শ্রী-কে চিঠি
শ্রী-কে চিঠি: ২
ওহে রূপবান যুবক, এত রূপ কোথায় রাখবে, আমার শহরে ছাড়া? এখানে তোমার নিশ্বাসের তাপে রাজপথের পিচ গলে, আমার চটিতে এমন আটকে যায়, আমি পালাতে পারি না। আহ যুবক! পালাব কেন? তুমি তো জানো আমার ইমপারফেকশন্স। সব সমেতই এবার অপেক্ষা করব বিমানবন্দরে, রেলওয়ের প্রান্তিক স্টেশনে, ফ্লাইওভারের মুখে। তুমি কি আসার তারিখ ভুল করবে আর আমাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে আহ্নিক গতির একপাশে! আমি শুধু ফোনের ওপর আঙুল বোলাই আর নাম্বারে আক্রান্ত হই। আমি তোমার কত নাম্বার নৈশ আবাহন? না থাক, বোলো না। আমার স্তন ওদের মতো সুগোল নয়। ওহে রূপবান যুবক, তাই বলে আমার শহরে আসবে কথা দিয়েও চলে যাবে নাকি, অন্য কোনও পানশালায়! মনে রেখো, আমার চোখেই তোমার ছায়া সবচাইতে জ্যান্ত, দেখে মনেই হয় না তুমি বাস্তবিক এই সারা শরীরে আনচান আনচান জ্বরেও, এখনও, বিশ্বাস রাখো স্টিল ফোটোগ্রাফির ধর্মনিরপেক্ষতায় …
শ্রী-কে চিঠি: ৩
তোমার চুলের রহস্য আমাকে বোঝাও। কতবার খুললে কতবার বাঁধলে, আর কতদিন পর মায়াবী দক্ষিণ থেকে ভেসে এল হাওয়ার ঋতু। এই বিকেল, এই আবছা রোদের বিকেল তোমাকে শরীর দিতে চেয়ে গুমরে গুমরে মরে গেল, সুইসাইড নোটে রেখে গেল তোমার কৃশ দীর্ঘ আঙুল, যেটুকু তুমি আপত্তি করোনি। ওই একলাইনের চিঠিতে পুনশ্চটাই হয়ে উঠল একটা ধারাবাহিক, তোমার চরিত্র যেখানে আসে আর যায়, আবার আসে, সে তো বারবার বেঁচে উঠছি বলেই। কী আশ্চর্য, বেঁচে উঠছি, অথচ এতটা বয়েস অবধি বাঁচার সাধ ছিল না আমার। তুমি ধারালো কাঁটাচামচ দিয়ে ফালাফালা করে ফেললে আমার ব্যক্তিগত ফুড হ্যাবিট। জানো আজকাল আমি আয়নায় নিজেকে চুমু খাই, তোমার জিভের পসচার কল্পনা করে করে। তোমাকে নিয়ে আমার আর বেশি উচ্চাশা নেই, আমি সাধারণ প্রণয়কেরাণি। পুরনো খাতা থেকে সারাটা দিন ধরে কপি করি তোমার অগাধ মৌনতা। আমার দিকে কত সামান্য তাকাও, আমি কথা বলি তোমার ঠোঁটের গড়ন মনে রেখে। তোমাকে আলিঙ্গনের জিওমেট্রি পাইনি বলে ছিঁড়ে যাচ্ছে সম্পাদ্যের খাতা। অঙ্ক কষতে বুক এত ভেঙে আসে, কী বলব, কতবার খুললে কতবার বাঁধলে তোমার চুল?
শ্রী-কে চিঠি: ৪
সামান্য অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে কফি বানাচ্ছি আর মাথা ভরে যাচ্ছে ইওরোপে। সারাটা ইওরোপ, আর আমাকে টম্যাটো স্যুপ আর সয়া স্টিকের সঙ্গে বিনে পয়সায় দেওয়া খিদে। তুমি গন্ডোলার একহারা মাঝি, তোমাকে অনেক বছর আগে দেখেছিলাম, তখন তুমি ছিলে এই পৃথিবীর তরুণতম কবি। কেমন আছ আজকাল? আমাকে কবিতা শোনাবে? কোনও দুর্বোধ্য সুমিষ্ট ভাষায়? আমি তো তোমার একমাত্র পাঠক, যে তোমার হাই পাওয়ারের চশমা ভেদ করে তুলে আনতে পারে নিঃশব্দ ভাষা। এই যেমন তোমার সঙ্গে সস্তার রেস্তোরাঁয় বসতে চাইছি আর তুমি ভেবে চলেছ কোনও এক সদ্যপরিচিত তরুণীর সঙ্গে তুখোড় কনভারসেশন। নাহ্, ঠিক করেছি এবার কফি ছেড়ে দেবো। ফ্রেশ-বেক্ড্ রুটির মাথাভর্তি গন্ধের সঙ্গেও আমার কোনও সম্পর্ক রইল না আর। আজ শুধু তোমার বৌকায় উঠে পড়েছি নদী ভুল করে। আচ্ছা, যে পথে টোম্যাটো স্যুপের গল্প, সেখানে কি তোমার কোনও সেমিকোলন ফেলে গেছ অসাবধানে?