৬৬.৬৭%। এর অর্থ হল প্রতি ১০০ টাকা রাজস্ব পিছু, রেল পরিচালনায় ব্যয়ের পরিমাণ ৬৬ টাকা ৬৭ পয়সা। এ থেকে পরিষ্কার অপারেটিং রেশিও যত কম হবে তত আর্থিক দক্ষতা বাড়বে। ২০১৭ সালে সাধারণ বাজেট ও রেলবাজেটকে মিশিয়ে দেওয়ার পর ভারতীয় রেলের অপারেটিং রেশিও অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সালে এই অনুপাত ছিল যথাক্রমে ৯০.৪৮% ও ৯৬.৫%, সেখানে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯৮.১৪% ও ৯৮.৭%। রেলের এই পরিবর্তনটিও বিপজ্জনক। বাজেট একত্রিত হওয়ার পর রেলের অপারেটিং রেশিও এতটাই বেড়েছে উদ্বৃত্ত সৃষ্টির সুযোগ নেই। বেশি অপারেটিং রেশিও রেলকে অদূর ভবিষ্যতে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে। এখনই রেলের উপর ঋণের বোঝা চেপে আছে ৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। যদিও বিষয়টি বিগত বাজেটে গুরুত্ব পায়নি।

রেল দেশের আর্থিক ও সামাজিক মেরুদণ্ড। রেলের নিজস্ব বাজেট অবলুপ্তির পর শুধু আর্থিক লাভের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। উপেক্ষিত হয়েছে সামাজিক দিকটি। আর্থিক লাভ বাড়াতে গিয়ে আমজনতার স্বার্থ ভাবা হয়নি। ভারতীয় রেলে গত পাঁচ বছরে চুপি চুপি ভাড়া বেড়েছে অনেকখানি। ২০২০ সালে রেলের বার্ষিক রাজস্ব ২৩০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি কিলোমিটারে ১ থেকে ৪ পয়সা ভাড়া বাড়ানো (শ্রেণির উপর নির্ভর করে) হয়েছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে যাত্রীপিছু প্রতি কিলোমিটারে রেলভাড়া ০.৬৬ টাকা হয়েছে যা ২০১৩-১৪ সালের ভাড়ার দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৩-১৪ সালে এই ভাড়া ছিল ০.৩২ টাকা। দেখা যাচ্ছে এই কয়েক বছরে রেলভাড়া বেড়েছে ১০৭ শতাংশ। ২০২৩-এর নভেম্বরের পর টিকিটের গতিশীল মূল্য (টিকিটের চাহিদা জোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ) চালুর পর দ্বিতীয় শ্রেণির এসি, তৃতীয় শ্রেণির এসি এবং স্লিপার ক্লাস টিকিটের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফ্লেক্সি-ভাড়া চালু হওয়ার ফলে পিক সিজনে ভাড়া হু হু করে বাড়ছে। এই যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য রেলভ্রমণকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে। লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ফি যাত্রীদের উপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রেলভ্রমণের ছাড় বাতিল করে গত তিন বছরে মোদি-সরকার ৩৭০০ কোটি টাকা আয় করেছে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে প্রবীণ নাগরিকদের। বেসরকারি তত্ত্বাবধানে ট্রেন এবং স্টেশনে বিশেষ পরিষেবা চালু হওয়ায়, স্বল্প-আয়ের মানুষরা সেগুলিকে ব্যবহার করতে পারছেন না। ছোট স্টেশনগুলি বন্ধ করা হয়েছে, আবার কিছু স্টেশনের অস্তিত্ব শুধুই খাতায়কলমে। এর ফলে, গ্রামীণ এবং নিম্ন-আয়সম্পন্ন মানুষের কাছে রেল পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ কমে গেছে। সরকার রেলের ভর্তুকি কমিয়ে যাত্রীদের কাছে রেল পরিষেবার খরচ বাড়িয়েছে— যা কম রোজগার করা লোকদের প্রভাবিত করছে সবচেয়ে বেশি। এ-প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধির বক্তব্য— “মোদি সরকারের চালু করা অভিজাত ট্রেন বন্দে ভারত, শতাব্দী এক্সপ্রেস দরিদ্রদের নাগালের বাইরে। শতাব্দীতে দিল্লি থেকে কানপুর যেতে ভাড়া ৮৪০ টাকা এবং বন্দে ভারতে তা ১১৯৫ টাকা।” তিনি আরও বলেন, “রেলপ্রকল্প ঘোষণার সময় সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। ট্রেনে এসি কোচ বাড়িয়ে সাধারণ বগির সংখ্যা কমানো হয়েছে। আসলে, রেলবাজেট বাতিল করা হয়েছিল শুধুমাত্র এই ধরনের অপকর্ম লুকোনোর জন্য…।”

রেলবাজেট বন্ধ হওয়ার পর যাত্রীভাড়া এবং মাল পরিবহনের খরচ অনেকখানি বেড়েছে। প্ল্যাটফর্ম টিকিট আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়ায় যে ভর্তুকি ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে ব্যয়বহুল হয়েছে রেলভ্রমণ। রেলের অন্যান্য পরিবর্তনগুলি সমাজের দরিদ্র মানুষের জন্য রেলভ্রমণের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে গরিব যাত্রী, দৈনিক যাত্রী ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালনে রেল পিছিয়ে গেছে। ২০১৭ সালের পর থেকে রেলের মূল উদ্দেশ্য ‘লাভ ও রাজনীতি’-তে স্থানান্তরিত হয়েছে। এতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বহুগুণ বেড়েছে। এই মুহূর্তে রেলের পৃথক কোনও বাজেট না থাকায় সংসদে এ-বিষয়ে আলাদা করে আলাপ-আলোচনার সুযোগ নেই। সেই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে মোদি সরকার রেলকে তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরিয়ে এনে কর্পোরেট তোষণের হাতিয়ার করেছে।


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...