সৌমিক দাশগুপ্তের লেখা

সৌমিক দাশগুপ্ত

 

এই গরমে খান দুই সিনেমা দেখে ফেলা গেল। একটা বাংলা একটা হিন্দী ডাবিং। বাংলাটা হল বিসর্জন। সেটা আবার দুবার দেখে ফেলেছি। না, মানে বিশাল ভালো লেগেছে বলে না। আপিস কাছারি থেকে বাড়ী ফিরে যদি দেখি পাড়ায় ঢোকার রাস্তা উন্নয়নের জন্য কেটে পক প্রণালী বানিয়ে দিয়েছে গর্মেন্ট, আর বেচারারা রাস্তা কাটতে গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবলেও কুপিয়ে দেবার ফলে গোটা পাড়া অন্ধকার, তা’লে বিসর্জন কেন, আমি সুখেন দাশের প্রতিশোধও বেশ কয়েকবার দেখতে রাজি। নেহাত এখন স্মার্টফোন, জিও ফোর জি আছে, তাই চাহিলেই পাওয়া যায়, নয়ত প্রদীপে গিয়ে মদহোশি জওয়ানিও দেখে আসতাম। আহা, সে কীসব দিন ছেল। ভরদুপুরে নুন শোতে প্রদীপে জওয়ানি কি চুলকানি। ট্রিপল এক্সেল সাউথ ইন্ডিয়ান অ্যাবাভ ফট্টিফাইভ হিরোয়িনকে উদোম করে একটা মিশকালো গোঁফওয়ালা হিরো আটা মাখার মতো চটকাচ্ছে। চটকে চটকে পুরো ভুতুড়ি বের করে দিল যখন, তখনই কাট সিন চলে এল, ঢিনচ্যাক ঢিনচ্যাক। আর পাশের সীটে মোটামুটি বছর পঞ্চাশেকের মেসোমশাই হলের মেঝেতে প্যাঁক করে খানিকটা গুটকার পিক ফেলে আপন মনে কিঞ্চিৎ ফুলে ওঠা লুঙ্গির মোক্ষম জায়গাতে বেড়ালছানা আদর করার মতো হাত বুলোচ্ছে। সে এক দিন ছেল।

এহ, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম। এই আমার এক সমস্যা। মানে আমার আবেগের জিনিসপত্তরগুলো এমনই সাব অল্টার্ন, শালা ফেবু ওয়ালে দিলে যেটুকু ইমেজ আছে, তারও মা মাসি মানুষ হয়ে যায়। যদিও আমার ইমেজ টিমেজ প্রায় নেই বললেই চলে।

যাকগে, তো সেই বিসর্জনে ফিরি। ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। গল্প টল্প তেমন কিছু নেই। মানে কোনও মোচড় নেই স্ক্রিপ্টে। ভীতু স্ক্রিপ্ট বলা যায়। গাঙ্গুলিমশাই চাপ নেননি। এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে ছড়াবার সম্ভাবনায় শুরুতেই কয়েক গ্যালন জল ঢেলে দিয়েছেন। এ এমন গল্প, দর্শক বেশি কিছু ভাববেই না, এটা কেন হল না, ওটা কেন হল এসব ভাবার সুযোগ পাবে না।

কারণ গাঙ্গুলিমশাই নিজের অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ফাটিয়ে দিয়েছেন এক কথায়। অমন লুকিং লন্ডন টকিং টোকিও টাইপ চোখ যে এত বাঙ্ময় হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। বছর খানেক আগে, কোনও একটা গ্রুপে ফেবু বাওয়ালের সময় কোনও এক কচি আমাকে কৌশিক গাঙ্গুলীর মতো থোবড় বলে বডি শেমিং করতে চেয়েছিল। আয় মণি, তরে চুমা খাই একখান। আহা, অমনটি যদি হতে পারতাম। জয়া এহসান ভালো, যদিও টিপিক্যাল জয়া এহসান অভিনয় টাইপ থেকে বেরোননি। আবীরের বিশেষ কোনও কাজ ছিল না, শেষের দিকে একটি চুমু খাওয়া ছাড়া। অসাধারণ আবহ। কালিকাপ্রসাদকে মিস করছিলাম আবার।

অন্যটি হল বাহুবলী দ্বিতীয়। মুশকিল হল প্রথমটি আমি স্কিপ করে করে দেখেছিলাম। তাই শুরুর দশ মিনিট একটু ভাবতে হল। শালা কী সিনেমা রে ভাই। হলের মেঝে কাঁপছিল। ঘ্যামা জিনিস বানিয়েছে। প্রথমটাতে একটা কালো মতো অসুর মানুষ ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছিল। এটাতে গুলতিতে করে মানুষ ছুঁড়েছে। কিল বিল স্টাইলে একাই কয়েকশো ডাকাতকে কচুকাটা করেছে। দুগগুবতি মাঝে একটা বল্লম আর কয়েকটা সৈন্য নিয়ে পুরো শিক কাবাবের মতো গেঁথেছে। ময়ূরপঙ্খী আছে, অ্যামফোবিয়ান গাড়ি, আমির খানের বাইকের মতো, জলে স্থলে আকাশে চরতে পারে। হিরো বা ভিলেন পটাপট বড় বড় গাছ তুলে উপড়ে দিতে পারে। মানে হোয়্যাট নট। বিজ্ঞানের যাবতীয় থিয়োরির গাঁড় মেরে বাহুবলী টু জাস্ট রকসসস। এক আধটা বিছানা দৃশ্য থাকলে আরও মনোরম হত। সে আর কী করা যাবে।

হাতে সময় থাকলে দুটোই দেখে আসুন। ভালোই লাগবে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...