মধুময় পাল
শুধু আরজিকর নয়, হাজার হাজার অন্যায় পুঞ্জীভূত হয়ে আছে৷ কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার বিচার হয়নি, সত্তর দশক বিচার পায়নি, আক্রান্ত বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিচার পায় না, কামদুনি বিচার পায় না, বেআইনি ডিজে বন্ধ করে না পুলিশ, সিবিআই বিচার দিতে পারে না, আদালত মানুষকে হতাশা ছাড়া কিছু দিতে পারে না৷ এখনই আরও আরও বেশি চিৎকারের সময়, শাসককে প্রশ্ন করার সময়, দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের সময়৷ এমন উদ্দীপ্ত জাগরণ বাংলা আগে দেখেছে কি? অনেককাল দেখেনি
শিবাজি হোটেলের রোয়াকে দাঁড়িয়ে থ্রেট বা হুমকি দিয়েছিল মণীশ ঘোষ৷
‘চিনের দালাল রাশিয়ার দালাল কমুনিস্টরা আমাদের সোনার দেশটাকে ধ্বংস করতে চায়৷ আবার হরতাল ডেকেছে ওরা৷ সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে৷ আপনারা ভয় পাবেন না৷ বিদেশি চরগুলোকে পাড়ায় ঢুকতে দেবেন না৷ আমরা হরতাল হতে দেব না৷ সব দোকানপাট খোলা থাকবে৷ যে যার কাজে যাবে৷ অন্যদিনের মতো সব কিছু চলবে৷ যদি কোনও দোকান বন্ধ থাকে, কেউ বন্ধ রাখে, সাফ বলে দিচ্ছি, ছাই হয়ে যাবে৷ আগুনে পুড়বে, কোনও বাপ বাঁচাতে পারবে না৷’
১৯৬৯ সালের প্রথমার্ধের মার্চ-এপ্রিলের বিকেল৷ বাংলা তখন অস্থির৷ প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ প্রফুল্ল ঘোষের পিডিএফ সরকারও ভেঙে গেছে৷ রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়েছে৷ মধ্যবর্তী নির্বাচন আসন্ন হয়ে উঠছে৷ এই গোটা সময় জুড়ে মিছিলে স্লোগানে বিক্ষোভে ধর্মঘটে উত্তাল বাংলা৷ যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটানো আর প্রফুল্ল ঘোষের সরকার বানানোর চক্রান্তের নাটের গুরু ছিলেন আশুতোষ ঘোষ ওরফে ভান্তু ঘোষ৷ একদা বিধান রায়ের মন্ত্রী তিনি এবার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণে নিজে দল তৈরি করেছেন৷ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট, সংক্ষেপে আইএনডিএফ৷ পূর্ব কলকাতার তৎকালীন বস্তিপ্রধান এলাকায় এই ফ্রন্টের এক সর্দার মণীশ ঘোষ৷ পাড়ার লক্কালুচ্চা ছেলেপুলে নিয়ে ঘোরে৷ তার হুমকিতে বস্তিবাসীরা খানিক বিচলিত হয়৷ বন্ধ দোকানের পাল্লা খুলে ভাঙচুর চালাতে পারে ওই বাহিনি, আগুন লাগাতেও পারে৷ দোকানে আগুন মানে বস্তির ঘরে ঘরে আগুন৷
হরতাল যাঁরা ডেকেছিলেন, ওই ‘চিনের দালাল রাশিয়ার দালাল কমুনিস্টরা’, বেশিরভাগই পাজামা-পাঞ্জাবির রোগা তরুণ, ধুতি-শার্ট পরা এক দাদা, সন্ধের দিকে ‘মাতৃ ভাণ্ডার’-এর মোড়ে পথের ধারে সভা করলেন৷ টুলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলেন৷ বললেন, ওরা হামলা করতে এলে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াবেন৷ ভয় পাবেন না৷ হরতাল আপনাদের অধিকার৷ প্রতিবাদ জানানোর অধিকার৷ সে অধিকার কোনও সমাজবিরোধী কেড়ে নিতে পারে না৷
পরদিন ষোলোআনা সফল হরতাল হল৷ মণীশকে একবার দেখা গেল ‘মাতৃ ভাণ্ডার’-এর মোড়ে৷ ব্যস, ওইটুকুই৷
মণীশ ঘোষ গোয়ালা পরিবারের ছেলে৷ তিন-চারটে গরুর দুধ বেচে ওদের ভরণপোষণ৷ লেখাপড়া মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয়েছিল অভাবে৷ পারিবারিক অবস্থা অনুসারে মণীশের ভান্তু ঘোষের দলে নাম লেখানোর কথা নয়৷ দারিদ্র্যই তাকে ঠেলে দিয়েছিল ভান্তু ঘোষের লেঠেল হতে৷ পরে বুঝেছি, সে লোকজনকে ভয় দেখাত নিজের অস্তিত্বের ভয় থেকে, কাজ হারানোর ভয় থেকে, কলার উঁচিয়ে বাঁচার সুযোগ হারানোর ভয় থেকে৷ আসলে মণীশরা ভয়ের মধ্যে বাঁচে, যদি মালিক তাদের তাড়িয়ে দেয় তারা পথে বসবে, তাই ‘চিনের দালাল রাশিয়ার দালাল’ এসব হুমকি উগরে দিতে হয়৷
দুই.
‘মাস্টারমশাই, আপনি বেছে নিন কী করবেন— চাকরি না ম্যাগাজিন? এই ধরনের অপসংস্কৃতির ম্যাগাজিন! ভেবে দেখবেন, নিজেকে বিপন্ন করা কোনও বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷’
আশির দশকের গোড়ার দিকের ঘটনা৷ কলকাতার অনতিদূর মফসসলে ‘শব্দবর্ণ’ নামে ছোট পত্রিকায়, অখ্যাত ও অকিঞ্চিৎকর বেজায় রোগা একটি সাহিত্যপত্রে প্রকাশিত গল্পের জন্য থ্রেট-এর মুখে পড়তে হয় স্থানীয় স্কুলের শিক্ষককে৷ তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক৷ গল্পটিতে শ্রমিক আন্দোলনের অন্তর্গত সুবিধাবাদ ও মাসল ডমিনেশন নিয়ে কিছু কটাক্ষ ছিল৷ আর ছিল একটি লাইন: ‘উদ্দণ্ড লিঙ্গের মতো চিমনি’৷ এই টেক্সটে যেন সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির সমূহ সর্বনাশ সাধিত হয়৷ সেইসময়ের শাসক-বামের লোকাল কেষ্টবিষ্টুরা হানা দেয় ইংরেজির শিক্ষক তথা পত্রিকা-সম্পাদকের বাড়িতে৷ আট-দশজনের দাপুটে জমায়েত শিক্ষককে সামজিক রীতিনীতি ও শিল্পসংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করতে থাকে চড়া গলায়৷ শিক্ষক নিজের ধ্যান-ধারণার কথা সাধ্যমতো বলবার চেষ্টা করেন৷ শিল্পীর স্বাধীনতা, শিল্পের শর্ত, বাস্তবের রূপায়ণ ইত্যাদি বিবৃত করেন৷ কিন্তু থ্রেট-এর ধাক্কা এড়াতে পারেননি৷ চাকরি যদিও পেয়েছেন শিক্ষাগত যোগ্যতায়, শাসক-বামের দখলে চলে-যাওয়া ম্যানেজিং কমিটির মুখগুলি তাঁকে বিপন্ন করে৷ অপদস্থ করা হতে পারে ছাত্রস্থানীয় ক্যাডার লাগিয়ে, বিব্রত করা হতে পারে সামাজিক জীবন৷ শিক্ষক বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান, সেখানে সমস্যা তৈরি হতে পারে৷ তার চেয়ে কিছু বেশি হয়েছিল অবশ্য৷ শাসক-বামের তরফে ‘দ্বন্দ্ব’ নামে ছোট ম্যাগাজিন বের করা হয়৷ একটি লেখায় শিক্ষকের চরিত্র-দোষ আছে বলে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করা হয়৷ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বুঝে এবং শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে শিক্ষকমশাই আত্মসমর্পণ করলেন৷ এবং ওদের সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান বক্তা হয়ে উঠলেন৷ জেলা জুড়ে তাঁর আদর ও কদর তখন৷ ‘শব্দবর্ণ’ হয়ে গেল দলীয় ছাপের পত্রিকা৷ শিক্ষক ও তাঁর প্রিয় পত্রিকা ঘিরে একদল তরুণের অন্যরকম ভাবনা-চিন্তার চর্চাকেন্দ্র ছত্রখান হল৷ লক্ষ করলাম, যাঁরা সত্তর দশকের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গলা ফুলিয়ে বক্তৃতাবাজি করে ক্ষমতায় এলেন, তাঁরাই সন্ত্রাসের পথ ধরলেন৷ ৪৮ কি ৬৪ পৃষ্ঠার দরিদ্র কাগজকে কী ভয়? বাংলার জনগণের অসীম সমর্থন যখন তাঁদের মুঠোয়, সামান্য একটা কাগজ ও তার দু-দশজন কবি-লেখককে এত ভয় কেন? পরে বুঝেছি, সেটা ছিল আধিপত্যবাদ, যা ভিন্ন স্বরকে পা রাখার জায়গাটুকু দেয় না৷ থ্রেট দিয়ে নিকেশ করে অন্যরকম ভাবনা৷
তিন.
‘ডাক্তাররা বেশি বাড়াবাড়ি করছে৷ সরকার সহনশীল ও দায়িত্বশীল৷ যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে চায়৷ কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা আছে৷ চিকিৎসা না পেয়ে গরিব মানুষ যদি ক্ষেপে যায়, সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না৷ একজন মানুষও যদি বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, আমরা চুপ থাকব না৷ ওসব ছাড়৷ মাথায় ফেট্টি লাগিয়ে ঘোরাঘুরি বন্ধ কর৷ বিপদে পড়বি৷ ওই মাকু-নকু দাদারা বাঁচাতে আসবে না৷’
বলেছে এক ‘কাকা’৷ পাড়ার দুই কলেজ-পড়ুয়া মেয়েকে ডেকে সমঝে দিয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ফেট্টি মাথায় বাঁধা কতটা বিপজ্জনক৷
‘কাকা’ আরও বলেছে, জাস্টিস বলতে কী বুঝিস? আমরাই তো জাস্টিস দিয়েছি৷ আগে যারা সরকারে ছিল, তারা থাকলে এতদিনে মেরে ফর্সা করে দিত৷ জাস্টিসের নামে রাজনীতি হচ্ছে৷ বাংলাকে যারা অশান্ত করতে চায়, তারা তোদের ভুল বোঝাচ্ছে৷ তোদের নিজের মেয়ের মতো ভালবাসি বলে সাবধান করে দিলাম৷
মফসসলি পাড়া৷ সবসময়ই শাসক দলের প্রতাপ-কম্পিত হয়৷ যখন যাদের সরকার, তাদের পার্টি অফিসে লোকজন ভিড় করে৷ দেড় দশক আগে যারা শাসক ছিল এবং নিজেদের অবিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছিল, তাদের আমলে আকাট উন্নয়নের উষাকালে হাতেখড়ি ‘কাকা’র৷ পাড়ার পুকুর বোজানো দিয়ে শুভারম্ভ, পরে আমবাগান সাফ, তৎপরে পরিবর্তিত আমলে চাষজমিকে বাসজমি করা ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কাজে স্নাতকোত্তর৷ ‘কাকা’ কাউন্সিলর বা কমিশনার নয়, কিন্তু সমাজকল্যাণের স্বেচ্ছাসেবক ও প্রভাবশালী৷ হাজার চার-পাঁচ ভোট সে এনে দিতে পারে৷ সুতরাং সমাজকে সোজা পথে চালানো, প্রয়োজনে অল্পবিস্তর সমঝে দেওয়া, তার অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ থ্রেট বললে থ্রেট, সমাজশাসনে কখনও কখনও একটু কড়া হতে হয়৷
দুই মেয়ে প্রশ্ন রেখেছে, জাস্টিস চাওয়া কবে থেকে অন্যায় হল, কাকু? আমরা আমাদের জাস্টিসের কথা কেন বলতে পারব না? তোমাদের জাস্টিসের সঙ্গে মিলিয়ে ঠিক হবে আমাদের জাস্টিস? আমরা ভয়ে বাঁচি, সেই ভয় থেকে বেরিয়ে আসার কথা আর কবে বলব? আমাদের এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই, এভাবে কথা বলতে নেই, এভাবে কথার মানে করতে নেই, আর কতদিন চলবে? হাজার ইনজাস্টিসের মধ্যে আমাদের আর বাঁচতে না-চাওয়াটাকে এত ভয় কেন, কাকু?
এরপর ‘কাকা’ যে থ্রেট-এর মাত্রা চড়াবে এটা জানা কথা৷ জানা ছিল না যে তাতেও মেয়েরা সন্ত্রস্ত হবে না৷
আমার দূর-অনুজ বন্ধু রঞ্জন রায়ের কাছে শোনা৷ রঞ্জন বলেছিল, জাস্টিসের মিছিলে হাঁটলে ওরা পাড়ায় পাড়ায় ভয় দেখাচ্ছে, থ্রেট করছে৷ এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়৷ সন্ত্রাসের পরম্পরা আমাদের অনেকদিনের৷ এ-পাড়ায় নতুন ভাড়াটে হয়ে যেদিন এলাম, দু-দিন বাদেই একজন পথে ধরে বলল, লোকাল কমিটির অফিসে একবার যাবেন৷ খোকনদা ডেকেছেন৷ বাড়িওলা আগেই বলেছিল, খোকন ডাকবে৷ সবাইকেই ডাকে৷ সেই ডাকওলারা এখন নির্বাক৷ তার আমচা-চামচারা নতুন ডাকওলা হয়েছে৷ যেমন এই ‘কাকা’৷
দুই মেয়ের একজন রঞ্জন রায়ের৷ ঘটনা শুনে একটা ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ওরা আর ভয় পাচ্ছে না৷ ইনজাস্টিসগুলো চিনতে পারছে বলেই চিৎকার করছে জাস্টিস চেয়ে৷ সাহস জেগেছে অনেক৷ শুধু ওরা দু-জন নয়, হাজার হাজার, গাঁ-গঞ্জেও জেগেছে৷
১৪ আগস্ট ২০১৪ রঞ্জন রায়ের মেয়ে রাত জেগেছিল তার বন্ধুদের সঙ্গে৷ সারারাত স্লোগানে গর্জেছিল৷ ১৫ আগস্ট নতুন ভোর ডেকে এনেছিল, যা পাঁচু-পচা লুম্পেন পাঠিয়ে আরজিকর ভাঙার ঘটনায় ভয় পায়নি, বরং আকাশে জাস্টিসের ঝড় তৈরি করেছে আগামী দিনগুলির জন্য৷
চার.
গরিব ঘরের ছেলে, লেখাপড়া হয়নি, ছ-ফুটের ওপর লম্বা, পেটাই চেহারার মণীশ ঘোষ নব্যযুগের জমিদারের লেঠেল হয়ে যায়৷ ‘মার্কসবাদী’ চিহ্নিত প্রগতিশীল বলয়ের মানুষজন কেন সন্ত্রাসে ভেড়ে? শাসকের সঙ্গে থাকার অনেক সুবিধা, অনেক ফায়দা, অনেক কামাই৷ ‘কাকা’ আরও পরের সময়ের লোক, যখন অনৈতিক কাজে মেটা আমদানি সমাজস্বীকৃত হয়ে গেছে এবং শিক্ষা দীক্ষা সততা সভ্যতা ইত্যাদি মূর্খামি ও অর্থহীন বিবেচিত হয়৷ নদী চুরি, পুকুর চুরি, জমি চুরি, চাকরি চুরি থেকে যাবতীয় অসামজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ‘কাকা’ ভেতরে ভেতরে ভয়ে থাকে, সেই ভয় থেকে সে শাসকের মুখপাত্র বা দালাল হয়ে যায়, ‘জাস্টিস’ শুনলে তার অন্তরাত্মা তো কাঁপবেই৷
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকা অসংখ্য থ্রেট-বাজের মুখ থেকে কয়েকটি যখন বাছাই করছি, টের পাই, আরও থ্রেট ধেয়ে আসছে নানাদিক হতে: ‘দশ হাজার লোক নিয়ে হাসপাতাল ঘিরে ফেলে হিসাব বুঝে নেব’; ‘আমরণ অনশন কেথায়, এ তো অনশন টু হস্পিটালাইজেশন, দম নেই’; ‘ওরা পাশের বাড়ির লোক মারা গেলে দেখতে যায় না, স্বাস্থ্যব্যবস্থা পালটাবে, ছ্যা’; ‘এবার শিরদাঁড়া বেঁকিয়ে দেব’; ‘হাসপাতালে ধর্মঘট করার ফল কী হয় গ্রামের গরিব মানুষ বুঝিয়ে দেবে’; ‘বেতন নেবে কাজ করবে না, কী নির্লজ্জ, এরা নাকি মেধাবী’ এবং আরও৷ এই থ্রেট বা সন্ত্রাসগুলোর মূলে আধিপত্যবাদ বা ‘আমার জমিদারি’ তো আছেই, হয়তো বেশি আছে কুকর্ম-জনিত ভয়৷ পুলিশ যদি হাতছাড়া হয় এবং মানুষ যদি জাস্টিস চেয়ে এককাট্টা হয়, সেদিনের পরিণাম মোটেও সুখের নয়৷
শুধু আরজিকর নয়, হাজার হাজার অন্যায় পুঞ্জীভূত হয়ে আছে৷ কাশীপুর-বরানগর গণহত্যার বিচার হয়নি, সত্তর দশক বিচার পায়নি, আক্রান্ত বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিচার পায় না, কামদুনি বিচার পায় না, বেআইনি ডিজে বন্ধ করে না পুলিশ, সিবিআই বিচার দিতে পারে না, আদালত মানুষকে হতাশা ছাড়া কিছু দিতে পারে না৷ এখনই আরও আরও বেশি চিৎকারের সময়, শাসককে প্রশ্ন করার সময়, দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের সময়৷ এমন উদ্দীপ্ত জাগরণ বাংলা আগে দেখেছে কি? অনেককাল দেখেনি৷ এখন আমরা আরও বেশি বাংলার কথা বলব, হারিয়ে-যাওয়া বাংলার কথা বলব, বাংলার গান নাটক শিল্প সাহিত্যের কথা বলব, যা কিছু আমাদের গর্বের অহঙ্কারের তাদের কথা এপার ওপার শুনিয়ে বলব৷ রাষ্ট্র স্মৃতিকে হত্যা করতে চায়, আমরা স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলব৷ এই তো সময়৷
*মতামত ব্যক্তিগত