সালমান সিদ্দিকী
সালমান সিদ্দিকী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে অর্ক ভাদুড়ি কথা বললেন তাঁর সঙ্গে
অর্ক ভাদুড়ি: কলকাতায় নারী নির্যাতন-বিরোধী আন্দোলন চলছে৷ আমরা দেখলাম বাংলাদেশেও কলকাতার সংহতিতে ‘মেয়েরা রাত দখল করো‘ আন্দোলন হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?
সালমান সিদ্দিকী: আমাদের দেশে যেমন ধর্ষণ-নারীনির্যাতনের বিচার হয় না, আপনাদের দেশেও হয় না। প্রায় সব ক্ষেত্রে সরকার-প্রশাসনযন্ত্র ধর্ষকদের আড়াল করার চেষ্টা করে। উল্টে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-নির্যাতন চলে, তাদের আটক করে জেলে ভরা হয়।
কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজে একজন তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আমরা এই দৃশ্যই দেখতে পেয়েছি। আসলে শাসকশ্রেণির চরিত্র পৃথিবীর সব জায়গাতেই এক। কিন্তু জনগণ এর বিচার চায়, প্রতিকার চায়। তাই তো দেখছি, দোষীদের শাস্তির দাবি গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো। বামপন্থী এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সমস্ত মানুষ, সংগঠন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, নারী আন্দোলনের কর্মী-সহ বিবেকবান সবাই বিচারের দাবিতে লড়ছে। আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১৪ আগস্ট রাতে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচি ভারতবর্ষে পালিত হয়। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা বাংলাদেশেও এই কর্মসূচির আহ্বান করি। গত ১৬ আগস্ট রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯ আগস্ট রাতে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা ‘রাত দখলে’ জড়ো হয়। তারা আরজিকরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে তনু-মুনিয়া-সহ ধর্ষণ-হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি তোলে। তারা স্লোগান তোলে, ‘গুড়িয়ে দেব পিতৃতন্ত্র, কেঁপে উঠবে রাষ্ট্রযন্ত্র।’
আপনারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার উচ্ছেদ করলেন৷ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার কি আদৌ গণমানুষের দাবি পূরণ করতে পারবে? অনেকেই অভিযোগ করছেন এই সরকার ইউএসএ এবং এনজিও কর্তাদের সরকার৷ আপনার কী মত?
শত শত ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে এবং পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনের দুজন নেতা সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। যেহেতু এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে, ফলে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এই সরকারের ওপর বাস্তব কারণেই বর্তায়। আমরা চাই, এই সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক দাবিগুলো পূরণ করুক! আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে, শেখ হাসিনা-সহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার-সহ ৮ দফা দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করেছি। সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তার প্রতিবাদ করব, ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করব।
অনেকের মধ্যেই একটা কনফিউশন আছে, তাদের জন্য বলছি। এত বড় একটা লড়াই বাইরের প্রভাবে হওয়া সম্ভব নয়। এ লড়াই বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার নিজস্ব লড়াই। হাসিনার পদত্যাগ এ-দেশের ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া।
এখন সরকার গঠন প্রসঙ্গে বলা যাক। আমরা চেয়েছি, এই সরকারে তাঁরাই থাকবেন যাঁরা এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন মানুষ। যাঁদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু তা হয়নি। এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এই সরকারে আছেন। এই সরকারের ওপর গণ-আকাঙ্ক্ষা আছে এ-কথা ঠিক। কিন্তু পুঁজিবাদী ব্যবস্থার প্রতিনিধিনিদের নিয়েই এই সরকার গঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরেই বহু জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর হিংসার খবর এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে অনেকে মনে করছেন এই গণঅভ্যুত্থান মৌলবাদীদের সহায়ক হল। আপনি এই বিষয়ে কী বলবেন?
প্রথমে এ-সম্পর্কে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। অতীতে আওয়ামি লিগ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী পরিবেশ তৈরির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। মানুষকে বিভাজিত করে অগণতান্ত্রিক এবং সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরি করেছে। সাম্প্রদায়িকতা এবং যুক্তিহীন মানসিকতা ফ্যাসিস্ট শাসকের শাসনকার্যকেই সহায়তা করে। সরকার ‘হেফাজত ইসলামে’র মতো মৌলবাদী সংগঠনের কথামতো পাঠ্যপুস্তক থেকে লালন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হুমায়ুন আজাদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অনেক সাহিত্যিকের লেখা বাদ দিয়েছে তা ‘অনৈসলামিক’ বলে। হাসিনা সরকার ভোটের রাজনীতিতে মৌলবাদী শক্তিকে নানাভাবে ব্যবহার করেছে। আওয়ামি লিগ হিন্দুদের জমি দখল, বৌদ্ধদের উপাসনালয়ে হামলা, সাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরির জন্য মন্দিরে হামলা— এরকম অসংখ্য ঘটনা গত ১৫ বছরে ঘটিয়েছে। ফলে আওয়ামি সরকারের আমলে এখনাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ শান্তিতে ছিল এ-কথা একেবারেই ঠিক নয়।
হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুবাড়িতে হামলা হয়েছে, মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে এ-কথা ঠিক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে হিন্দুবাড়িতে হামলা হয়েছে তিনি আওয়ামি লিগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের অংশ হিসেবে এগুলো হয়েছে। কিন্তু দেখানো হয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে। এসব অন্যায় এবং আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়করাও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বলেছেন। আবার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকেও কিছু হিন্দু বাড়ি এবং মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। সরকার পতনের পর দেশে কার্যত কোনও আইন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনি বলে কিছু ছিল না। সেনাবাহিনি তার দায়িত্ব অবহেলা করেছে। ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়াগুলো এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে একেবারেই সঠিক খবর দিচ্ছে না। ফলে ভারতের সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করব, এসব মিডিয়ার কথা আপনারা মনে স্থান দেবেন না। ভারতের স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতি আবেদন, আপনারা বাংলাদেশ নিয়ে সঠিক খবর প্রচার করুন, ভারতবর্ষের মানুষের কাছে সত্য তুলে ধরুন!
এই গণঅভ্যুত্থান মৌলবাদীদের সহায়ক হল বলে আমি মনে করি না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে কোনও গণতান্ত্রিক লড়াই গণতান্ত্রিক শক্তিকেই সহায়তা করে। আমাদের মতো অগণতান্ত্রিক দেশে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিপদ কম-বেশি সব সময়ই থাকে। এর বিরুদ্ধে আমরা লড়ব।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু ধর্মে বিশ্বাস এবং সাম্প্রদায়িকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এখানকার ইতিহাস হল, মানুষ কখনওই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জায়গা করে দেয়নি। ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ এর বিরুদ্ধে লড়েছে। এই লড়াইয়ে লালন, মাওলানা ভাসানি, নজরুল আমাদের অনুপ্রেরণা।
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ‘ভারত বিদ্বেষ‘ নিয়ে আপনার কী অভিমত?
এখানে ‘ভারত বিদ্বেষ’ মানে হল ভারতের শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বর্তমান মোদি সরকার এবং এর আগে অন্য সরকারগুলোও বাংলাদেশের ওপর তাদের শোষণ জারি রেখেছিল। এ শোষণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক সকল দিক থেকে। হাসিনার মতো একটি গণবিরোধী সরকারকে ভারত সরকার বছরের পর বছর সমর্থন করে গেছে। সীমান্ত-হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার পানি চুক্তি, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল করিডোর-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বঞ্চনার প্রবল মনোভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাস্তব সত্য হল এই, আওয়ামি লিগ যেমন সাম্রাজ্যবাদী ভারতরাষ্ট্রকে অন্যায়ভাবে তোষণ করেছে, অতীতে বিএনপি-জামায়াতও নিজেদের স্বার্থে কম-বেশি একই কাজ করেছে।
ভারতের সাধারণ মানুষ আমাদের বন্ধু। আমরা যখন এই আন্দোলন করছিলাম, তখন আমরা দেখেছি কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আপনারা আমাদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন, লড়েছেন। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানাতে গিয়ে আন্দোলনের কর্মীরা পুলিশি নির্যাতন-গ্রেফতারের শিকার হয়েছে। তাদের এ-লড়াই আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে, লড়াইকে এগিয়ে দিয়েছে। আপনারাও যখন আরজিকর ইস্যুতে লড়ছেন তখন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শাসকশ্রেণির অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা লড়বেন, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াব। আমরা আমাদের দেশে লড়ব, আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। দু-দেশের শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে এই হোক শোষিত মানুষের ঐক্যের সম্পর্ক।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ইসলামিস্টদের সঙ্গে বামপন্থীদের একটা চাপানউতোর চলছে। গ্রাফিতি মোছা, বিকৃত করার ঘটনা সামনে এসেছে। এই বিষয়ে কী বলবেন?
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখানে বামপন্থী-ডানপন্থী এবং ইসলামিক শক্তিও ছিল। প্রত্যেকেই চেয়েছে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পতন। যদিও এ সবগুলো সংগঠনের বক্তব্য এবং দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা আছে। এখন প্রচুর গ্রাফিতি হচ্ছে। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্নভাবেই হচ্ছে। ৫ আগস্টের আগে সবার সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল হাসিনার পতন। এখন বিভিন্ন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছে এবং তা প্রকাশিত হচ্ছে। গ্রাফিতি মোছা, বামপন্থী সংগঠনগুলোর অফিস ভাঙচুর, ফেসবুকে মিথ্যাচার এ সবকিছুই আমাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। আমরা চাই, ক্যাম্পাসগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হোক। প্রতিটি সংগঠন তাদের কথা বলুক, প্রচার করুক। আমরাও করব। ছাত্ররা যদি মনে করে, আমরা সঠিক কথা বলছি তবেই তো গ্রহণ করবে।
‘আয়নাঘর’ শব্দটি খুন আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু এই বাংলায় প্রায় কেউই বিষয়টি নিয়ে অবগত নন। আপনি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?
‘আয়নাঘর’ হচ্ছে একটি গোপন বন্দিশালা যা প্রতিরক্ষা বাহিনির গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই দ্বারা পরিচালিত হত। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলত বা সরকার যাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করত তাদেরকে এখানে গোপনে বন্দি করে রাখা হত। বিরোধী দল কিংবা মতের নেতা, আদিবাসী নেতা, সেনাবাহিনির সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক রাষ্ট্রদূত-সহ অনেককেই এখানে বন্দি করে রাখা হয়। অনেক সাধারণ মানুষও এখানে বন্দি ছিল। ২০২২ সালে সুইডেনভিত্তিক স্বাধীন নিউজ জার্নাল ‘নেত্র নিউজ’ এটি নিয়ে প্রথম একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারা জানায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এখানে বহু মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়। এই বন্দিশালা সরকার পতনের দিন পর্যন্ত বহাল ছিল।
হাসিনা সরকারের পতনের পর এখানে যারা বন্দি ছিলেন তাঁদের অনেকেই ছাড়া পেয়েছেন। তাঁদেরই একজন পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। তাঁকে ২০১৯ সালে ধরে আনা হয়। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছোট ছোট রুমের মধ্যে বন্দি করে রাখো হত, চলত নির্যাতন।
বামপন্থী ছাত্রনেতা হিসাবে আপনি আগামী কয়েকমাসে বাংলাদেশের প্রগতিশীল শক্তির কর্তব্য কী বলে মনে করেন?
আমাদের বড় সাফল্য আমরা স্বৈরাচারী হাসিনাকে হটাতে পেরেছি। অনেকের মধ্যে একটি ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যাচ্ছিল, এ সরকারকে কিছুতেই হটানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবে ছাত্র-জনতা তা করে দেখাল। এ আন্দোলন মানুষকে সাহসী করেছে। আবু সাইদের কথা একবার ভেবে দেখুন! বুক টান টান করে পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়েছে। গরিব, মধ্যবিত্ত-সহ সকল স্তরের মানুষ এ লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে। শিক্ষক, চিকিৎসক, অভিনয়শিল্পী, চিত্রপরিচালক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী সবাই এ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে অধিকার আদায়ের মনোভাব তৈরি হয়েছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়াদের মধ্যে আন্দোলন সম্পর্কে পজিটিভ মাইন্ড তৈরি হয়েছে। সবাই এখন ভাবতে চায়, রাজনৈতিক আলোচনা শুনতে চায়। এটা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আমরা ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে তুলছি। একইভাবে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় বিশিষ্টজনদের নিয়ে কমিটি গড়ে তুলব। এসব কমিটিতে ছাত্ররাও থাকবে।
এই কমিটির কাজ হবে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া। যা এই মুহূর্তে ভীষণ জরুরি।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে মতপ্রকাশ হচ্ছে। এটা একটা ভয়ানক আক্রমণ। আমরা এ-বিষয়ে ছাত্রদের মাঝে আলোচনা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা বলছি, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি লড়াইয়ে ছাত্রসংগঠলগুলো সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং মানুষের মুক্তিসংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের লড়াইয়ে সামিল হয়েছে, জীবন পর্যন্ত দিয়েছে। কোনও সংগঠন যদি সামনের দিনে সন্ত্রাস করে আমরা তার বিরুদ্ধে লড়ব। কিন্তু অতীতের সন্ত্রাসের অজুহাতে ছাত্র সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার মানে হল, জনগণের একটা বড় অংশ তথা ছাত্রদের গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া।
আবু সাইদ-সহ শত-শত ছাত্র-জনতা কেন শহিদের আত্মদান করল? এ-জন্যই যে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন অবাধ হয় যা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার কেড়ে নিয়েছিল। সংগঠন করা আমার মতপ্রকাশের অধিকার। অসংখ্য মানুষের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে পাওয়া ‘নতুন বাংলাদেশে’ আমরা চাই না মতপ্রকাশের অধিকার হরণ হোক, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
ক্যাম্পাসগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, ১ম বর্ষ থেকেই সবার জন্য আবাসিক হলগুলোতে বৈধ সিট— এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অবিলম্বে তা যেন চালু করা হয় তার দাবি করছি। সর্বোপরি সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষার দাবি আমরা করছি। এ লড়াইয়ে আমরা ছাত্র-জনতার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।