আজ কাল পরশুগুলো
এক
বেড়াতে যাওয়ার আগে অভ্যেসবশত আয়নায়। চোখের জায়গায় দেখি আকোয়ারিয়াম। নীল লাল মাছগুলো বিস্মিত ঠুকরে তুলছে সাদাকালো নুড়ি। আর জল—টলটল করছে। আমি নৌকো রাখি। ঠোঁট বরাবর। হাসির মুদ্রায় ভাসানের গল্প বলার প্রস্তুতি নিই। জল উপচে ভেসে যায় ডুবে যায় ফ্যাকাশে দিগন্তরেখা। কবেকার একটা ভুলে যাওয়া স্পর্শ আঁকড়ে ধরে পাটাতন—কিছুতেই ছেড়ে যাব না, কিছুতেই না! লবণের গন্ধ, সীগাল আর ফসফরাস—মাছঘরটিকে আকাশ করে দিল।
দুই
জুতোজোড়া চোখ পিটপিট করে কান নাড়াচ্ছে। ফোলাফোলা চোখে ছোট্ট লেজ হাত পায়ে জড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। জিভ দিয়ে চেটে দিচ্ছে পায়ের তলার জোড়াতালি। ওরা সমুদ্র অবধি নিয়ে যাবে পথ দেখিয়ে, জোয়ারের রাতে। এরকমই বলছিল, খুব স্পষ্ট মৃদু স্বরে—শুনতে পাচ্ছি। একটা বুড়ি কচ্ছপের বাড়ি পৃথিবীর শেষ ডাকঘর। ততদূর চিঠি নিয়ে হেঁটে যেতে হবে। রাত্রির চেহারা সবসময় একটা তরমুজের মত মনে হয়। কালো, গোল খোসা ফাটিয়ে লালের উঠে আসা। টুপ করে পায়ের কাছ থেকে লাফ দিয়ে উঠলেই ওদের খেলা শুরু। সারাদিন দৌড়ে দৌড়ে লাইটহাউস অবধি। যাকে অবিকল তোমার মত দেখতে।
তিন
পাতাগুলো আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর গাছটি দিব্যি নিরালা—ভিড়ে মিশে যাচ্ছে। জানলা উড়ছে তখন পাখনায়। পাখিগুলো দানা খাওয়ার শব্দে ভোর ডাকছে। আসছিইইইই—-বলতে বলতে হলুদের গা থেকে কুড়িয়ে তুলছে আলো। চুলের ভাঁজে কুয়াশাগন্ধের বুনো পথঘাট। এই কলম আর খোলা খাতা পঁচিশ বছরের জমানো অক্ষরের ওপর স্থাপন করলাম। সরলরেখা আঁকার মত কঠিন কাজ অনায়াস হয়ে গেল। একগলা জল ঠেলে শৈত্যপ্রবাহ থেকে উঠে আসি। তোমার শরীরে যে জোনাকি তখন, একশ বছরে এক আধবার সেরকম আলো দেখা যায়। লোকে বলে।