ট্রাম্পের শুল্কনীতি: বিশ্ববাণিজ্যে নতুন অস্থিরতা

দেবাশিস মিথিয়া

 


ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিকে এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ঘোষণার ঠিক পরেই বিশ্ববাজারে তাৎপর্যপূর্ণ অস্থিরতা দেখা গেছে। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, বহু দেশের মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) এর প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি নিজেদের অর্থনীতি রক্ষায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে। অর্থাৎ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে— যার সুদূরপ্রসারী এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেছেন। দিনটিকে তিনি আমেরিকার “মুক্তি দিবস” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এই শব্দচয়ন অর্থনীতির চেয়ে রাজনীতির মারপ্যাঁচ বেশি প্রকাশ করে। সে বিতর্ক থাক। নতুন শুল্কনীতি অনুযায়ী, ৫ এপ্রিল থেকে সমস্ত মার্কিন আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে প্রাথমিক শুল্ক ধার্য হয়েছে। এছাড়াও, ৯ এপ্রিল থেকে আমেরিকা বিশ্বের ১০৮টি দেশের ওপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (অর্থাৎ, X দেশ যতটা শুল্ক আরোপ করবে, Y দেশও ঠিক ততটাই শুল্ক ধার্য করবে) আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ‘পারস্পরিক শুল্ক’কে সামনে রেখে প্রায় ষাটটি দেশের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। লক্ষ্য: দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমানো।

তবে এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিকে এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ঘোষণার ঠিক পরেই বিশ্ববাজারে তাৎপর্যপূর্ণ অস্থিরতা দেখা গেছে। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, বহু দেশের মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) এর প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি নিজেদের অর্থনীতি রক্ষায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে। অর্থাৎ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বাণিজ্যযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে— যার সুদূরপ্রসারী এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর।

 

নতুন শুল্কনীতির সম্ভাব্য প্রভাব

সাধারণভাবে, শুল্ক আরোপের প্রাথমিক ও প্রত্যক্ষ প্রভাব হল আমদানিকৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি। এর ফলে দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী থেকে শুরু করে নানান প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ভোক্তাদের আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। অর্থনীতিবিদদের অনুমান, ট্রাম্পের এই আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রতি মার্কিন পরিবারের বাৎসরিক খরচ ১,২০০ ডলারেরও বেশি বাড়তে পারে, যা তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করবে।

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, কারণ কোম্পানিগুলিকে নতুন সরবরাহকারী খুঁজে নিতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা ও আশঙ্কা তৈরি হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। বাণিজ্য নীতি নিয়ে এই ধরনের অনিশ্চয়তা আর্থিক বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে। যেহেতু বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খল পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, তাই বাড়তি শুল্কের চাপে এই শৃঙ্খলগুলি সঠিকভাবে কাজ করবে না। ফলে, বিশ্ব অর্থনীতির উপর একটি ‘ক্যাসকেডিং’ (অর্থাৎ, একটি ঘটনার ফলে একের পর এক পরবর্তী ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রক্রিয়া, অনেকটা ডমিনোর সারির মতো) প্রভাব পড়বে। এছাড়াও, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে, যা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহযোগিতা ব্যাহত করবে। মার্কিন ডলার পৃথিবীর প্রধান মুদ্রা হওয়ায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দিলে ও ডলারের দামের ওঠানামা শুরু হলে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে— এমনকি মন্দাও দেখা দিতে পারে।

তবে, এই শুল্কনীতির চূড়ান্ত ও সুনির্দিষ্ট প্রভাব নির্ভর করবে নীতির বিস্তারিত নিয়মকানুন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর।

 

দেশভিত্তিক প্রভাব

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নতুন শুল্কনীতি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিগুলির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। চিন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি, কানাডা, মেক্সিকো এবং আরও অনেক দেশেই এই নীতির কুপ্রভাব পড়বে।

ট্রাম্পের এই নতুন নীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে যাচ্ছে সম্ভবত চিনের। চিনা পণ্যের জন্য আমেরিকাতে এখন যে শুল্ক আছে আর নতুন যা বসানো হচ্ছে, তাতে আমেরিকার বাজারে চিনের জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। এর ফলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। যা শুধু সরবরাহ ব্যবস্থাকেই ব্যাহত করবে না, চিনের বৈদেশিক আয়কেও অনেকখানি কমিয়ে দেবে। ফলে চিনের অর্থনীতি জোর ধাক্কা খাবে। চিনের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের কারণে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য-সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভাবনা প্রবল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও এই বর্ধিত শুল্কের অপ্রত্যাশিত ধাক্কা সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। ইউরোপের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী শিল্প (যেগুলি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত) ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বাণিজ্য-বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বয়ংচালিত শিল্প (গাড়ি নির্মাণ শিল্প) এই নতুন শুল্কনীতির কারণে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়বে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় গাড়ি আমদানির ওপর উচ্চ হারে শুল্ক চাপাতে চলেছে। ফলে মার্কিন মুলুকে সেই গাড়িগুলির দাম বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকান বাজারে তার চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা ইউরোপীয় গাড়িনির্মাতাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা (ইউএসএমসিএ) চুক্তির আওতায় কিছু নির্দিষ্ট ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে, তবু কানাডা এবং মেক্সিকো এই শুল্কনীতির প্রভাব এড়াতে পারবে না। এই দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নবঘোষিত “মুক্তি দিবস”-এর শুল্কনীতির প্রাথমিক শুল্কের (১০ শতাংশ) চেয়েও বেশি। এর অর্থ হল, ইউএসএমসিএ চুক্তির সুরক্ষাকবচ থাকা সত্ত্বেও, কানাডা ও মেক্সিকো আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত অন্যান্য শুল্কের ভারে জর্জরিত। তার সঙ্গে নতুন এই শুল্কনীতি যুক্ত হয়ে তাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

উপরোক্ত দেশগুলি ছাড়াও, বিশ্বের অন্যান্য বহু দেশ এই নতুন শুল্কনীতির আওতায় আসবে। ১০ শতাংশের প্রাথমিক শুল্ক এবং তার উপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’-এর বোঝা বিশ্ব-অর্থনীতিতে এক বড় ধরনের ঢেউ তুলবে এবং বহু দেশের অর্থনীতিকে এলোমেলো করে দেবে।

 

ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব

ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বাড়বে, যার ফলে ভারতীয় পণ্যগুলি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি হ্রাস পাবে— বিশেষত রত্ন ও গহনা, ইলেকট্রনিক্স (যেমন, মোবাইল ফোন যন্ত্রাংশ), টেক্সটাইল এবং পোশাকের (যেমন, নির্দিষ্ট ধরনের তৈরি পোশাক) মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে। এছাড়াও, যে শিল্পগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করে, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রত্ন ও গহনার আমদানির ওপর ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অথচ এর আগে হীরার আমদানির ওপর কোনও শুল্ক ধার্য করা হত না। সাধারণ সোনার গহনার ওপর ৭ শতাংশ, স্টাডেড সোনার গহনার ওপর ৫.৫০ শতাংশ এবং প্ল্যাটিনাম গহনার ওপর ৫.৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য ছিল। রূপার গহনার উপর সর্বোচ্চ ১৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছিল।

রত্ন ও গহনা রপ্তানি প্রচার পরিষদ (জিজেইপিসি) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা সরকারকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, কারণ এটি শুল্ক-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে এবং এই খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সুরক্ষিত করতে গুরুত্বপূর্ণ হবে।” তারা আরও বলেছে, ট্রাম্পের শুল্ক ভারতীয় রপ্তানিকারক এবং আমেরিকান ভোক্তা— উভয়ের জন্যই একটি “গুরুত্বপূর্ণ বোঝা” হয়ে দাঁড়াবে এবং মার্কিন বাজারে বার্ষিক ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি বজায় রাখার কাজটিকে আরও কঠিন করে তুলবে।

তবে, ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো কিছু খাতকে এই শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে।

উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য-সম্পর্কে অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ভারতীয় রপ্তানি আরও কমবে। আবার রপ্তানি কমে গেলে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলিতে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পাবে। জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হারও নিম্নমুখী হতে পারে।

তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বাড়তি শুল্কের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব কমাতে ভারতের উচিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা আফ্রিকার মতো অঞ্চলে নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করে রপ্তানি বাজারকে প্রসারিত করা।

 

আমেরিকার নিজের দেশে কী প্রভাব

ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি শুধু আমেরিকার বাণিজ্যিক অংশীদারদেরই ক্ষতি করবে— এমনটা নয়; এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নিজ দেশের, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিদেশি উপকরণের সরবরাহ-চেইন ভেঙে যেতে পারে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে মার্কিন উৎপাদন এবং প্রযুক্তি-নির্ভর গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলিতে।

যদি অন্যান্য দেশও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে পণ্য বিক্রিতে সমস্যায় পড়বেন— ফলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ একেক দেশে একেক রকম হতে পারে।

 

বিশ্ববাণিজ্যে সুরক্ষাবাদ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বিশ্ববাণিজ্যে ‘প্রোটেকশনিজম’ বা ‘সুরক্ষাবাদ’[1]-এর প্রবণতাকে আরও জোরদার করবে। “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির আওতায় ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত এই নতুন পদক্ষেপগুলি মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং দেশীয় শিল্পকে বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই সুরক্ষাবাদী নীতি বিশ্ব-অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর প্রমাণ হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বিদেশি দেশগুলিকে বার্তা দিয়েছিলেন— “সবাই একটু চুপ করে বসুন, একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিন, তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেবেন না, দেখা যাক এটা কোথায় যায়।” কিন্তু প্রশ্ন হল, বিদেশি দেশগুলি বেসেন্টের শান্ত থাকার আহ্বানে সাড়া দেবে কেন? দেয়ওনি। ইতিমধ্যেই চিন প্রতিশোধ হিসেবে ১৩.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়েছে। আমেরিকান কৃষিপণ্য— গম, ভুট্টা এবং তুলার ওপরেও অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জোয়ার, সয়াবিন, শুয়োরের মাংস, গরুর মাংস, জলজ পণ্য, ফল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ওপরেও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য বিধিনিষেধের (যেমন, কোটা) আওতায় থাকা মার্কিন কোম্পানিগুলির সংখ্যাও বাড়িয়েছে চিন। শুধু চিনই নয়, অন্য অনেক দেশও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এইরকম এক পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। আর সেই সমাধানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নচেৎ, ট্রাম্পের এই “মুক্তি দিবস” শুল্কনীতি বিশ্ববাণিজ্যের ইতিহাসে এক নতুন ও অস্থির অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

 


[1] সুরক্ষাবাদ হল দেশীয় শিল্পকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার সরকারি নীতি।

 


*মতামত ব্যক্তিগত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 5006 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...