দারিদ্র্য পরিমাপ না নয়া-উদারিকরণের রূপচর্চা?

প্রভাত পট্টনায়ক

 


বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের “চরম দারিদ্র্যপীড়িত” জনসংখ্যার অনুপাত ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে যেখানে ৩০ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০২২-এ সেটা ১০ শতাংশেরও কমে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বলা হচ্ছে, নয়া-উদার পুঁজিবাদ “কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে এসেছে।” এর চেয়ে চরম বিদ্রূপ আর কী হতে পারে! এ আসলে নয়া-উদার পুঁজিবাদের খানিক রূপচর্চা ছাড়া আর কিছু নয়

 

প্রচুর আন্তর্জাতিক সংগঠনই এখন তারা যাকে “দারিদ্র্য” বলে থাকে তার পরিমাপে ব্যস্ত। বিশ্বব্যাঙ্ক অনেক দিন ধরেই এই কাজটা করছে, তবে এখন আমাদের হাতে এসেছে “বহুমাত্রিক দারিদ্র্য”-এর একটা নয়া মাপকাঠি যেটা তৈরি করেছে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) এবং অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই)। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে, এসব কোনও মাপকাঠিই দারিদ্র্যের পরিমাপ করছে না। স্বভাবসিদ্ধভাবে তারা যেটা করছে সেটা হল— নয়া-উদার পুঁজিবাদের খানিক রূপচর্চা।

বস্তুত, বিশ্বব্যাঙ্কের হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের “চরম দারিদ্র্যপীড়িত”[1] জনসংখ্যার অনুপাত ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে যেখানে ৩০ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০২২-এ সেটা ১০ শতাংশেরও কমে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বলা হচ্ছে, নয়া-উদার পুঁজিবাদ “কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে এসেছে।” আসুন দেখা যাক, বিশ্বব্যাঙ্কের এই পরিমাপ ধারণাগতভাবে কতটা ত্রুটিপূর্ণ।

বিশ্বব্যাঙ্কের এই পরিমাপ-পদ্ধতির তিনটি মৌলিক গলদ রয়েছে। প্রথমত, এটিতে একজন ব্যক্তিমানুষের সম্পদের পরিমাণের কোনও হিসেব পাওয়া যায় না, কেবল আয়ের হিসেবটুকুই পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, এটিতে আয়ের পরিমাপক হিসেবে ব্যয় মাপা হয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকৃত ব্যয় পরিমাপ করতে গিয়ে এটি মূল্য-সূচককে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে, যে মূল্য-সূচক প্রায়শই জীবনধারণের খরচের প্রকৃত বৃদ্ধিকে কম করে দেখায়। ফলত, যে সাংখ্যমানগুলি এই সমীক্ষায় পাওয়া গেছে তা অধিকাংশেই ত্রুটিপূর্ণ। প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক।

দারিদ্র্যের যে-কোনও অর্থপূর্ণ সমীক্ষাকে দুটি মাত্রা অবশ্যই বিবেচনার মধ্যে রাখতে হয়। একটি “জঙ্গম” মাত্রা, যেমন ধরা যাক আয়, এবং একটি “স্থাবর” মাত্রা যা কোনও ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ গণনা করে। দুটি মাত্রাই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক কোনও ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়ের বিশেষ হেরফের হয়নি, কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যেই সে তার যা সম্পদ ছিল তার সবটাই খুইয়েছে, তখন সে যে দরিদ্রতর হয়েছে সেটা অস্বীকার করাটা তার সঙ্গে প্রতারণা-বিশেষ।

বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষায়, প্রথমত, এই সম্পদের হিসেবের কোনও উল্লেখই নেই। আসলে নয়া-উদার পুঁজিবাদের পরিচালনায় এ এক অনিবার্য এবং জ্বলন্ত ভ্রান্তি। কারণ, পুঁজির আদম সঞ্চয়ন প্রক্রিয়া যখন চলে তখনই প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষ দুর্বার গতিতে সম্পদহারা হতে থাকে। এখন, ভেবে দেখুন, একদিকে মানুষের এই সম্পদ খোয়ানো চলছে দুর্বার গতিতে, অন্যদিকে দাবি করা হচ্ছে “কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে।” এর চেয়ে চরম বিদ্রূপ আর কী হতে পারে!

দ্বিতীয়ত, এই সমীক্ষায় প্রকৃত আয়ও পরিমাপ করা হয়নি। কারণ, ভারত-সহ অনেক দেশেই মানুষের আয়ের কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। এবং তত্ত্বগতভাবেও “আয়” হল একটি জটিল বিষয়। পরিবর্তে, অনিবার্যভাবেই, ব্যয় মাপা হয়েছে— যে-বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া তুলনায় সহজতর এবং যে-বিষয়টি তত্ত্বগতভাবেও সরলতর। ফলে, ব্যয়-কেই এক্ষেত্রে আয়ের বিকল্প হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু, এই কারণেই, একজন মানুষের মোট সম্পদ পরিমাপ না করার অপরাধটি আরও অমার্জনীয় হয়ে পড়ে। মানুষের আয় যখন পড়েও যায়, তখনও তারা সম্পত্তি বিক্রি করে বা ধার করে আগের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার চেষ্টা করে। এখান থেকে, এই যে তাদের ব্যয় কমেনি, ফলে তাদের অবস্থার অবনতি হয়নি— এমন সিদ্ধান্তে আসাটা চূড়ান্ত অবাস্তব। বস্তুতপক্ষে, জঙ্গম মাত্রা— অর্থাৎ আয়, এবং স্থাবর মাত্রা— অর্থাৎ সম্পত্তি, দু-দিক দিয়েই মানুষগুলি দ্ব্যর্থহীনভাবে দরিদ্রতর হয়েছে— কিন্তু ব্যয়সূচক দেখাচ্ছে তারা আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে।

তৃতীয়ত, ভারতের মতো দেশগুলিতে প্রকৃত ব্যয় যেভাবে পরিমাপ করা হয়— কিছু সময় অন্তর-অন্তর সতর্ক নমুনা সমীক্ষার মাধ্যমে একেকটি পরিবারের খরচের হিসেব করা— সেটি মোটের ওপর ত্রুটিপূর্ণ। কারণ এইভাবে ব্যয় পরিমাপ করতে মূল্য-সূচককে মানদণ্ড হিসেবে নেওয়া হয় এবং মূল্য-সূচক জীবনযাত্রার প্রকৃত ব্যয়বৃদ্ধিকে অনেকটাই কমিয়ে দেখায়।

মূল্য-সূচক হল ভিত্তিবর্ষে যে-সব পণ্যের চাহিদা থাকে সেরকম একগুচ্ছ পণ্যের মূল্যের একটা গড় মান। এটি ত্রুটিপূর্ণ কারণ, ভিত্তিবর্ষের পরবর্তী বছরগুলিতে যদি সেই পণ্যগুলির জোগান ঠিকমতো না থাকে তখন মানুষ অন্য পণ্য ক্রয় করে— এই পরিবর্তন এবং তার ফলগুলি মূল্য-সূচকে প্রতিফলিত হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, নয়া-উদারবাদের জমানায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো প্রচুর পরিষেবার বেরকারিকরণ একটি সাধারণ ঘটনা। এর ফলে এই সমস্ত পরিষেবাগুলির জন্য মানুষের ব্যয় প্রচুর বেড়ে গেছে। কিন্তু মূল্য-সূচকে সে-সব ধরা পড়ে না।

আবারও উদাহরণস্বরূপ, ভিত্তিবর্ষে ধরা যাক সরকারি হাসপাতালে একটি সার্জারির খরচ পড়ত ১০০০ টাকা, যেটা এখন পড়ে ২০০০ টাকা। এই হিসেবে মূল্য-সূচকে দেখা যাবে স্বাস্থ্য-পরিষেবার জন্য ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবত, ভিত্তিবর্ষে সরকারি হাসপাতালে যতগুলি সার্জারি হত এখনও ততগুলিই হয়, বা এমনকি কম হয়। যে-কারণে মানুষ বাধ্য হয় বেসরকারি হাসপাতালে যেতে, যেখানে সেই একই সার্জারির খরচ পড়ে ১০০০০ টাকা। মূল্য-সূচকে এসবও ধরা পড়ে না।

সংক্ষেপে বললে, মূল্য-সূচক যা দেখায় জীবনযাত্রার খরচ তার চাইতে অনেকগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই সমীক্ষায় সেই মূল্য-সূচককেই ব্যয় পরিমাপ করতে ব্যবহার করা হয়েছে এবং তা থেকেই “প্রকৃত” ব্যয়ের হিসেব করা হয়েছে। মূল্য-সূচক মানুষের জীবনযাত্রার মানকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেখায়, এবং, ফলত, গুরুতরভাবে কমিয়ে দেখায় দারিদ্র্যকে।

জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির জন্য মানুষের যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন প্রথমেই তারা দুটি পথ নেয়। এক, সম্পত্তি বিক্রি করা বা ঋণ নেওয়া। এবং দুই, তাদের ক্রয়সামগ্রীর চরিত্র বদলে ফেলে শুধুমাত্র “প্রয়োজনীয়” জিনিসগুলিকেই খরিদ করা এবং কম প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে বাদ দেওয়া।

স্বাস্থ্যপরিষেবা এবং বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ভারতে এই দুটি বিষয়ই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় পরিবারগুলির, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে, মোট সম্পদের পরিমাণ লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে পুষ্টিকর খাবারের জন্য খরচ করতেও তারা কার্পণ্য করছে। এখানে একটি (ভুল) বিশ্বাস রয়েছে যে পুষ্টির দিকটাতে কিছু কাঁটছাট করলে এমন কিছু ক্ষতি হয় না।

২০১৩-র অল ইন্ডিয়া ডেবট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সার্ভে (এতে ২০১২-র জুন মাস পর্যন্ত তথ্য আছে)-র সঙ্গে ২০১৯-এর একই সার্ভে (এতে তথ্য রয়েছে ২০১৮-র জুন মাস পর্যন্ত)-র তুলনা করলে নিচের তথ্যগুলি পাওয়া যায়— এক, দ্বিতীয় সমীক্ষার তারিখে প্রথম সমীক্ষার সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি গ্রামীণ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়েছে; দুই, ঋণগ্রস্ত গ্রামীণ পরিবারগুলিতে ঋণের পরিমাণ দ্বিতীয় সমীক্ষার তারিখে প্রথম সমীক্ষার চেয়ে ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; তিন, দুই সমীক্ষার মধ্যবর্তী সময়ে কৃষিজীবী পরিবারগুলির মোট সম্পদের পরিমাণ গড়ে ৩৩ শতাংশ এবং অ-কৃষিজীবী পরিবারগুলির গড়ে ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই সব হিসেবই কিন্তু হোলসেল মূল্য-সূচক অনুসারে প্রাপ্ত “প্রকৃত” হিসেব, সাধারণ গড়পড়তা হিসেব নয়।

দেশের শহরাঞ্চলেও ছবিটা মোটের ওপর একই রকম। পরিবার-পিছু গড় সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে (স্বনিযুক্ত পরিবারগুলির ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ)। ঋণগ্রস্ত পরিবারগুলির সংখ্যা কমবেশি একই থাকলেও পরিবার-পিছু গড় ঋণের পরিমাণ দুটি সমীক্ষার মধ্যবর্তী সময়ে ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা একটা সন্দেহাতীত ঘটনা, যাকে অন্য কথায় বললে বলা যায়, এক বিপুল-সংখ্যক ভারতীয় পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটিও ঘটে চলেছে। গ্রামীণ জনসংখ্যার যে অংশ মাথাপিছু দৈনিক ২২০০ ক্যালরি জোগাড় করতে পারত না, ১৯৯৩-৯৪ থেকে ২০১১-১২-র মধ্যে তাদের অনুপাত ৫৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৮ শতাংশ হয়ে গেছে। এবং শহরাঞ্চলে এই সময়ের মধ্যে এই অনুপাতটি ৫৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ শতাংশ। শহরের মানদণ্ডটি ২১০০ ক্যালরি, এবং এই মানদণ্ডগুলি দেশের পূর্বতন যোজনা কমিশন স্থির করেছিল।

২০১৭-১৮ সালের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের রিপোর্টে দেখা যায় সমস্ত পণ্য এবং পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যয় প্রচুর কমে গেছে। সেই রিপোর্ট এতটাই অস্বস্তিকর ছিল যে এনডিএ সরকার সেটাকে দ্রুত পাবলিক ডোমেইন থেকে সরিয়ে ফেলে।

এই সরিয়ে নেওয়ার আগে যে-সমস্ত তথ্য পাওয়া গেছে (ধরে নেওয়া যাক প্রতি-একক পুষ্টিবস্তুর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য পাল্টায়নি) তাতে এটাই বেরিয়ে আসে যে শহুরে জনসংখ্যার অনুপাত ২০১১-১২-তে কমবেশি একই থাকলেও গ্রামীণ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সেই অনুপাতটা বেড়ে ৮০ শতাংশেরও অনেক বেশিতে পৌঁছেছে।[2]

এবার এই ভয়ানক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আসুন দেখা যাক বিশ্বব্যাঙ্কের “চরম দারিদ্র্য”-এর রিপোর্ট কী বলছে। আগেই বলেছি এই রিপোর্টে দৈনিক গড় ব্যয়ের মানদণ্ড ধরা হয়েছে ১.৯০ ডলার, যাঁরা এই খরচটা পারেন না, তাঁরাই চরম দরিদ্র। তো সেই হিসেবে বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানিয়েছিল ২০১১-১২ সালে ভারতের ১২ শতাংশ মানুষ এই “চরম দারিদ্র্যসীমা”য় রয়েছে। এটাও যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ এবং কমিয়ে দেখানো— কেন, তা বলেছি। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাঙ্ক জানাচ্ছে ২০২২-২৩ সালে এই সংখ্যাটা মাত্র ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

ঘটনাচক্রে, দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের এই যে ১.৯০ ডলার দৈনিক ব্যয়ের মানদণ্ড, একে টাকায় পরিণত করলে দাঁড়ায় দৈনিক সমস্ত রকমের ব্যয়নির্বাহের জন্য ৫৩ টাকা মাত্র। আর এই মানদণ্ডটিও বিশ্বব্যাঙ্ক স্থির করেছে গরিব দেশগুলি, অবশ্যই নিজ-নিজ দেশের ব্যাঙ্কের পরামর্শমতো, তাদের দেশে দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণের যে মাপকাঠি স্থির করেছে সেগুলির একটা গড় করে। এটা বিশ্বব্যাঙ্কের নিজস্ব গণনা দ্বারা স্থির করা কোনও মাপকাঠি নয়। এখন এইসব দেশগুলির যে দারিদ্র্যসীমা বা দারিদ্র্য পরিমাপ-ব্যবস্থা সেগুলিও একই দোষে দুষ্ট। সব ক্ষেত্রেই মূল্য-সূচকের মাধ্যমে ব্যয় পরিমাপ করা হয় যাতে জীবনযাত্রার প্রকৃত ব্যয়বৃদ্ধিকে অনেকটাই কমিয়ে দেখানো হয়। ফলত, তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ সরকারই দারিদ্র্য কমিয়ে আনার বা নির্মূল করার যে-সব প্রচার চালায় বিশ্বব্যাঙ্কের এই সমীক্ষা সেগুলিকেই অনুমোদন জোগায়।

অতএব, “কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে বের করে নিয়ে” আসা-সম্পর্কিত যাবতীয় কথাবার্তা একটি নিষ্ঠুর রসিকতার বেশি কিছু নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আগামী দিনগুলিতে আমরা এ-জাতীয় কথাবার্তা আরও শুনতে চলেছি। কারণ, কেমনভাবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নির্ধারণ করে দেওয়া “স্থিতিশীল উন্নয়েনর লক্ষ্যমাত্রা” হাসিল করা হয়েছে তা দেখানোর জন্য দেশগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

 


[1] অর্থাৎ, ২০১১-র পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী যাঁদের দৈনিক গড় ব্যয়ক্ষমতা ১.৯০ ডলারের কম।
[2] এই তথ্যগুলি উৎসা পট্টনায়কের দারিদ্র্য-সম্পর্কিত আসন্ন বই থেকে নেওয়া।


*প্রভাত পট্টনায়েকের এই নিবন্ধটি নিউজক্লিক-এ গত ২০২৪-এর ১৯ অক্টোবর ইংরেজিতে প্রকাশিত।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5006 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...