স্বাতী মৈত্র
৩ সেপ্টেম্বর, সাল ১৮০২। টেমস নদীর উপরে ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজ, তারই ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে থমকে দাঁড়ালেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। তখনও লন্ডন মহানগর ঘুম থেকে ওঠেনি। তখনও কলের ভোঁ বেজে ওঠেনি, চিমনিগুলো সব স্তব্ধ, শান্ত। তখনও শুরু হয়নি অসংখ্য জাহাজের ব্যস্ত চলাফেরা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্যোদয়ের বার্তা নিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ার উদ্যোগ।
ভোরের লন্ডন বড় মায়াময়। নাগরিক সভ্যতা থেকে শতহস্ত দূরে থাকা কবি, লেক ডিসট্রিক্টে ড্যাফোডিল দেখে থমকে ওঠা কবি, তিনিও বলে ফেললেন, ভোরের এ শহর বড়ই সুন্দর — না জানি কত নীরস, কত অনুভূতিহীন হলে এই সৌন্দর্য অস্বীকার করা যায়!
ওয়ার্ডসওয়ার্থের সুদীর্ঘ কবি-জীবনে এ এক ব্যতিক্রমী মুহূর্ত। উনিশ শতকের মহানগর লন্ডন, প্রবল পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হৃদপিণ্ড লন্ডন, সেই শহর ও তার নানা আকর্ষণের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা ছিল না ওয়ার্ডসওয়ার্থের, পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তাঁর সারাটা জীবন। খুঁজে বেড়িয়েছেন কবিতার এমন এক ভাষা যা মানুষের হৃদয়ের ভাষা, যে ভাষা মহানগরে কেউ বলে না, কেউ বোঝে না।
নাগরিক সভ্যতার প্রতি মোহ উইলিয়াম ব্লেকেরও ছিল না। ওয়ার্ডসওয়ার্থের সমসাময়িক ব্লেক — একাধারে কবি, চিত্রশিল্পী, প্রিন্টমেকার। প্রফেট। আজীবন লন্ডনবাসী ব্লেক তাঁর মহানগরের বুকে খুঁজে পেলেন সোডম আর গমোরা, অলিগলিতে কান পেতে শুনলেন চিমনি সুইপার বালকের কান্না আর দেহপসারিণীর অভিশাপ।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের কিছু দশক আর উনিশ শতকের শুরুর কিছু দশক — ঐতিহাসিক এরিক হবসবমের ভাষায় বিপ্লবের যুগ, সাম্রাজ্যবাদেরও যুগ। এজ অফ রেভলিউশন, এজ অফ এম্পায়ার। ব্রিটিশ সূর্যোদয়ের সেই আলোকে বসেই উইলিয়াম ব্লেক লিখলেন অদ্ভুত এক আঁধারের কথা, বললেন,
আমার মনের এ লড়াই থামবে না,
আমার হাতের এ তলোয়ার ঘুমোবে না,
যতদিন না ইংল্যান্ডের সবুজ, সুন্দর প্রান্তরে
আমরা জেরুসালেম তৈরি করছি।
এ কোন অন্ধকার, যার গ্রাস এড়াতে ওয়ার্ডসওয়ার্থ বার বার চলে গেছেন নাগরিক সভ্যতা থেকে দূরে, বহু দূরে? এ কোন অন্ধকার, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন উইলিয়াম ব্লেক? আর বায়রন — অভিজাত লন্ডনবাসীর কাছের মানুষ, ব্রিটেনের প্রথম সেলিব্রিটি বায়রন! — কেনই বা তিনি মানবসভ্যতার অহংকার চূর্ণ করে দেওয়ার আর্তি জানাচ্ছেন মহাসাগরের প্রতি? মহাসাগরের কাছে কবির এ কেমন প্রার্থনা?
***
জলবায়ু পরিবর্তন ও সাহিত্যের পাঠ, এরও কি কোন যোগ থাকতে পারে? সে তো বিজ্ঞানীদের দপ্তর, পাঠক বলতেই পারেন, বা ভেবে নিতে পারেন তা কেবলই রাজনীতিবিদ ও আইনপ্রণেতাদের জগত — এমিশন বাড়বে না কমবে, প্যারিস অ্যাকর্ড মানা হবে, না হবে না, তাপমাত্রা আরও কতটা বাড়তে চলেছে। এইসব নীরস বাস্তবতার মাঝে সাহিত্যিকের কল্পনার স্থান কি আদৌ আছে?
বা ধরুন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, উইলিয়াম ব্লেক, বা তাঁদের সমসাময়িক ‘রোম্যান্টিক’ শিল্পীরা — কেনই বা এঁদের প্রসঙ্গ উঠবে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায়, যা কিনা নিতান্তই আজকের দিনের সমস্যা?
প্রশ্নচিহ্নগুলো সংখ্যায় বড়ই বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাও পাঠক যদি কিছু সময় দিতে রাজি থাকেন, তাহলে এর উত্তর আসবে এক এক করে, হয়তো তার সাথে উঠে আসবে আরও কিছু প্রশ্ন!
প্রথমেই বুঝতে হবে যে সাহিত্যিকের কল্পনা আর কঠোর বাস্তব — এই দুইয়ের মাঝে কোনও অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই, নেই কোনও বিভাজনরেখা। সাহিত্য সমাজের যান্ত্রিক প্রতিবিম্ব নয়, কল্পনা ও বাস্তবের আপোষ-আলোচনার প্রকাশ।
রোম্যান্টিক শিল্পীদের কথাই ধরা যাক, কারণ তাঁদের দিয়েই আমাদের এই আলোচনার সূচনা। ইংরেজি থেকে ধার করা শব্দটা — ‘রোম্যান্টিক’ — কবে যে বাংলা ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে, কে জানে। কখনও বা রোম্যান্টিক বলতে প্রেমের কাহিনী বুঝি আমরা, কখনও বা রোম্যান্টিকতা বাস্তবজ্ঞানহীনতার পরিচয় মাত্র (তার বিপরীত প্রান্তে রিয়ালিজম, অর্থাৎ কিনা কঠোর বাস্তবধর্মিতা)। কখনও কখনও সাহিত্যের আলোচনার পাতায়, যেমন আমাদের এই আলোচনায়, রোম্যান্টিক শব্দটা উঠে আসে কিছু বিশেষ প্রেক্ষিতে — আঠেরো শতকের শেষ ও উনিশ শতকের শুরুর দিকের ইউরোপের এক শিল্প ও সাহিত্যের ধারার প্রসঙ্গে, যাকে সাহিত্য অনুগামীরা ‘রোম্যান্টিসিজম’ হিসেবে চিনবেন।
টার্নারের ‘বার্নিং হাউসেস’
রোম্যান্টিকতা, এই বিশেষ ব্যাখ্যায়, ‘প্রকৃতি প্রেম’। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও তাঁর সমসাময়িক অনেক শিল্পীর নাগরিক সভ্যতার প্রতি অনীহাকে এইভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সমালোচকবৃন্দ। তাঁরা দেখিয়েছেন কেমনভাবে রোম্যান্টিক সাহিত্যে প্রকৃতি প্রেমের সাথে ঈশ্বর চেতনা মিলে গেছে। বাংলা সাহিত্যের আলোচনার পাতায় ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাথে কখনও বা তুলনামূলক বিচারে উঠে আসেন বিভূতিভূষণ, কখনও বা রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ — তাঁদের প্রকৃতি বর্ণনা ও আধ্যাত্মিক চিন্তার নানা দিক বিশ্লেষণ করে হয় তাঁদের রোম্যান্টিকতার বিচার। প্রকৃতি যেন এখানে এক বৃহৎ ক্যানভ্যাস, সেই ক্যানভ্যাসে রঙ-তুলি বুলিয়েছেন ঈশ্বর স্বয়ং। প্রকৃতির সাধক রোম্যান্টিক শিল্পী সেই জগতকে পুনরায় অঙ্কন করে যেন ঈশ্বরেরই সাধনা করছেন, প্রকৃতির মাধ্যমে এক হয়ে যাচ্ছেন ভক্ত ও তাঁর ঈশ্বর।
একটা ছোট উদাহরণস্বরূপ মিত্র ও ঘোষ প্রকাশিত ‘আরণ্যক’-এর পেপারব্যাক সংস্করণে প্রকাশিত আলোচনার এক অংশ দেখা যাক, লিখেছেন জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী,
বিভূতিভূষণের প্রকৃতি-প্রেমের সঙ্গে যে ইংরেজ সাহিত্যিকের প্রকৃতি-প্রেমের সাদৃশ্যর কথা সব চেয়ে বেশি বলা হয়ে থাকে তিনি হলেন কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। এই সাদৃশ্য আদৌ উপেক্ষণীয় নয়, এবং তার ভিত্তিভূমি হল দুই সাহিত্যিকের মনোধর্মের সাদৃশ্য। এঁদের কারও কাছেই প্রকৃতি বর্ণ-গন্ধ-ধ্বনি-রূপ সমৃদ্ধ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জড়বস্তুপুঞ্জের সমাহার মাত্র নয় –– এঁরা দুজনেই প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সদাজাগ্রত চেতনাকেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছেন এবং তার সঙ্গে আমাদের কিছু পরিমাণে পরিচিতি করিয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এঁদের দুজনের কাছেই প্রকৃতির এই অন্তরাত্মার একটা আধ্যাত্মিক মূল্য আছে; প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যকে এঁরা অনেক সময় ঈশ্বরের সান্নিধ্যেরই রূপান্তর বলে ভাবতেন। তাই তাঁরা মনে করতেন, যে-সব মানুষ প্রকৃতির অন্তরঙ্গ সাহচর্যে বাস করে, প্রকৃতির কোলে আজন্ম লালিত-পালিত হয়, তারা মানসিক ও নৈতিক বিচারে নাগরিক মানুষের চেয়ে অনেক উচ্চস্তরের জীব।
রোম্যান্টিক ওয়ার্ডসওয়ার্থ, রোম্যান্টিক বিভূতিভূষণ — সৌন্দর্যের পূজা তাঁদের নাগরিক সভ্যতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে প্রকৃতির বুকে, নিয়ে গেছে প্রকৃতি-ঘেঁষা সাদাসিধা মানুষগুলোর কাছে। রোম্যান্টিকতার এ হেন মূল্যায়নে আপত্তি করার কিছুই নেই, মরিস বাওরা থেকে এম এইচ এব্রামস, হ্যারল্ড ব্লুমের মতন স্বনামধন্য সাহিত্য সমালোচকরা আলোচনা করেছেন এই প্রসঙ্গে। মনে তাও প্রশ্ন জাগে, ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও তাঁর সমসাময়িকদের লেখায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে সমাহার, বা বাংলার একান্ত কাছের মানুষ বিভূতিভূষণের মুগ্ধ প্রকৃতি বর্ণনা, তা কি কেবল ঈশ্বর সাধনার অঙ্গ? ঈশ্বর-হীন একবিংশ শতাব্দীর নন্দনতত্ত্বে এ হেন ‘প্রকৃতি প্রেমের’ সাহিত্যর আর কোনও ধরণের মূল্যায়ন কি আদৌ সম্ভব?
সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। সেই সম্ভাবনা বুঝতেই আজকের এই আলোচনার সূত্রপাত। এবং তার জন্য আমাদের যেতে হবে আরেকজন বাঙালি লেখকের কাছে, যদিও তাঁর লেখার ভাষা ইংরেজি।
***
অমিতাভ ঘোষের সাম্প্রতিকতম বইটির নাম দা গ্রেট ডিরেঞ্জমেন্ট — ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দা আনথিঙ্কেবল। ডিরেঞ্জমেন্ট, অর্থাৎ উন্মাদনা। ঘোষ লিখেছেন,
আমার পিতৃপুরুষেরা প্রাকৃতিক-কারণে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন সেই সময়ে যখনও ইকোলজিকাল রিফিউজি কথাটা আবিষ্কার হয়নি।
তাঁদের বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশে, পদ্মানদীর তীরে এক গ্রামে। আমার বাবার মুখেই এই গল্প শুনেছি — একদিন, উনিশ শতকের মাঝামাঝি কোন সময়, পদ্মা তার গতিপথ পরিবর্তন করে, এবং নিজের সাথে নিয়ে যায় গোটা গ্রামটিকে। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুব অল্পসংখ্যক মানুষজন পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ফলে আমার পূর্বপুরুষেরা উদ্বাস্তু হন, এবং পশ্চিমদিকে যাত্রা শুরু করেন। তাঁরা সেই যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার শেষ হয়েছিল ১৮৫৬ সালে আরেক নদীর ধারে, বিহারে। সেই নদীর নাম গঙ্গা।
পদ্মার পার ভেঙ্গে গ্রাম ডুবে যাওয়ার ঘটনা বাংলার মানুষের কাছে একেবারেই অপরিচিত নয়। নদীমাতৃক বাংলার সাহিত্যেও বারবার নদী ফিরে এসেছে, ফিরে এসেছে নদীর নানান রূপ। অদ্বৈত মল্লবর্মণের ভাষায় বললে, “বাংলার বুকে জটার মতন নদীর প্যাঁচ। সাদা, ঢেউ-তোলা জটা। কোন মহাস্থবিরের চুম্বন-রস সিক্ত বাংলা। তার জটাগুলি তার বুকের তারুণ্যের উপর দিয়া সাপ-খেলানো জটিলতা জাগাইয়া নিম্নাঙ্গের দিকে সরিয়া পড়িয়াছে। এ সবই নদী।” মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম-এ তিতাস নদীর সাথে সাথে মালোপাড়া বাঁচে ও মরে। আবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি-তে কুবের ও কপিলার শেষ আশ্রয় হয় ময়নাদ্বীপে, সভ্যতার থেকে বহু দূরে। অমিতাভ ঘোষের নিজের লেখা দা হাংরি টাইড-এ নদী-সমুদ্র-জঙ্গলের সাথে সমঝোতা করে বেঁচে থাকতে হয় সুন্দরবনের মানুষকে, নায়ক ফটিক আর ইরাবতীর বিরল ডলফিনেদের মধ্যে বিশেষ ফারাক থাকে না। নদী তো এখানে শুধু প্রেক্ষাপট নয়, নদী তো এখানে জড়বস্তু নয় — নদী জীবন্ত। নদী ভাঙ্গে, নদী গড়ে, নদী দেয়, নদী ফিরিয়েও নেয়।
সাহিত্য সমালোচনার মারপ্যাঁচে কেমন করে যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অদ্বৈত মল্লবর্মণ বা অমিতাভ ঘোষ বাস্তবধর্মী লেখক হয়ে যান, আবার বিভূতিভূষণের ঠাঁই হয় রোম্যান্টিকদের মাঝে। প্রকৃতি কখনও হয় নেহাতই পটভূমি, জড়বস্তুস্বরূপ, আর কখনও হয় পূজার বস্তু।
অমিতাভ ঘোষ একেই বলবেন আমাদের ‘বৃহৎ উন্মাদনা’ — আমাদের চিন্তার দৈন্য, আমাদের কল্পনাশক্তির অভাব।
***
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বৃহৎ উন্মাদনা নয়, জলবায়ু পরিবর্তন — তা সে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের নেতা যতই অস্বীকার করুন না কেন — আমাদের কার্বন সভ্যতার নিশ্চিন্ত ফলাফল। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত।
আমাদের — অর্থাৎ কিনা মানব সভ্যতার — বৃহৎ উন্মাদনা, অমিতাভ ঘোষের ভাষায়, জলবায়ু পরিবর্তনকে দেখেও না দেখে, চিন্তার পরিধির বাইরে, কল্পনার জগতের শেষ সীমানার বাইরে নির্বাসন দেওয়া।
অষ্টাদশ শতকের শেষে ও উনিশ শতকের শুরুতে, পুঁজি ও শিল্পের ব্যাপ্তি যখন অবশ্যম্ভাবী, উইলিয়াম ব্লেক মনে করিয়ে দিচ্ছেন,
অভিজ্ঞতার দাম কত? সামান্য একটা গান গেয়ে মানুষ অভিজ্ঞতা কেনে বুঝি?
জ্ঞানলাভ বুঝি খুব সহজ, বুঝি একটু নাচন-কোঁদন করে দিলেই সব পাওয়া যায়?
না, জ্ঞানের মূল্য মানুষের সর্বস্ব — তার গৃহ, তার স্ত্রী, তার সন্তান
জ্ঞান বিক্রি হয় সেই জনহীন বাজারে যেখানে খরিদ্দার নেই কেউ
সেই শুষ্ক ক্ষেত্রে যেখানে চাষি শুধুই রুটির জন্য লাঙল চালায়
বাজার-কেন্দ্রিক সভ্যতার প্রথম যুগে লেখা এই লাইনগুলো আবার করে পড়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে আরণ্যকের সেই ‘বিরাট ট্র্যাজেডির’ আবার করে মূল্যায়নের, যেখানে পরাজিত অনার্য রাজা দোবরু পান্না আর রাজকুমারী ভানুমতী কেবলই আধুনিকতা ও আদিম সভ্যতার দ্বন্দ্ব-সমাসে আবদ্ধ। আদিমের পরাজয় অনিবার্য, লবটুলিয়া বৈহারের জঙ্গল কেটে ফেলা অনিবার্য, সভ্যতার বীরদর্পে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া অনিবার্য, কার্বন সভ্যতার অগ্রগতিতে জলবায়ু পরিবর্তন অনিবার্য…
অনিবার্য বস্তারের প্রাকৃতিক সম্পদের লুট, অনিবার্য নিয়ামগিরির পবিত্র পাহাড় কেটে বক্সাইট তোলা, অনিবার্য নর্মদায় বাঁধের উচ্চতা বাড়িয়ে আদিবাসীদের গ্রাম ডুবিয়ে দেওয়া, অনিবার্য সৌরাষ্ট্রের পানীয় ও চাষের জল সানন্দের কারখানাগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া।
অনিবার্য দিল্লীর ধোঁয়াশা। অনিবার্য তুঙ্গভদ্রা আর কাবেরীর মৃত্যু। অনিবার্য মুন্দ্রার কোরাল ধ্বংস হওয়া। অনিবার্য হিমাচলে আপেলের ফলন কমে যাওয়া।
আমাদের বৃহৎ উন্মাদনা।
***
উনিশ শতকের শুরুতে বসে প্রকৃতির পূজারী উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ লিখছেন, হতাশ, “প্রকৃতির জগতে কিছুই আমরা নিজেদের বলে আর দেখি না;/আমাদের হৃদয় দান করে দিয়েছি আমরা, এ এক জীর্ণ, মলিন বরলাভ!”
পুঁজির একাধিপত্যর শুরুর উনিশ শতক, সাম্রাজ্যবাদের উনিশ শতক। মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্কচ্ছেদের উনিশ শতক। প্রাকৃতিক ইতিহাস বা ন্যাচেরাল হিস্ট্রির সাথে মানব সভ্যতার ইতিহাসের সম্পর্কচ্ছেদের উনিশ শতক, যা বিংশ শতাব্দীর মাঝপথে ফারনান্দ ব্রদেলের দা মেডিটেরেনিয়ান অ্যান্ড দা মেডিটেরেনিয়ান সি ওয়ার্ল্ড ইন দা এজ অফ ফিলিপ দা সেকেন্ড লেখা হওয়ার আগে, ও তারও পরে, সত্তরের দশকে এনভায়রনমেন্টাল হিস্ট্রি লেখা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নাতীত বলে ধরে নেওয়া হবে। ধরে নেওয়া হবে যে মানুষ প্রাকৃতিক জগত ও তার সম্পদকে ব্যবহার করে প্রগতির চূড়ায় পৌঁছবে, এটাই স্বাভাবিক, এটাই ভবিতব্য। মানুষ হয়ে উঠবে ‘জিওলজিকাল এজেন্ট’, যার পক্ষে পৃথিবীর সাধারণ প্রক্রিয়াগুলোতে পরিবর্তন এনে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব না, যার দৌলতে ওজোন স্তরে ফুটো হয়ে যাওয়া বা সুমেরুর বরফ গলে যাওয়া কল্পনা নয়, কল্পবিজ্ঞান নয়, একান্ত বাস্তব। ভূ-বিজ্ঞানীরা এই যুগের নাম দেবেন, এজ অফ দা অ্যানথ্রপোসিন (anthropocene)।
অ্যানথ্রপোসিনের যুগে, জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের ‘বৃহৎ উন্মাদনার’ এই সময়ে আমরা কেমন করে প্রকৃতি-প্রেমিক ওয়ার্ডসওয়ার্থ আর সৌন্দর্যের উপাসক বিভূতিভূষণের সাহিত্য পাঠ করব? আমরা কি আরও একবার উপস্থাপনার বিচার করে রোম্যান্টিক এবং বাস্তবধর্মী সাহিত্যের ফারাক খুঁজব, নাকি আমাদের পাঠ অন্য কোনও অভিমুখের সন্ধান করবে? কেমন হয় যদি আমরা অমিতাভ ঘোষের সঙ্গে বলি যে আমরা এমন এক সময়ে এখন বাস করি যেখানে যা এককালে অকল্পনীয় ছিল, তাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে? কেমন হয় যদি আমরা পাঠক হিসেবে বলি যে আমাদের সাহিত্যের পাঠ যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সত্যের সম্মুখীন না হতে পারে, তাহলে সেটা আমাদের কল্পনার ব্যর্থতা, সংস্কৃতিগত ব্যর্থতা?
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজকে যে সঙ্কটের মুখোমুখি আমরা, তা কিন্তু অনেকটাই আমাদের এই সংস্কৃতিগত ব্যর্থতার ফলাফল।
***
রোম্যান্টিক নন্দনতত্ত্বের মুল উপাদানের একটি হচ্ছে ‘এক্সেস’, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে ‘আধিক্য’। এই আধিক্য পাঠক, দর্শক বা শ্রোতাকে ধাক্কা মেরে নিজের মগজ-অস্থিপঞ্জরের চার দেওয়ালের বাইরে বার করে, নিজের থেকে বড়, অনেক বড় — যা হয়তো ভাষায় বলা যায় না, যুক্তি দিয়ে বোঝানো যায় না — এক জগতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় কিছু মুহূর্তের জন্য। আমরা হতবাক হয়ে যাই, ঘোর কাটে না যেন। অতীতে সমালোচকরা এই আধিক্যের অভিজ্ঞতাকে বলেছেন ঈশ্বর চেতনা, মহাজাগতিক প্রাণকেন্দ্রে বিলীন হয়ে যাওয়া। একবিংশ শতাব্দীর ঈশ্বর-বিহীন এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা বলতেই পারি যে এই আধিক্যের অভিজ্ঞতা পাঠককে ঈশ্বরের মুখোমুখি করুক না করুক, প্রকৃতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় নিশ্চয়।
পুঁজি-শিল্পায়ন-ভোগবাদের দানব মানুষ আর প্রকৃতির সম্পর্কচ্ছেদ ঘটিয়ে যতই দিক না কেন, সাহিত্য যে রুখে দাঁড়ায়নি, তা তো নয়। এমন তো নয় যে সাহিত্যের জগতে বারবার রচনা হয়নি মানবসভ্যতার অন্য ইতিহাস — এমন এক ইতিহাস যা স্বয়ং ঐতিহাসিকরাও লেখা শুরু করেছেন কেবলমাত্র বিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে।
অদ্বৈত মল্লবর্মণের মালোপাড়ার বাসিন্দারা বিজয় নদীর শুষ্ক রূপ দেখে হতবাক হয়ে যায়, “তিতাস-তীরের মালোরা যারা সেখানে [বিজয় নদীর তীরে] বেড়াইতে গিয়াছে, চৈত্রের খরায় নদী কত নিষ্করুণ হয় দেখিয়া আসিয়াছে। রিক্ত মাঠের বুকে ঘূর্ণির বুভুক্ষা দেখিতে দেখিতে ফিরতি-পথে তারা অনেকবার ভাবিয়াছে, তিতাস যদি কোনদিন এক রকম করিয়া শুখাইয়া যায়! ভাবিয়াছে, এর আগেই হয়ত তাদের বুক শুখাইয়া যাইবে।” এ কি শুধুই সারল্য, নাকি শুধুই নিম্নবর্গের প্রান্তিক মানুষের পেটের তাড়নার ভাষা? রাধাচরণ মালো স্বপ্ন দেখে, নদী শুকিয়ে গেছে,
এতদিন আমি কিছু কই না তোরা বিশ্বাস করবি না এর লাগি। যাত্রাবাড়ির টেক ছাড়াইয়া কুড়ুইলা খালের মুখ হইতে বেওসাতেক উজানে একটা কুড় আছে না? বাপ দাদার আমল হইতে দেখি সোত সিধা চলে। না কি! সেইদিন জাল ধইরা দেখি, জালখানা উল্টাইয়া নীল। সোত ঘুইরা গেছে! এমুন আচানক কাণ্ড! তোমরা তো অখন রাতের জল বাও না, খোঁজখবরও রাখ না! সারারাত যা লাগাইয়া উজানভাটি ঘুরি। গাঙের অন্ধিসন্ধি ভালো কইরা জানি। কয়দিন ধইরা দেখতাছি, গাঙের হিসাবে কেমন একটা লড়চড় হইয়া গেছে। সোত যেখানে আড়, হইয়া গেছে সিধা; যেখানে সিধা, হইয়া গেছে আড়। সেই দিন হইতে মনে বিষম ভাবনা। কি জানি কি একটা হইব। মনে শান্তি নাই। আছে খালি ভাবনা। কাল রাইতে মড়াপোড়ার টেকে জাল পাতলাম, মাছ উঠল না; গেলাম পাঁচভিটার টেকে, মাছ নাই; গেলাম গরীবুল্লার গাছের ধারে, কিন্তু জালে-মাছে এক করতে পারলাম না। যেখানেই যাই, দেখি সোত মন্দা। মাছেরা দূরে দূরে লাফায়, জালে পড়ে না। শেষে গেলাম কুড়ুইলার খালের মুখে। দেখলাম সোত খালি লাটুমের মত ঘোরে। জাল নামাইয়া পাটাতনের উপর কাট হইলাম। চোখে ঘুম নাই। কেবল একই চিন্তা, তিতাসের কি জানি কি যেন একটা হইতাছে। কোন এক সময় চোখের পাতা জোড়া লাগল টের পাইলাম না। এমন সময় দেখলাম স্বপ্ন, তিতাস শুখাইয়া গেছে। এই স্বপ্ন কি মিছা হইতে পারে।
‘তিতাসের কি জানি কি যেন একটা হইতাছে’, সে বলে; তিতাস যেন ঘরের মেয়ে, যেন রক্তমাংসের মানুষ। নাগরিক সভ্যতায় ডুবে থাকা পাঠকও অনুভব করতে বাধ্য হয় তিতাসের সাথে মালোদের নাড়ির টান, বহুযুগ আগে ভুলে যাওয়া রক্তের সম্পর্ক।
জাল নিয়ে বেরিয়ে একদিন হতবাক হয়ে যায় মোহন,
ভাসমান চরটা একদিন মোহনের জালের খুঁটিতে ধরা পড়িয়া গেল। সেটা ছিল ভাঁটার শেষ দিন। বড় নদী তার বহু জল টানিয়া নিয়াছে। এমন সব ভাঁটাতেই নেয়। আবার জোয়ারে ফিরাইয়া দেয়। যত ইচ্ছা দিয়াও যা থাকে, তিতাস তাকে নিয়াই থমথম করে। জলগৌরব তার কোনোকালে ম্লান হয় না।
মোহনের বুক ধড়াস ধড়াস করিতে লাগিল।
বুক ধড়াস ধড়াস করতে লাগে পাঠকেরও। তিতাস শুকিয়ে যায়, চর বাড়তে বাড়তে বৃহৎ আকার নেয়, কৃষকরা জমি দখল করে নেয় আর মালোপাড়ার জেলেরা গ্রাম ছেড়ে যায়, মজুর হয়ে যায়, না খেয়ে মরে। কষ্ট হয়, বড় কষ্ট হয়। গলার কাছটায় জমে থাকে অব্যক্ত বেদনা।
আরণ্যক-এর সত্যচরণ সাঁওতালদের বিরাটাকার মহিষ দেবতা টাঁড়বারোর কাহিনী শুনে থাকলেও যে পুরো বিশ্বাস করতে পেরেছিল, তা নয়, কিন্তু আগুনের ধারে অন্ধকার রাতে বসে তার সাথে পাঠকও যেন বনদেবতাকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে পায়,
গল্প সত্য কি মিথ্যা আমার সে-সব দেখিবার আবশ্যক ছিল না, আমি গল্প শুনিতে শুনিতে অন্ধকার আকাশে জ্যোতির্ময় খড়্গধারী কালপুরুষের দিকে চাহিতাম, নিস্তব্ধ ঘন বনানীর উপর অন্ধকার আকাশ উপুড় হইয়া পড়িয়াছে, দূরে কোথায় বনের মধ্যে বন্য কুক্কুট ডাকিয়া উঠিল; অন্ধকার ও নিঃশব্ধ আকাশ, অন্ধকার ও নিঃশব্দ পৃথিবী শীতের রাত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসিয়া কি যেন কানাকানি করিতেছে — অনেক দূরে মোহনপুরা অরণ্যের কালো সীমারেখার দিকে চাহিয়া এই অশ্রুতপূর্ব বনদেবতার কথা মনে হইয়া শরীর যেন শিহরিয়া উঠিত। এইসব গল্প শুনিতে ভালো লাগে, এইরকম নির্জন অরণ্যের মাঝখানে ঘন শীতের রাত্রে এইরকম আগুনের ধারে বসিয়াই।
সত্যচরণের সাথে সাথে শেষে অরণ্যের দেবতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় নাগরিক পাঠকও।
আরণ্যক রোম্যান্টিক না বাস্তবধর্মী নভেল? তিতাস একটি নদীর নাম রোম্যান্টিক না বাস্তবধর্মী নভেল? এই প্রশ্নটা, আমরা বলতেই পারি, আদৌ জরুরি নয়। আধিক্যের অভিজ্ঞতা পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় ঠিক সেই জায়গাটায়, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক প্রভু ও ভৃত্যের নয়।
***
১৮৪০-র দশকে মহামান্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাহাদুর ঠিক করলেন কলকাতার পাশাপাশি আরও একটা বন্দর বানানোর প্রয়োজন। জায়গাও বাছা হয়ে গেল, কলকাতা শহর থেকে ৫৫ কিমি মতন দূরে, মাতলা নদীর তীরে। হেনরি পিডিংটন নামক এক ইংরেজ তখন কলকাতাতেই থাকতেন; পেশায় শিপিং ইন্সপেক্টর হলেও তাঁর নেশা ও ভালোবাসা ছিল ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়ে চর্চা করা। ‘সাইক্লোন’ শব্দটি তাঁরই আবিষ্কার। মাতলা নদীর তীরে নতুন বন্দরের কপালে যে ঝড়-ঝঞ্ঝা ইত্যাদির হাতে চরম দুঃখ আছে, তা পিডিংটনের বুঝতে সময় লাগেনি। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসিকে উদ্দেশ্য করে ১৮৫৩ সালে একটি প্যাম্ফলেটও লিখে ফেললেন তিনি, কিন্তু কে শোনে কার কথা! তৈরি হবে নতুন বন্দরশহর, টেক্কা দেওয়া হবে সিঙ্গাপুর আর বম্বের সাথে, এই সবের মাঝে পিডিংটনের কথা কেই বা শুনবে, এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালের কিছু নিয়মনিষ্ঠ পাঠক ছাড়া!
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের আগুন, কোম্পানি বাহাদুরের বিদায় ও ব্রিটিশ রাজের শাসনকালের শুরু, এই সবকিছুর মধ্যেও মাতলার বন্দর তৈরি হওয়া বন্ধ হয়নি। বন্দরশহরে তৈরি হল বিশাল বিশাল সরকারি বাংলো, তৈরি হল হোটেল, মাতলা নদীর তীরে নতুন করে সাজল স্ট্র্যান্ড। ১৮৬৪ সালে উদ্বোধন হল পোর্ট ক্যানিং-এর।
নভেম্বর ২, ১৮৬৭ সাল — উদ্বোধনের মাত্র তিন বছর পর — সাইক্লোন ও ‘স্টর্ম সার্জের’ প্রকোপে ধ্বংস হয়ে যায় পোর্ট ক্যানিং। তারও পাঁচ বছর পরে পোর্ট ক্যানিং ত্যাগ করেন ব্রিটিশ প্রভুরা, ঝলমলে বন্দরনগরীর স্বপ্ন ভেসে যায়, মিলিয়ে যায় মাতলা নদীর জলে।
এ তো অজানা নয়, এ তো অপরিচিত নয় — তাও কেন আমাদের কল্পনা বারবার গিয়ে ঠেকে প্রগতির সেই শিখর চূড়ায় যেখানে ম্যানিকিওর করা সবুজ লন আর চওড়া পিচের রাস্তা আমাদের আকাঙ্খা, যেখানে ফ্লাইওভার আর বাইপাস আমাদের উন্নয়নের পরিচয়?
বাংলার নদীরা আস্তে আস্তে নোনা জলে ভরে যায়, বাংলার সমুদ্র আস্তে আস্তে জাগতে থাকে, তার ক্ষুধা বাড়তে থাকে। আমাদের খেয়াল থাকে না, আমরা ভুলে থাকি, আমরা ডুবে থাকি আমাদের বৃহৎ উন্মাদনায়। হয়তো এমনি এক দিন কল্পনা করে লর্ড বায়রন লিখেছিলেন,
আমি এমন এক স্বপ্ন দেখেছিলাম যা আদৌ স্বপ্ন নয়।
আমি দেখেছিলাম যে দীপ্ত এই সূর্যের আলো নিভে গেছে,
তারারাও পথ হারিয়েছে অন্ধকার এই আকাশে,
আর হিমশীতল পৃথিবী ডুবে গেছে তমসায়।
সকাল এসেছে, চলে গেছে, আবারও এসেছে —
সাথে আসেনি দিনের আলো,
আর মানুষ এই ভয়াবহ ক্ষয়ের ভয়ে
ভুলে গেছে তার সব আসক্তি, আবেগ।
***
সূত্র :
William Wordsworth – Composed Upon Westminster Bridge, September 3, 1802
William Wordsworth – The World Is Too Much With Us
William Blake – London
William Blake – Milton: A Poem in Two Books
William Blake – The Four Zoas
Lord Byron – Childe Harold’s Pilgrimage
Lord Byron – Darkness
Amitabh Ghosh – The Great Derangement: Climate Change and the Unthinkable
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় – আরণ্যক
অদ্বৈত মল্লবর্মণ – তিতাস একটি নদীর নাম
d