মৃত্যুদন্ড ও সেই নিয়ে কিছু কথা

কাবেরী বসু

 

একটা কথা খুব স্পষ্ট করে বলে রাখা দরকার,
আমি ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট মানে মানুষের মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসীরও বিরুদ্ধে ছিলাম। কাউকে অর্গানাইজড ভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে মেরে ফেলা হবে এরকম নিষ্ঠুর চিন্তা আমি দুঃস্বপ্নেও আনতে পারতাম না। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসীর সময়ে ‘রেপ’ কী জিনিস আমি তাই ভালো করে জানতাম না, ইনফ্যাক্ট ওই ঘটনায় রেপ শব্দটি প্রথম নজরে আসে।তবে কীসব কানাঘুঁষো কানে এসেছিল, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে নাকী যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না, লোকটির আর্থিক সঙ্গতিও ছিলনা উচ্চ আদালতে আপীল করার, তাই নিম্ন আদালতের রায় বহাল হয় ইত্যাদি। তা যাই হোক সেসময় সিধান্ত নিয়ে ফেলি যে আমি ক্যাপিটাল পানিশ্মেন্টের বিরুদ্ধে।
তারপর আর কী গঙ্গাযমুনায় অনেক জল গড়ায়, সরস্বতী যেই কে সেই ভ্যানিশই রয়ে যায় রেপ শব্দটা ক্রমশ তার অর্থ প্রকাশ করে সামনে আসে।
রেপ এর সঙ্গে জড়িত একটি প্রশ্ন হল সতীত্বের। সতীত্ব ভাই কী এমন জিনিস!! তা থাকে কোথায়? কেবল শরীরের একটি অঙ্গে? তাকে ছুঁইয়ে ফেলতে পারলে সতীত্ব ভ্যানিশ!! নাহ… আবার ওই গঙ্গাজলের ধারার মতো সতীত্ব তার অর্থ নিয়ে সামনে আসে।সতীত্ব শরীরে নয়,মনে হয়।
এবার আসি জ্যোতি সিং এর কথায়, ছজন যুবক সেই রাতে জ্যোতিকে ধর্ষণ করেছিল। যার মধ্যে একজন তিহার জেলে সুইসাইড করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে, দ্বিতীয়জন ‘জুভেনাইল’ অর্থাৎ অপ্রাপ্তবয়ষ্ক তাই তিনবছর শাস্তি , বাকী রইলো চারজন। আদালত এই চারজনের ফাঁসী ঘোষনা করেছেন।সারা দেশে বহুমানুষ এই রায়কে সমর্থন করেছেন। আমিও করেছি। হ্যাঁ পাঠক, আপনি চাইলে এইখানে গিয়ে প্রথমলাইনটা পড়ে আসতে পারেন। আমি সমর্থন করছি।শুধু জ্যোতি সিং নয়, বিলকিসবানো, কামদুনীর নাম না জানা মেয়েটি, সুজেট, মালদায় কিছুদিন আগে মার্কেটপ্লেসে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি, সবার রেপিস্টের ফাঁসী হোক আমি এটা চাই।
জ্যোতি সিং এই ছজনের শত্রু ছিল না, ওরা তো ওর নামটাই জানত না বোধহয়।শুধু জেনেছিল জ্যোতি একটি মেয়ে তাই তার শরীরে একটি যোনী থাকবেই, তার শরীরে নরম মাংস পিন্ড থাকবেই, সেগুলোকে তারা ভোগ করতে চেয়েছিল।বাঘ যেমন চায় হরিণের মাংস ছিঁড়ে খেতে তেমনভাবে চেয়েছিল… বা তার চেয়েও নৃশংস ভাবে।এটা পাশবিকবৃত্তি।মানবিক নয়। আমি মানুষের মৃত্যুদন্ড চাইনা, কিন্তু যে বাঘটা নরখাদক হয়ে ওঠে তাকে গুলি করতেই হয়।যে পশুটা আরেকটা মানুষের শরীরের ভিতরে রড ঢুকিয়ে তাকে ছাড়খার করার কথা ভাবতে পারে আমি চাই মানুষের আদালত তাকে ফাঁসীর হুকুম দিক।
আমার খুব রাগ হচ্ছে, যে পশুটা এরকম একটা প্রাপ্তবয়ষ্ক অপরাধ করতে পারে, তার কেন অপ্রাপ্তবয়ষ্কের শাস্তি হয়! কেউ খোঁজ নিয়েছে? জেনেছে সেই অপ্রাপ্তবয়ষ্ক এতোদিনে সংশোধনালয়ে থেকে আদৌ অপরাধ বোধে ভোগে কিনা! জ্যোতির প্রতি যে অন্যায় সে সেদিন করেছিল তার জন্য সে আয়নার সামনে চোখের জল ফেলে কিনা! সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায় কিনা! সে ভয় পায় কিনা নিজের অতীতকে? যদি এগুলো না হয়ে থাকে, তবে সে তার ১৫ বছর বয়সী ভাইকে বলতেই পারে,’চিন্তা মত কর, যো জি চাহে কারলে, তু আভী পন্দরাকা হ্যায়, তুঝে কুছ নেহি হোগা, তুঝে হোম পে লে জায়েঙ্গে, অউর তিনসাল বাদ ছোড় দেঙ্গে’।
এই চারজনের পরিবার কী কখনো এদের একলা পেয়ে ঠাস করে একটা চড় অন্তত মেরেছে নাকী এদের হয়ে কোর্টে মিথ্যে বলেছে? এরা কী কখনো একবারও দোষ স্বীকার করেছে? ঘৃণা করেছে নিজেকে? কিছু না হলেও জ্যোতির জন্য কেঁদেছে? যদি এসব হয়ে গিয়ে থাকে আমি তবে এদের মৃত্যুদন্ডের বিরোধীতা করব। আর যদি না হয়ে থাকে তবে এদের ফাঁসী হোক।
হ্যাঁ অনেকে প্রশ্ন তুলছে এরপর কী আর রেপ হবে না? ইভটিজিং বন্ধ হয়ে যাবে? যেকটা মানুষের শরীরে মানুষের রক্ত আছে, মানুষের বোধ আছে, তারা অন্তত বিরত হবে, আর যারা এরপরেও এগুলো করবে হোক তাদের একে একে ফাঁসী। কোনো দলের কাছের লোক হয়ে যাবজ্জীবনেই তারা যেন মুক্তি না পায়!অনেক নোংরা হয়েছে, ময়লা পরিস্কার করার সময় এসেছে।
পরিশেষে বলি, আমাদের অকর্মণ্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা এদেশের খিদে মেটাতে পারে না, মাথাগোঁজার ঠাঁই দিতে পারে না, নিরাপত্তা দিতে পারে না, শিক্ষা দিতে পারে না, তারপরেও যদি সেই অকর্মণ্য ব্যবস্থাটা একটা অন্তত পজিটিভ স্টেপ নেয়, আমি তার বিরোধীতা করবো না বরং বলবো এইকাজটাই আরো নিরপেক্ষ ভাবে করতে।
আমি নরখাদকের মৃত্যুদন্ডের পক্ষে।
পুনশ্চ: ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে নরখাদক বাঘকে খাঁচায় ভরে রাখা যেতে পারে, পশুর প্রজনন রক্ষার জন্য হলেও এটা করা যায়।এই ধর্ষকদের হয়ে এই অধিকারের দাবীও অপ্রয়োজনীয়।

Be the first to comment

আপনার মতামত...