তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা

দেবাশিস মিথিয়া

 


সমাজের মূল মেরুদণ্ড— শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। আরজিকর একাধারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আরজিকরে শিক্ষানবীশ ডাক্তারের মৃত্যু সমাজের মেরুদণ্ডে আঘাত এনেছে। একজন এমডি পাঠরতা চিকিৎসকের কাছে এটা তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— দ্বিতীয় বাড়িও বটে। সেই শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষাক্ষেত্রেই ধর্ষিতা হয়ে খুন হচ্ছেন। এর কী ব্যাখ্যা হবে জানা নেই। অন্যদিকে মেয়েটি কর্মরতা চিকিৎসক। একজন নাইট ডিউটিতে থাকা চিকিৎসককে নিজের হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে! একজন মহিলা তাঁর কর্মস্থলেই নিরাপত্তাহীন। যে বার্তাটা জনমানসে যায় সেটা আতঙ্কের। ঘটনাটি শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে কলুষিত করেনি। সমাজের ভিতটাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে

 

স্বাধীনতার রাতে নারীদের সুরক্ষার জন্য নারীরাই রাতদখলের ডাক দিয়েছিলেন— মূল লক্ষ্য ‘জাস্টিস ফর আরজিকর’। সহনাগরিক হিসেবে এই আন্দোলনে সামিল হতে হাজির ছিলাম গড়িয়াহাট মোড়ে। জমায়েতের চেহারা ও মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখে অভিভূত। যেখানে কোনও রাজনৈতিক মতবাদ নেই, ধর্মের বিভেদ নেই, আর্থিক বৈষম্য নেই, শুধু একটাই আওয়াজ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ অর্থাৎ বিচার চাই। একই দাবিতে সারা রাজ্যের লাখো লাখো মেয়েরা ওইদিন রাতে পথে নেমেছিলেন। রাজ্যের বাইরেও দিল্লি, মুম্বাই, পুনে সর্বত্র নারীরা বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে পথে ছিলেন। সব বয়সের পুরুষরাও সামিল হয়ে আন্দোলনে সহমর্মিতা জানিয়েছেন। যা আন্দোলনের ঝাঁঝকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চমকের তখনও বাকি। সেই মাঝরাতে আমার এক আত্মীয়া কলেজস্ট্রিট থেকে জমায়েতের কয়েকটা ছবি পাঠাল। কলেজস্ট্রিট মোড়ে ওর বক্তৃতার ছবি। বিশ্বাস করুন নতুন করে উপলব্ধি হল এই আন্দোলনের গভীরতা কতটা। কারণ যে ভদ্রমহিলার কথা বলছি তিনি সিনিয়র টিচার। বিশ্বাস করুন মিটিং-মিছিলে হাঁটা তো দূরঅস্ত, ওকে কোনওদিন কোনও বিষয়ে মুখ খুলতে দেখিনি। সেই তিনিই মাঝরাতে রাস্তার মোড়ে বিচারের দাবিতে সবার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন। মনে পড়ল সুমনের গানের লাইন— মাঝরাত্তিরে চাঁদের কাস্তে, ধারালো হচ্ছে আস্তে আস্তে…।

সর্বত্র একটাই আওয়াজ— বিচার চাই। কীসের জন্য বিচার? গত ৯ আগস্ট আরজিকর হাসপাতালে এক মহিলা পিজিটি (স্নাতকোত্তর শিক্ষানবীশ) ডাক্তারকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। যা গোটা সমাজকে একেবারে বেআব্রু করে দিয়েছে। আমাদের অনেকগুলো প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য বিচার চাই।

সমাজের মূল মেরুদণ্ড— শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। আরজিকর একাধারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আরজিকরে শিক্ষানবীশ ডাক্তারের মৃত্যু সমাজের মেরুদণ্ডে আঘাত এনেছে। একজন এমডি পাঠরতা চিকিৎসকের কাছে এটা তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান— দ্বিতীয় বাড়িও বটে। সেই শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষাক্ষেত্রেই ধর্ষিতা হয়ে খুন হচ্ছেন। এর কী ব্যাখ্যা হবে জানা নেই। যা শোনা যাচ্ছে খুনের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে যুক্ত আছেন এক শিক্ষক। তদন্তে যদি তা প্রমাণ হয় তাহলে সমাজের কাছে মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না। অন্যদিকে মেয়েটি কর্মরতা চিকিৎসক। একজন নাইট ডিউটিতে থাকা চিকিৎসককে নিজের হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে! খুনের মোটিভ কী এবং কেন খুন সে প্রশ্ন তো পরে। একজন মহিলা তাঁর কর্মস্থলেই নিরাপত্তাহীন। যে বার্তাটা জনমানসে যায় সেটা সুখের নয়, আতঙ্কের। ঘটনাটি শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে কলুষিত করেনি। সমাজের ভিতটাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজের মেরুদণ্ড শক্ত রাখার দায় যাঁদের, তাঁরাই কেমন যেন সব গুলিয়ে দিচ্ছেন। রাজ্যে যদি আইনের শাসন থাকত তাহলে হয়তো মহিলাদের মধ্যরাতে পথে নামার ডাক দিতে হত না। একথা বলছি কারণ কোনও অপরাধ ঘটলে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে, অপরাধী শাস্তি পাবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু যখন দেখা যায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাঁর কাজ সেই শাসক নিজে অপরাধীকে আড়াল করছে, অপরাধকে ধামাচাপা দিচ্ছে তখন মানুষের পথে নামা ছাড়া উপায় থাকে না।

 

কেন এমনটা ঘটল?

আরজিকরের ঘটনায় কয়েকদিন ধরে নানা চাপানউতোর চলছে। কেউ বলছেন পুলিস আসল অপরাধীকে আড়াল করতে এক সিভিক পুলিশকে গ্রেফতার করে নজর ঘোরাচ্ছে। কেউ বলছেন এখানে একজন প্রভাবশালীর ছেলে জড়িয়ে আছে। কেউ বলছেন অধ্যক্ষই আসল কালপ্রিট, এখানে ড্রাগর‍্যাকেট চালান। তিনি হাসপাতালের বর্জ্য বিক্রি করে অবৈধভাবে রোজগার করেন। বেআইনি পার্কিং থেকে টাকা তোলেন। নানা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এগুলো সব সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও একটা পোস্টে দেখলাম, আরজিকরের কোনও ডাক্তার জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ভিতরে চরম অরাজকতা। যার মূল পান্ডা ছিলেন হাসপাতালের সদ্যোপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এই অরাজকতার কথা স্বাস্থ্যদফতর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সবাই সবটা জানে। কেউই সেভাবে এটার সমাধান চায়নি। প্রত্যেকেরই ভেস্টেড ইন্টারেস্ট রয়েছে। এতে নাকি দুজন ইন্টার্নও যুক্ত। তারা আবার হোস্টেলে সেক্সর‍্যাকেট চালায়। কোন দেশে বাস করছি!! মৃত চিকিৎসক এটা জানতে পেরে প্রতিবাদ করেছিলেন। অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি জানান। তাঁদের কাছে সুবিচার না পেয়ে হতাশায় বলে ফেলেন সমাজমাধ্যমে সব জানিয়ে দেবেন। এখান থেকেই নাকি গণ্ডগোলের সূত্রপাত। প্রথমে ভয় দেখানো, নতুন গাড়ি ভাঙচুর— এই সব হয়। রাতে ওঁর উপর অত্যাচারের পরিকল্পনা হয়। এই পরিকল্পনা নাকি অধ্যক্ষ জানতেন। তবে পরিণতি এটা হবে তিনি আশা করেননি। এসবের সঠিক কোনও তথ্যপ্রমাণ কারও কাছে নেই। ঘটনার পরম্পরায় সামনে এসেছে। লেখালেখি হচ্ছে। আমরা জানছি। হয়তো ওই শিক্ষানবীশ চিকিৎসকও ভিতরে থাকার ফলে এগুলো সব জানতে পেরেছিলেন। সুস্থ মানসিকতার বলেই প্রতিবাদ করেছিলেন। তবে, সমাজমাধ্যমে যা ঘুরছে তা নাকি সবই মিথ্যে, এআই-জেনারেটেড— রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সেরকমই দাবি। নিজে প্রেসকে তা জানিয়েছেন। কলকাতা পুলিশ বিশ্বের অন্যতম দক্ষ পুলিশ। তাকে একসময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। সেই পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেল চাইলে সব পারে। তাহলে এই বানানো (মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়) জিনিসগুলো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল কেন? এগুলোকে রুখতে না পারা তো পুলিশের ব্যর্থতা। কেন মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারলেন না আরজিকর নিয়ে যা শুনছি তার সত্যতা যাচাই করতে সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করবে। এখানেই অবিশ্বাস দানা বাঁধে। মনে হয় প্রশাসনের মদতেই হাসপাতালের ভিতরে অরাজকতার যে খবর শুনছি তা অনেকাংশে সত্যি।

কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়বে বলেই কি মৃত চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে এত লুকোচুরি? একাধিক মিথ্যের আশ্রয়? হাইকোর্ট মেয়েটির মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার নয় কি যে মৃত্যুটি স্বাভাবিক নয়? নগরপাল প্রকাশ্যে বলেছেন ঘটনায় কাউকে আড়াল করা হচ্ছে না। বিষয়টিতে আমরা আন্তরিক। মিডিয়া বিষয়টিকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে? কী কাণ্ড! অথচ মৃত্যুর পর থেকে পুলিশই লুকোচুরি করছে। মেয়েটির বাড়িতে মৃত্যুসংবাদ দিয়েছিলেন একজন অ্যাসিট্যান্ট সুপার। তিনি জানিয়েছিলেন মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। যে-কোনও মৃত্যুর আসল কারণ ধামাচাপা দেওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। তড়িঘড়ি মৃতদেহের পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা হয়। পোস্টমর্টেম চলাকালীন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর নেতৃত্ব সেখানে হাজির হয়। ওই মৃত চিকিৎসকের বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু পুলিশ কিছুতেই তাতে রাজি নয়। ডিওয়াইএফআই-নেতৃত্ব আশঙ্কা করেছিল পুলিশ কিছু একটা গোপন করছে। ওদের দাবি ছিল যে হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সেখানে পোস্টমর্টেম হলে সেই রিপোর্ট নিরপেক্ষ হবে না। অন্যত্র পোস্টমর্টেম করা হোক ও মৃতদেহের সংরক্ষণ করে তদন্ত হোক। তাদের সেই দাবিতে পুলিশ কান দেবে না এটাই স্বাভাবিক। দেয়ওনি। আচ্ছা বলুন তো ক্রিমিনাল ল পুলিশের চেয়ে ভাল কে জানে? যে হাসপাতালে ক্রাইম হল সেখানেই পোস্টমর্টেম? নিরপেক্ষ রিপোর্ট পাওয়া যায়!! সেটা খুব স্বাভাবিক বলে মনে হয়? অথচ নগরপাল নিরপেক্ষতার কথা বলছেন। এমনকি পোস্টমর্টেমের পর মৃতদেহ মেয়েটির বাবাকে দেওয়া হয়নি। পুলিশ তড়িঘড়ি দাহ করে ফেলার জন্য মেয়েটির বাড়ির উদ্দেশ্যে ডেডবডি নিয়ে রওনা হয়। পরে মেয়েটির বাবা সেখানে পৌঁছান। সিপিএমের যুব-নেতৃত্ব হাসপাতালে যখন মেয়েটির বাবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় তারা ওঁর কাছে জানতে চায় আপনি কী চান? পুলিশ যা করছে আপনি খুশি? তিনি অসহায়ের মতন বলতে থাকেন পুলিশ আমার মেয়েকে নিয়ে কোথায় চলে গেল!!! পুলিশের ব্যস্ততা মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে তথ্য লোপাট করার।

প্রমাণ লোপাটের দ্বিতীয় ধাপ আরও মারাত্মক। ঘটনার স্থানকে ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলতে পারলে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের পক্ষে নমুনা জোগাড় করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে অপরাধীকে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। সবাই জেনেছি খুন ও ধর্ষণের ঘটনা সেমিনার রুমে ঘটেছে। একটি ভিডিওতে দেখলাম আরজিকরের এক প্রবীণ ও দায়িত্ববান শিক্ষক জানিয়েছেন সেমিনারকক্ষে নয় ঘটনাটি ঘটেছে তার সংলগ্ন একটি ঘরে। পরে মৃতদেহ সেমিনার রুমে এনে রাখা হয়। মোটামুটি রাজ্য পুলিশ যখন তদন্ত করছিল তখন চাপ ছিল না। কিন্তু বিষয়টি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে অর্থাৎ তদন্তের ভার সিবিআই পেতে পারে— সেই সময়ে ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ তড়িঘড়ি ঘরটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। যুক্তি দেখান মেয়েদের নিরাপত্তা বাড়াতে এই কাজ। কাজটি এতটাই গোপনে হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধানের কাছেও ঘর ভাঙার খবর ছিল না। এমনকি ওই বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা, আন্দোলনরত চিকিৎসকরাও এব্যাপারে অন্ধকারে ছিলেন। তাঁরা যখন জেনেছেন তখন অনেকটাই ভাঙা হয়ে গেছে। শুরু থেকেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। আরজিকরের ডাক্তারদের এক অংশ ১০ তারিখ পর্যন্ত বাইরের কলেজের ডাক্তারদের হাসপাতালে ঢুকতেই দিতে চাইছিল না। তার কি যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ আছে?

একটা গানের লাইন মনে পড়ছে, ‘কত বছর মানুষ বাঁচে পায়ে শিকল পরে’….। আরজিকর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে মহিলাদের নেতৃত্বে সেদিন নাগরিক সমাজ যেভাবে মধ্যরাতে পথে নেমেছিলেন তা দেখে মনে হয়েছে মানুষ অন্যায়ের শিকল ছিঁড়ে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা চাইছেন। ঠিক তখনই কিছু দুষ্কৃতি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে সমস্ত কিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। যা ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রীর দক্ষ কলকাতা পুলিশের সামনেই। ঘটনা দেখে মনে হয়েছে পুলিশ নিজেই ওদের জায়গা করে দিয়েছে। পুলিশ কোনও বাধাই দেয়নি। উল্টে মুখ্যমন্ত্রীর গর্বের পুলিশ ফিমেল ওয়ার্ডের বাথরুম, রোগীদের কম্বলে আশ্রয় নেয়। ডিউটিরত পুলিশ জামা খুলে ওয়ার্ডের নার্সদের কাছে নিরাপত্তা খুঁজেছে। এটা নিশ্চয়ই এআই-জেনারেটেড নয়? টিভির ফুটেজ বলছে ভাঙচুরের সময় পুলিশকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। স্বাধীনতার দিন বিক্ষোভরত নার্সরা টিভির সামনে প্রশ্ন রেখেছেন পুলিশকে যদি আমাদেরই বাঁচাতে হয় তারা আমাদের নিরাপত্তা দেবে কী করে? তাঁদের আরও অভিযোগ উচ্চতর কর্তৃপক্ষ সে-রাতে নার্সদের কোনও খবর নেননি। এখানে লুকোনোর কিছু নেই তাঁরা প্রকাশ্যে বলেছেন। একটা প্রশ্ন করি? বাথরুম বাদ দিলাম, মধ্যরাতে কোনও পুরুষ বিনা অনুমতিতে যদি ফিমেল ওয়ার্ডে ঢোকে তাকে কি পুলিশ ছেড়ে দিত? তাহলে এই পুলিশের শাস্তি হবে না কেন? সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর দুষ্কৃতকারীরা যখন চলে যায় তখন ঘটনাস্থলে নগরপাল হাজির হয়ে সবটা মিডিয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে দায়মুক্ত হয়েছেন। শাসক ডিওয়াইএফআই-এর উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢেকেছেন। পুলিশ কয়েকজন অপরাধীর ছবি সমাজমাধ্যমে ছেড়েছে। এরা কেউই ডিওয়াইএফআই কর্মী নন। আরজিকর-কাণ্ডে প্রতি মুহূর্তে বিতর্ক আর অস্বচ্ছতা। আসলে মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় কী? এটা একেবারেই পরিকল্পিত হামলা।

আরজিকরের বিচারের দাবিতে রাতদখলের আন্দোলনের গোয়েন্দা রিপোর্ট সরকারের কাছে ছিল। তাঁদের কাছে খবর ছিল আমজনতা পথের দখল নেবে। শাসক ভয় পেয়ে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য এই পরিকল্পিত হামলা ঘটিয়েছে— এমনটাই জনশ্রুতি। কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনরত ডাক্তারদের উপর ভীতি প্রদর্শনের জন্যই এই ভাঙচুর। তবে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী ভাল করেই জানেন এভাবে নাগরিক আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যায় না। সাময়িক হয়তো থামিয়ে রাখা যাবে।

এই আন্দোলনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পেন-ডাউনের ডাক দিয়েছেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এই আন্দোলনে সামিল হয়ে বিচারের দাবিকে আরও জোরদার করতে হবে। কারণ ডাক্তাররা বেশিদিন আন্দোলন চালাতে পারবেন না, তাঁদের কাজে ফিরতেই হবে। নইলে তাঁদের সমাজের চোখে ছোট করা হবে। আসুন আরজিকরের বিচার চেয়ে শুরু হওয়া নাগরিক আন্দোলনকে গণআন্দোলনের চেহারা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই। আন্দোলন জারি থাক যতদিন না আমার আপনার বাড়ির মেয়েটা আরজিকর হাসপাতালে যাদের হাতে ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...