
নীহারকান্তি হাজরা
সানুদেশের দিন
পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪। পর্ব ৫। পর্ব ৬
আলু-মলুন, মুড়ি-চিংড়ি, পদ্মপাতে ভাত
মাঝে মাঝে ছুটি ধরে আমার যাওয়া ঘটত কাকার বাড়িতে। এটা ছিল জেলাসদর-সংলগ্ন একটা গ্রাম— বগা। বাড়িটা ছিল একেবারে গ্রামের বাইরে, একটা বড় রাস্তার ধারে। অনেক পরে জানতে পারব এটাই হল আসল অহল্যাবাই পথ। বাড়িটার একেবারে পিছনে ছিল একটা বেশ বড় জলাশয়: শ্রীদামসায়র। এর পিছনের দিকটা অনেকখানি জুড়ে পদ্মফুলে ভরা। আমার কাকিমা একটা পিতলের ঘড়াকে জলের মধ্যে উপুড় করে ধরে সাঁতার কাটতেন। কখনও জলে ডুব দিয়ে চলে যেতেন পদ্ম-লতার গোড়ায়, তুলে আনতেন পদ্মের মূল-সহ ডাঁটি। হলদে-সাদা একটা বহুছিদ্র নল, এর নাম ‘মলুন’। পরে বুঝেছি, এ নাম এসেছে মৃণাল থেকে। নাম যাই হোক এটা আলু দিয়ে রান্না করতেন। আর তুলে আনতেন বিশাল ব্যাসের পদ্মপাতা। এতে ভাত খাওয়ার আনন্দ আজও মনে আছে। আর একটা কাজে কাকিমা আমাদের ডাকতেন— কুঁড়ো-জাল পাতা। একটা চৌকো কাপড়ের টুকরোয় কোনাকুনি দুটো কাঠের টুকরো বেঁধে তার ওপর দেওয়া হত একমুঠো ধানের কুঁড়ো ছড়িয়ে, আর তার সঙ্গে একমুঠো ভাত। প্রতিদিনের প্রয়োজনের ঘাটের জলে জ্যোৎস্নারাতের সন্ধেবেলা এটা ভাসিয়ে দেওয়া হত। ঘন্টাখানেক পরে তুলে আনলে দেখা যেত এর উপর মুঠো মুঠো কুচো চিংড়ি ধরা দিয়েছে। এগুলো দিয়ে কাকিমা বড়া করতেন। শিলে এগুলো বেটে নিতেন এর সঙ্গে খানিক মুড়ি মিশিয়ে। তারপর বড়া। কখনও এর ঝোল হত।
কাকিমা নানা ব্রত পালন করতেন বছরভর। দুর্গাপুজোর আগে হত শেয়াল-শকুনি ব্রত। পাঁজির ভাষায় ‘জীমূতবাহন’ ব্রত। মাটির আদল তৈরি করে নির্দিষ্ট রাতে চার প্রহর ধরে এদের পুজো হত। ভোররাতে শ্রীদামসায়রে উলুধ্বনি দিয়ে বিসর্জন। এ-সময়ের মন্ত্র ছিল: ‘‘শিয়াল গেল খালে, শকুনি গেল ডালে’’। আর একটা ব্রতে সূর্যের মুখ না দেখে কিছু খেতেন না। বর্ষাকালে তাঁর অনেক সময় উপবাসে কাটত। সে সব দিনকালে, ঠিক সময়ে ছটা ঋতুর আগমন আর উত্তরণ নিয়ে কোনও খেদ ছিল না। এর বাইরে কখনও গেলে বলা হত আকাল। গরমকালে যেদিন দুপুরবেলাটা গাঢ় হয়ে একপায়ে খাড়া হয়ে যেত, সেদিন বিকেলবেলায় পৌঁছেনোর আগেই চারপাশের গাছপালা নিঃশ্বাস বন্ধ করে আকাশে সেঁটে যেত। তারপর বহুদূর থেকে গাছের মাথায় ধুলো ছড়িয়ে আসত ঝড়। সে দাপাদাপি বৃষ্টি-শিলাবৃষ্টি না দেখে থামত না। আর এর পরই কাকা-কাকিমা, আমার খুড়ততো দিদি সকলেই বেরিয়ে পড়ত বালতি হাতে শ্রীদামসয়রের ঘাটে আর তার অনেকখানি চওড়া পাড়ে। কইমাছের দল বাতাস বেয়ে তীরবেগে জল থেকে উঠে আসত ডাঙায়। চকিতে বালতি ভর্তি হয়ে যেত। পরে দেখেছিলাম, জলাশয়ে, ধানক্ষেতে, ছোট নালায়, খালের থিতু জলে বহু ধরনের মাছের স্বয়ং-সৃষ্ট জগৎ। আর এগুলি ধরার জন্য নানা আকারের বাঁশের ঘন নিপুণ খাঁচা পেতে রেখেছে জল বেরোনোর সংকীর্ণ মুখে, সেইসব মানুষেরা, অনেক পরে যাদের একজনের— আমাদের এক নিরক্ষর ভাগচাষি সবুরকাকার মুখে শুনেছিলাম এক বিচিত্র বাক্য— “আমরা কি মানুষ? সেই যে বলে, এক যে ছিল মানুষ!”
His Master’s Voice
কাকার বাড়িতে একটা আমোদের বস্তু ছিল: কলের গান। উজ্বল গোলাপী রঙের একটা চৌকো কাঠের বাক্স। এর উপরের ঢাকা তুললেই এর তলায় মাঝখানে ছিল একটা চোঙাওলা গ্রামোফোনের ছবি আর সামনে একটি বসে থাকা কুকুর। তলায় লেখা HIS MASTER’S VOICE। তলার অংশটা বড়। যে কালো রঙের রেকর্ডগুলো বাজত তার মাঝখানেও সেই কুকুরের ছবি আর ওই লেখা। ছোট আয়তাকার পিনের হলদে বাক্সটাতেও ওই ছবি আর লেখা। কালো রঙের নব লাগানো একটা হ্যান্ডল ঘুরিয়ে এটাতে আগে দম দিতে হত। যে রেকর্ডগুলি ছিল আজও এদের অনেকগুলির কথা মনে আছে। পুরো সিরাজদ্দৌলা নাটক অনেকগুলি রেকর্ড নিয়ে। শঙ্খপরা পালা। উদয়ের পথে। চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে। কে বলে যাও যাও, আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া: রবীন্দ্রসঙ্গীত। জগন্ময় মিত্রের গান। ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলা ঝরিয়া আর যুথিকা রায়ের কীর্তন, পরিতোষ শীলের বেহালা: সিন্ধু ভৈরবী। আর মাঝখানে হলুদ রঙের গোল লেবেলের মধ্যে বাঁশি বাজানো লোকের ছবি-সহ হিন্দুস্থান রেকর্ড। এগুলি কীসের আজ আর মনে নেই। কিন্তু আমাদের মনপ্রাণ টেনে নিত সিরাজদ্দৌলার জীবনের শেষ অধ্যায়। মিরজাফরের কাছে সিরাজের আকুল আবেদন, মোহনলালের মৃত্যু, লুৎফার সিরাজকে ছেড়ে যাওয়া আর একেবারে শেষে, ‘‘মহম্মদী বেগ, তুমি কি আমাকে হত্যা করতে এসেছ?”— সিরাজের এই কথাগুলি। এই নাটক কার লেখা আজ আর মনে নেই। এর অনেক বিষয়ের কী এবং কেন জানার বয়স ছিল না। কিন্তু সেই কিশোর বয়সে পরিবেশিত ঘটনার যে চলচ্চিত্র মনের মধ্যে গভীর দাগ বসিয়েছিল আজও তার জানা-অজানার আনন্দ-বিষাদ ঠিক সেইখানটিতে স্থির হয়ে আছে।
বাঙ্গালার মৃত্যুদণ্ড
আজ পিছনের দিকে এগিয়ে আর একটা বিষয় আমাকে এতকাল পরেও বিস্মিত করে— কাকার ব্যবহারের বস্তুসমুচয়। সেই সময়ে প্রৌঢ়রা ফতুয়া পরতেন। ‘Made in England’ লেখা একটা ক্ষুর, চওড়া চামড়ার বেল্টে কয়েকবার ঘষে নিয়ে দাড়ি কাটতেন। কিন্তু তিনি গেঞ্জি পরতেন। দাড়ি কাটতেন সবুজ রঙের মোড়কে 7’O Clock ব্লেডে, তাও made in England। তাঁর বিছানার পাশে থাকত কেরোসিনের হারিকেন রাখার কাঠের দণ্ড। আর রেলিং দেওয়া বাইরের ঘরে ছিল মাঝখান-বেতের-বোনা কাঠের খুব চওড়াহাতা গা সম্পূর্ণ এলিয়ে দেওয়ার একটা ইজিচেয়ার। ঠিক যেমনটি থাকত বিএনআর রেলের প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রুমে। আর ছিল বেশ কয়েকটা পালিশকরা-আলমারিভর্তি বই। বাঁধাই করা ভারতবর্ষ, শিশুসাথী আর প্রবাসী। এখান থেকেই আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম রবার্ট ব্রাউনিং-এর কবিতার বই। চামড়ায় বাঁধানো। ছাপা লন্ডনে। রাস্তার ধারের ঘরটায় তিনি থাকতেন। এটা খড়ের কোঠাবাড়ি। দেয়ালগুলো ইট আর চুনসুরকির। ওপরে ওঠার সিঁড়িটি ছিল পালিশকরা কাঠের। সম্পূর্ণ গ্রামবিচ্ছিন্ন এই বাড়িটা ছেলেবেলার অনেক আনন্দের সঙ্গী হয়ে আছে।
পুজোর ছুটির কোনও এক সন্ধেবেলা প্রবল শীতে দেহ আলুথালু হয়ে গেল। জ্বরের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে লেপ-কাঁথা-যা-পাওয়া যায় তাই দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলে চলল জলপট্টি কপালে। তখন মাথার মধ্যে ঘুরছে একটা চক্র। কানের মধ্যে বাঁশি। শীতের চূড়ান্ত আশ্লেষে শুরু হল চিবুকের সঘন ওঠানামা আর দাঁতের বাজনা। চেতনা হারাবার আগে অনুভবে এল আমার কাকাতো দিদি আমাকে জড়িয়ে ধরে শীত দূরে ঠেলে দিতে চাইছে। পরের দিন থেকে ঠিক সন্ধেবেলা সময় ধরে কাঁপুনি-জ্বর শুরু হল। আমার সব-সময়ের খাদ্য দাঁড়াল নীল কৌটোর উপরে লাল লেখা Robinson’s Indian Barley। কদিন পরেই সদর থেকে ডাক্তার এলেন ঘোড়ায় চড়ে— তারিণী ডাক্তার। দাগকাটা শিশিতে দিয়ে গেলেন ওষুধ। কতগুলো বড়ি। কুইনাইন। খাদ্য একই থাকল। তবে ওষুধ খাওয়ার সহায়ক এক খণ্ড মিছরি পাওয়া গেল। পৃথিবীর সব তেতো জড়ো করে তৈরি ওষুধটা কাপে ঢেলে অনেকটা সময় বসে থেকে নিজেকে ফাঁকি দিয়ে গলায় ঢেলে দিয়েই মিছরির ডেলাটা মুখে ভরে দিতাম। মনে আছে সেটাও তেতো হয়ে যেত।
আমি যখন আমাদের জনপদে ফিরলাম তখন আমার বয়সের যারা, আর যারা বেশ বুড়ো, তারা সবাই ম্যালেরিয়ার থাবায়। সে-সময় মনে আছে পোস্ট অফিসের জানালার উপরে থাকত বিষমবাহু ত্রিভুজের মতো বসে থাকা একটা বিশাল মশার ছবি, নীচে লেখা— ‘‘ম্যালেরিয়া বাঙ্গলার মৃত্যুদণ্ড’’। আর চৌকো ফুটোয় হাত গলালেই হাতে দেওয়া হত কতগুলো হলুদ রঙের কুইনাইন বড়ি— প্যালুড্রিন। সেই ম্যালেরিয়ার গ্রাসে চলে গেল জনপদের পর জনপদ। শুরু হয়ে গেল ঘরে ঘরে ঠিক সময়টি বজায় রেখে কাঁপুনি জ্বরের পালাপার্বন। কিন্তু সর্বত্র রবিনসন বার্লির সরবরাহ না থাকায়, বা থাকলেও কেনার সামর্থ্য না থাকায়, এ-সময় ঘরে ঘরে একটা ভেষজ পথ্য চালু হল— পাল। উচ্চারণ— পালঅ। বড় বড় বড়ি, জলে ফুটিয়ে নিলে এটা বার্লির থেকে খানিকটা পুরু। পরে এই পথ্যটা আর দেখিনি। মনে আছে একটা নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের বাকযন্ত্রে কেবলমাত্র অনুনাসিক স্বরগ্রামটি বজায় রইল।
বোঁদে, বন্দে মাতরম ও ৩০ জানুয়ারি
আমাদের জীবনে রজনী পণ্ডিতের পাঠশালার বিস্তৃত চালার ছায়াটুকু শেষ হওয়ার মুখেই স্বাধীনতা এল। এই শব্দটা আমার বহুপরের আয়ত্ত। কিন্তু সেই নির্দিষ্ট দিনটিতে একটা লতিয়ে যাওয়া জনরবে উদ্যমী হয়েছিলাম সন্দেহ নেই: নরনারায়ণ সেবা হবে রঙ্কিনীতড়ার মাঠে। হাজির হলাম এক-পা ধুলো নিয়ে সেখানটিতে, একদা সেই সব চাল মজুত করার গোডাউনের পাশে। মালুম হল নরনারয়ণদের মধ্যে একা আমিই বালক। দু-চারটে লোক মাথার উপর হাত ঘুরিয়ে কীসব বলার সঙ্গে সঙ্গে সকলে চার-পাঁচটা পঙ্ক্তিতে উবু হয়ে বসে পড়ল। আমিও বসে পড়লাম। ক্ষিপ্রগতিতে শালপাতা পড়ে গেল সামনে। কতগুলো লোক ওই গোডাউনের ভিতর থেকে ঝুড়ি হাতে বেরিয়ে প্রত্যেকের পাতায় একমুঠো করে বোঁদে দিয়ে চলল। কিন্তু আমার পাতা টপকে পরেরটায়। আবার নতুন লাইন হতে সেখানে বসে গেলাম। কিন্তু এবার পাতাও পড়ল না। এর পাশাপাশি আকাশে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে লাগল ‘বন্দে মাতরম’। এই শব্দটি এই প্রথম আমার অস্তিত্বে এল এবং সেদিন আমার স্থির প্রত্যয় ঘটেছিল ‘বন্দে মাতরম’ শব্দের সঙ্গে বোঁদের এবং বোঁদের সঙ্গে ‘স্বাধীনতার’ সম্পর্ক আছে। তখন আমার বয়স নয় বছর। আর সেই বয়সেই জেনে গেলাম যে আমি নরনারায়ণের মধ্যে পড়ি না। পড়ে কেবল ওই ওরা। পরে স্বাধীনতার আনুষঙ্গিক প্রত্যয় হিসেবে এই মিষ্টান্নের ব্যবহার আকছার দেখেছি। কিন্তু একমুঠো বোঁদের জন্য সেদিনের বিষাদ আজও আমার মনে আছে। আমার এই চিত্ত বিকল করা দুঃখের কথা শুনে আমার মা এক আনা দিয়েছিল মিষ্টি খাওয়ার জন্য। আজও মনে আছে সেদিন সত্য ময়রার দোকানে এক আনা দিয়ে শালপাতার খালা-ভর্তি রসগোল্লা খেয়েছিলাম প্রাণ ভরে। আর তার পরই কলরব ধাওয়া ধরে হাজির হয়েছিলাম ঠিক পাশেই সরস্বতী মেলার মাঠে। তখন বিকেল ফুরিয়ে এসেছে। মেলার উঁচু বারান্দায় টেবিলের উপর একটি হারমোনিয়ম। এর মধ্যেই একজন লোক মেলার বারান্দায় উঠে দাঁড়ালেন। ইনি আমার বন্ধু কানুর জ্যাঠামশাই। জয়চাঁদ দত্ত। তাঁর গোলাকার চশমার কাচগুলো আড়া-আড়ি কাটা। কিন্তু একটি চোখ নেই। সরস্বতী মেলার কাছেই দত্তদের বড় দু-তলা বাড়ির নীচের তলার একটা বড় ঘরে তিনি থাকেন। কানুর সঙ্গে একবার গিয়ে দেখেছিলাম একটা চরকা যন্ত্র তাঁর খাটে। সুতো কেটে নিজের জামা কাপড় তৈরি করেন। আর দেখে ছিলাম তাঁর ঘরের কোনায় বড় খাঁচায় রাখা একটা হাঁস। কানু বলেছিল এটা ডিম দেয়। ঘরের কোণে একটা চোঙা-মতো, আর কটা চ্যাপ্টা বাটি ছিল। আর কিছু কাঠকয়লা। কাচের গেলাসে ভেজানো কিছু ছোলা। আর একটা জায়গায় চটি তৈরির সরঞ্জাম। একেবার সডিম্ব স্বাবলম্বন!
সরস্বতীমেলার মাঠ ভরে গেল অচিরেই। সেইদিন জ্যাঠামশাই বলেছিলেন জাতীয় সঙ্গীত হবে আগে। আর তার পরই চার-পাঁচজন লোক গেয়ে গেল ‘জনগণমন’। এরপর বক্তৃতা দিয়েছিলেন জ্যাঠামশাই। বার বার বলছিলেন বন্ধুগণ, বন্ধুগণ। আমি এর কিছুই বুঝিনি। পরে শুনেছিলাম ভোরবেলা রাজা-পাড়া পর্যন্ত হাঁটা আর গান হয়েছে গতকাল রাত্রে স্বাধীনতা এসেছে বলে। সেদিন এবং তারপরেও কী এল আর কীরকম সেটা, আমার বোঝার মধ্যে এল না।
কিন্ত এই ঘটনার বছর খানেক পরে এক শীতের সন্ধ্যায় আমি ওই জয়চাঁদ দত্ত মশাইয়ের পিছনে বহু, বহু মানুষের ভিড়ে, জনপদের প্রধান রাস্তা ধরে খালি পায়ে মাথা নিচু করে হাঁটব রাজাপাড়া পার হয়ে। প্রথম দিনের মতো সেদিনের সেই চুপ করে হেঁটে চলার কোনও গভীর অর্থ আমার জানা ছিল না। তার বহু বহু পরে সেদিনের সেই রাজাপাড়ার পথ, পথের লাল ধুলো, আর বহুমানুষের একটি অখণ্ড কঠিন নিস্তব্ধতায় সেঁটে থাকার সঙ্গে আমার আকস্মিক যোগের কথা মনে করে আমি শিহরিত হয়েছি! আরও পরে মনে হয়েছে, আমার সেই দিনটি এ-দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ভিতরের অগণিত মানুষের সঙ্গে আমাকে জুড়ে দিয়েছে— ৩০ জানুয়ারি, ১৯৪৮।
[ক্রমশ]