পুরুষমাত্রই সম্ভাব্য ধর্ষক

প্রবুদ্ধ ঘোষ

 


আরজিকর হাসপাতালে কর্মরতা ডাক্তারের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাইতে রাজ্য ও দেশ উত্তাল। ক্রমশ তা লিঙ্গরাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক অনুশীলনের মেলবন্ধন ঘটাতে চেষ্টা করছে। জনমানসের শাসকবিরোধী বিক্ষুব্ধ অবস্থান খুবই আশাপ্রদ। কিন্তু, একইসঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, পৌরুষ-আধিপত্য এবং লৈঙ্গিকবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন জারি থাকা জরুরি। মনে রাখা দরকার এটিই একমাত্র ধর্ষণ নয়; এর আগে এবং পরেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মনে রাখা জরুরি লৈঙ্গিকবৈষম্যের সুদীর্ঘ ও প্রমেয় সানাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে

 

সব তনুমনপ্রাণে পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক। তনুমনপ্রাণে পুরুষমাত্রেই সম্ভাব্য যৌন নিপীড়ক। তনুমনপ্রাণে পুরুষমাত্রেই আধিপত্যমূলক লৈঙ্গিকক্ষমতার সম্ভাব্য অনুশীলনকারী এবং সমর্থক। এই বাক্য ক-টি অপ্রিয় হলেও সত্য। যতদিন লৈঙ্গিকবৈষম্য বজায় থাকবে, যতদিন শাসনতন্ত্র যৌননিপীড়নকে প্রশ্রয় দেবে এবং যতদিন শিশ্নগর্বিতার একটিও অনুশীলন বজায় থাকবে, ততদিন উপর্যুক্ত বাক্যগুলি দুঃখজনক সত্যি হয়ে থাকবে।

যখনই ‘সব পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক’ প্রতর্ক জেগে ওঠে, তখনই বিভিন্ন বয়ান শোনা যায়। আমার বাবাকে দেখেছি, খুব ভাল মানুষ। আমার দাদা/ভাই আমাকে কী ভালবাসে! আমার পুরুষবন্ধুটি আমার সঙ্গে কী ভাল ব্যবহার করে! আমার কাকা/মামা/ঠাকুর্দাকে দেখলে মনেই হবে না যে এইসব বদগুণ তাঁর মধ্যে আছে। এত বড় মাপের একজন কবি নারীর দ্রোহ নিয়ে কী দারুণ কবিতা লিখেছেন। উপর্যুক্ত কথাগুলি প্রায়ই ‘প্রিয় পুরুষ’ বিষয়ে বলতে বা লিখতে দেখা যায়। আদতে, এই কথাগুলি অংশত সত্য হলেও হয়তো সর্বাঙ্গীন সত্য না এবং সামাজিক সত্য তো নয়ই। কোনও পুরুষ নিজের পরিবারের নারীদের হয়তো ভালবাসেন, কিন্তু তিনিই হয়তো নিজের কর্মক্ষেত্রে সহকর্মিণীর ওপরে আধিপত্যমূলক লিঙ্গপরিচিতির অনুশীলন করেন। প্রিয় পুরুষবন্ধুটি হয়তো বিশেষ বিশেষ বন্ধুবৃত্তে খুবই প্রগতিশীল, নারীমুক্তি-বিষয়ক বক্তৃতা করেন। তিনিই হয়তো ক্ষেত্রান্তরে কারও ওপরে নিজের বাধ-না-মানা যৌনেচ্ছার প্রয়োগ করেছেন। সমাজদ্রোহ বিষয়ে দুর্দান্ত সাহিত্য/শিল্প করা কোনও সাহিত্যিক/শিল্পী হয়তো কোনও তরুণীর ইনবক্সে উদগ্র যৌনবাসনার অনভিপ্রেত বার্তা পাঠান। শ্রেণিরাজনীতি-সচেতন কোনও পুরুষ লৈঙ্গিকবৈষম্যের বিষয়ে হতচেতন বা নির্লিপ্ত-উন্নাসিক, এমন প্রায়ই দেখা যায়। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়া সক্রিয় রাজনীতি-সচেতন ব্যক্তি লৈঙ্গিক-সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘অনুমতি’ শব্দটির মানে বোঝেন না বা তা উল্লঙ্ঘন করে ন্যাকা সাজেন এমন উদাহরণও প্রায়ই উঠে আসে। বয়ঃসন্ধিতে নিকট-সম্পর্কের বা দূর-সম্পর্কের পুরুষ-আত্মীয়ের যৌনলালসার শিকার হতে হয়েছে অনেক নারীকেই। সামাজিক লজ্জার কারণে তাঁরা বলতে পারেননি প্রকাশ্যে। রাস্তাঘাটে যে পুরুষ কোনও অছিলায় নারী-যৌনাঙ্গের স্পর্শ পেতে চেষ্টা করে, যে পুরুষ বন্ধুবৃত্তে যৌনইঙ্গিতপূর্ণ মশকরা ছুড়ে নারীকে অস্বস্তিতে ফেলে, যে লোক অধস্তন মহিলাকর্মীকে বিরক্ত করে ক্ষমতাবল দেখাতে চায়, যে লোক মাঝরাতে অনভিপ্রেত ও অশ্লীল বার্তা পাঠিয়ে চেনা-অচেনা নারীকে উত্যক্ত করে, যে পুরুষ পরিবারের নারীর চলন-বলন-মননের ওপরে কর্তৃত্বসুলভ নির্দেশ চাপিয়ে দেয়, তারা সকলেই কারও-না-কারও ভাই/দাদা, বাবা, মামা/কাকা, পুত্র, বন্ধু। তারা অনেকেই হয়তো সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতির অগ্রগণ্য সমঝদার। লৈঙ্গিকশোষণের সব রসদই তাদের মধ্যে রয়েছে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলি বেরিয়ে আসে। ভদ্রবৃত্তে ইমেজ রক্ষার দায়ে প্রকাশ্যে লৈঙ্গিকশোষণেচ্ছার অনুশীলন করে না তারা, কিন্তু আড়ালে আবডালে প্রচ্ছন্নস্বরে তেমন অনুশীলন চলে। ‘মি টু’ আন্দোলন, অগণন ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’-এর বিবৃতি তেমনই সাক্ষ্য দেয়।

 

ধর্ষণ এবং যৌননিপীড়ন পৌরুষ প্রদর্শনের পন্থা; একইসঙ্গে শাসনতন্ত্র এবং ক্ষমতাশালীর প্রদর্শনের হাতিয়ার। যে-কোনও দাঙ্গা বা বৃহৎ সামাজিক-রাজনৈতিক অশান্তির সাধারণ উপাদান নারীর ওপরে যৌননিপীড়ন। অন্য সম্প্রদায় বা ধর্মের নারীকে ধর্ষণ করে এক সম্প্রদায়ের পুরুষের আত্মা তৃপ্ত হয়। কোনও সম্প্রদায়ের নারীকে নিপীড়ন করলেই গোটা সম্প্রদায়ের ‘ইজ্জত’ হরণ করা গেল এবং সেই সম্প্রদায়ের পৌরুষকে অপমান করা গেল— এমন বিকৃত ধারণার কদর্য প্রয়োগ যুগে যুগে ঘটেছে। দাঙ্গা বা সামাজিক অশান্তির সময়ে একরকমের গণ-হিস্টিরিয়া তৈরি হয় অর্থাৎ জনমানস বিক্ষিপ্ত হয়, আবেগোন্মত্ত হয়। কল্পিত সমস্যা বা পূর্বঘটিত ভয় থেকে এমন আবেগোন্মত্ততা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ষণ, পৌরুষের বিকৃতকাম প্রকাশ, দুর্বলের ওপরে শিশ্নগর্বিতা ফলানো আকছার ঘটে। খেয়াল করার বিষয় ‘হিস্টিরিয়া’ শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘হিস্টেরা’ থেকে, যার অর্থ জরায়ু। জরায়ুতে যন্ত্রণা হলে নারীশরীর অস্থির হয়, হিস্টেরিকোস শব্দটির উৎস এটি। তাই শাসনতন্ত্রের চাগিয়ে দেওয়া পৌরুষমুখর গণ-হিস্টিরিয়ার সময় জরায়ুকে লক্ষ করবে পুরুষ, এতে আশ্চর্য কী? পৌরুষ বহু সময়ে নিজের প্রতিষ্ঠার জন্য নারীর ওপরে নিপীড়ন বা বিভিন্ন ফরমান চাপানোর পথ বেছে নেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষের নীরব বা সরব সমর্থনও থাকে তাতে। সামাজিক-পারিবারিক পরিসরে জারি থাকা ফতোয়াগুলি আদতে পুংলিঙ্গগর্বী মতামতকেই প্রাধান্য দেয়। অনেক সময়েই দেখা যায় সমাজমাধ্যমে ধর্ষণবিরোধী কোনও পোস্টের কমেন্টে পৌরুষের প্রতিফলন। কোনও যৌননিপীড়ককে ‘শাস্তির বিধান’ দিতে গিয়ে তার স্বজন-নারীদের ধর্ষণের নিদান দেয় তারা বা শিশ্নগর্বী খিস্তি দেয়। সাম্প্রতিক বহু বহু ঘটনায় এর প্রমাণ রয়েছে। আশ্চর্য লাগে না? ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ধর্ষণাত্মক শব্দ-বাক্যের আশ্রয় নেওয়া আদতে পুরুষতন্ত্রের সযত্নলালিত অসুখকেই চিহ্নিত করে। যারা ওই কমেন্টগুলি করছে, তাদের ভেতরেও রয়েছে সুপ্ত ধর্ষকসত্তা। সুপ্ত, কিন্তু যে-কোনও সহজ সুযোগে জেগে উঠতে পারে।

না, সব পুরুষই ধর্ষণ বা যৌননিপীড়ন করে ফেলেছে এমনটা না। সকল পুরুষই লৈঙ্গিক-আধিপত্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুশীলন করে ফেলেনি এখনও। সকলেই অন্য লিঙ্গকে অসম্মান করে ফেলেছে এমনটা না। তাই ‘সম্ভাব্য’ শব্দটির ব্যবহার জরুরি। কিন্তু পুরুষমাত্রেই সামাজিক ও পারিবারিক বৃত্তে সুবিধাজনক লিঙ্গ-পরিচিতির অবস্থানে থাকে। বেশ কিছু সুযোগসুবিধে ‘বাই ডিফল্ট’ ভোগ করে পুরুষ। আজও অধিকাংশ পরিবারে সমবয়সি ছেলে ও মেয়ের বেড়ে ওঠার সময়ে সচেতনভাবে বা অপ্রত্যক্ষ আচরণে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পুরুষ হলে যে মুক্তপরিসর উপভোগ করা যায়, নারী হলে তা করা যায় না। নারীকে বহু প্রতিকূলতা এবং অসম্মান মেনে নিতে শেখানো হয়। আর, এই মেনে ও মানিয়ে নেওয়ার নির্দেশের ভেতরে আসলে লিঙ্গক্ষমতাগর্বী স্বরই লুকিয়ে থাকে। সামাজিক ক্ষেত্রে শারীরিক বা বৌদ্ধিক শ্রমের কাজে পুরুষ ও নারীর বেতনগত বিভাজন আছেই। এই বিভাজন সেই পুরুষতন্ত্রের দান, যে পুরুষতন্ত্র নারীকে দুর্বল-লিঙ্গ মনে করে এবং পুরুষ-লিঙ্গকে আধিপত্যকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চায়। অনেক কাজ যা পুরুষদের দায়িত্বে ‘অনায়াসে’ সঁপে দেওয়া যায়, তা নারীদের দেওয়া যায় না কারণ নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা। প্রিয় পুরুষ বাড়ির বাইরে থাকলে নিরাপত্তাজনিত যতটা আশঙ্কা থাকে, প্রিয় নারী (মেয়ে, স্ত্রী বা বোন) বাড়ির বাইরে সে আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায় পরিবারের সদস্যদের। কারণ চেতনে-অবচেতনে তাঁরা জানেন যে বাইরের জগৎ মেয়েটির জন্য আজও সুরক্ষিত না। মৃণাল সেনের ‘একদিন প্রতিদিন’ চলচ্চিত্রে চিন্ময়ী সারা রাত্তির বাড়ি না-ফেরায় সকলেই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন— তার একটা কারণ অবশ্যই চিন্ময়ীর শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা। পুরুষতন্ত্র যত সহজে লিঙ্গজনিত অপরাধের সার্বিক দায় এড়িয়ে যায়, লিঙ্গনির্বিশেষে সামাজিক সুরক্ষার বন্দোবস্ত ততটাই কঠিন তার কাছে। সেইজন্যই পুরুষতন্ত্রের এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা দেখা যায়— পুরুষতন্ত্র যৌন-নিপীড়ন করে, তাতে মদত যোগায়, পুরুষতন্ত্রই তাকে ডায়ল্যুট করতে চায় এবং পুরুষতন্ত্রই তারপর নারী/অন্যলিঙ্গের রক্ষাকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসে। আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যখনই নিপীড়িত লিঙ্গ-বর্ণ-শ্রেণির মানুষেরা বিচার চান, তখনই ক্ষমতাশালী লিঙ্গ-বর্ণ-শ্রেণির মানুষেরা এক অদ্ভুত উদাসীনতায় তাকে সাধারণীকৃত করে দিতে চান। ২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড এক শ্বেতাঙ্গবাদী পুলিশের হাতে খুন হওয়ায় বিশ্বজোড়া ‘কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ’ প্রতর্ককে সাধারণীকৃত করে ‘সবার জীবন গুরুত্বপূর্ণ’ চিৎকার সাজানো হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের ‘অপর’ করে রাখার পক্ষপাতী যাঁরা, তাঁরাই কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনাধিকার-আকাঙ্ক্ষী স্লোগানে ‘সবার-জীবন’ নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়েন হঠাৎ! উচ্চবর্ণের পীড়নে দলিত খুন হলে দলিতরা সমস্বরে ‘দলিত জীবন গুরুত্ববাহী’ স্লোগান দিলে উচ্চবর্ণ হঠাৎই ‘সবার জীবন গুরুত্ববাহী’ ছেঁদো প্রতর্ক নিয়ে ময়দানে নেমে পড়ে। এসব শয়তানি অনেক যুগের। নারী ও অন্যলিঙ্গের মানুষদের ওপর অত্যাচারের বিচার চেয়ে প্রতর্ক তৈরি হলে (নারীর নিরাপত্তা চাই বা অন্যলিঙ্গের ওপর যৌননির্যাতন বন্ধ হোক বা নারীর স্বাধীনতার দাবিতে নারীর সোচ্চার আন্দোলন) তাকে গুলিয়ে দিতে পুরুষতন্ত্র হাজির করে সাধারণীকৃত বয়ান— সকলের নিরাপত্তা চাই বা সকলের স্বাধীনতা ইত্যাদি। এই বদমাইশি চিরকালীন। এতে সুচতুরভাবে পুরুষতন্ত্র নিজের দিকে ওঠা আঙুলের অভিমুখ বদল করে দেয়। বিশেষ কোনও নারীনির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত এক বা একাধিক পুরুষ এবং মদতদাতা পুরুষতান্ত্রিক নির্দেশাবলির অপরাধমূলক গুরুত্ব লাঘব করতে উঠেপড়ে লাগে। ক্ষমতা (পৌরুষ এবং শাসক) কখনওই দমিতের বা শাসিতের স্বর বরদাস্ত করে না। প্রকৃত ন্যায়বিচারের দাবি, যাতে ক্ষমতাকাঠামো বিপর্যস্ত হবে, তাকে মেনে নিতে পারে না। সেইজন্যই সব পুরুষ সম্ভাব্য ধর্ষক তথা পুরুষতন্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে সোচ্চার স্বরের সত্য মানতে পারে না। তাকে বারবার খুঁজে খুঁজে ব্যতিক্রমী পুরুষের উদাহরণ, ব্যক্তিগত দু-চারটি ‘ভাল পুরুষ’-এর উদাহরণ এবং বিভিন্ন অজুহাত খুঁজে বের করতে হয়। তাকে বারবার দায়ী করতে হয় নারীবাদী চেতনাকে এবং খুঁজতে হয় ‘খারাপ নারী’ বা পুরুষদ্বেষী ঘটনার উদাহরণ। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যেখানে কোনও পুরুষ ভ্রান্ত মামলার শিকার হয়েছে কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দোষারোপের শিকার হয়েছে। কিন্তু, তাতে সার্বিক শিশ্নগর্বী পুরুষসমাজ আর পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য পূতপবিত্র হয়ে যায় না। দু-একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা দিয়ে পুরুষের সম্ভাব্য নিপীড়কসত্তা এবং এ-যাবৎ ঘটে যাওয়া অসংখ্য অজস্র ছোট-বড় নির্যাতনের ঘটনা চাপা দেওয়া যায় না। যাঁরা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁরাও ঠারেঠোরে পুরুষের আধিপত্যমূলক লৈঙ্গিক অবস্থানকে সার-জল দেন আর সম্ভাব্য যৌননিপীড়কদের পক্ষে কুযুক্তির রাস্তা তৈরি করে দেন।

পুরুষ বারবার জোর গলায় দাবি করে যে, সে ধর্ষক নয়। কোনও একটি ধর্ষণের দায় সব পুরুষের না। পুরুষ বড়াই করে প্রমাণ করতে চায় যে, সেই নারীর রক্ষক। নারীকে রক্ষার অযাচিত দায় কাঁধে নিয়ে মহান হতে চায় পুরুষ। প্রশ্নটা এখানেই জাগে যে, নারীকে কেন রক্ষা করতে হবে? কিসের থেকে রক্ষা করতে হবে? কোনও ‘উদারমনা পুরুষ’ নারীকে রক্ষার কথা ভাবতেই পারেন, কিন্তু সেই রক্ষা করার কাজটিও তাঁকে করতে হবে পুরুষদের বিরুদ্ধে গিয়ে। আর, একজন পুরুষ যেমন সুরক্ষাকৌশল জানে, তেমন একজন নারীও নিজের সুরক্ষাকৌশল জানে। প্রশ্ন জাগে, তেমন সুরক্ষার কথা ভাবতে হবেই বা কেন? শতক সহস্রাব্দ ধরে নারীকেই কেন মর্যাদা পালনের, সুনীতি পালনের, পুরুষদ্বারা সুরক্ষিত থাকার, ইজ্জতরক্ষায় সন্ত্রস্ত থাকার হরেক বাধ্যতা মেনে চলতে হবে? কারণ সমাজের সবরকম পুরুষ এবং পুরুষতন্ত্রের শিশ্নগর্বী আচরণ তাকে অবদমিত রেখেছে। সার্বিকভাবে যে-কোনও পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক হতে পারে, ইতিহাসগতভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে। নারীর বিচারপ্রাপ্তির আন্দোলনের সময় বা বড় কোনও সামাজিক বিক্ষোভের সময় পুরুষ সহজে উদার মুখোশ পরে ফেলতে পারে। কিন্তু সেই স্রোত থিতিয়ে আসার পরে সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্তরে ফের পুরুষতন্ত্রের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারে সে। সামাজিক বৃত্তে ফলাও করে প্রগতিশীলতা দেখানো পুরুষ ঘরের অপ্রকাশ্য পরিসরে স্ত্রীর সম্মতির পরোয়া না করে যৌনমিলনে সচেষ্ট হচ্ছে কিংবা স্ত্রীকে নিজের ‘সম্পত্তি’ মনে করে রক্ষণশীলতায় বাঁধতে চাইছে— এমনটা তো প্রায়ই দেখা যায়। ঘরোয়া আড্ডায় চটুল লৈঙ্গিক-অসম্মানজনক চুটকি বলা, রসিকতার স্বরে শিশ্নগর্বী মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া, সমাজমাধ্যমে নারীবিদ্বেষী (বিভিন্ন মাত্রার) মিম বা পোস্ট শেয়ার করা, নারীকে তার সীমাবদ্ধতা-বিষয়ক জ্ঞান দেওয়া, কোনও নির্যাতিতার অবস্থানকে প্রশ্ন করে তাকেই দোষী ঠাওরাতে চাওয়া— এই সবই পুরুষের সম্ভাব্য ধর্ষক মানসিকতার ইঙ্গিতবাহী। আত্মলিঙ্গগর্বিতা অসুখের প্রতিফলন। আর, পুরুষতন্ত্রের ম্যালিগন্যান্ট বৃদ্ধি নারীদের মধ্যেও বিক্ষিপ্ত মেটাস্টেসিসের মতো ছড়িয়ে থাকে। তাঁরা তখন পুরুষতন্ত্রের উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করতে পারেন না কিংবা নিজেরাই অজান্তে পুরুষতন্ত্রের উপাদানগুলির অনুশীলনকারী হয়ে ওঠেন। পরিবারের অন্য নারীদের ওপর হরেক পরাধীনতার ফরমান জারি করা, কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতাকাঠামোর ধারা বজায় রাখা, সামাজিক স্তরে পুরুষের মনমতো তকমা অন্য নারীদের ওপরে এঁটে দেওয়া ইত্যাদি কাজ তাঁরা করেন। শাসকশ্রেণি সবসময়েই এমন চিন্তা ও কর্মে উৎসাহ দেয়, শাসকপ্রতিনিধি তাতে যোগও দেয়। সেইজন্যই রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামোর শীর্ষে থাকা ব্যক্তি, তিনি নারী বা পুরুষ যেইই হোন, পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর পাশে থাকেন। ধর্ষণে জড়িত ক্ষমতার আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের আড়াল করতে অন্যায্য কুযৌক্তিক কথা বলেন। রাজ্য আর কেন্দ্রের প্রধানদের ছত্রছায়ায় থেকে যৌননিপীড়নে অভিযুক্তদের পদোন্নতি হয়। ক্ষমতালোভী আখেরগোছানে যারা, লিঙ্গপরিচিতি-নির্বিশেষে, তারা ক্ষমতাশালী পুরুষতন্ত্রের হয়েই কথা বলে ও আচরণ করে। সমাজের অন্য শাসিতদেরর মতামতকে প্রভাবিত করে চলে নিরন্তর। এতে পুরুষতন্ত্র-শাসনতন্ত্র জোট আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। এদেরই জন্য অন্য লিঙ্গের ওপরে পুরুষের যৌন-আধিপত্য প্রদর্শনের প্রচ্ছন্ন ইচ্ছে প্রকট হয়ে ওঠার সাহস পায়। পৌরুষ-প্রদর্শনের দুরারোগ্য ব্যাধি চিহ্নিত করার পাশাপাশি এই ব্যক্তিজোট চিহ্নিত করা এবং প্রতিরোধ করাও প্রয়োজন।

 

বাসে মহিলাদের জন্য কেন আসন সংরক্ষিত থাকবে? নারীর অধিকারের জন্য কেন বিশেষ আইন থাকবে? এমন বহু ভাবনাও আসলে পুংগর্বিতার প্রচ্ছন্ন প্রকাশ। আসলে এই প্রশ্নগুলির মধ্যে দিয়ে চিরাচরিত বৈষম্যমূলক সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়। পুরুষ নারীকে নিজের সম্পত্তি মনে করে ঘরের কাজে বেঁধে ফেলেছে, তার সুরক্ষার ‘ভার’ নিয়ে আত্মতুষ্ট থেকেছে এবং কতটা পোশাক কীভাবে পরলে পুংলালসা জাগবে না তার এঁদো বিচারে বসেছে। তনুমনপ্রাণে পুরুষ বাদে অন্যদের ‘দুর্বল লিঙ্গ’ তকমা এঁটে দুচ্ছাই করেছে। জবরদস্তি লক্ষণরেখার সীমাবদ্ধতায় আটকেছে। নারীকে প্রয়োজনমতো অবলা দাগিয়ে দেওয়া আবার বিপদ থেকে বাঁচতে নারীকে মহীয়সী/দেবী তক্কমায় ভূষিত করা— এই দুইই একই পুরুষতন্ত্রের দ্বিমুখী শস্ত্র। যে পুরুষেরা নারীকে রক্তমাংসের মানুষের মর্যাদা না দিয়ে হয় অবলা নয় ‘দেবী’ বলে দেন, প্রায়ই দেখা যায় সম্ভাব্য লৈঙ্গিকশোষক হয়ে ওঠার বদ্‌গুণ তাঁদের মধ্যে রয়েছে। ‘মেয়েরা মায়ের জাত’, ‘ব্রীড়া নারীর ভূষণ’, ‘মাতৃত্ব নারীর শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন’ বয়ানরচনা এবং নারীর সমস্ত পরিচিতিকে শারিরিক ‘ইজ্জত’-এ বেঁধে ফেলা তনুমনপ্রাণে পুরুষদের চিরকালীন ভয়ানক সযত্নলালিত ব্যাধি। সম্ভাব্য ধর্ষকদের বিভিন্ন ছলাকলার সঙ্গে লড়াই করে প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে নারীদের। লিঙ্গগতবৈষম্য যুগে যুগে বেড়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, সমানাধিকার তাঁরা পাননি। দৈনন্দিন জীবনে বা পরিবারে শারীরিক ও মানসিকভাবে যৌনলাঞ্ছনার শিকার হতে হয় তাঁদের। বাসে-ট্রেনে প্রায় সব মহিলাই কখনও না কখনও যৌনলাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে লৈঙ্গিকবৈষম্যের শিকার হননি, এমন কে আছেন? কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর অনুপাতে এখনও বিস্তর ফারাক কারণ পৌরুষফতোয়া অগ্রাহ্য করে স্বোপার্জনের স্বাবলম্বী জীবনযাপন এখনও নারীর পক্ষে সহজ না। সেইজন্যই সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সহজ সত্যিকে শিশ্ন-অহং দিয়ে বিচার করে সংরক্ষণের বিরোধিতা করা আদতে ‘পুরুষ মাত্রেই শিশ্নগর্বী’ এই প্রতর্ককে প্রমাণ করে। আরজিকর হাসপাতালে সাম্প্রতিক ধর্ষণ+হত্যাকাণ্ডের পরে সরকার ঘোষণা করেছে “মহিলাদের রাতের শিফট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে”। কিন্তু সরকারের দায়িত্ব নারীকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া নয় বরং নারী ও পুরুষ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে যে-কোনও সময়ে নিঃশঙ্কভাবে কাজ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করা। এহেন বিবৃতি সরকারি মন্দবুদ্ধির প্রতিফলন। লৈঙ্গিকবৈষম্যের অন্যতম চিহ্নক হচ্ছে নারীকে দুর্বল ভেবে বাইরের কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুরুষকে সে-কাজে প্রাধান্য দেওয়া। যৌননির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে মেয়েদের রাতের শিফট থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রকারান্তরে পুরুষের লিঙ্গগর্বী দাপাদাপির আধিপত্যকেই প্রমাণ করে না?

আরজিকর হাসপাতালে কর্মরতা ডাক্তারের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ন্যায়বিচার চাইতে রাজ্য ও দেশ উত্তাল। ক্রমশ তা লিঙ্গরাজনীতি ও সার্বিক রাজনৈতিক অনুশীলনের মেলবন্ধন ঘটাতে চেষ্টা করছে। জনমানসের শাসকবিরোধী বিক্ষুব্ধ অবস্থান খুবই আশাপ্রদ। কিন্তু, একইসঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, পৌরুষ-আধিপত্য এবং লৈঙ্গিকবৈষম্যের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন জারি থাকা জরুরি। মনে রাখা দরকার এটিই একমাত্র ধর্ষণ নয়; এর আগে এবং পরেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মনে রাখা জরুরি লৈঙ্গিকবৈষম্যের সুদীর্ঘ ও প্রমেয় সানাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভমূলক ঘটনাপ্রবাহে এমন অনেকে যোগ দিয়েছে, যাদের ধর্ষক ও যৌননিপীড়ক হয়ে ওঠার অতীত রয়েছে। অনেক সুপ্ত যৌন-নিপীড়নেচ্ছু আন্দোলনের সুযোগে নিজেদের কাদা ধুয়ে নিতে নেমেছে। পুরুষ-আধিপত্য থেকে এবং পুরুষের যৌনেচ্ছানুযায়ী নারীর স্বরূপ নির্ধারণ করার কর্কটরোগ থেকে নারীর মুক্তি এখনও ঘটেনি। আকছার পুংমদগর্বী মিম-ট্রোলের ব্যবহার আর অন্যলিঙ্গকে অবমাননা-করা ভাষাপ্রয়োগ বন্ধ হয়নি। কর্মক্ষেত্রে অধস্তন নারীর প্রতি উচ্চপদস্থ পুরুষের ‘অধিকার ফলানো’র প্রচ্ছন্ন বা প্রকট প্রকাশ বন্ধ হয়নি। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিভিন্ন উপায়ে ধামাচাপা দেওয়ার শাসকীয় অপচেষ্টা আজও অব্যহত। আরজিকর-কাণ্ডের বিরুদ্ধে জনরোষ হয়তো থিতিয়ে যাবে, হয়তো কোনও প্রহসনমূলক বিচারে রাজ্য-কেন্দ্র শাসকগোষ্ঠী তা ধামাচাপা দেবে। তনুমনপ্রাণে পুরুষদের নারী ও অন্যলিঙ্গের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া যৌননিপীড়ন কিন্তু এতে বন্ধ হবে না। কর্মরতা ডাক্তারের মৃত্যু বহু বহু যৌননিপীড়নের ঘটনার মধ্যে একটি— যা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করেছে। কিন্তু এই স্ফুলিঙ্গের থেকে দাবানল তৈরি করার দায়িত্বও নারী এবং অন্যলিঙ্গের মানুষদের। সমাজ আর পুরুষ-রক্ষকের আর শাসকের মুখাপেক্ষী না থেকে প্রতিটি ছোট-বড় ক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রবিরোধী অবিরাম সংগ্রামের দায়বদ্ধতা একান্তভাবে তাঁদেরই। পুরুষ আর শাসকের সঙ্গে সচেতন নীতিগত দূরত্ব রেখেই লড়াইয়ের কৌশল সাজানো প্রয়োজন তাঁদের। দিল্লি ২০১২, কামদুনি ২০১৩, হায়দ্রাবাদ ২০১৯, হাথরাস ২০২০— এই তালিকার শেষ নেই। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই গণ-বিক্ষোভের ঢেউ উঠলেও পুরুষতন্ত্র ঠিক তা সামলে নিয়েছে আর পুরুষ ফলাও করে পরবর্তী যৌননিপীড়নের ছক কষেছে। নারী+অন্যলিঙ্গদের নিজস্ব দায়বদ্ধতা শাসকের মিথ্যে-প্রতিশ্রুতি আর পুরুষের ছদ্ম-ভালমানুষির ধাঁচাকে আক্রমণ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

আর, পুরুষের দায়িত্ব? ওই স্ফূলিঙ্গের আলোয় তনুমনপ্রাণে পুরুষদের নিজেদের দেখার সময় এসেছে। এতদিন যদি নিজেদের স্বরূপ চিনতে না পেরে থাকেন, এবার তবে চিনুন। লৈঙ্গিক-আধিপত্যের অনুশীলন করে সর্বজনীনভাবে পুরুষ অন্যলিঙ্গের ভরসা হারিয়েছে। ধর্ষক তকমা পেয়েছে। এই নোংরা দাগ সহজে মোছার নয়। প্রত্যেক তনুমনপ্রাণে পুরুষ সম্ভাব্য ধর্ষক এবং সম্ভাব্য যৌন-নিপীড়ক— এই সহজ সত্যি অস্বীকার করতে পুরুষকে অহেতুক কুযুক্তির আশ্রয় নিতে হবে না। লিঙ্গগর্বী অহেতুক ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং ‘সম্ভাব্য’ শব্দটি যেন ক্রমশ নেতি হয়ে যায় এবং বাক্যের শব্দগুলি যেন ক্ষয়ে শেষ হয়ে যায় সেই সচেতন আন্তরিক চেষ্টা জরুরি। নিরন্তর। লৈঙ্গিকবৈষম্যের সমাজে ছোট থেকে বড় হতে হতে লিঙ্গাধিপত্য আর পৌরুষমদগর্বিতার প্রকাশ বিষয়ে যা যা কিছু ‘লার্ন’ করা গেছে, সেই সমস্ত কিছুই ‘আনলার্ন’ করার সময় এখন। তনুমনপ্রাণে পুরুষকে জানতে হবে ‘অনুমতি নেওয়া’-র যথার্থ ব্যবহার, শিখতে হবে অনভিপ্রেত আচরণ না-করার নীতি, এবং বুঝতে হবে সমাজনির্মিত লিঙ্গচিহ্নকগুলি অস্বীকারের যাথার্থ্য। না, নারী বনাম পুরুষ কাঙ্খিত প্রতর্ক নয়; নারী আর পুরুষ পরস্পরের শত্রু নয়। কিন্তু, সুদীর্ঘ শোষণ আর আধিপত্যকামিতার মধ্যে দিয়ে তনুমনপ্রাণে পুরুষ নারী ও অন্যলিঙ্গকে নিজের শত্রুতে পরিণত করেছে। সেই শত্রুতার আবরণ ঘোচাতে গেলে পুরুষকেই সহমর্মী, সহনশীল, নতজানু হওয়ার কঠিন অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হবে। দেরি হয়ে গেছে অনেকটা, তবু, পুরুষের আশু দায়িত্ব এটুকুই— অন্যলিঙ্গের ভরসা অর্জন করা। নতমস্তকে ক্ষমা চাওয়া। যদি শাসক আর পুরুষতন্ত্রের ছেঁদো উপাদান তাতে বাধা দেয়, তবে সেই বাধাকে সমূলে উৎপাটন করা।

 

সমাজের একজন নারীকেও যতক্ষণ রাত নামার আগে ঘরে ফেরার কথা ভাবতে হবে, যতক্ষণ একজন মেয়েকেও পৌরুষ-যৌনদৃষ্টিকে ভয় পেতে হবে, যতক্ষণ একজন মেয়েকেও সমাজমাথাদের নির্দেশিকা অনুযায়ী চলন-বলন-মনন সামলে চলতে হবে, যতক্ষণ একজন নারীও ঘরে-বাইরে-সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে কোনও পুরুষের দ্বারা অবদমিত অনুভব করবে, ততক্ষণ এই বাক্য ক-টি দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হয়ে থাকবে। সব তনুমনপ্রাণে পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক। তনুমনপ্রাণে পুরুষমাত্রেই সম্ভাব্য যৌন নিপীড়ক। তনুমনপ্রাণে পুরুষমাত্রেই আধিপত্যমূলক লৈঙ্গিকক্ষমতার সম্ভাব্য অনুশীলনকারী এবং সমর্থক।


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4813 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...