রৌহিন ব্যানার্জী
আরও একটা বছর শেষ হতে চলল। ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল একটা আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে। তার মাত্র মাস দেড়েক আগে মোদিজী দেশবাসীর পকেটে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালিয়েছেন -– কালো টাকা উদ্ধার হবে, জাল টাকা মাঠে মারা যাবে -– এই আশায়। পুরনো নোট ব্যাঙ্কে জমা করার শেষ দিন অতিক্রান্ত -– মোদীজীর পঞ্চাশ দিনের সময়সীমাও অতিক্রান্ত প্রায় -– অথচ তখনও এটিএমের কাউন্টারে লম্বা থেকে লম্বাতর লাইন -– ভোররাতে উঠে কোন এটিএমে টাকা ভরা হল তার খোঁজ, দেশের ষাট শতাংশ এটিএম তখনও দু হাজার বা নতুন পাঁচশোর নোট নেবার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। দেশজুড়ে ক্যাশ টাকার জন্য হাহাকার, আর তারই মাঝে কেন্দ্র প্রতিদিন দুটো করে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পাঁচটা করে আর স্থানীয় ব্যাঙ্ক পনেরোটা করে নতুন নিয়ম বার করছে। মানুষ পাখিপড়ার মতো সকালে উঠে আজ কী কী নতুন নিয়ম হল তাই মুখস্থ করছে -– আর কেউ আপত্তি জানালেই বাকিরা রে রে করে উঠছে -– সীমান্তে জওয়ানেরা মরছে আর তুমি কি না —
অতএব সীমান্তে জওয়ানদের মৃত্যুর দায়ভার মাথা পেতে নিয়ে দেশবাসী দীর্ঘতর লাইন দিতে থাকলেন -– আর যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট প্রভৃতির বালাই নেই, “কারণ আমার কোনও থালাই নেই” -– তারা আস্তে আস্তে বুঝে নিতে থাকলেন নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নিতে হবে। নতুন বছর মানে নতুন সংগ্রাম -– নতুন বছর মানে পুরনো সংগ্রাম, যা কখনও পুরনো হয় না। এবং বাদবাকি দেশ শুরু করল ক্যাশলেস অর্থনীতির এক নতুন অধ্যায় -– ওয়েলথলেস অর্থনীতি। নোটবন্দির সময়ে সরকার বাহাদুর জানিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ কোটি কালো টাকা ধরা পড়বে, জাল নোটের কারবারিরা ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে, থেমে যাবে সীমান্ত সন্ত্রাস, স্তব্ধ হয়ে যাবে কাশ্মিরী বা মাওবাদীদের লড়াই। নতুন বছর গড়াতে না গড়াতেই গোলপোস্ট অনেকটাই সরে এল -– কালো টাকা, জাল টাকা নিয়ে তখন মোদীজী তো ননই, এমন কি তার প্রবল পরাক্রমী ভক্তেরাও আর কিছু বলছেন না। যারা কয়েকদিন আগেও দেখেছিলেন বস্তা বস্তা পাঁচশো-হাজারের নোট জ্বলে যেতে, নদীতে ভেসে যেতে (এটা সেই জমাটি ভূতের গল্পের মতো -– ভূত কেউ নিজে দেখেনি -– সবারই “খুব কাছের” কেউ দেখেছে), তারা তখন সেসব বেমালুম ভুলে মেরে দিয়েছেন।
মুখে যাই বলুন, সরকার জানতেন, এই নোটবন্দির আসল উদ্দেশ্য ত্রিমুখী – প্রথমত, ভারতের বিশাল অসংগঠিত খুচরো বাজারকে ধ্বংস করে তার জায়গায় কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া; দ্বিতীয়ত, ক্যাশলেস অর্থব্যবস্থা চালু করার নামে দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষুদ্র উৎপাদক যারা প্রায় কোনওভাবেই ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ও তার আনুষঙ্গিক জটিলতার ওপর নির্ভরশীল নন তাদের গ্রাস করা; এবং তৃতীয়ত, বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের ভারে মুমূর্ষু সরকারি ব্যাঙ্কগুলির (তাই বলে ভাববেন না যেন আবার যে আমি আপনি কিছু ঋণ টিন করে শোধ না দিয়ে পার পেয়ে যাব -– সেজন্য অন্য ব্যবস্থা আছে) ক্যাশ ফ্লো-এর অভাবকে সামাল দেওয়া। আজ্ঞে বিশ্বাস করুন, যেটা আমি আপনিও সহজেই বুঝি, সেটা সরকার বাহাদুর এবং তার অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা অবশ্যই বুঝতেন যে এভাবে নোটবন্দি করে এবং বেশি মানের নোট চালু করে কালো টাকার টিকিটিও ছোঁওয়া যাবে না -– জাল টাকারও না। “আমি-আপনি” সহজে বুঝি বললাম বটে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে আমরা অত সহজে কিছুই বুঝি না -– কারণ বুঝতে চাই না। বুঝতে গেলে ভাবতে হয় -– সে সব বড়ই কষ্ট।
বাজার থেকে যত নোট তোলা হয়েছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজের দেওয়া তথ্যানুযায়ীই সেই পরিমাণ নোট পুরো ২০১৭ জুড়েও ছাপা সম্ভব ছিল না -– ফলে ভারতের বাজারে ক্যাশ ঘাটতি রয়েই গেল। বলাই বাহুল্য, এই সার্জিকাল স্ট্রাইকের আসল লক্ষ্য যা বা যারা ছিল, সেটা কিন্তু সফলই -– এর ফলে ভারতের অসংগঠিত খুচরো বাজার ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংগঠিত রিটেল ব্যবসায়ীরা সেই বাজার ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু সাফল্যের সেখানেই শুরু, সেখানেই শেষ বলা যায়। ভারতের বৈচিত্রময় অসংগঠিত বাজারকে চিনতে কর্পোরেট সেক্টরের তখনও অনেক বাকি ছিল -– যেমন বাকি ছিল সরকার বাহাদুরের। তাদের উৎপাদন ক্ষুদ্র -– কিন্তু নিজস্ব, ব্যক্তিগত দক্ষতানির্ভর এবং বহুমুখী -– ফলে তার ব্যাঙ্কে আদৌ না গেলেও চলে। এরই জোরে ভারতের অসংগঠিত বাজারের নিজস্ব লড়াই চলতে থাকল -– কোমর ভেঙে দিয়েও তাকে শুইয়ে দেওয়া গেল না। অথচ সামগ্রিকভাবে মার খেল দেশের জিডিপি -– এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি। নানারকম গোঁজামিল দিয়েও এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির বিপুল অধঃপাতকে ধামাচাপা দেওয়া গেল না -– অর্থমন্ত্রক তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একুল ওকুল দুইই গেল।
ইতিমধ্যে হয়ে গেছে উত্তরপ্রদেশের ভোটপর্ব। অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নোটবন্দির আসল উদ্দেশ্য এই ভোটে বিরোধীদের রক্তশূন্য করে দেওয়াই ছিল কি না। নোটবন্দির অনতিপূর্ব পর্যায়ে ভাজপা পার্টি ফান্ডে বিপুল পরিমাণে জমা পড়া টাকা ইত্যাদি নানান ঘটনায় সে সন্দেহ একেবারে অমূলক এমন ভাবারও কারণ দেখি না -– কিন্তু সে প্রশ্ন সরাসরি অর্থনৈতিক নয়। অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা ফল হিসাবে পেলাম বাজারের সাময়িক ঊর্ধ্বগতি। সাময়িক বললেও বাজার কিন্তু সেই অর্থে পড়েনি তারপরেও -– এবং সেই সময় থেকে প্রতিটা নির্বাচনে ভাজপার জয়জয়কারের সঙ্গেই বাজারের ঊর্ধ্বমুখিতা আমাদের কিছু কিছু ইঙ্গিত দিয়ে যায়। কর্পোরেট সেক্টরের স্বার্থ কারা দেখছে বা কোথায়ই বা খাটছে শোধ না হওয়া ধারের টাকা সে সবের কিছু ইঙ্গিত। এবং ভারতীয় অর্থনীতির আভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন -– নাগপুর ও মারোয়াড়ি গোষ্ঠীর হাত থেকে গোরখপুর ও গুজরাটি গোষ্ঠীর হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতার স্থানান্তরকরণের দ্বন্দ্ব -– যা শুরু হয়েছিল ২০১৫ থেকে -– তার মোটামুটি স্পষ্ট রূপরেখা এই সময়কালের অন্যতম অর্থনৈতিক অভিজ্ঞান।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এর অল্প কিছুদিন পরের এক সার্কুলারে জানায় যে এখন থেকে তাদের প্রায় সমস্ত পরিষেবার জন্যই তারা মূল্য নেবে -– তাও বর্ধিত হারে -– কারণ দেশবাসীকে বিনামূল্যে সেবা দিয়ে দিয়ে তারা বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থাৎ আপনার টাকা আপনি ব্যাঙ্কে রাখবেন, তুলবেন, ট্রান্সফার করবেন, আমানত করবেন, হিসাব নেবেন, সবেতেই ফেলো কড়ি মাখো তেল। অবশ্য সবার জন্য না -– ছাড় আছে। আজ্ঞে হ্যাঁ -– ছাড় আছে -– যাদের অ্যাকাউন্টে অন্তত এক লক্ষ টাকার ন্যূনতম ব্যালান্স আছে, তাদের জন্য। ভুল পড়েননি -– তাদেরই জন্য। যার অ্যাকাউন্টে মাসান্তে পাঁচ হাজার টাকার লেনদেন, তাকে চার্জই দিতে হবে পাঁচশো টাকা -– ছাড়াছাড়ি নেই। এবং মেইনটেইন করতে হবে ন্যূনতম ব্যালান্স -– অজ পাড়া গাঁতে যা এতদিন ছিল একশো -– এখন এক লাফে এক হাজার, আর কলকাতার মতো মেট্রো শহরে পাঁচ হাজার। ডিমনিটাইজেশন বলে গেল সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দরকার -– জিরো ব্যালেন্স হলেও চলবে। তারপরে এই নয়া মোনিটার জানাল, ন্যূনতম ব্যালান্স রাখতেই হবে। যত বেশি ব্যালান্স, তত সুবিধা। গরীব মানুষের জান মালের দায়িত্ব সরকার কেন নিতে যাবে? তার দায়বদ্ধতা নেই কর্পোরেটের প্রতি?
ইতিমধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে আধার কার্ড নিয়ে মাতামাতি। আমার আপনার বায়োমেট্রিক্স তথ্য সম্বলিত আধার কার্ড চলে যাচ্ছে বহুজাতিক সংস্থার হাতে অম্লান বদনে -– সরকারি সহায়তায়। ফোনের লাইন রাখতে হবে? আধার কার্ড লিঙ্ক করান। রান্নার গ্যাস চাই -– আধার লিঙ্ক করান। ইস্কুলে ভর্তি? আধার। পি এইচ ডি করবেন? আধার চাই, আধার। আচ্ছা ছাড়ুন -– খেতে পান না -– মিড ডে মিল খাওয়াতে ইস্কুলে পাঠাবেন বাচ্চাকে? আধার না থাকলে না খেয়ে মরুন -– কারণ আধার আমার চাই। কারণ সেখানে রয়েছে দেশজোড়া মানুষের বায়োমেট্রিক তথ্য -– এবং এক লিঙ্কের সূত্রে আরেক লিঙ্কের মাধ্যমে আমার আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ফোন নম্বর, গ্যাস কানেকশন থেকে ইলেক্ট্রিসিটি, যাবতীয় তথ্য। কারণ সেই সব তথ্যে আমি বিশ্লেষিত হব -– আমার কাছে আসবে আমার উপযোগী কর্পোরেট অফার, যা আমি একটু পকেট টানলেই গ্রহণ করতে পারব। আসুন -– ভারত সরকার আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম তথ্যভাণ্ডার, তার নিজের নাগরিকের যাবতীয় তথ্য। লুকিয়ে থাকতে যাবেন কেন? আপনি তো আর সন্ত্রাসবাদী নন -– অতএব আপনি কখন বাতকর্ম করেন সেটাও কর্পোরেট জেনে গেলে লজ্জা কিসের?
জিডিপি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গোঁজামিল মার খাওয়ার পর অর্থমন্ত্রকের প্রয়োজন ছিল এমন একটা কিছু, যা -– আজ্ঞে না, শুয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে না -– তবে যারা তাই নিয়ে চেঁচামেচি করছে তাদের এমন ঘা দেবে যে নিজের ঘা’য়ে কুকুর পাগল দশা হবে। ডিমনিটাইজেশন যদি রাষ্ট্রকে কিছু শিখিয়ে থাকে তবে সেটা ছিল, ভারতীয় অসংগঠিত বাজারের শক্তিকে বুঝে উঠতে না পারার বোধ। সরকার এবং কর্পোরেট, উভয়েই বুঝেছিলেন, এই বাজারের বিপুল বৈচিত্র তার আসল শক্তি -– যে বৈচিত্রের নাগাল পাওয়া অত সহজ হবে না। নোটবন্দির ভয়াল আঘাতও ক্রমশ সামলে উঠছিল ভারতের অসংগঠিত খুচরো বাজার -– তাই তখনই প্রয়োজন ছিল একটা মোক্ষমতর আঘাতের। কেন্দ্র অনুভব করল, আঘাত যদি করতেই হয় তবে আঘাত করতে হবে এই বৈচিত্রের মূলে -– কারণ সে-ই প্রধানতম শত্রু। এবং এই অনুভব শুধু কোনও একটি রাজনৈতিক সরকারের নয়, এদেশের প্রায় প্রতিটি প্রধান রাজনৈতিক দল, যারা কোনও না কোনওভাবে জ্ঞানে বা অজ্ঞানে কর্পোরেটের সঙ্গে জড়িয়েছে, এই বিষয়ে একমত -– যে দেশের চাই একটি অভিন্ন, কেন্দ্রীয় কর নীতি। ভারতের মতো বৈচিত্রময় দেশে, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, ভাষিক, নৈতিকভাবে যে দেশের মধ্যে আসলে বহু দেশ বাস করে, তেমন একটি দেশের বাণিজ্যকে এক করের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অর্থ তার বাজারের বৈচিত্রকে ধ্বংস করা -– এবং সরকার বাহাদুর ঠিক সেটাই চাইছিলেন।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলি প্রায়োগিক কারণে প্রবল বিরোধিতা করলেও নীতিগতভাবে জি এস টি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স) মেনে নিলেন প্রত্যেকেই, কারণ তা তথাকথিত শিল্প এবং বিনিয়োগ সহযোগী -– যে শিল্প এবং বিনিয়োগ বিগত ছয় দশক ধরে আমাদের দিয়েছে শুধু কিছু মজুরি, কৃষিজমির ধ্বংসকরণ, বেকারত্ব এবং কিছু সুবিধাভোগী চাকুরে শ্রেণি। এই করব্যবস্থা ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম, এবং অবস্থান, জলবায়ু ও উৎপাদনের অন্যান্য প্রাথমিক শর্ত নির্বিশেষে সকলের জন্য একই। তবে হ্যাঁ, একই বটে -– তাই বলে সমান নয়। যেমন ধরুন, বাংলার ছানার মিষ্টি খেলে আপনি কর দেন মূল দামের (এম আর পি) ১২ শতাংশ -– কিন্তু গুজরাটি মিষ্টি খেলে দেবেন মাত্র ৫ শতাংশ। তা কে ঠিক করে দিল এই করের হার? ঠিক করল একটি কমিটি -– দেশের প্রতিটি রাজ্য থেকে একজন এবং কেন্দ্রের একজন প্রতিনিধি নিয়ে যা গঠিত। এদের মধ্যে যে কোনও ১৮ জন (বহুমত দাদা) কোনও বিষয়ে একমত হলেই কর ধার্য। আপনি খুশি না হলে সেখানেই নালিশ করুন। তাতেও কাজ না হলে? আরে মশাই আপনার ভালো কি আপনি বেশি ভালো বোঝেন? সব বোঝেন ওপরওয়ালা -– আপনি শুধু দেখতে থাকুন।
এবং ২০১৭ তার ঝুলিতে আরও কিছু রেখেছিল -– গত বছরের ওরম ঘটনাবহুল -– যাকে আমরা বিশুদ্ধ বাংলায় ধামাকেদার বলি -– সেরকম একটা নভেম্বরের পরে এ বছরের শেষটা নেহাৎই শুকনো যাবে? বালাই ষাট -– এবারে আসুন, নতুন বিল নিয়ে কথা কই। ফিনান্সিয়াল রেজোলিউশন অ্যান্ড ডিপোজিট ইনসিওরেন্স (এফ আর ডি আই) — আমাদের নতুন বন্ধু। ব্যাঙ্ক আপনার টাকা গচ্ছিত রেখেছে -– সেই গচ্ছিত টাকার একাংশ আবার আমাদেরকে (!) ঋণও দিচ্ছে -– তার সুদের টাকায় তার সম্পত্তি বাড়ছে। টাকা মেরে পালিয়ে যাতে না যেতে পারে তার জন্য সরকার রয়েছেন গ্যারান্টার হিসাবে। ভারী সুন্দর ব্যবস্থা। কিন্তু ধরুন যারা ধার নিচ্ছে তারা যদি ধার শোধ না দেয়? শুনলে অবান্তর মনে হয় -– আমরা যারা কোনও সময়ে ব্যাঙ্কের কাছে কিছু ধার নিয়েছি বা নিয়ে থাকি, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য, বাড়ি করার জন্য, ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য বা অন্য যে কোনও কারণে, আমরা জানি ব্যাঙ্কের টাকা শোধ না করে পালানোর কোনও উপায় নেই -– একমাত্র যদি না আমার পরিচয়কেই নষ্ট করে ফেলতে পারি। আজ্ঞে হ্যাঁ -– দেশের আইন খুব খুউউব কড়া -– কিন্তু আইন সকলের জন্য নয়। আবারও -– আপনি যদি একবার ঋণের অঙ্কটা কয়েক লক্ষ কোটি পর্যায়ে কোনওভাবে নিয়ে ফেলতে পারেন, তবে সে ঋণ শোধ না করলেও চলে যায়।
অতএব যে ঋণ শোধ না করলেও চলে সে ঋণ আমি শুধতে যাব কেন? শুধব না -– ব্যাঙ্কের খাতায় তা পড়ে থাকবে অনাদায়ী ঋণ হিসাবে। দায়িত্ব কে নেবে? কেন দাদা -– আমরা তো আছি -– যারা ঋণ নিইনি আদৌ -– কিম্বা নিয়েছি সামান্য কিছু -– আর ব্যাঙ্কে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে বসে আছি -– কারণ সরকার জানিয়েছেন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলে আমার সব টাকাই কালো টাকা বলে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। আমরা আছি -– আছে আমাদের গচ্ছিত সামান্য ধন -– যা হয়তো আমার আপনার সারাজীবনের সঞ্চয়। অনাদায়ী ঋণ অনেক বেড়ে গেলে ব্যাঙ্ক চাইলে এবার থেকে হাত দিতে পারবে আমাদের এই সামান্য সঞ্চয়েও -– পালটে দিতে পারবে আমার অ্যাকাউন্টের চরিত্র অথবা আমাকে বাধ্য করতে পারবে আমার নিজের টাকা আটকে রেখে দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য। অথবা সেই পুরনো দিনের মতো লালবাতি জ্বেলেও চলে যেতে পারে আইন মোতাবেক -– আমার আপনার হাতে নিজেদের বিবেচনামতো কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে। আপনি কী ভাবছেন -– মামলা করবেন? আজ্ঞে পারবেন না -– সর্বশক্তিমান এফ আর ডি আই কমিটি যা বলবেন, এ বিষয়ে তাহাই চূড়ান্ত। আইনের দ্বারস্থ হওয়া বে-আইনি।
হাসবেন না কাঁদবেন তা যদি এখনও ঠিক করে উঠে না থাকতে পারেন তবে আসুন, আমরা ২০১৭-কে হাসিমুখে বিদায় জানানোর সময়ে জেনে নিই, স্বল্প সঞ্চয় এবং পেনশন অ্যাকাউন্টে সুদের হার বর্তমানে আবার ৭.৮ শতাংশে নেমেছে -– গত দশ বছরের সর্বনিম্ন। এবং নতুন বছরের প্রথম তারিখ থেকে তা ৭.৬ শতাংশ হবে। দেখো আমি বাড়ছি মাম্মি। আজ্ঞে হ্যাঁ -– বিপরীত দিকে বাড়াও একটা বাড়া -– এ আমরা বিগত কয়েক বছরে বেশ শিখেছি। পিছনের দিকে এগিয়ে চলার বিবিধ কৌশল। স্বাগত ২০১৮।