সুখের সন্ধানে সমন্বয়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

 


ভারতের প্রেক্ষাপটে সুখের অর্থনীতির প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা অনুযায়ী, ভারতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অসমতা সামাজিক সুখকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। বিশ্ব অসমতা প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ৭৭ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এই অসমতা শুধু অর্থনৈতিকই নয়, সামাজিক সুযোগের অসমতাকেও নির্দেশ করে, যা সামগ্রিক সুখের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়।

 

ভারতীয় দর্শনে, এমনকি ফলিত মনোবিজ্ঞানেও আনন্দ আর সুখের ধারণা ঠিক এক নয়। তবে আলোচনার সুবিধার্থে যদি আমরা উভয়কে একই অর্থে ব্যবহার করি, তবে মানতেই হবে সুখ আমাদের জীবনের একটি মৌলিক আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সুখ কীভাবে পরিমাপ করা যায়? কিংবা একটি দেশের উন্নয়নের সূচক হিসেবে সুখকে কীভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই সুখের অর্থনীতি (Economics of Happiness) নামক আধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রটি প্রসারিত হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট (২০২৫)-এর সাহায্যে, এবং অর্থনীতির বিভিন্ন তাত্ত্বিক গবেষণার আলোকে আমরা সুখের অর্থনীতির নানান দিক বিশ্লেষণ করতে এবং বুঝতে চেষ্টা করতে পারি, কীভাবে অর্থনৈতিক সূচকের বাইরে গিয়ে সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, আধ্যাত্মিক এবং পরিবেশগত বিষয়গুলো আমাদের ঐহিক সুখ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

জাতিসঙ্ঘের (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক) আন্তর্জাতিক সুখ দিবস (২০ মার্চ, ২০২৫) উপলক্ষে, প্রতি বছরের মতো এই বছরও ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট, ২০২৫-এ বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর এক ক্রমতালিকা, প্রকাশ করেছে। গ্যালপ ওয়ার্ল্ড পোল থেকে বেশিরভাগ তথ্য সংগ্রহ করে, ১৪৮টি দেশের এক লাখের বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা করে এই রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। মানুষের মনোভাব, আচরণ এবং সুস্থতা পরিমাপ করে, মানুষের জীবনযাত্রার মান, প্রতিদিনের ভিত্তিতে তারা কীভাবে অনুভব করে এবং অন্যান্য মূল অন্তর্দৃষ্টিগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই রিপোর্ট তৈরি। এই রিপোর্ট থেকে আমরা বুঝতে পারি, দেশগুলি কীভাবে বিশ্বব্যাপী কল্যাণের দিক থেকে এগিয়ে চলেছে, কোন দেশগুলি নেতৃত্ব দিচ্ছে, কোন দেশগুলি সংগ্রাম করছে এবং বিশ্বব্যাপী কী পার্থক্য তৈরি করছে। এই রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী মানুষের সুখ ও সুস্থতার ওপর আন্তঃবিষয়ক বিশ্লেষণও উপস্থাপন করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা গেছে, যত্ন ও ভাগাভাগি (caring & sharing) শুধু গ্রহীতার জন্যই নয়, বরং যিনি যত্ন নেন বা ভাগ করেন, তার জন্যও সুখ বয়ে আনে। এই রিপোর্টে সামাজিক সংযোগ, মানবিকতা এবং সহযোগিতামূলক আচরণের মাধ্যমে কীভাবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুখ বাড়ানো যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সুখের অর্থনীতির মূল ধারণা হল ব্যক্তির আত্মনিষ্ঠ সুখ পরিমাপ করা। ডিনার ও তার সহযোগীরা (Diener et al., 2018) তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে শুধুমাত্র আর্থিক সূচক দিয়ে মানুষের প্রকৃত সুখ পরিমাপ করা সম্ভব নয়। ইস্টারলিন প্যারাডক্স (Easterlin Paradox, 1974) আমাদের শেখায় যে একটি নির্দিষ্ট স্তরের পর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আর সুখ বাড়ায় না। অর্থাৎ, মৌলিক চাহিদা পূরণ হওয়ার পর আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সুখের সম্পর্ক কমতে থাকে। সেট পয়েন্ট থিওরি (Set Point Theory, Lykken & Tellegen, 1996) বলে যে প্রতিটি মানুষের সুখের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে যা মূলত জিনগত এবং ব্যক্তিত্বের দ্বারা নির্ধারিত। তবে সামাজিক সম্পর্ক এবং কর্মসংস্থান এই মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থনীতির বিখ্যাত “ক্রমহ্রসমান প্রাপ্তির নীতি” (Law of Diminishing Returns) এখানে প্রযোজ্য— সুখের উৎসগুলো থেকে আমরা প্রথমদিকে বেশি তৃপ্তি পাই, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব কমতে থাকে।

WHR (2025) অনুসারে, নর্ডিক দেশগুলি সুখের র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে রয়েছে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং সুইডেন এখনও আগের বছরের মতোই শীর্ষ-চারে এবং একই ক্রমে রয়েছে। ফিনল্যান্ড টানা অষ্টমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের স্থান ধরে রেখেছে। ফিনল্যান্ডের মানুষ তাদের জীবনকে ১০-এর মধ্যে গড়ে ৭.৭৩৬ স্কোর দিয়ে মূল্যায়ন করেছে। সাধারণভাবে দেখা গেছে যে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলি এখন ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের তুলনায় কম সুখী; এবং প্রথমবারের মতো কোনও বৃহত্তর শিল্পশক্তির কেউই শীর্ষ ২০-তে স্থান পায়নি। ২০১৩ সালে শীর্ষ-১০ এরাই কেবল ছিল, কিন্তু এখন আছে মাত্র সাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA, ২৪তম) এবং যুক্তরাজ্য (UK, ২৩তম) তাদের সর্বগ্রাসী মনোভাবের কারণে নিজেদের এ-যাবৎকালীন সর্বনিম্ন অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নর্ডিক দেশগুলো কেন ধারাবাহিকভাবে WHR-এ শীর্ষে রয়েছে? বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে নর্ডিক দেশগুলোতে উচ্চমাত্রার সামাজিক আস্থা, ন্যূনতম আয়ের ব্যবধান এবং কর্ম-জীবনের ভারসাম্য সুখের এই উচ্চমাত্রাকে ব্যাখ্যা করে। এক্ষেত্রে তাদের সামাজিক নীতির প্রয়োগ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লেয়ার্ড (Layard, 2005)-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিনিয়োগ ফিনল্যান্ডের সাফল্যের মূল কারণ। অন্যদিকে, ভারত ১৪৭টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থানে রয়েছে, যা আমাদের উন্নয়নকৌশল পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সুখের মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল। এখানে জীবনের মৌলিক চাহিদাপূরণই এখনও বহু মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য, সুতরাং এক্ষেত্রে আয়বৃদ্ধির সঙ্গে সুখের সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে বেশি থাকলেও অন্যান্য সামাজিক বিষয়গুলোর প্রভাবও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের প্রেক্ষাপটে সুখের অর্থনীতির প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উইলকিনসন ও পিকেটি (Wilkinson & Piketty, 2010)-র গবেষণা অনুযায়ী, ভারতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অসমতা সামাজিক সুখকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। বিশ্ব অসমতা প্রতিবেদন (World Inequality Report, 2022) অনুসারে, ভারতের ৭৭ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এই অসমতা শুধু অর্থনৈতিকই নয়, সামাজিক সুযোগের অসমতাকেও নির্দেশ করে, যা সামগ্রিক সুখের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুটনাম (Putnam, 2000) দেখিয়েছেন যে ভারতীয় সমাজে পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হলেও, সামাজিক আস্থা ও সহযোগিতার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে নগরায়ণ এবং যৌথ পরিবারব্যবস্থার পতনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশেষভাবে তরুণদের মধ্যে একাকিত্ব বাড়িয়ে তুলছে।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ওয়ার (Warr, 2007)-এর গবেষণা থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে শুধু আয়ই নয়, কাজের নিরাপত্তা এবং সামাজিক মর্যাদাও সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীন জীবিকা এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রসার শ্রমজীবী মানুষের সুখের মাত্রাকে হ্রাস করছে। বিশেষ করে কোভিড ১৯-পরবর্তী সময়ে কাজের অনিশ্চয়তা, চুক্তিভিত্তিক জীবিকা এবং আয়সঙ্কোচন অনেক পরিবারকে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ফেলেছে। তার উপরে আছে বিজ্ঞাপনের হাতছানি আর অতিভোগবাদের প্রাবল্য, যাতে করে বহু পরিবার ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেশের নানান জায়গায় পরিবারের সবাই মিলে আত্মহত্যার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ডিনার ও সেলিগম্যান (Diener & Seligman, 2004) প্রমাণ করেছেন যে মানসিক সুস্থতা সুখের ৪০ শতাংশ ভিন্নতা ব্যাখ্যা করে। ইউনিসেফ (UNICEF, 2021)-এর তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-পরবর্তী সময়ে ভারতীয় তরুণদের ৪১ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছে। এই সঙ্কট আরও গভীর হয়েছে সামাজিক কুসংস্কার এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অপ্রতুলতার কারণে। ভারতকে “হ্যাপিনেস স্কোর” উন্নত করতে হলে প্রথমেই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা, কর্মক্ষেত্রে কর্মসূচি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। দুর্নীতি দমন করতে ও প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে সরকারের আরও বেশি করে উদ্যোগী হওয়া উচিত। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যপরিষেবা উন্নততর এবং দক্ষতর হওয়া দরকার। দূষণ হ্রাস ও পরিবেশগত সমস্যাগুলির সমাধানে, এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকারকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।

ভারতীয় বেদান্তদর্শনে সুখকে কখনই শুধুমাত্র বাহ্যিক অবস্থার ফল হিসেবে দেখা হয়নি। উপনিষদে পার্থিব সুখকে ক্ষণস্থায়ী, আর পারমার্থিক সুখকে অনন্ত “আনন্দ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভগবদ গীতার ২.৬৬ শ্লোকে বলা হয়েছে: “নাস্তি বুদ্ধিরয়ুক্তস্য ন চাযুক্তস্য ভাবনা। ন চাভাবয়তঃ শান্তিরশান্তস্য কুতঃ সুখম্॥” (যার বুদ্ধি বিভ্রান্ত, তার ধ্যান হয় না; যার ধ্যান হয় না, তার শান্তি কোথায়? আর যার শান্তি নেই, তার সুখই বা কোথায়?) বৌদ্ধদর্শনেও একইরকমভাবে বলা হয়, সুখের চাবিকাঠি হল “মধ্যিমা পথ”— যা অতিরিক্ত ভোগ এবং কৃচ্ছ্রসাধন উভয়ের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে আসতে পারে।

আধ্যাত্মিকতা এবং ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান উভয়ই দেখায় যে বস্তুগত সম্পদের সঙ্গে আসক্তি সুখের স্থায়িত্ব কমায়। অন্যদিকে, নিরাসক্তির অভ্যাস, ধ্যান এবং মননশীলতার অনুশীলন কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে (Harvard Medical School, 2021)। শিখ ধর্মের “সেবা” এবং ইসলামের “যাকাত” ধারণা শেখায় “কর্মযোগ”-এর অনুশীলন ডোপামিন নামক হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে (Post, 2005), যা সুখের অনুভব জাগায়। নৈতিকতা এবং আত্ম-সচেতনতার শিক্ষা, নিঃস্বার্থসেবা ও দানসংস্কৃতি এই মনস্তাত্ত্বিক অভ্যাসেরই এক ব্যবহারিক প্রয়োগ। এই ধারণাই আবার মহাত্মা গান্ধির “সরল জীবন” দর্শন, এবং থরোর “ওয়ালডেন” দর্শন বর্তমান সুস্থায়ী উন্নয়ন ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কাসের (Kasser, 2002)-এর গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি যে অতিভোক্তাবাদ বরং প্রকৃত সুখ কমায়। বহুকাল ধরেই চলে আসা ইস্কন-এর “অন্নামৃতম” অনুষ্ঠান অথবা গুরুদ্বারগুলোর “লঙ্গর” ব্যবস্থা, সামাজিক সুখ সূচক (Social Happiness Index) বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা নেয়।

সুখের অর্থনীতি আমাদের শেখায় যে প্রকৃত উন্নয়ন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় না। ভারতের জন্য একটি সমন্বিত সুখ-ভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জিডিপির বিকল্প হিসেবে জাতীয় সুখ সূচক (National Happiness Index) তৈরি করা যেতে পারে, যা ভুটানের স্থূল জাতীয় সুখ (Gross National Happiness) এবং OECD-র উন্নততর জীবন সূচক (Better Life Index) ধারণা অনুসরণ করে তৈরি করা যেতে পারে। এই সূচকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার মতো অ-আর্থিক সূচকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। সামাজিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংলাপ বৃদ্ধি করতে হবে।

সামাজিক অসমতা কমানোর জন্য পিকেটি (Piketty, 2014)-র প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রগতিশীল করকাঠামো চালু এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য সবুজ নগরায়ণ, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সুখের অর্থনীতির সঙ্গে ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য-র সমন্বয় একটি অনন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারে। গীতাতে আমরা পাই, “যোগঃ কর্মসু কৌশলম” (যোগ হল কর্মে দক্ষতা)— অর্থাৎ আধ্যাত্মিক চেতনা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয়ই প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি। অর্থাৎ, একদিকে যেমন জাতীয় আয়বৃদ্ধি প্রয়োজন, অন্যদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রসার, আর গভীরতর আত্ম-উপলব্ধির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। যেখানে বাহ্যিক সমৃদ্ধি এবং আন্তরিক শান্তি একসঙ্গে থাকবে; আর তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল গণতন্ত্রের জন্য “বিলাসিতা” নয়, বরং অপরিহার্য “প্রয়োজনীয়তা” হিসাবে স্বীকৃতি পাবে। সরকার, বেসরকারি ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং গঠনমূলক সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই গৃহীত নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো কেবল পরিসংখ্যানগত উন্নয়নই নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রার মানও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5002 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...