অলোকপর্ণা
আপনার ঘুম ভাঙতে দেরি হল আজ আবার। চোখ খোলার পর যথারীতি উঠে বসতে ইচ্ছে করল না। ইচ্ছে করল না বিছানা ছেড়ে নামতে। ইচ্ছে করল না ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে বাথরুমে আসতে। ইচ্ছে করল না ঘষা আয়নার কাঁচে নিজের দিকে তাকাতে আজ আবার। তবু তাকালেন। একটু কষ্ট করেই তাকালেন নিজের দিকে। যেন অনেক দূরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার যেন কোথা থেকে কোথায় আসার কথা ছিল… অথচ মনে পড়ে না, ঠিক সেভাবে ভ্রূ কুঁচকে নিজের দিকে তাকালেন। কষ্ট করে তাকালেন নিজের দিকে। একটু সময় পরে দেখতেও পেলেন নিজের মুখ। কাজল গোস্বামী। তারপর যেমন সব সময় লাগে, তেমন ক্লান্তভাবে ধীর পায়ে ঘরে ফিরে এলেন। বিছানায় যতটুকু নিজের জন্য জায়গা পান ততটুকু জুড়ে জুড়ে ঘুমের সাম্রাজ্য বানান। ছেঁড়া মাদুরে, আদর করে ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে পড়লেন আবার। যদিও জানেন, আরও অনেকের না আসার মতো ঘুমও আসবে না। আজকাল আপনার প্রিয় শখ সিলিং দেখা। এজন্মে আর আত্মহত্যা করা হয়ে উঠল না বলে মাঝে মাঝে আফসোস হয় আপনার। বেশ সুখ বোধ হয়। নিজের উপর করুণা করে নিজেকে ক্ষমা করে দেন। সিলিং বড় চেনা হয়ে ওঠে আপনার। গ্যাস বেলুন ছেড়ে দিলে, চিত হয়ে শুয়ে নজর ছেড়ে দিলে, খেলতে খেলতে হাল ছেড়ে দিলে মানুষ সিলিঙে গিয়ে ঠেকে। একটা কবিতার লাইন আপনার মাথায় এসেই পালিয়ে চলে যায়। ধরে রাখতে পারেন না। কিছুই ধরে রাখতে পারেন না। টাকা, সময়, চিন্তা, পারিজাত নামের মানুষটা, সব আপনার হাত গলে বেরিয়ে চলে যায়। মানুষ করুণা করে আপনাকে। কিন্তু আপনি তা জানেন না।
আপনার দিন শুরু হয় অনিচ্ছায়। ঘুমের ঘোরে আপনি ড্রয়িং রুমে এসে বসে থাকেন। ঘুমের ঘোর যতক্ষণ, ততক্ষণ আপনার স্বস্তি। ঘোর থেকে বেরোলে আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ডাক্তারকে সেটা বুঝিয়ে বলতে পারেননি গত মাসে। বোঝাতে পারেননি, ঘোরটা কেটে গিয়ে আপনি যখন আপনি হয়ে ওঠেন কী ভীষণ অসহায় লাগে, নিজের কাছে ধরা পড়ে যেতে ভয় হয়, আপনি নিজের থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান, কলেজে, স্টেশানে, ট্যাক্সিতে, হলুদ ফাঁকা ট্যাক্সিতে, কোণঠাসা হয়ে থাকেন। এখন যেমন, ট্যাক্সিটা আনোয়ার শাহ রোডে এসে পড়তে আপনি আরও দরজার কাছে সেঁধিয়ে গেলেন। রিয়ার ভিউতে, আপনি জানেন না, ড্রাইভারটা আপনাকে দেখছে, মাঝে মধ্যেই। কারণ আপনি নিজের মনে থেকে থেকে পারিজাত নামের মানুষটার সাথে কথা বলে ফেলছেন, আপনার ঠোঁট নড়ছে হাওয়ায়। আজকাল এটা প্রায়ই হয়, আপনি জানেন না। বাকিরা জানে।
“দিন যত যায়,
ক্ষতময় মানুষের দিকে ধেয়ে ধেয়ে যাই।
আমার ক্ষতর সাথে তাদের ক্ষতকে জিগস পাজলের মত
মিশে যেতে দেখি, তাই
মলম লাগে না আর।
তাই মলম লাগে না।
ক্ষতময় মানুষের প্রতি নেশা বেড়ে যায়।
ক্লান্ত চোখ, হেরে যাওয়া চোখ দেখার জন্য প্রতিদিন রাত অবধি
ছটফট করি।
আয়না দেখার মত।”
এটুকু বলে থেমে থাকেন আপনি। ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ আপনি কিছু বলছেন না। চুপ করে বইয়ের পাতাটার দিকে তাকিয়ে আছেন মিনিট দশেক। তারপর আবার ঘোর কাটে আপনার। সামনে তাকিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চের তরুলতার চোখে চোখ পড়তে গুটিয়ে আসেন। একটু হোঁচট খেয়ে বলতে শুরু করেন, “যখন হারতে হারতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, হারার আর বাকি থাকে না কিছু, তখন এইরকমই ইন্ডিফারেন্ট কিছু বোধ আমাদের ছেয়ে ফেলে। যখন দুজন হেরে যাওয়া মানুষ একে অপরের কাছে আসে, তারা নিজেদের দেখে না, নিজেদের ক্ষত দেখে। ঠিক সহানুভূতি নয়, একে অপরের ক্ষতর প্রেমে পড়ে তারা সারা জীবন কাটিয়ে দেয়…”
এখন আপনাকে আর কষ্ট করতে হচ্ছে না। কবিতা, আজও আপনি অনর্গল কথা বলে যেতে পারেন কবিতা নিয়ে। আপনার গলা অন্যসময়ের মতো জড়িয়ে যায় না, খেই হারিয়ে ফেলেন না আপনি। নিজের সামনে এসে দাঁড়াতে পারেন, কবিতা বলতে বলতে, কবিতার সম্পর্কে বলতে বলতে।
ক্লাস শেষে সবাই চলে যেতে দেখেন আপনার টেবিলে একটা সাদা পাতা, কে যেন ফেলে গেছে।
খালি মনে করে ফেলে দিতে যাবেন ওয়েস্ট পেপার বক্সে, দেখলেন এক কোণায় কি যেন লেখা। আপনার চোখের সামনে এনে ধরলেন কাগজটা, কষ্ট করে পড়ে ফেললেন,
“আপনাকে নিয়ে একটা গল্প লিখব।
না আপনার নাম থাকবে না কোথাও।
আপনার রূপোলী চুল, ক্লান্ত ত্বক, চোখের পাতার উপর বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা বরফ,
থাকবে না।
শুধু আপনি থাকবেন।
আর আপনি থাকবেন।
আর আপনি, আপনি, আপনি, এবং আপনি
থাকবেন।”
চুপ করে বসে থাকলেন ফাঁকা ক্লাসে। আপনি জানেন, আপনি চাইলেই সবার হাতের লেখা মিলিয়ে খুঁজে নিতে পারেন কে এই কবিতার কবি। কিন্তু আপনি চাইলেন না। পাতাটা ভাঁজ করে ব্যাগে ভরে নিলেন। আপনি চাইলেন না পারিজাতময় শান্ত পুকুরটার জলে এই শেষ দুপুরে কেউ ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে যাক। কারণ আপনি ক্লান্ত। কারণ আপনাকে আবার ফিরে যেতে হবে। আবার আনোয়ার শাহ রোড। আবার হলুদ ট্যাক্সি। ফেরার পথে আপনি পারিজাতের সাথে আর কথা বললেন না। চুপ করে বাইরে তাকিয়ে থাকলেন। নিজের ব্যাগ আঁকড়ে, ব্যাগের ভিতর খসখস করতে থাকা কবিতার পাতা সমেত ব্যাগ আঁকড়ে ধরে মার্চের শীতেও কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে এলেন আপনি। ড্রাইভার গোটা রাস্তা আপনাকে দেখল না। ভাড়া নিয়ে কোলকাতার পথে হলুদ ট্যাক্সি হারিয়ে চলে গেল, যেমন মানুষ হারায়। পরনে কোনও অতি সাধারণ পোষাক। নব্বইয়ের দশকে আপনি নিরুদ্দেশ সম্পর্কে ঘোষণা শুনতেন, সাদাকালো টিভিতে। আর কল্পনা করতেন সেই সব মানুষদের যারা নীল জামা খাকি প্যান্ট, ডানহাতের কনুইতে কাটা দাগ নিয়ে হারিয়ে গেছে। মানুষ কীভাবে হারায় আপনাকে সেবার বলে দিয়ে গেল পারিজাত। দোলের দিন বিকেলে হোলিশেষের লাল রঙা আভা গায়ে মেখে পারিজাত বেরিয়ে গেল বাড়ি ছেড়ে। পরনে সবুজ গেঞ্জি, নীল জিন্স, পারিজাতের কনুইতে কাটা দাগ ছিল না। কাঁধের কাছে একটা জরুল, ঠিক অস্ট্রেলিয়ার ম্যাপের মতো। কারা যেন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশকে ওশিয়ানিয়া বলে ডাকত। আপনি সেই মতো জরুলটার নাম দিয়েছিলেন ওশিয়ানিয়া। আপনার নিজস্ব মহাদেশ। গোটা এক মহাদেশ সমেত মানুষটা বসন্তকালে, এক পূর্ণিমা রাতে হারিয়ে গেল। মানতে পারলেন না আপনি। তর্ক করে গেলেন হারিয়ে যাওয়া পারিজাতের সাথে আজীবন। যেমন এখন চাবি হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে নিজের মনে কথা বলছেন। কেউ মন দিয়ে শুনলে বুঝবে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন আবার, অথবা নিজেকে বোঝার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউ মন দিয়ে শোনে না। আপনার ব্যাগের ভিতরে কবিতার পাতা খসখস করে যায়।
সেদিন নেশা করতে তনুময় এসেছিল। কবিতা শোনার ভান করে আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল তনুময়। অনেকক্ষণ। এতটা সময় ধরে যে, ওর গ্লাসের বরফ গলে জল হয়ে গিয়েছিল কখন। কবিতা পড়াও থেমে গিয়েছিল আপনার। তনুময়ের দৃষ্টিতে আপনার বমি পেয়েছিল। না, ও কুইঙ্গিত করেনি কখনওই। তবু আপনার বমি পেয়েছিল সেদিন। কমোডের সামনে হাঁটুমুড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে বমি করেছিলেন আপনি। কেন কাঁদছিলেন, বোঝেননি। শুধু কান্না পাচ্ছিল তাই। জীবনে কত কিছুই তো এমনি এমনি হয়। ঠিক তেমন এমনি এমনি কান্না। শুধু আপনার শাড়ি ভিজে গিয়েছিল। নতুন শাড়ি, ঢাকাই জামদানি, মিষ্টি জাম রঙের। বাংলাদেশ থেকে আনানো। ভেজা শাড়ি পরে ড্রয়িং রুমে ফিরে এসেছিলেন আপনি। ভেজা শাড়ি পরেই পর পর তিনটে কবিতা আরও পড়েছিলেন, যার কোনওটাই তনুময় শোনেনি। নেশাগ্রস্ত চোখে সে আপনার দিকে চেয়ে ছিল। আপনি টের পাচ্ছিলেন। তবু কবিতা পড়ে চলেছিলেন একনাগাড়ে। আপনাকে কবিতায় পেয়েছিল ওইদিন।
বেশি শোক আর বেশি শখ হলে আপনি বেনারস চলে যান। মোঘলসরাই পার হতেই কিভাবে যেন গঙ্গার গন্ধ পেতে থাকেন। ছোটবেলাটা শ্রীরামপুরে কেটেছে বলে কি? বেনারস পৌঁছে প্রতিবার একই হোটেলে ওঠেন। চেষ্টা করেন একই ঘর নিতে। কখনও কখনও পেয়ে যান। বাইরে এলে আপনি শুধু দই ভাত খেয়ে থাকেন। সাথে আমের আচার। পারিজাত এই অভ্যাসটা ধরিয়েছিল আপনাকে। পারিজাত হারিয়ে গেছে। অভ্যাস হারায়নি। দুপুর হলে গঙ্গার ঘাটে এসে বসেন। আন্দাজেই জানেন ওপারে শ্মশান। ওপার অবধি আপনার দৃষ্টি পৌঁছোয় না। ঘাটের পাশের অশথগাছের কাছে এসে দাঁড়ান। তার বিশাল গুঁড়িতে হাত রাখেন। যে হাত ভরসা জোগায় সেই হাতে গাছটার বিরাট দেহ ছুঁয়ে দেন আপনি। আর আশা করেন প্রতিবার গাছটা আপনাকে চিনতে পারবে। আপনি জানেন না। গাছটা আপনাকে প্রতিবারই চিনতে পারে। রাস্তা দিয়ে ঘাটে আসার পথেই সে আপনাকে দেখতে পেয়ে যায় প্রতিবার, মেডিকেটেড স্যু, সাদা শাল আর সালোয়ার পরা আপনাকে দেখে সে সেইখান থেকেই বুঝতে পেরে যায় আপনার ঘোরতর শোক করেছে না নিতান্ত শখ। তার জন্য তাকে আপনাকে ছুঁয়ে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। হয়তো গাছেরা এমনই।
তাই গতকাল থেকে কলেজে না গিয়ে আপনি আবার বেনারস চলে এসেছেন। আর গঙ্গা তীরে বসে ভর দুপুরবেলা থেকে ঘোরে চলে গেছেন। আপনি রামার কথা ভাবছেন চুপ করে। আপনাদের পাড়ায় একটা ঘর নিয়ে থাকতে এসেছিল রামা, রামার মা আর তার আনকোরা বউ। বছর খানেক পর বউ বাপের বাড়ি গিয়ে আর ফিরল না। দিনরাত মরাকান্না কেঁদে ফিরত রামা। সে কান্না আজও মাঝে মাঝে আপনার কানে বাজে। আপনার মনে পড়ে, থাকতে না পেরে রামা একদিন তুতে খেয়ে নিয়েছিল? তুতে রঙ আপনার সবথেকে প্রিয়। যখন আপনার সতের বছর বয়স, স্কুলের কেমিস্ট্রি ল্যাবে জারভর্তি কপার সালফেটের কেলাসের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেন আপনি। পাড়ার দু-একজন সেদিন হাসপাতাল থেকে খালিহাতে বাড়ি ফিরেছিল।
আপনার ধারে কাছে ঘাটের একটা দুটো কাক এসে ঘুরঘুর করছে। আপনি খেয়াল করছেন না। আপনি ভাবার চেষ্টা করছেন আজ কেন রামার কথা মনে পড়ল আপনার। হঠাৎ নিজের মনে বলে উঠলেন,
“অপর, তোমার নিঃশেষ হতে আমার মুক্তি এল
ওপারের শ্মশানঘাট জানে না এপারের শোক
বিকিয়ে গেল ওজনদরে।
ঘন্টায় একশোর নৌকো বায় এখানে মাঝি।
অপর, তোমার নিঃশেষ হতে আমায় মুক্তি দিও।
আমি কতদিন বাইরে হাঁটিনি,
থাকিনি আমার থেকে দূরে যেখানে শালবনে লেগে থাকে আহত চাঁদ।
অপর, তোমার নিঃশেষ হতে; তুমি আমায় নিও।”
“সব ঠিক হৈ যাবে”, কার কথায় চমকে উঠলেন আপনি।
দেখলেন এক অযথা সাধুবাবা সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছে আপনার সামনে দিয়ে। বিরক্ত হতেই টের পেলেন আপনি কাঁদছেন। চোখে সানগ্লাস গলিয়ে নিতে নিতে ভাবলেন, আজকাল কী যে হচ্ছে আপনার, কান্না পায়, কিন্তু কারণ খুঁজে পান না। অশথগাছের পাতা নড়ে ওঠে ঠিক তখনই, আপনি ভাবেন হাওয়া দিল বুঝি।
কোলকাতায় ফিরে এসে সেই যে আপনার ঘুম আসা শুরু হল, এক মাস টানা ঘুমোলেন আপনি। কী গভীর ঘুম! ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কলেজ করলেন, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রান্নাপাতি। ক্লাসে অ্যাটেন্ডেন্স কম থাকলেও কাউকে বিশেষ কিছু বললেন না। পারিজাত ফিরে ফিরে এলে তাকে জানাতে চেষ্টা করলেন আপনি কতটা ক্লান্ত। বুঝে না বুঝে পারিজাত আপনার কোল ঘেঁষে রইল। আপনি ঘুমোলেন। আপনার ব্যাগে সাদা পাতাটা পাশ ফিরে শুল। তারপর একদিন ঘুম ভাঙতে গিয়ে বসলেন তনুময়ের বাড়ির আড্ডাখানায়। পঁচিশে বৈশাখ। তাই কবিতাপাঠ হবে। ভিড় থেকে দূরে সরে বসলেন আপনি, তবু একটা সময় আপনাকে কবিতা পড়ার জন্য উঠে দাঁড়াতে হল। সে কারণেই তো এসেছেন। ব্যাগ থেকে সাদা পাতা বার করে নিয়ে আপনি পড়লেন,
“আপনাকে নিয়ে একটা গল্প লিখব।
না আপনার নাম থাকবে না কোথাও।
…”
ঘরের সবাই মোহবশত বা অন্যমনস্ক হয়ে শুনল আপনার কবিতা। অনেকেই বাহবা জানাল, যেমন অনেকেই বাহবা জানায়। তনুময় পুরোটা সময় জুড়ে আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল। আপনি তার দিকে তাকালেন না। আপনার শীত করতে লাগল। হাতে ধরা পাতাটা খসখস করছে।
হঠাৎ একটা সময় কবি রণজিৎ দাশ পড়তে শুরু করলেন,
“কবিতা — শীর্ণ ছায়া।
সমস্ত মুক্তির পথে অন্ধ ভিখারির মত
ভালোবাসা ঠায় বসে থাকে।
পথের ওপরে তার ক্ষুদ্র, শীর্ণ ছায়া
নিঃশব্দে ডিঙিয়ে যেতে হয়।
সমস্ত মুক্তির পথে, এটুকুই, মূল পরিশ্রম।”
সবার নজর এড়িয়ে আপনি বেরিয়ে এলেন বাইরে। আপনার হাতে তখনও ধরে রাখা সাদা পাতা, আর তাতে লেখা আমার কবিতাটা। পাতাটা ড্রেনে ছেড়ে দিয়ে, আপনাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না ভেবে নিয়ে আপনি বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকলেন। আপনি আমায় দেখলেন না। নিজের মনে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।
আর আপনাকেও আমার বলা হল না, যে, আমি আপনাকে স্নেহ করি।
ঋণ — শীর্ণ ছায়া — রণজিৎ দাশ