দুর্নীতিগ্রস্তের দেনা শুধলেন দুর্নীতির শিকার হলেন যাঁরা

অপর্ণা ঘোষ

 


সিবিআই নামক তদন্তসংস্থাটি "বৈধ নিয়োগতালিকায় লুকিয়ে থাকা অবৈধ"-দের খুঁজে বের করতে যে পারল না এর জন্য সিবিআই আধিকারিকদের কর্তব্যে গাফিলতির অপরাধে চাকরি যাবে কি? অপরাধী এসএসসি-র কাছে তার অপরাধের স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণভাবে আদায় করার দায়িত্ব কি তদন্তকারী সংস্থার নয়? সে-ক্ষেত্রে অপারগতার দায়িত্ব নির্দোষ প্রার্থীদের উপরে কীভাবে বর্তায়? আর, তিন মাসের মধ্যে নতুন করে যে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে সেই পরীক্ষা কারা নেবে? সেই সংস্থা— যাদের জন্য পুরো প্যানেল বাতিল হল?

 

রায় বেরোল! এসএসসি নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলার। প্রথমেই বলে নেওয়া ভাল প্রতিবেদকের আইনের পাঠ পড়া নেই। ২০২৪ সালের এপ্রিল  মাসে নিয়োগে গভীর ও ব্যপক দুর্নীতির দায়ে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬-১৭-র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের গোটা প্যানেল বাতিল করেছিল। তার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনো পর্যন্ত নির্দোষ ও দোষী সাব্যস্ত ২৬০০০ মানুষের ও তাঁদের পরিবারের উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের কিছু অংশ অনুভব করার অভিজ্ঞতা, মিডিয়া পরিবেশিত বিভিন্ন সংবাদ, এবং শেষতক এই রায়ের প্রতিবেদন যতটুকু ক্ষুদ্র সামর্থ্যে বোধগম্য হয় তারই ভিত্তিতে এক সাধারণ মানুষের কিছু প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্ন এই প্রতিবেদনে রইল।

আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত (অতি সাম্প্রতিককালে জাস্টিস ভার্মা কেস এবং ২০২৪ কোরাপশন ইন্ডেক্স-এ ভারতের ১৮০টি দেশের মধ্যে ৯৬তম স্থান— ইন্ডেক্সটি আঞ্চলিক— রাজ্য-কেন্দ্র পুরোটাই হিসাবে আনে transparency international-এর সমীক্ষা, স্মরণ করতে বলি) ও অতীব সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যপীড়িত এই রাষ্ট্রে এই অবিশ্বাস্য অসংবেদনশীল রায়ের চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না বোধহয়। যে বিচারব্যবস্থার কাছে সাধারণ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে সর্বোচ্চ ন্যায় পাওয়ার আশায় ছুটে যায়, তাও এই রাষ্ট্রব্যবস্থারই অংশ, মহামান্য বা ভগবান যাই ভাবি না কেন, এটাই পরম সত্য। রায়টি পর্যালোচনা করতে গেলে এ-কথা ভুলে না যাওয়ার আবেদন রাখি। ভুলে যেন না যাই বিচারক অবসর নিয়েই কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন বা রাজ্যসভার সদস্যপদ পাচ্ছেন এমন উদাহরণও বিরল নয়। তবে সহনাগরিকদের এই দুর্দশায় সোশাল মিডিয়ার এক বিরাট অংশ জুড়ে যে উল্লাসের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, তাতে দোষী-নির্দোষ নির্বিশেষে সব চাকুরি-হারাই সামাজিকভাবে অপরাধী চিহ্নিত হয়ে গেছেন। এই অবস্থায় এই আবেদনের অর্থ কী তা-ও জানি না। তবে এই ভয়ানক অসূয়া ও অসংবেদনশীলতা অসুরক্ষিত ও অস্থির একটি সমাজমানসের পরিচয় দেয়, এ-ও সত্য।

সুপ্রিম কোর্টের ৪১ পাতার রায় বিশ্লেষণ করার আগেই যে-কথাটা বলা যায় তা হল এই রায়ে ভারতীয় সংবিধানের মূল সুর— ‘দোষী ছাড়া পেতে পারে, কিন্তু একজনও নির্দোষ যেন সাজা না পায়’— প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যে সিস্টেম ঘুষ খাওয়া ও ঘুষ দেওয়াকে স্বাভাবিক করে তোলে, নির্দোষেরও চাকরি বাতিল করা তাকে সংশোধন করার পন্থা হিসাবে বিবেচিত হল। এই রায়ে বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি প্রিসিডেন্স আলোচিত হয়েছে (পয়েন্ট ৭ থেকে পয়েন্ট ১৮)। তার অনেকগুলিতেই সবদিক বিচার করে পুরো প্যানেল ক্যান্সেল করা হয়েছিল। কিন্তু এতে পরীক্ষা-দুর্নীতি তো বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল এতদিনে! হয়নি। একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের দুর্নীতির ব্যাপ্ত জাল গ্রাস করেছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির মতো শিক্ষার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলিকেও। সেটাই হওয়ার কথা। এই উদ্ভট পন্থার বলি নির্দোষরা কেন হবেন এটাই প্রশ্ন। প্রত্যাখ্যাত হল natural justice। সে-কথা প্রকারান্তরে মহামান্য আদালত স্বীকারও করেছেন— “…In light of the facts of this case we are of the Opinion that the principles of natural justice can not be invoked to validate the fraud that has occurred….” (page 39)। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের রায় নিয়ে গলাবাজি ও বিরোধী দলগুলোর সাধারণ মানুষের এই দুর্দশা থেকে আগামী নির্বাচনে ফায়দা লুটবার এই যে খেলা তার চেয়ে নির্দয় অন্যায় বোধহয় আর কিছু হতে পারে না। রাস্তার রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রের আদালত ও আইনের চক্করে সঙ্কুচিত করে ফেলার বিষম দায় অফিসিয়াল বামেরা এড়াতে পারে না। রায় নিয়ে ‘বিকশিত’ উল্লাসের কথা বাদই দিলাম। বাম শিক্ষক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া— এই রায়ের পর রাজ্য সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। সে তো উচিত। নিরপরাধ চাকরিহারাদের কী হবে? তা নিয়ে আদালতের নির্ধারিত পথের বাইরে তাদের কোনও বক্তব্য নেই অবশ্য। স্কুলে স্কুলে এই সংগঠনের অধিকাংশ সদস্যদেরও সহকর্মীর চাকরি চলে যাওয়াতে এইরকমই প্রতিক্রিয়া। ব্যতিক্রম আছেন নিশ্চয়ই। তবে স্কুলে কাজ করার সুবাদে এইরকমটাই চোখে পড়ছে।

প্রিসিডেন্সের কথা বলছিলাম, তাতেই আবার ফিরে আসি। ১ নম্বর প্রিসিডেন্স— ৭ নম্বর পয়েন্ট, Sachin Kumar and others v Delhi Subordinate Service Selection Board (DSSSB) and others. এই কেসে কোর্টের অবজার্ভেশন ছিল—

The answer lies in examining whether the irregularities were systemic enough to undermine the sanctity of the process. In some cases, the irregularities may border on or even constitute fraud, which severely damages the credibility and legitimacy of the process. In such cases, the only option is to cancel the result entirely. These are situations where it is difficult to separate the tainted from the untainted participants, and the irregularities are widespread, indicating a malaise or fraud that has corrupted the process. On the other hand, there are cases where only some participants have committed irregularities. In such cases, it may be possible to segregate the wrongdoers from those who adhered to the rules. The innocent should not suffer for the actions of the wrongdoers. By segregating the guilty, the selection process for the untainted candidates can proceed to its logical conclusion. This aligns with the principle of equality of opportunity under Article 16(1) of the Constitution of India, as well as the fundamental requirement of Article 14 of the Constitution, which mandates a fair, equitable, and reasonable process. Care must be taken to ensure that the innocents are not unfairly penalized alongside the wrongdoers by cancelling the entire process. To treat the innocent and the wrongdoers equally would violate Article 14 of the Constitution, as it would involve treating unequals equally. The innocent should not be punished for faults they did not commit.

২৬,০০০ চাকুরিহারা, ৭,০০০ জনের কাছাকাছি সংখ্যক প্রার্থীকে সিবিআই দোষী চিহ্নিত করেছে এবং এসএসসি এই সংখ্যা স্বীকার করে নিয়েছে। ওপরের কোর্টের বয়ান অনুযায়ী এই অনুপাতের কারণে কি পুরো প্যানেল বাতিল করা প্রয়োজন? বাদবাকি ১৯,০০০ সম্পূর্ণ বৈধ নিয়োগ— এই হলফনামা এসএসসি দেয়নি বলে পুরো প্যানেল বাতিল করতে হল এমন একটি খবর বিভিন্ন মিডিয়া থেকে শুনলেও এইরকম একটি প্রত্যক্ষ বা সরাসরি বয়ান আমি অন্তত এই রায়ে খুঁজে পাইনি। বরং গভীর ও ব্যাপক দুর্নীতি, এসএসসি ও পর্ষদের বিভিন্ন নিয়মবহির্ভূত কাজকর্ম প্যনেলটির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে এবং সেটাই পুরো প্যানেল বাতিলের কারণ বলেই বলা হয়েছে। আরেকটি কারণও থাকতে পারে। যাঁদের OMR কপি “Tainted” হিসাবে পেশ করা হয়েছে তাঁরা দাবি করেছেন ওইগুলি তাঁদের পরীক্ষা দেওয়া কপি নয়। আমি এটা বুঝতে পারিনি যে এই দাবি অসঙ্গত কিনা তা পরীক্ষা করা যাবে না কেন, বা সেরকম নির্দেশ ভবিষ্যতে কার্যকর করা হবে কিনা। তবে যাঁদের নিয়োগে অবৈধতা খুঁজে পাওয়া গেছে আর বাদবাকি “আপাত-বৈধ” নিয়োগের মধ্যেও অনিয়ম থাকতে পারে— এই দুইয়ের মধ্যে আইনগত ফারাক আছে। ধরে নিলাম যে যোগ্যরা “আপাত-যোগ্য” তাঁদের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করতে বিচারবিভাগ, সিবিআই পারল না। তার বেনিফিট অফ ডাউট কাদের পাওয়া উচিত? অবশ্যই, যাঁরা “আপাত-যোগ্য”। অথচ ঠিক উল্টো হল। যেভাবে এতগুলি যোগ্য মানুষ চাকরি হারালেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় ছেড়ে দিলাম, যে গভীর সামাজিক অসম্মানের মুখে তাঁরা দাঁড়ালেন তা অবশ্যই এক প্রশ্নযোগ্য অমানবিক রায়ের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

প্রিসিডেন্সগুলির মধ্যে দুই ও তিন নম্বর (পৃষ্ঠা ১২, পয়েন্ট ৮ ও ৯) বোর্ড পরীক্ষায় অনিয়মের উদাহরণ। চাকরি হারানো ও বোর্ড পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়া— দুটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অভিঘাত কি তুলনীয় হতে পারে? আর যদি এই তুলনা টানতে হয় তাহলে NEET-র মতো একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার অত বড় দুর্নীতি কীভাবে চাপা পড়ে যেতে পারে?

সিবিআই-এর তদন্ত ও এসএসসির অপরাধসমূহ নিয়ে দু-চার কথা বলা যাক। এসএসসির অপরাধগুলি হল:

  1. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (এক বছর) নিয়োগ না করা অথচ রুল ২১ দেখিয়ে সমস্ত আসল OMR এক বছর পরে নষ্ট করা এবং সার্ভারে ডিজিটাল কপিগুলিও নষ্ট করা;
  2. রুল ২১ শুধুমাত্র সহশিক্ষকদের ক্ষেত্রে খাটে। কিন্তু গ্রুপ সি আর গ্রুপ ডি-র ক্ষেত্রে খাটে না। তাঁদের নথিও একইভাবে এক বছর পরে নষ্ট করা হয়েছে;
  3. মেধাতালিকা প্রাপ্ত নম্বর ছাড়া প্রকাশ করা এবং র‍্যাঙ্কে কারচুপি করা;
  4. OMR sheet-এ কারচুপি করা।
  5. প্যানেলভুক্ত নয় এমন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া এবং তার জন্য সুপার-নিউম্যারিকাল পদ তৈরি করা;
  6. এসএসসির সুপারিশপত্র ও বোর্ডের নিয়োগপত্রের সংখ্যায় বড় আকারের ফারাক;
  7. এছাড়াও আদালতে মিথ্যা বয়ান, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা— এসব আমরা সকলেই কমবেশি জানি।

কিন্তু সিবিআই নামক তদন্তসংস্থাটি “বৈধ নিয়োগতালিকায় লুকিয়ে থাকা অবৈধ”-দের খুঁজে বের করতে যে পারল না এর জন্য সিবিআই আধিকারিকদের কর্তব্যে গাফিলতির অপরাধে চাকরি যাবে কি? অপরাধী এসএসসি-র কাছে তার অপরাধের স্বীকারোক্তি সম্পূর্ণভাবে আদায় করার দায়িত্ব কি তদন্তকারী সংস্থার নয়? সে-ক্ষেত্রে অপারগতার দায়িত্ব নির্দোষ প্রার্থীদের উপরে কীভাবে বর্তায়?

এই ঘটনায় যারা সরাসরি দুর্নীতিতে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট suo moto করল না কেন? এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে, প্রমাণিত না হতে পারে, অতি সহজে এরা জামিন পেতে পারে— এ-সমস্তই যে হতে পারে বা হয় তা খানিকটা এই রায়েই আলোচিত হয়েছে। কিন্তু আদালতের অবজার্ভেশন— despite the inconvenience caused to untainted candidates, when broad and deep manipulation in the selection process is proven, due weightage has to be given to maintaining the purity of the selection process. সুতরাং purity রক্ষার দায় বৈধ চাকুরিহারাদের ওপর পড়ে বৈকি। প্যানেলের এক বছরের মধ্যে যে নিয়োগ হওয়ার কথা, নির্দিষ্ট সময়ের পরেও যে তার নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে তা কিন্তু মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট জানত। বেশ কয়েকটি নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্ট রায়ও দিয়েছে। তখন যদি এই অনিয়ম কেন হচ্ছে সে-বিষয়ে একটি স্বতঃপ্রবৃত্ত তদন্ত হাইকোর্ট করত তাহলে এ গভীর দুর্নীতির চিত্র আগেই ধরা পড়ত। অন্তত নিরপরাধ মানুষের ভোগান্তির পরিমাণ, অনিশ্চয়তার উদ্বেগ কিছুটা কম হত। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও দুর্নীতি হলে “purity of the selection process” রক্ষার দায়িত্ব বৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদেরও নিতে হবে ভাগ্যহতরা তা জানতেন না। চাকরির শর্তে তা কোথাও লেখা ছিল না। ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে জানতে ইচ্ছা করে জীবনের ও জীবিকার অধিকার (article 21) এতে লঙ্ঘিত হল কিনা।

In our opinion, this is a case wherein the entire selection process has been vitiated and tainted beyond resolution. Manipulations and frauds on a large scale, coupled with the attempted cover-up, have dented the selection process beyond repair and partial redemption. The credibility and legitimacy of the selection are denuded. (পৃষ্ঠা ১৮, পয়েন্ট ২০)

এর পরে কলকাতা হাইকোর্টের অবজার্ভেশনগুলি দেওয়া হয়েছে। কী কী নিয়মবহির্ভূত কাজ ও অপরাধ সঙ্ঘটিত হয়েছে, তার বিবরণ। এত বড় অপরাধের শাস্তি নিয়োগকর্তারা কীভাবে পাবেন সে-সব আমরা কিছুই জানতে পারব না। ততদিনে আজকের এই হাহাকারও আমরা বিস্মৃত হব।

রায়ের উপসংহারে অবৈধ চাকুরিরতদের এতদিন পাওয়া মাইনের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। অবৈধ-অযোগ্য শিক্ষকেরা না হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চূড়ান্ত ক্ষতি করেছেন, কিন্তু সি এবং ডি গ্রুপের কর্মীরা তো পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁদের কাজের পারিশ্রমিক কী হবে?

এছাড়াও শ্রম আইনের অন্তর্গত Payment of Wages Act, 1936 অনুযায়ী—

(D)eductions from the wages of an employed person shall be made only in accordance with the provisions of this Act, and may be of the following kinds only, namely:—

(a) fines;
(b) deductions for absence from duty;
(c) deductions for damage to or loss of goods expressly entrusted to the employed person for custody, or for loss of money for which he is required to account, where such damage or loss is directly attributable to his neglect or default…

এছাড়াও আয়কর ইত্যাদি সংক্রান্ত আরও কয়েকটি ধারা আছে। এখন প্রশ্ন হল তাদের কাছ থেকে কি জরিমানা হিসাবে এই টাকা সুদ-সহ ফেরত চাওয়া হল?

জরিমানার ক্ষেত্রে এই আইন পরিষ্কারভাবে বলে—

Fines— (1) No fine shall be imposed on any employed person save in respect of such acts and omissions on his part as the employer, with the previous approval of 6 [appropriate Government] or of the prescribed authority, may have specified by notice under sub-section (2).

(2) A notice specifying such acts and omissions shall be exhibited in the prescribed manner on the premises in which the employment is carried on or in the case of person employed upon a railway (otherwise than in a factory), at the prescribed place or places.

(3) No fine shall be imposed on any employed person until he has been given an opportunity of showing cause against the fine, or otherwise than in accordance with such procedure as may be prescribed for the imposition of fines.

(4) The total amount of fine which may be imposed in any one wage-period on any employed person shall not exceed an amount equal to 7[three per cent.] of the wages payable to him in respect of that wage-period.

নিয়োগ অবৈধ হলেও পারিশ্রমিকটা তাঁরা কাজ করে পেয়েছেন এবং কোনও ধরনের জরিমানা (শর্তসাপেক্ষে) মোট পারিশ্রমিকের ৩ শতাংশের বেশি হতে পারে না। এঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং যদি কেউ এই রোজগারের কারণে আয়কর দিয়ে থাকেন, সেই টাকার কী হবে সে-বিষয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই।

১২ শতাংশ সুদ-সহ টাকা ফেরত দিতে হবে হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত এই রায়ে আলাদা করে উল্লিখিত না হলেও ফেরত দেওয়ার রায় যখন বহাল আছে, সুদও নিশ্চয়ই দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রামাণ্য ধরে নিয়েই জিজ্ঞাস্য— কোন সংস্থা সঞ্চয়ের ওপরে এই পরিমাণ সুদ দেয়? যদি এই টাকা কেউ ফেরত দিতে না পারেন তাহলে তার সঙ্গে কী করা হবে সে-বিষয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। এই টাকা সেই সরকারকেই ফেরত দেওয়া হবে যারা এই গোটা দুর্নীতি সঙ্ঘটিত করেছে।

তিন মাসের মধ্যে নতুন করে যে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে সেই পরীক্ষা কারা নেবে? সেই সংস্থা— যাদের জন্য পুরো প্যানেল বাতিল হল?

যাঁরা তিন মাসের মধ্যে পুরনো চাকরিতে ফিরে যেতে পারেন তাঁদের সার্ভিস বুক-সংক্রান্ত জটিলতা এবং পেনশনের অনিশ্চয়তার দায়িত্ব কার? সাদাসাপ্টা চাকরি করেই একটু-আধটু জটিলতার জন্য পেনশন পেতে মানুষের জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে যায়। পেনশন না পেয়েই মরে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

একটি নতুন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম সংশোধিত হয়ে যাবে, যোগ্য প্রার্থীরা আগেরবারের মতোই সমান দক্ষতায় এত বছর পরে তিন মাসের অনুশীলনে দারুণভাবে পরীক্ষা দিয়ে উঠতে পারবেন— এই আশা এবং সামগ্রিকভাবে এই রায় ও তার সামাজিক প্রতিক্রিয়া পুরোটাই পরাবাস্তব বলে মনে হচ্ছে।

সামগ্রিক ঘটনায়, তলিয়ে দেখতে গেলে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এমনিতেই এই ব্যবস্থাকে বিভিন্ন উপায়ে দুর্বলতর করে বেসরকারিকরণের পথ প্রস্তুত হচ্ছে। শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থীর অভাবে বহু স্কুল বন্ধ হয়েছে।  গ্রামাঞ্চলে যেসব স্কুলে প্রচুর শিক্ষার্থী, সেখানে দীর্ঘকাল নিয়োগের অভাবে অপর্যাপ্ত  শিক্ষক। শিক্ষাকর্মীর অভাব স্কুলের পরিবেশকে নরক করে তুলতে পারে, অভিজ্ঞরা জানেন। এইরকম অবস্থায় এতগুলি পদ শূন্য হয়ে যাওয়া কী ভয়ঙ্কর দিনের সূচনা করল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক, আগামী ৩০ এপ্রিল গরমের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। কতদিন ধরে চলবে সে-বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা নেই। বোধহয় স্কুল বন্ধ রেখে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে ভাবছে সরকার। এত বড় ঘটনায় আত্মসমালোচনা দূরস্থান এখনই নির্বাচনী তাস খেলছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীপক্ষের খেলার কথা তো আগেই বলেছি।

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও আবেদন চলবে না। রিভিউ পিটিশন বা কিউরেটিভ পিটিশন হয়তো হতে পারে। সময়ই তা বলবে। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূর্ণ ধ্বংস প্রত্যক্ষ করা ছাড়া হয়তো আমাদের হাতে আর কোনও উপায় নেই। একেবারেই যে নেই তা নয়, রয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের পথ। একমাত্র।

প্রশ্ন রয়ে গেল— দুর্নীতিগ্রস্তের দেনা শুধলেন দুর্নীতির শিকার মানুষেরা?

অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে
আমাদের পরে দেনা শোধবার ভার।

—উটপাখি, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5006 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...