দেবব্রত কর বিশ্বাস

চারটি কবিতা

 

পিছুপথ

আর কখনও দেখবো না তোমায়।
বেশি রাতের বাড়ি ঘুমে জেগে
আলো জ্বালিয়ে রাখবে না আমার
বাড়ি ফেরার অন্ধকারে, রাস্তায়। তাই
এখন জানলায় মুখ দেখে ভাবি
ঝড় আসবে বয়স বাড়লে।
মানুষ, গাছ হলে ভালোবাসতে শেখে।
ছাদ হলে মায়ার জন্ম নেয়, ছায়ায়।
মুখ ভার করে বসে থাকি, কী যে হয়!
নিজেকে পুড়িয়ে ছাই ঘাঁটতে শেখা শিশু,
দেখি, সারা রাত কাঁদো হয়ে আছে
ভালোবেসে বাড়ি ফেরার পথ।

 

প্রবেশাধিকার

পুজো বসে আছে মন্দিরে। গ্যাঁট হয়ে।
অশৌচের কাছে তার আসা বারণ।
পূর্ণিমার হাওয়ায় সিঁড়ির সংযম
নষ্ট হলে আমিও শব্দের ক্রীতদাস।
ধ্যান আর যজ্ঞের দূরে বসে থাকি।
দেখতে থাকি, গর্ভগৃহ নামক জ্বর
গোপনে বেড়ে যাচ্ছে রোজ। বিশ্বাসে।
আমি বুঝতে পারি, ফুল কমছে পাথরে,
জলের অভাবে বাসা বাঁধছে সিঁড়ি।
সেখানে পা রাখা নিষেধ, যেখানে পিতৃশোক
অনাথ করে গেছে পুজো নয় পুজো নয়
ভালোবাসা ফিরে আসার সম্ভাবনায়।

 

চিরঘুম

স্বপ্ন শান্ত নয়। বোহেমিয়ান মেঘ।
সে এক গল্প ছেড়ে চলে যায় অন্যখানে।
তুমিও আজ তাই। আমাকে ছেড়ে
রাস্তা বদলে নিলে নিজের। এই যেমন
তোমার ছেড়ে যাওয়া জামা, ঝুলছে।
তোমার রেখে যাওয়া গন্ধ মিশে যাচ্ছে
ক্যালেন্ডার ভরে ওঠা অজস্র ফুলে।
তোমার মুখের পাশে ফুল, সাদা। আর
লাল রঙের তারিখ, সব ছুটি করে দিলো।
একজন মানুষ কত কী ভুলে থাকে রোজ?
ভুলে যাওয়া আসলে স্বপ্নেরই মনের ভুল।

 

তুমি জানো

বছর চলে যাচ্ছে বাবা, আরেকটা বছর।
তুমি চলে যাওয়ার বছর একা হয়ে যাবে।
আর ফিরবে না বলো? ফেলে আসা দিনকে
কেউই আর গায়ে তুলে নেবে না কখনও।
ধুলো জমবে শুধু। ভুলে যাওয়ার ধুলো।
এসব ভেবে ভেবে বছর চলে যাচ্ছে বাবা।
তোমার শেষ বছর। আমাদেরও। যৌথ।
আরেকটা বছর বয়স বেড়ে যাবে আমার।
হাসাহাসি আর লুকোনো সিগারেটের ছাই
জানতেও পারবে না আশরীর পুড়ে গেলেও
শেষমেশ নিভে যেতে হবে। আ-অনুভব।
গেটের তালা খুলে দেবে না আর তুমি?
ঢুকতে দেবে আমাকে তোমার ঘরে?

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4659 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

আপনার মতামত...