
অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়
আমার এই অনতিক্ষুদ্র লেখার উপজীব্য তাই বিনয়ের যে ‘রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা—/ হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে’ বা ছিল, তার চেয়ে ‘কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত’ গায়ত্রীর-‘প্রতিভা’, যা আমার মতো অশিক্ষিত মানুষকেও আমার নিজের সমসময়ের উপর আমাদের ‘দুর্মর অতীত’-এর প্রভাব বুঝতে সাহায্য করেছে। সেখানেই তিনি আমার স্পিভাক।
প্রাক্কথা— অকৃতজ্ঞা প্রণয়াস্পদা ও ভুল পরিধান
শ্রীমতী গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক সম্পর্কে কিছু লিখতে অনুরুদ্ধ হয়ে অনেক কারণেই বিপন্ন বোধ করছি। এক তো বহুকাল লেখাপড়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তায় হোলবার্গ প্রাইজ কী বস্তু তাও জানতাম না। জানতাম যে গাগেনহিম ফেলোশিপ অর্থনীতিতে প্রায় নোবেলের সমতুল, যেমন গণিতে ফিল্ড মেড্যাল। কিন্তু আমার প্রিয় চিন্তক Achille Mbembe যে ২০২৪ সালে হোলবার্গ প্রাইজ পেয়েছিলেন, সেটাও জানলাম গায়ত্রী চক্রবর্তী সেটা এ-বছর পাওয়ার পর, ফেবুতে। যদিও পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে ২০০৪ থেকেই। কিন্তু এখানে দেখলাম গাদা গাদা পোস্টে সব্বাই হোলবার্গ প্রাইজের আগাপাশতলা সম্বন্ধে অবহিত। দুই, আরও দেখলাম সব্বাই গায়ত্রী চক্রবর্তীর বাঙালিয়ানার সঙ্গে তাঁকে নিয়ে লেখা বিনয় মজুমদারের ‘ফিরে এসো চাকা’ কবিতা ও ওই নামের কাব্যগ্রন্থ নিয়ে অনেক হেজিয়েছেন। এখন, আমি বিনয় মজুমদারের চক্রবিষয়ক কাব্যগ্রন্থটি ভিন্নভাবে ১৯৬১তে প্রকাশিত গায়ত্রীকে, ১৯৬২-তে ফিরে এসো চাকা, এবং ১৯৬৪ সালে আমার ঈশ্বরীকে নামে প্রকাশিত হলেও ফিরে এসো চাকা হিসেবেই পড়েছি। ১৯৬৮ সালে। তারাপদ রায়-এর ছিলাম ভালোবাসার নীল পতাকাতলে স্বাধীন বইয়ের সঙ্গে। আশি পাতার বোর্ডবাউন্ড, প্রচ্ছদ থেকেই কবিতা, আর একেবারে শেষের কভারপেজে সূচিপত্র দেওয়া এই কবিতার বই দেখে, আর ফিরে এসো চাকা যে গায়ত্রী চক্রবর্তীকে নিয়ে লেখা তা জেনে একসঙ্গেই একটু মজা পেয়েছিলাম। তা নিয়ে বাকিদের মতো সারা জীবন দুঃখু করিনি। এই মহৎ গণিতবিদ কবি যে তারপরে নিজের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করলেন তার জন্য গায়ত্রীকে দোষও দিইনি। বিনয় নিজেই তো গায়ত্রীর জন্য উপলব্ধি করেছিলেন যে ‘কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা/ উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।’ আর নিজের জন্য এই ভবিষ্যবাণী যে ‘মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে/ প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে।’
আমার এই অনতিক্ষুদ্র লেখার উপজীব্য তাই বিনয়ের যে ‘রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা—/ হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে’ বা ছিল, তার চেয়ে ‘কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত’ গায়ত্রীর-‘প্রতিভা’, যা আমার মতো অশিক্ষিত মানুষকেও আমার নিজের সমসময়ের উপর আমাদের ‘দুর্মর অতীত’-এর প্রভাব বুঝতে সাহায্য করেছে। সেখানেই তিনি আমার স্পিভাক।
এক ডাক্তার ফেসখা ফেসবুকে প্রশ্ন তুলেছেন কেন যে-কালে ‘বিদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কোনওদিন বলতে হয়নি, তিনি ভারতীয় কবি নন, ইউরোপীয় স্কলার’ গায়ত্রীকে বলতে হয় ‘তিনি ইন্ডিয়ান নয়, “ইউরোপিয়ানিস্ট”?’ এবং এর জন্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃতিও দিয়েছেন, যেখানে এমত লেখা আছে, ‘Despite her sari and her frequent references to Indian culture, Ms. Spivak dislikes being identified as a scholar of India, a label she attributes to “benevolent racism”. “I am a Europeanist.”
এতে এক বাঙালি লিবারেটেড ডাক্তার ও বিদ্বান ফেসখা যথার্থ মন্তব্য করেছেন যে ‘গায়ত্রী কেন আমেরিকায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় শাড়ি পরেন এবং ভারতে বক্তৃতা করার সময় জিন্স, সেটা নিয়ে ভাবলে উত্তরের আভাস পাওয়া যেতে পারে।’ এবং এটি গায়ত্রী স্পিভাকের ক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় ও সমর্থনযোগ্য নন কনফরমিস্ট পোলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। এই মন্তব্যেও প্রতিহত না হয়ে সেই ডাক্তার ফেসখা পুনরায় লিখেছেন ‘গায়ত্রী চক্রবর্তী চ্যাটার্জি নয় কেন? স্পিভাক সাহেবের সঙ্গে গায়ত্রী চক্রবর্তীর ডিভোর্স হয়ে গেছে বহু বছর আগে। তারপরের স্বামী বাসুদেব চ্যাটার্জি। তাহলে নামের সঙ্গে স্পিভাক রাখা কি পোস্টকলোনিয়্যাল হ্যাংওভার?’
এইসব কথাবার্তা যে অসফল বাঙালিদের তরফে সফল বাঙালিদের পিছন কামড়ানোর শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের অন্তর্গত, আর রবীন্দ্রনাথ যে একমাত্র মানুষ যিনি নিজের নামের আগে ‘বিশ্বকবি’ লেখা ছাড়াও ‘আমি পৃথিবীর কবি’ জাতীয় শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন, সেই কথা বাদ দিয়েও আমি জানাতে চাই যে, যে বৈশ্বিক মননের বাহিকা গায়ত্রী, তাতে করে তাঁর পক্ষে নিজের আত্মপরিচয়ের উপর কোনও ‘civilizational confinement’ চাপানো সম্ভব ছিল না। তাঁর কথা ভাবলেই আমার মনে পড়ে যায়, Identity and Violence বইতে কর্নেলিয়া সোরাবজির সম্বন্ধে অমর্ত্য সেনের কথাগুলো। সেগুলো একটু বদলিয়ে সংক্ষিপ্ত করে দিলাম।
তিনি নিজের ও অন্যদের দ্বারা বিভিন্নভাবে বর্ণিত ছিলেন ভারত ও ইংলন্ডে সমান স্বচ্ছন্দ এক “ভারতীয়” এবং India Calling নামে একটি মনোগ্রাহী বইয়ের রচক হিসেবে… এক পার্শি হিসেবে… “খ্রীস্টীয় গির্জার আদি শহীদদের” জন্য প্রশংসায় পূর্ণ এক “খ্রীস্টান” হিসেবে… “সবসময় একটি বর্ণাঢ্য সিল্কের শাড়িতে নিপুণভাবে পরিহিতা” এক নারী হিসেবে, Manchester Guardian-এর বর্ণনানুযায়ী এক আইনব্যবসায়ী এবং লিঙ্কন’স ইন-এর ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল হিসেবে… নারীদের শিক্ষার এবং বিশেষ করে অন্তরালবর্তিনী (“purdanaschins”) নারীদের আইনি অধিকারের জন্য এক যোদ্ধা হিসেবে… ব্রিটিশরাজের সোচ্চার সমর্থক হিসেবে (যিনি এমনকি, খুব ন্যায্যভাবে না হলেও, মহাত্মা গান্ধিকে দুষেছিলেন ছ-সাত বছরের শিশুকেও আন্দোলনে টানার জন্য), “বুদ্ধগয়ার সবুজ টিয়ে: কোনো এক গ্রামে কাঠের নীল ধোঁয়া নিয়ে” সর্বদা ভারতবর্ষ সম্পর্কে স্মৃতিবিধুর মানুষ হিসেবে, নর ও নারীর অপ্রতিসাম্যে দৃঢ়বিশ্বাসী আধুনিকমনস্কা হিসেবে, আঠেরো বছর বয়সেই একটি সর্বৈব পুরুষদের কলেজের শিক্ষক হিসেবে, এবং যে কোনও পটভূমিকার থেকে আসা “প্রথম নারী” হিসেবে, যিনি অক্সফোর্ডে দেওয়ানি আইনের ব্যাচেলরের ডিগ্রি পেয়েছিলেন (পরীক্ষাতে বসার জন্যই লেগেছিল অক্সফোর্ডের Congregation বিশেষ ডিক্রি)।
কর্নেলিয়ার পছন্দ বা বাছাইগুলো নিশ্চয়ই তাঁর সামাজিক উৎপত্তি ও পটভূমির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর অগ্রাধিকার বিষয়ে নিজের সব সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই তিনিই নিয়েছিলেন।[1]
এই আপাত অবান্তর কথাগুলো আমায় বলতে হল কিছু অজ্ঞ নিন্দুককে এটুকু বোঝাতে যে সোরাবজি নিজেকে তাঁর বহুধা আত্মপরিচয়ের কোনও একটিতেই আবদ্ধ রাখতে চাননি। তাঁর সঙ্গে নীরদ সি-র শ্বেতদ্বীপপ্রেমেও তফাৎ বিশেষ নেই। গায়ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দুজনেরই তফাৎ এইখানে যে নীরদ যেমন তাঁর Passage to England বইয়ের উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন ‘To the memory of the British Empire in India, which conferred subjecthood upon us, but withheld citizenship; to which yet every one of us threw out the challenge, “Civis Britannicus sum” because all that was good and living within us was made, shaped and quickened by the same British rule’, সেই কথাটি সত্যি হলেও গায়ত্রী তা বলেননি। তিনি নিজেকে বলেছেন ‘Europeanist’। অর্থাৎ গ্রিক যুগের উচ্চচিন্তা যা মধ্যে মধ্যযুগে নর্দমায় পড়েও রেনেসাঁসের মধ্যে আবার প্রজ্জ্বলিত হয়ে, আলোকোদ্ভাস (Enlightenment) এবং ফরাসি বিপ্লবের মধ্যে পরিপুষ্ট হয় তৎসঞ্জাত উদারনীতিবাদের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এক পশ্চিমি জ্ঞান ও বোধভাণ্ডার (episteme) নির্মাণ করেছে তিনি তার সমর্থক। আমরা ভারতীয় নাগরিক হয়েও তো তাই! ভারতীয় হলেই মোদিবাদী বা মমতাবাদী হতে হবে নাকি?
আর সেটা এই কথাটা বোঝার/বোঝানোর জন্য যে সমাজ-মাধ্যমের অনেকের মতো গায়ত্রীর বইয়ের লিস্টি না দিয়েই, বা ‘নিম্নবর্গীয়রা কথা বলতে সক্ষম’ কিনা তা নিয়ে তাঁর প্রবন্ধটিকে নিয়ে বা ওই নামের বইটিকে নিয়ে বেশি কালক্ষেপ না করেই তাঁর নিজের ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক মননের ভিত্তিতে সমাজবিজ্ঞানে উত্তর-আধুনিক চিন্তাজগতে এবং আমার নিজের মননের বিবর্তনে গায়ত্রীর উচ্চস্থান ও অত্যুচ্চ অবদানটাকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যায়।
উত্তরকথা— উত্তরাধুনিকতাবাদ, উত্তরৌপনিবেশিক তত্ত্ব, মানবীবাদ ও স্পিভাক
গায়ত্রী স্পিভাক জ্যাক দেরিদা-র De la grammatologie (Of Grammatology) অনুবাদ করেছিলেন দেরিদার চিন্তার সঙ্গে ইংরেজিভাষী দুনিয়ার পরিচয় করিয়ে দিতে। এটা করার কারণ ছিল এইটি যে তিনি এর আগেই বুঝেছিলেন যে উত্তরাধুনিকতাবাদ আলোকোদ্ভাসকেন্দ্রিক আধুনিকতাবাদকে চ্যালেঞ্জ করলেও (যেটা অবশ্য নীটশের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল) সেটা আমাদের মতো ঔপনিবেশিকায়িত দেশগুলির বাস্তবতা অবধি পৌঁছয়নি, বা তার উপর আলো ফেলতে পারেনি। মিশেল ফুকো-র স্বল্পপরিচিত প্রবন্ধ ‘George Canguilhelm: Philosopher of Error’, আর জ্যাক দেরিদার কিছু বেশি বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘White Mythology: Metaphor in the Task of Philosophy’ দুটিতে এর দিকে কিছু ইঙ্গিত আছে মাত্র। কিন্তু দুটি প্রবন্ধই পশ্চিমি সংস্কৃতি ও জ্ঞানতত্ত্বের সর্বব্যাপী বৈধতার প্রতি অদ্বিধ চ্যালেঞ্জের প্রতিভূই বেশি। গায়ত্রীর মতে উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তা তার নোঙরস্থল খুঁজে পেয়েছিল এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই।[2]
গায়ত্রী কিন্তু তাঁর উত্তরাধুনিক উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের সঙ্গে মেশালেন মানবীবাদকেও। তাতে করে তিনি উত্তরাধুনিক মানবীবাদ-এর সঙ্গে উত্তর-ঔপনিবেশিক মানবীবাদেরও এক অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হয়ে উঠলেন। উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তার কিছু অংশ অবশ্যই লিঙ্গের প্রশ্নগুলিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। বাস্তবিক, এই ক্ষেত্রের অনেক গবেষকই নিজেদের মানবীবাদী ভাবতে পছন্দই করতেন। তবু তাঁদের লেখায় একটা প্রবণতা ছিল চিন্তকদের মধ্যে এই ক্ষেত্রের ‘male greats’ অবদানেরই রোমন্থন করার (যেমন ফ্রানজ ফ্যানন, এডওয়ার্ড সাইদ, হোমি ভাবা ইত্যাদির)। অ্যাঞ্জেলা ডেভিস, অ্যাড্রিয়েন রিচ, অড্রে লর্ড বা বেল হুকস-এর মতো মহিলা গবেষক ও সক্রিয় কর্মীরা ততটা কল্কে পেতেন না, যদিও গায়ত্রী স্পিভাক এখানেও খুব বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠলেন।
এই দৃশ্যমানতার কারণ হল দুটি। একদিকে তো স্পিভাক আদি উত্তর-ঔপনিবেশিক মানবীবাদীরা তাঁদের পুং-সহতাত্ত্বিকদের এই পূর্বানুমানটিকে সমালোচনা করলেন যে ব্রিটিশ পুরুষদের আচরণ ও বিশেষ প্রকৃতি তাঁদের সাম্রাজ্যিক প্রজাদের মাপকাঠি হিসেবে অথবা গোটা সাম্রাজ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করতে পারে, যেমন দেখিয়েছিলেন রোনাল্ড হ্যাম তাঁর Empire and Sexuality: The British Experience (1994) বইতে। একইসঙ্গে সাইদ-এর মতো প্রথমদিককার উত্তরৌপনিবেশিকবাদীরা যে নারী-ক্রিয়াক্ষমতা (female agency)-কে উপেক্ষা করতেন এবং খুব কমই মহিলা লেখকদের কাজকে স্বীকৃতি দিতেন, তাঁদের বিরুদ্ধে স্পিভাক এবং অন্যরা নারীদের অভিজ্ঞতাকে তুলে আনলেন, ঔপনিবেশিকায়ক বা ঔপনিবেশিকারক হিসেবে নয়, মেট্রোপলিসে অথবা তার বাইরে ঔপনিবেশিকায়িত এবং স্বছন্দ বা অস্বচ্ছন্দ মানুষী হিসেবে। এর বিপ্রতীপে পুরুষতা বা পুরুষালিতা-র উপরেও ফোকাস করলেন আর যাথার্থ্যিক-সাম্রাজ্যিক পুরুষ বিষয়ীর অনুমিত বিশেষাধিকারগুলিরও (putative privileges of the normative-imperial male subject) অবনির্মাণ করতে চাইলেন।[3]
এখানে তালপাদে মোহান্তি ও কুমারী জয়াওয়ার্দেনার সঙ্গে গায়ত্রী স্পিভাক উত্তর-ঔপনিবেশিক মানবীবাদেও কিছু পরিবর্তন আনলেন। তাঁরা অস্বীকার করেননি যে বিশেষ বিশেষ সমাজে লিঙ্গবৈষম্য আছে। বরং তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল এগুলির দূরীকরণ। কিন্তু তাঁদের আপত্তি ছিল কোনও কোনও সাম্প্রতিক পশ্চিমি পাঠসমূহে (texts) একটি একক/অদ্বিতীয়, একশিলাগঠিত “third world woman”-এর নির্মাণের বিরুদ্ধে, যাতে করে তৃতীয় বিশ্বের মানবীদের সম্বন্ধে “Western feminist” পাণ্ডিত্যের ফাঁকফোকরগুলোকে আবিষ্কার ও সমালোচনা করা যায়।[4] স্পিভাক এই কথাগুলো তুলেছিলেন নিম্নবর্গীয়রা কথা বলতে সক্ষম কিনা তা নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধে। এখানে স্পিভাক অনেক কথার মধ্যে আমাদের তৃতীয় বৈশ্বিক, উত্তরৌপনিবেশিক নারীদের বিরুদ্ধে উপনিবেশবাদ, পিতৃতন্ত্র এবং পশ্চিমি মানবীবাদী পাণ্ডিত্যের ত্রিশাখ আক্রমণ সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন।[5] যথারীতি উত্তর-ঔপনিবেশিক মানবীবাদীদের সেটিও প্রভূত প্রভাবিত করেছিল। স্পিভাকের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেই কমলা বিশ্বেশ্বরন বলেছিলেন যে উপনিবেশবিরোধী জাতীয়তাবাদের অধীনে মানবীরা যথার্থ বিষয়ী হিসেবে পরিগণিত হন না। বরং উপনিবেশবিরোধী জাতীয়তাবাদ সেটিকে ‘register’ করেও তাঁদের সক্রিয়তাকে (agency)-কে ঢাকনা দেওয়ার চেষ্টা করে, আর এই চিহ্নলোপের মুহূর্তেই নিম্নবর্গীয়র আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়।[6] আমি এ-কথা মানি, যদিও আমি গ্রাহাম রিয়াশ-এর এই কথার সঙ্গে একমত যে স্পিভাকের প্রবন্ধটির একটু বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি নিশ্চিতভাবেই নিম্নবর্গীয়রা কথা বলতে পারে তার অনুসন্ধান করলেও এর ঝোঁকটি বেশি নিম্নবর্গীয়দের কথা শোনা যায় কিনা, তার উপর।[7]
সে যাই হোক, নিম্নবর্গীয় কথক হতে বা শ্রুত হতে পারে কিনা এই কথা নিয়ে নিরন্তর ভাবতেন বলেই মহাশ্বেতা দেবীর ‘দ্রৌপদী’ গল্পটির অনুবাদ করেছিলেন। নিজের অনুবাদের অনতিদীর্ঘ ভূমিকায় এই অনুবাদ সম্পর্কে স্পিভাক যে প্রচুর কথা বলেছিলেন তার মধ্যে দুটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ: (১) ‘I translated this Bengali short story into English as much for the sake of its villain, Senanayak, as for its title character, Draupadi (or Dopdi). Because in Senanayak I find the closest approximation to the First World scholar in search of the Third World.’ আমি যদি উদ্ধৃতির শেষ দুটি শব্দের সঙ্গে ‘woman’ শব্দটি যোগ করে নিই, তাহলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। (২) ‘My approach to the story has been influenced by “deconstructive practice.” I clearly share an unease that would declare avant-garde theories of interpretation too elitist to cope with revolutionary feminist material. How, then, has the practice of deconstruction been helpful in this context?’[8] যদি আমরা স্পিভাকের অনুবাদে ‘দ্রৌপদী’ গল্পটির শেষ বাক্যটি দেখি, তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, তিনি তৃতীয় বৈশ্বিক উত্তর-ঔপনিবেশিক মানবীর সামনে পশ্চিমি মানবীবাদী এপিস্টিম-এর অসহায়তাটা কেমন বুঝছিলেন—
Draupadi pushes Senanayak with her two mangled breasts, and for the first time Senanayak is afraid to stand before an unarmed target, terribly afraid.[9]
উত্তরকথা— অবনির্মাণ, দ্বৈতপাঠ ও ধারাবিরোধী পাঠ
‘দ্রৌপদী’ গল্পটি মনের মধ্যে একটা ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। আগেই বলেছি স্পিভাক জ্যাক দেরিদা-র De la grammatologie অনুবাদ করেছিলেন। এর একটা কারণ অবশ্যই ছিল দেরিদার অবনির্মাণ (‘deconstruction’) ও দুইপাঠ-এর (‘double reading’) ধারণাদুটির প্রতি তাঁর আকর্ষণ। আমার ফেসখাদের ভিতরে ও বাইরে বিদগ্ধ পাঠকদের এ-দুটি শব্দের মানে বোঝাবার দরকার নেই। কিন্তু বাকিদের জন্য জানাই Of Grammatology বইতে দেরিদার বক্তব্য ছিল এই যে পুরো পশ্চিমি রাষ্ট্রচিন্তা প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের সময় থেকে যেভাবে কিছু বিরোধাভাসকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে (যেমন নর/নারী, সাদা/কালো, স্বর/নীরবতা, বাচন/লিখন), সেটা আর যেভাবে তাদের একটাকে অন্যটির উপর বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেটা মিথ্যে।[10] কারণ প্রতি দ্বৈতশব্দ একে অন্যের দ্বারা সংক্রামিত, আর একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। অবনির্মাণ এদের কাঠামোগত পরজীবিতা আর সংক্রমণকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে ‘difference’ (diffrance)’, ‘supplementarity’ and ‘freeplay’-র ধারণাগুলির সাহায্যে।[11] আর সেগুলি উঠে আসে দুই পাঠের দ্বিতীয়টায়। দুইপাঠ একইসঙ্গে ‘faithful and violent’। প্রথম পাঠটি মূলানুগ আর ‘repetitive’, text-এর সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু দ্বিতীয় পাঠটি প্রথমটির উপর চাপ সৃষ্টি করে। নিয়ালনের ভাষায়, ‘second movement of the double reading is, generally speaking, the intervention of an outside or excluded term within the very constitution of wholeness.’[12]
স্পিভাক এখান থেকেই গ্রহণ করেছিলেন তাঁর “reading against the grain”-এর ধারণা। এর মাধ্যমেই তিনি নির্মাণ (যদি ক্রিয়াটি এখানে আদৌ ব্যবহার করা যায়) করেছিলেন তাঁর ‘colonial discourse analysis (CDA)’, যাকে তিনি প্রয়োগ করেছিলেন ‘দ্রৌপদী’ ছাড়াও ‘The Rani of Sirmur’ (1985), ‘Three Women’s Texts and a Critique of Imperialism’ (1985), and ‘Imperialism and Sexual Difference’ (1986)— এই লেখাগুলিতে। বিষয়তত্ত্বভিত্তিক (Thematic), কার্যক্রমিক (programmatic) এবং পদ্ধতিতাত্ত্বিক (methodological)— এই তিন স্তরেই সাইদ-এর থেকে সরে গিয়ে তিনি প্রতি-সন্দর্ভের (counter-discourse’) বিভিন্ন প্রকাশের উপরে ফোকাস করেন।[13]
এর জন্য তিনি প্রথমত সমর্থক হয়ে ওঠেন রণজিৎ গুহ-র নেতৃত্বে Subaltern Studies Group-এর তরফে মার্কসের বিভিন্ন রচনাকে তাদের ইউরোপীয় উৎসস্থল এবং একটি সমসত্ত্ব আন্তার্জাতিকতাবাদের বাইরে উত্তর-ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিগুলির সবটার সম্পর্কে বিষমজাতীয়তার (heterogeneity) এক নাছোড় স্বীকৃতির দিকে উন্মোচিত করার চেষ্টার।[14] রয় বয়েন-কে উদ্ধৃত করে তিনি দেখান কীভাবে অপরত্বের (otherness) ক্রমোচ্চবিন্যস্ত নির্ধারকগুলিকে এইভাবে অস্থিতিশীল করে দেওয়া উদারনীতিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সমাজবিরোধী ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার একটা সুযোগ করে দিতে পারে উত্তর-ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিগুলির পক্ষে।[15] সুতরাং স্পিভাকের কছে উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্ব প্রধানত দেরিদীয় অবনির্মাণমূলক পথে একটি অপরত্ব বা অপরতাসৃজক যন্ত্র (‘otherness machine’)।[16]
দ্বিতীয়ত স্পিভাক তাঁর উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বকে একটা বৃহত্তর ফ্রেমে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘উত্তর-ঔপনিবেশিকতার অধ্যয়ন নিজের অজ্ঞাতসারেই একটি হারানো জিনিসের খোঁজ করতে করতে একটি ওজরে পরিণত হতে পারে, যদি না তাকে একটি সাধারণ ফ্রেমে বসানো না হয়।’[17] এই ফ্রেমটি অবশ্যই উত্তরাধুনিকতাবাদ এবং দেরিদীয় অবনির্মাণ। তাঁর নিজের ভাষাতেই আবার ঔপনিবেশিক সন্দর্ভ অধ্যয়ন (‘colonial discourse studies’) থেকে বহুজাতিক সাংস্কৃতিক গবেষণার দিকে (‘transnational cultural studies’) একটা অনুশীলকের অগ্রগতির (‘a practitioner’s progress’) পথনির্দেশ করতে গিয়ে স্পিভাকের বই The Critique of Postcolonial Reason তাকিয়েছে দর্শনের, একগুচ্ছ সাহিত্যিক ‘text’, একটি বিধবাদাহ-র উপরে অভিলেখ্যাগারের তথ্য সম্ভারের, এবং উত্তরাধুনিক ফ্যাশনের দিকে। সেই সাধারণ ফ্রেমটি দেখায় কীভাবে ‘কান্ট আদিমদের আগেই বাদ দিয়েছিলেন (foreclosed the Aboriginal), হেগেল ইউরোপের অপরকে একটা আদর্শস্থাপক ধাঁচের বিচ্যুতি হিসেবে (‘as a pattern of normative deviations’) দেখিয়েছিলেন, আর মার্কস কীভাবে পার্থক্যের (‘difference’) মোকাবিলা করেছিলেন।[18]
তৃতীয়ত মার্কসের মতোই স্পিভাক পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবকে কেবল ধ্বংসাত্মক হিসেবে দেখাননি। তিনি এর সদর্থক দিকগুলিকেও তুলে ধরেছিলেন ‘enabling violation’ অথবা ‘enabling violence’-এর কূটাভাসের মাধ্যমে।[19]
মনে রাখতে হবে যে ‘Can the Subaltern Speak?’[20]-বিষয়ে স্পিভাকের লেখাটি উত্তর-ঔপনিবেশিক চিন্তার দিক পালটে দেয়। জ্ঞান প্রকাশ এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন তোলেন ‘Can the third world write its own history?’ স্পিভাকের দৃষ্টিভঙ্গির নতুনত্ব ও মৌলিকতাকে প্রকাশ মেনে নেন এটা জেনেও যে উপনিবেশবাদ ও তার ফলাফলগুলির প্রতি জাতীয়তাবাদ এবং মার্কসবাদ আগে পরাক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল আর উভয়েই উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের পূর্বসূরি। কিন্তু তারা কাজ করেছে কিছু বৃহৎ আখ্যানের (‘master-narratives’) স্তরে যেগুলি ইউরোপকে কেন্দ্রে রেখেছিল। যেমন জাতীয়তাবাদ যখন সাইদীয় (Saidian) প্রাচ্যবাদী (Orientalist) চিন্তার বিপ্রতীপে পরাভূত জাতিগুলির উপরে ‘agency’ এবং ‘history’-কে অর্পণ করে তখনও সেটি উপনিবেশবাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যুক্তি আর প্রগতির শৃঙ্খলার দাবিদার ছিল। আবার মার্কসবাদ যখন উপনিবেশবাদকে তুলোধোনা করে, তখনও সেটির সমালোচনা একটি বৈশ্বিকতাবাদী উৎপাদনপদ্ধতির (‘mode-of-production’) আখ্যানের মধ্যেই আধারিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তর-ঔপনিবেশিক সমালোচনা কিন্তু এই ইউরোপকেন্দ্রিকতাকে হটিয়ে দেয় যেটি পশ্চিমের গতিপথকেই আর তার দ্বারা যা কিছু অপর তার আত্মসাৎকরণকেই ধ্রুব মেনে নেয়। তার এ উত্তর-ঔপনিবেশিকতা যেন একটা উপনিবেশের ফসল কেটে নেওয়ার পর গজিয়ে ওঠা ঘাস আগাছা, কেবল ‘aftermath’, একটি ‘after—’। এই প্রাধান্যের সন্দর্ভের মধ্যে গঠিত সমালোচনা একটা স্থলের (‘space’) জন্ম দেয় যেটা পশ্চিমি প্রভুত্বের ইতিহাসের বাইরেও নয়, ভিতরেও নয়, বরং তার সঙ্গে একটা স্পর্শরেখীয় সম্পর্কে আবদ্ধ। একেই হোমি ভাভা বলেছেন একটি মধ্যের মধ্য, সঙ্কর ব্যবহাররীতি ও দরাদরি (‘an in-between, hybrid practice and negotiation’)। স্পিভাক একেই বলেন ‘catachresis’ যেখানে নীতিমানবর্ণক যন্ত্রটাকে উলটিয়ে, স্থানচ্যুত করে, (“reversing, displacing, and seizing the apparatus of value-coding”) তার দখল নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।[21]
ঠিক এই জন্যেই বোধহয় স্পিভাক ইংল্যান্ডে শাড়ি আর ভারতে জিন্স পরেন।
[1] Sen, Amartya. Identity and Violence: The Illusion of Destiny. London: Penguin, 2007. 159-60.
[2] Gandhi, Leela. Postcolonial Theory: A Critical Introduction. Delhi: Oxford University Press. 1999. 26-7.
[3] Lewis, Reina and Mills, Sara. ‘Introduction’, যত্র Feminist Postcolonial Theory: A Reader. eds. Lewis and Mills. New York: Routledge. 2003. 1-2.
[4] Mohanty, Chandra Talpade. ‘Under Western Eyes: Feminist Scholarship and Colonial Discourses’ (1988). যত্র Third World Women and the Politics of Feminism. eds. Mohanty, Ann Russo, and Lourdes Torres. Bloomington and Indianapolis: Indiana University Press. 1991. 52; এবং Mohanty, Chandra Talpade. ‘“Under Western Eyes” Revisited: Feminist Solidarity through Anticapitalist Struggles’. Signs 28:2 (Winter 2003). 499-535. esp. 501, 515.
[5] Spivak, Gayatri Chakaravorty. ‘Can the Subaltern Speak’, যত্র Nelson, C. and Grossberg, L. (eds.) Marxism and the Interpretation of Culture. Basingstoke: Macmillan Education. 1988. 271-313.
[6] Visweswaran, Kamala. ‘Small Speeches, Subaltern Gender: Nationalist Ideology and Historiography’. যত্র Amin, Shahid and Chakrabarty, Dipesh (eds.) Subaltern Studies IX: Writings on South Asian History. New Delhi: Oxford University Press. 1996. 83-125. বিশেষত 124.
[7] Riach, Graham. An Analysis of Gayatri Chakravorty Spivak’s Can the Subaltern Speak? London: Routledge. 2017. 11.
[8] Spivak. “Draupadi” by Mahasveta Devi: Translated with a Foreword by Gayatri Chakravorty Spivak. Critical Inquiry 8:2, Writing and Sexual Difference. Winter, 1981. 381-402. বিশেষত 381-82.
[9] তদেব, 402.
[10] McQuillan, Martin. Introduction: Five Strategies of Deconstruction, in Deconstruction: A Reader. ed. McQuillan, Martin. New York: Routledge. 2001. 6, 8.
[11] Derrida, Jacques. Of Grammatology. 40th anniversary. ed. (Baltimore, MD: Johns Hopkins University Press, 1974/2016), 181.
[12] Derrida, Jacques. The Age of Hegel. অনু. Winnett, Susan. যত্র Demarcating the Disciplines. ed. Weber, Samuel. Minneapolis, MN: University of Minnesota Press. 1987. 21; Derrida, Jacques. Positions. University of Chicago Press. 1982. 41. উভয়ই উদ্ধৃত যত্র, Nealon, Jeffrey Thomas. Double Reading: Postmodernism after Deconstruction. Ithaca, NY: Cornell University Press. 1993. 17–18. 33.
[13] Moore-Gilbert, Bart. Postcolonial Theory: Contexts, Practices, Politics. London: Verso. 1997. 75-77.
[14] Spivak, Gayatri Chakravorty. Subaltern Studies: Deconstructing Historiography. (1985). যত্র The Spivak Reader. eds. Landry, Donna and MacLean, Gerald. New York and London: Routledge. 1996. 221.
[15] Boyne, Roy. Foucault and Derrida: The Other Side of Reason. Unwin Hyman. 1990. cited in Spivak, Gayatri Chakravorty. More on Power/Knowledge. 1992. in Spivak Reader. 160.
[16] অপর এবং অপরত্বকে স্পিভাক কীভাবে অন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার জন্য দেখুন— Moore-Gilbert, Bart. Postcolonial Theory. 84, 101, 103, 104, 109 and 117.
[17] Spivak, Gayatri Chakaravorty. A Critique of Postcolonial Reason: Toward a Vanishing History of the Present. Cambridge and London: Harvard University Press. 1999. 1.
[18] তদেব, ix-x.
[19] Spivak. Bonding in Difference: Interview with Alfred Arteaga. in Spivak Reader. 15-128, esp. 19.
[20] Spivak. Can the Subaltern Speak? যত্র Marxism and Interpretations of Culture. eds. Nelson, Carry and Grossberg, L. Basingstoke: Macmillan Education. 1988. 271-313.
[21] Prakash, Gyan. Postcolonial Criticism and Indian Historiography. Social Text. 31/32(1992):8-19.