ক্ষত

প্রতিভা সরকার

 

আমার মেয়ের যখন ছ’মাস বয়স, একদিন ন্যাপি পাল্টাতে গিয়ে দেখি ওর ভ্যাজাইনা থেকে ক্রিসক্রস করে নেমে এসেছে খুব সরু রক্তের ধারা। ঠাম্মা যেমন কাঁথায় লালসুতোর ফোঁড় তুলত, বলত হেরিংবেরিং।

আমি তো চিল চিৎকার,

–সুমন, দ্যাখো মমের আবার কী হল!

আমার আতঙ্কে পড়িমরি ছুটে এসে সুমন আড়ষ্ট হয়ে যায়, কেমন হতভম্ব, তাকাতেও পারে না ঠিকমতো। তাড়াহুড়ো করে সিগ্রেট ধরায়। ওর হাত কাঁপে। গলাখাঁকারি দিয়ে বলে,

–ডাক্তারকে কল দেব?

প্রতিমাদিও দেখে বলল,

–এমন তো দেখিনি কখনও। ডাক্তার ডাকো বাপু।

মম কিন্তু হাত পা ছড়িয়ে দিব্যি ঘুমোচ্ছিল আমার কোলে।

আমার তো এরা ছাড়া আর কেউ নেই। এই মম, সুমন আর প্রতিমাদি। মাকে শুধু ছবিতে দেখেছি। বাপি অবশ্য কোনও অভাব বুঝতে দেয়নি কখনও। দু হাতে আগলাত।

এক মামার কথা শুনেছিলাম, দেখিনি কখনও। আমার ক্লাস ফোরে ঠাম্মাও চলে গেল। সেবার এল প্রতিমাদি। তারপর এই এম বি এ কমপ্লিট করা অব্দি স্কুল, কোচিং, টেবিল টেনিস, বাপি সবই বিন্দাস সামলেছিল প্রতিমাদির হেল্প নিয়ে। এমন কোনও আবদার ছিল না যা বাপি রাখেনি।

অথচ সেই মানুষটা এক রাতে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আর উঠল না ! আমি অফিসের জন্য তৈরি হয়ে ডাকছি তো ডাকছিই। সেই প্রথম বাপি আমার ডাকে সাড়া দিল না। নিমতলা ঘাটে নিয়ে যাওয়া, দাহ, সব সুমন আর ওর বন্ধুরা করেছে, পেছন পেছন প্রাণহীন পুতুলের মতো শুধু দেখে গেছি আমি। কেবল নামাবলি জড়ানো বেজায় রোগা পুরুত যখন বাপির মুখে জ্বলন্ত পাটকাঠি ছোঁয়াতে বলল, আমি সুমনের পেছনে লুকিয়ে পড়লাম।

আমি পারব না।

আমার শুকনো চোখ জ্বালা করছিল। হঠাতই দেখি ট্রলির ওপর শুয়ে ন্যাকড়ার পুতুল বাপি গড়গড়িয়ে ঢুকে যাচ্ছে একটা চৌকো ছাইরঙা বড় খাঁচার মতো পরিসরে! দপ করে জ্বলে উঠল গাঢ় কমলা রঙের আগুন, এত ঘন আর উজ্জ্বল যে তার ওপারে দৃষ্টি যায় না। আলোর অধিক এই আগুন, ভয়াবহ সুন্দর আর তুলনাহীন!

আমার নখ নাকি ডেবে গিয়েছিল সুমনের কব্জিতে। পরে শুনেছি।

কিছুক্ষণ পরে ওইই হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল খাঁচাটার পাশ দিয়ে নীচে নেমে যাওয়া সিঁড়িতে। একটা ছোট ঘরের মতো। কী চাপা তাপ আর অদ্ভুত গন্ধ জায়গাটায়! চৌকো কালো লোহার পাত্রে দু তিনটে হলদেটে হাড়, একটাতে গাঁট দেখেছিলাম যেন। ওইই নাকি আমার ছ’ ফুট লম্বা বাপির দেহাবশেষ!

ওই পাত্রে জল ঢালার পর একটা মাটির ছোট সরায় কিছুটা ছাইসমেত পোড়া নাইকুণ্ডলী এনে দিল ডোম। খালি গা, মুখে মদের গন্ধ। সঙ্গে দরাদরি। কিছু পরে সুমন হাতজোড় করে বলেছিল,

–আমাদের সঙ্গে এমন করবেন না। আমরা দুই অনাথ। আমাদের কেউই রইল না আর !

(২)

–কি হয়েছে রিমি?

বয়স্ক ডাক্তারকাকুর ভারী গলায় আমার চমক ভাঙে।

কতক্ষণ বসে রয়েছি ঘুমন্ত মমকে কোলে নিয়ে! ও হবার পর থেকেই নাকি আমি কেমন বেভুল হয়ে যাচ্ছি। চূড়ান্ত অন্যমনস্ক। এসব সুমন প্রথম প্রথম বলত। প্রতিমাদি এখনও বলে। অফিসের কলিগরাও। ফোন ধরে নাকি কথা বলি না। চুপ করে থাকি। আসলে ওরা শুনলে হাসবে, বেশিক্ষণ রিং হতে থাকলে আমি ভুলে যাই কাকে ফোন করেছিলাম। ওপাশের গলা চেনা ঠেকলে তখন হ্যালো বলি।

–দেখি বাচ্চার কি হয়েছে।

ডাক্তারকাকু আবার বলেন।

প্রতিমাদি খাটের পাশে চেয়ার টেনে দেয়। এ পাড়াতেই থাকেন। বাপির বন্ধু। ছোটবেলায় আমাকেও দেখেছেন।

জায়গাটা একটু দেখে বললেন,

–এত চিন্তার কী আছে! এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক মেয়ে-সন্তানেরই হয়।

–কিন্তু, ওর তো এই ছ’ মাস হবে মাত্র। শি ইজ আ কিড!

আমি আমতা আমতা করি।

ডাক্তারকাকু হাসেন।

–সে তো ঠিক, কিন্তু যত ছোটই হোক, ওর জিনে সব এনকোডেড রয়েছে তো। কখন ওর মেন্সট্রুয়েশন হবে, কীভাবে পিউবার্টি এচিভ করবে — সব লেখা রয়েছে কোডে কোডে। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া কোড আর বংশগতি লেখা জিন।

প্রকৃতিদেবী একটু ট্রায়াল দিয়ে নিলেন এইরকম মনে কর। নো এংজাইটি। এটা রেকার করবে না। শি ইজ আ পারফেক্টলি নরমাল বেবি।

ডাক্তারকাকু আমার মাথার চুলও একটু স্নেহভরে ঘেঁটে দিলেন, যখন আমি বললাম,

–ভেবেছি পরিষ্কার করতে গিয়ে কোনওভাবে হার্ট করেছি। নখ লেগে গেছে হয়ত।

খুব নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। মমের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম অঘোরে। প্রতিমাদিকে বললাম খাব না।

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখি আমার এ পাশটা ফাঁকা। স্টাডিতে খুব মৃদু আলোর বিচ্ছুরণ। অন্ধকারে পর্ন দেখে নিজের চোখ নষ্ট করছে সুমন। আমি জানি। দেখেছি অনেকবার।

আমার হালকা নড়াচড়া, ছোট্ট কাশির আওয়াজে এতক্ষণে অন্ধকার হল সব। ওপাশের দরজা খোলার শব্দ পেলাম। তামাকের গন্ধ ভেসে এল। সুমন বারান্দায় গিয়ে সিগ্রেট খাচ্ছে। আমি উশখুশ করতে করতে ভাবি, শুধু আমি নই, সুমনও কত পালটে গেছে। চিরকালই কথা কম বলে, এখন পুরো বোবা কালা। আমি মমকে নিয়ে ব্যস্ত, ও অফিস নিয়ে। দিনে ক’টা কথা হয় সন্দেহ।

মনে পড়ে গেল, ডাক্তারকাকু থাকার সময় একবারও এ ঘরে আসেনি সুমন। গাড়িতে তোলার জন্য গেট পর্যন্ত গেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু একবারও জিজ্ঞাসা করেনি ডাক্তার কী বলে গেলেন।

জানি এ নিয়ে ফালতু বাওয়ালের কোনও মানে হয় না, সে আমি করবও না। কিন্তু বুঝতে পারছি একটা বিশাল ফাটল ক্রমশ হাঁ করছে। ভেতরে ঝুরঝুর করে পড়ছে বালি, নুড়ি। নীচের থকথকে লাভা থেকে উঠে আসছে সালফার ডাই অক্সাইডের কটু ঝাঁঝ।

অথচ বাবার দাহ হয়ে গেলেই সুমনের হাত ধরেই গিয়েছিলাম নদীর ঘাটে। ধনুকের মতো বাঁকা বড় একটা গাছ নুয়ে আছে ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া সিঁড়ির ওপর। মাটির সরায় পোড়া নাইকুণ্ডলীটি দুহাতে তুলে ধরে আমি কোমরজলে দাঁড়ালাম। দেখি ওপারে প্রায় জল ছুঁয়ে ফেলেছে লাল সূর্য। মাটির সরা সেই লালচে আলোয় কিছুদূর ভেসে গেল, গায়ে ঢেউ ভাঙছিল ছলাৎ ছলাৎ। তারপর টুপ করে ডুবে গেল একখণ্ড সীসার মতো। টলে পড়ে যেতে গিয়ে সামলে নিলাম, পায়ের নীচে লাগল মাটির ঢেলা নাকি পাথর।

কিন্তু আমার হঠাৎ মনে হল, অজস্র পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া নাভি ছড়ানো নদীগর্ভে আমার পায়ের পাতা। চাপে ভেঙে যাচ্ছে কালো কার্বনের টুকরোগুলো আর খণ্ডে খণ্ডে ছড়িয়ে যাচ্ছে আরও অনেকদূর।

বাপির যত্ন, ভালোবাসা আর উদ্বেগকে জলের নীচে ওইভাবে ছড়িয়ে রেখে আমি যখন সুমনকে আঁকড়ে উঠে এলাম, আমার হাঁটু কাঁপছিল থরথর করে।

খুট করে আওয়াজ হল। সুমন এসে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। আমি বললাম,

–সিনহা স্যার ফোন করেছিলেন।

–জানি।

–বললেন এক উইক বিকেলের দিকে গেলেই প্রজেক্টটা শেষ হয়ে যাবে। তারপর কম্পেনসেটরি লিভের ব্যবস্থা করে দেবেন। সাত মাস ধরে ঝুলে আছে ব্যাপারটা।

–যা তাহলে।

–কিন্তু মম?

–আমি মর্নিং ডিউটি নেব’খন। আর প্রতিমাদি তো আছেই। এখান থেকে এখানে অফিস!

(৩)

আমি নিজে সংসারের কাজ কিছুই পারি না। কথাও বলি কম। প্রতিমাদি আছে বলে বেঁচে আছি। সুমনের বাবা- মাও খুব ছোটতে মারা গেছেন। বর্ধমানের একটা গ্রামে এক বুড়ি পিসি আছেন। আমি প্রত্যেক মাসে টাকা পাঠাই।

প্রতিমাদি অনেক চেষ্টা করেছে আমার স্বভাব পাল্টাতে। জন্মদিনে রিটার্ন গিফটের ব্যবস্থা থেকে কোচিং সেন্টারের পিকনিক সবেতে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু স্বভাব সারেনি। উলটে যতবারই উইক এন্ডে সুশীলকাকু প্রতিমাদিকে ফিসফ্রাই আনতে পাঠাত, ততবারই আমি আর একটু নিজের ভেতরে ঢুকে যেতাম।

কেননা, তার পরের পনের কুড়ি মিনিট আমাকে ছাদের দিকে তাকিয়ে একটা জিন্দা লাশ হয়ে থাকতে হত।

একদিন ওভাবেই দেখেছিলাম কালো ছোপওয়ালা একটা বিশাল টিকটিকি এগিয়ে যাচ্ছে টিউবলাইটের নীচে বসা মথটার দিকে। কালো পুঁতির মতো চোখ, শক্ত ল্যাজ আর পায়ে প্যাড, যেন কাকুর মোটা সোলের ক্যাম্বিসের জুতো।

দেখে এমন কাঁপুনি শুরু হল যে সেদিন তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়েছিল কাকু। প্রতিমাদি ফিরে এলে বলল,

–দ্যাখো তো মণির জ্বর এল কিনা।

বলেই কাগজ হাতে টুক করে চলে গেল পাশের ঘরে।

সেইদিনই আমি প্রতিমাদির চোখে সন্দেহ দেখেছিলাম, ঘন থকথকে সবুজ শ্যাওলার মতো সন্দেহ। বিছানায় নেতিয়ে পড়া আমার বোজা চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছিয়ে বলেছিল,

–বার করছি ওর ফিশফ্রাই খাওয়া!

পরের শনিবার কাকু যেই পার্স বার করেছে, চোখে আগুন নিয়ে প্রতিমাদি বলল,

–খেতে ইচ্ছে হলে নিয়ে ঢুকবেন। আমি মণিকে আপনার কাছে রেখে কোথাও যাব না।

একমুহূর্ত থমকে গিয়ে হা হা হাসিতে ফেটে পড়ল সুশীলকাকু,

–প্রতিমা, তুমি তো খুব চালাক! তবে মনে রেখো, অনিমেষ আমাকে ঈশ্বরের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে। নিজের চাগরীটা নিজেই খেও না যেন।

প্রতিমাদি আমার হাত ধরে পাশের ঘরে নিয়ে গেল। চোখে আঁচল চাপা দিয়ে বললে,

–মণি, এসব কাউকে বোলো না যেন। এরা সব দুষ্টু লোক। নোংরা।

বলিনি কাউকে। শুধু একটা মন খারাপ দেওয়ালে নোনা ধরার মতো বাড়তে লাগল আস্তে আস্তে। বাবার মৃত্যুর পর আরও ছড়াল। মমের জন্মের পর কমা তো দূরের কথা, বেড়ে এখন এই অবস্থা।

মমকে দেখতে এসে ক্লিনিকাল সাইকোলজি নিয়ে পড়া বিপাশা সেদিন বলল,

–তোর পোস্ট নেটাল ডিপ্রেশন হয়েছে। অকারণে কাঁদিস বলছিস, খেতে ইচ্ছে করে না। আচ্ছা, তোর কি অকারণেই মনে হয় তোর বাচ্চার কেউ ক্ষতি করতে পারে?

হ্যাঁ, আমার মনে হয়, প্রতিমাদি স্নান করাতে গিয়ে ওকে জলে ফেলে দেবে। সুমনের বিড়ি সিগ্রেটের সব ধোঁয়া যেন মমের ফুসফুস তাক করেই ছুটে আসছে। সব সময় একটা হারাই হারাই ভাব। বিপাশা চলে যাবার পর সুমন আমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাবে বলেছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি।

কী বলতে কী বলে ফেলব!

(৪)

অফিসে এসেও বড় উতলা হয়ে থাকি। প্রতিমাদি যদি কাউকে দরজা খুলে দেয় ! সুমন যদি আসতে অনেক দেরি করে! কিন্তু ওই যা ঝামেলিচাঁদা কপাল ! এক হপ্তাতে এ কাজ শেষ হবার নয়। সিনহা স্যার ভদ্র মানুষ। খুব পোলাইটলি বললেন,

–ইফ ইউ আর ফিজিক্যালি ফিট, প্লিজ আর দুএকটা হপ্তা। কমপেনসেটরি লিভ এরেঞ্জ করে দেব। দিন গুনে গুনে।

কিন্তু মম আমাকে ছাড়া ভালো নেই। খুব কাঁদে মেয়েটা এখন। ছোট্ট শরীরটাকে বেড়ালের মতো পাকায়। পা ছোঁড়ে। ছোট্ট হাতের মুঠি খুলে যায় কান্নার তোড়ে। তাই ফিরে গিয়েই ওকে নিয়ে পড়ি। বেডরুমে হালকা একটা নাইট বালব ছাড়া বড় আলো অব্দি জ্বালি না। যদি ওর ঘুমের ব্যাঘাত হয়।

সেদিনও ঘুম পাড়াচ্ছিলাম, এমন সময় জামাকাপড় নিয়ে প্রতিমাদি ঢুকল।

ওর হাতে জামাকাপড় দেখে হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল। কদিন হলই জিজ্ঞাসা করব ভাবছিলাম,

–প্রতিমাদি, তুমি কি ওর হিসুর ন্যাপি কাচায় বেশি করে ডেটল দিচ্ছ আজকাল? এ ঘরে খুব ডেটলের গন্ধ পাই?

–না তো মণি। কেন এমন জিজ্ঞাস করছ?

–এ ঘরে বেশি গন্ধ পাচ্ছি আজকাল।

–না না। দাদাবাবু সেদিন একটা ছোট শিশি ভেঙে ফেলেছিল বটে এ ঘরে। নিজেই পরিষ্কার করেছে। তাও তো চার পাঁচদিন হয়েই গেল।

–সুমন? সে এ ঘরে ডেটল দিয়ে কী করছিল?

–জানি না বাপু। তোমার সঙ্গে সঙ্গে দাদাবাবুও কীরকম জানি হয়ে যাচ্ছে। কথাই বলে না আমার সঙ্গে।

আর এই নতুন হয়েছে এক গান শোনার বাতিক। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ইংরাজি গান চালায়। আমি বলি মম কাঁদছে, একটু আস্তে করো। শোনে তো নাইই, আবার আমাকে রোজ ইসি মার্কেটে পাঠায় বিড়িসিগ্রেট আনতে। আর রোজই ফিরে দেখি মম আরও জোরে কাঁদছে।

হ্যাঁ গো, এত ধোঁয়া খেলে দাদাবাবু বাঁচবে? শুধু তো ধোঁয়া নয়, গাঁজার গন্ধও পাই। তার ওপর বোতল…

–প্রতিমাদি, বড় আলোটা জ্বালো। এক্ষুণি জ্বালো।

বিকট চেঁচাই আমি। হতভম্ব প্রতিমাদিকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে বার করে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিই।

(৫)

আজ সিনহা স্যারকে বললাম যেটুকু করার করে দিয়েছি, এবার আমার টিম বুঝে নিতে পারবে। প্রতিমাদিকে বলে এসেছি আজ গান শুরু হলেই যেন আমাকে ফোন করে। আর সিগ্রেটের পয়সা হাতে নিয়ে যেন হাউজিংয়ের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে।

ফোনটা আসতেই আমি একটা ক্যাব ডেকে নিলাম, বারো মিনিটের মাথায় ঐ যে আমার ফ্ল্যাটের বারান্দায় সারি সারি তোয়ালে, ছোট ছোট ফ্রক দেখতে পাচ্ছি। এখান থেকেই যেন গমগমে গান শুনতে পাচ্ছি, ড্যাডি ডোন্ট টাচ মি দেয়ার। আমার কল্পনা? হবেও বা। আমি তো মমের কান্নাও শুনতে পাচ্ছি। যত শুনছি তত শক্ত মুঠো চেপে বসছে ব্যাগে রাখা পিপার স্প্রেটার গায়ে।

প্রকৃতির ট্রায়ালে উদ্বুদ্ধ অপ্রকৃতস্থ নখের ক্ষত, আঙুলের পীড়ন। আমি দেখে নিয়েছি। তবে এই স্প্রের কাছে সবই ঠাণ্ডা। দরজা খুললেই সুশীলকাকুর নির্বিকার চোখদুটোতে লংকাবাটার জ্বলুনি! চাই কি সাময়িক অন্ধত্বও ঘটতে পারে।

প্রতিমাদি, প্লিজ আমাকে জিজ্ঞাসা কোরো না আমি একশ পার্সেন্ট ঠিক জানি কিনা। কখনও কখনও ঠিক বেঠিক এমন মিলেমিশে যায়, মনে হয় যেন পাহাড়ের ভোর! এখানে আলো, তো ওখানে অন্ধকার। ঝোরার ওপর যখন সূর্যের আলো, পাইনগাছের মাথার ওপর চাঁদ।

আমি শুধু জানি সুশীলকাকু মরেনি। শুধু ফিশফ্রাই পালটে গেছে সিগ্রেটে। আমাকে তো এই বিশাল অন্ধকার টানেলটা থেকে বেরোতে হবে প্রতিমাদি। মমকে এমন একটা আলোতে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে সুশীলকাকু কেন, নিজের ছায়াও ওকে ভয় দেখাবে না। চোখ ধাঁধানো, হয়তো কমলা রঙ সেই আলো বাপির আশীর্বাদের মতো ঝরে পড়বে মমের মাথায়!

চলো প্রতিমাদি, হাতে হাত রেখে এখন লিফট ডাকি। 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

আপনার মতামত...