আমাদের এম্মা গঞ্জালেজরা মুচলেকা লেখে…

মুচলেকা-কমলা গার্লস

স্বাতী মৈত্র

 

আমাদের হস্টেলে একবার পুরুষ অ্যালার্ম লাগানো হয়েছিল।

ব্যাপারটা এরকম ছিল: হস্টেলের মেয়েদের উইংয়ে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ, বিশেষ অনুমতি ছাড়া। খবরের কাগজওয়ালা, গার্ড, ইলেক্ট্রিশিয়ান, এই শ্রেণির কিছু পুরুষের দিনের কিছু কিছু সময়ে প্রবেশের অনুমতি থাকত, ওই অব্ধি। এ ছাড়া মেয়েদের উইংয়ে পুরুষ বলতে কিছু হুলো বেড়াল, মানুষের জগতের আইন-কানুনের সাথে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এহেন পুরুষবর্জিত ইউটোপিয়া সম্পর্কে আমাদের অনেক পুরুষ বন্ধুর কৌতূহল ছিল চরম, বিশেষত বিসমকামী পুরুষ বন্ধুদের। “তোরা হস্টেলে কী পরে থাকিস? হস্টেলের ঘরে কী করিস? আমি যদি বোরখা পরে মেয়ে সেজে ঢুকে আসি তাহলে কেমন হয়?” — এই জাতীয় প্রশ্নাবলীতে জর্জরিত হয়েছি বহু বছর, মেয়েদের উইংয়ে পুরুষ প্রবেশ হওয়া উচিত কি উচিত না প্রসঙ্গে দিনের পর দিন ডিবেট হয়েছে লিঙ্গ নির্বিশেষে বন্ধুবান্ধবদের সাথে। এ ছাড়াও লোকজনের উঁকিঝুঁকি, ওয়ার্ডেনের দেওয়াল তুলে দেওয়ার হুমকি, এই সব তো ছেড়েই দিলাম।

তা এই পুরুষবর্জিত স্থানেই একবার এক আবাসিকের কাছ থেকে অভিযোগ আসল যে তার ঘরে নাকি ভোরবেলা কোনও এক পুরুষ ঢুকে পড়েছিল। সেই পুরুষ কে, কোথা থেকে এসেছিল, কোথায়ই বা গিয়েছিল, এর কোনও উত্তর তদন্ত হওয়া সত্ত্বেও পাওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু অতঃপর হস্টেল কর্তৃপক্ষ ঠিক করলেন একটি পুরুষ অ্যালার্ম লাগানো হবে। মেয়েদের উইংয়ে অনুমতিপ্রাপ্ত পুরুষেরা ঢুকলেও যাতে আবাসিকরা সতর্ক হতে পারেন, আলুথালু পোশাক সামলে, খোলা দরজা বন্ধ করে যাতে আব্রু বজায় রাখা যায়, সেই জন্যই এই অ্যালার্ম। অতএব তারপর থেকে রোজ ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ খবরের কাগজওয়ালা আসবার সাথে সাথে বেজে ওঠা শুরু করল আমাদের বিকট পুরুষ অ্যালার্ম, আমরাও সকলে কর্তৃপক্ষ ও সমগ্র পুরুষজাতির শ্রাদ্ধ করতে করতে ভোরবেলা ঘুম থেকে (অন্তত কিছু সময়ের জন্য) ওঠা শুরু করলাম।

পুরুষ অ্যালার্মটা বেশিদিন টেকেনি। নিজের থেকে খারাপ হয়ে গেছিল না কোনও ব্যাদড়া বালিকার দাক্ষিণ্যে খারাপ হয়েছিল, সেটা জানবার চেষ্টাও করিনি, এমনিতেও আমার পক্ষে ভোরে ওঠা খুবই কঠিন কাজ।

পাঠক হয়তো এত অব্ধি পাঠ করে হাসছেন, কিন্তু আপনাদের শুধুই হাসানোর জন্য এই লেখা নয়। ভারতবর্ষের অসংখ্য মেয়েদের স্কুল-কলেজ-হস্টেলগুলো — যা আজও প্রথম প্রজন্মের ছাত্রীদের জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ, অনেক মেয়েদের উচ্চশিক্ষার একমাত্র উপায় — একেকটি আদর্শ ভারতীয় নারী গড়বার পীঠস্থানও বটে (নিন্দুকে বলে, ফ্যাসিস্টদের আখড়া)। সেখানে নিয়মানুবর্তিতা-ডিসিপ্লিনের কড়া শাসনে মেয়েদের সুরক্ষিত রাখা হয় (তাদের নিজেদের ভালোর জন্য), শিক্ষিত করে তোলা হয় (তাদের ভবিষ্যৎ স্বামী ও সন্তানের ভালোর জন্য)। নারীত্বের আদর্শ স্থান-কাল-শ্রেণির ফারাকে পরিবর্তিত হতে পারে, লেডি শ্রীরাম আর সারদা বিদ্যামন্দিরের শিক্ষাপদ্ধতিতে ফারাক থাকতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে এক। সেই শিক্ষা-সুরক্ষা-আদর্শের চক্করেই কখনও কখনও আমাদের পোস্টগ্র্যাজুয়েট হস্টেলের পুরুষ অ্যালার্ম জাতীয় অ্যাবসারডিটির সম্মুখীন হতে হয়, আবার কখনও বা ডিসিপ্লিনের নামে নাবালিকাদেরও মুচলেকা লিখে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়, স্বীকার করে নিতে হয় তারা (ছিছি) লেসবিয়ান, আর কখনও এমনটি করবে না। এই যেমন দক্ষিণ কলকাতার কমলা গার্লস স্কুলে হয়েছে।

আমি কি আপনাদের পুরনো খবর পড়াচ্ছি আবার করে? তাও নিঃসন্দেহে। আধুনিক নিউজ সাইকেলের জগতে এমনিতেও একেকটি খবরের জীবন বেশিদিনের নয়, তায় খবরের কাগজ ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের দৌলতে এই ঘটনাটি কারও আর অজানা নেই। কমলা গার্লস স্কুলের নাম এই কদিন আগে আমরা পেয়েছি সব খবরের কাগজের পাতায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগের পর এবারের শিরোনাম আরও চাঞ্চল্যকর — সমকামিতা! ঘটনার কেন্দ্রে আবার নবম শ্রেণির এক ঝাঁক কিশোরী, অর্থাৎ কিনা সোনায় সোহাগা! সোশ্যাল মিডিয়ার জগতের স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই অতএব ফেসবুকের পাতায় পাতায় ভরে গেছে নানা রকমের আলোচনা, কন্সপিরেসি থিয়োরি। বাংলাভাষী অন্তর্জাল জগতে ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি গুগল করলে প্রথম পাতাতে গসিপ (“সব নারীরাই কি লেসবিয়ান? জানতে চাইলে এই ভিডিও দেখুন!” “লেসবিয়ান বা সমকামী নারীদের চেনার উপায়”) আর পর্ন পাওয়াটাই স্বাভাবিক, সংবাদ বা তথ্য নয়, অতএব এতটা মুখরোচক ঘটনা যে আলোচ্য হয়ে উঠবে এ আর আশ্চর্য কী?

পুরনো খবর হলেও একটু দেখে নেওয়া যাক এখনও অব্ধি ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি:

  1. কমলা গার্লস স্কুলের দশ জন ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে তাদের সহপাঠিনীরা — শিক্ষিকাদের অনুপস্থিতিতে ক্লাসের ভিতরেই নাকি ‘অশ্লীল’ কাজে-কর্মে লিপ্ত হচ্ছে তারা।
  2. প্রধান শিক্ষিকা অভিযুক্ত মেয়েদের ডেকে পাঠান। শাস্তি হিসেবে তাদের মুচলেকা লিখতে বলা হয়।
  3. ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা স্কুলে এসে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন তাঁদের নাবালক সন্তানদের দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে যে তারা লেসবিয়ান, তারা কেউ স্বেচ্ছায় মুচলেকা লেখেনি।
  4. স্কুলের পক্ষ থেকে বলা হয় এটা নিছক শাস্তিমূলক ব্যাপার, ঠিক মুচলেকা নয়, মেয়েদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য করা হয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকাকে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “আমার কাছে মেয়েরা দোষ স্বীকার করে। তখন আমি তাদের বলি, লিখে দাও যে তোমরা স্কুলে আর এ সব কাজ করবে না। তখন ওরা লিখিত ভাবে সেটা জানায়।”
  5. অভিভাবকরা পাল্টা অভিযোগ জানান ফেব্রুয়ারি মাসে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই স্কুল কর্তৃপক্ষের এই মুচলেকা-পদক্ষেপ।
  6. রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন যে “এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। স্কুলে এরকম আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিচ্ছেন। ওরাই ওদের সামলে নেবে। সকলকে সহযোগিতা করতে আবেদন জানাচ্ছি।”

প্রশ্ন উঠেছে, নাবালিকাদের দিয়ে এই ভাবে মুচলেকা লেখানো কি আদৌ আইনসম্মত? তার সাথে প্রশ্ন উঠেছে আরও অনেক — প্রধান শিক্ষিকা এরকম জবরদস্তি কেন করলেন, শিক্ষামন্ত্রী সংস্কৃতি বলতে ঠিক কী বোঝেন, যৌন হেনস্থার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে কি না। হয়তো এর অনেকটাই তদন্ত না হলে আদৌ বোঝা সম্ভব না। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের দ্রষ্টব্য সমগ্র আলোচনার অভিমুখ, যেখান থেকে একটা জিনিস খুব পরিষ্কার — অভিভাবকমণ্ডলী থেকে প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং, সকলেই ‘এ সব কাজ’, অর্থাৎ কিশোরীদের সমকামিতা জাতীয় অপসংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হওয়া (বা আকৃষ্ট হওয়ার অভিযোগে বদনাম হওয়া) নিয়ে খুবই চিন্তিত।

মেয়েদের ইস্কুল বা কলেজে যারা পড়েছেন, তাঁদের কাছে আলোচনার এই অভিমুখ আশ্চর্য কিছু হওয়া উচিত নয়। পশ্চিম বাংলা তথা ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সময়ানুবর্তিতা ও ডিসিপ্লিনের মতন কিছু কিছু কড়া শব্দের সাথে সমকামিতার ‘নোংরা’ প্রসঙ্গটা মাঝেমাঝেই উঠে আসে। কারও কারও হয়তো অভিজ্ঞতাও আছে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে উঠে আসা ‘এ সব কাজের’ অভিযোগের সম্মুখীন হওয়ার, ছোট চুল শার্ট-প্যান্ট পরা মেয়েটিকে নিয়ে হাসাহাসি করবার, একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বা রুমমেটদের নিয়ে ফিসফিস করবার, শত্রু বলে চিহ্নিত মেয়েটিকে ‘লেসবিয়ান’ বলে দিয়ে একঘরে করে দেওয়ার। শিক্ষিকাদের — তাঁরা নান হলে তো কথাই নেই! — নালিশ করে শাস্তি পাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া। কমলা গার্লস স্কুলের অভিযোগকারিণী কিশোরীরা ও তাদের শিক্ষিকারাও সেই গ্লোরিয়াস ট্র্যাডিশনের অংশমাত্র।

আসলে পুরুষবর্জিত স্থানে মেয়েদের সুরক্ষিত ও শিক্ষিত হওয়া সামাজিকভাবে স্বীকৃত ঠিকই, কিন্তু সেই স্থানে গড়ে ওঠা মেয়েদের নিজস্ব ডাইনামিক কড়া নজরে না রাখলে কি না কি হয়ে যেতে পারে, এই চিন্তা থেকেই যায়। মেয়েগুলি আদর্শ মাতা-ভগিনী-স্ত্রীয়ের বদলে পুরুষত্যাগী নারীবাদী অথবা পুরুষত্যাগী লেসবিয়ান (অথবা দুটোই!) তৈরি হয়ে উঠলে সমাজ থাকবে? সংসার থাকবে? এ ছাড়াও বিসমকামী পুরুষের কল্পনার জগতে (#নটঅলমেন) পুরুষবিহীন “মেয়েদের জায়গা” মানে অনেক ক্ষেত্রেই পর্ণহাবের লেসবিয়ান সেকশনের সরাসরি সম্প্রচার, তাঁর দৃষ্টিসুখের জন্য তৈরি। অতএব তৈরি হয় মেয়েদের স্কুল-কলেজ-হস্টেল নিয়ে রগরগে কেচ্ছা, বিনোদন। আমাদের সামাজিক দর্শনে, আমাদের কালেক্টিভ কল্পনায়  মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাই একই সাথে আদর্শ নারী গঠনের ল্যাবরেটরি, আবার নানান আশঙ্কা-আকাঙ্ক্ষা ও অস্থির কৌতূহলের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন কিন্তু এটা নয় যে অভিযুক্ত দশটা মেয়ে ‘সত্যিকারের সমকামী’ কি নয়। কয়েকজন নাবালিকার ব্যক্তিগত সেক্সুয়াল আইডেন্টিটি — যার সম্পর্কে হয়তো তারা নিজেরাই এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি — জানবার বিকৃত ঔৎসুক্য প্রাপ্তবয়স্ক সমাজের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না। বয়ঃসন্ধির কিশোরীদের দেহ ও যৌনতা নিয়ে স্বাভাবিক কৌতূহল যাতে দুমড়ে-মুচড়ে ‘বিকৃতকাম’ বলে চালানো না হয়, এটা আমাদের — স্কুল কর্তৃপক্ষ, সরকার, এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজের — দায়িত্ব। দায়িত্ব তাদের সেক্সুয়াল ও জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, তাদের এবং তাদের শিক্ষক-অভিভাবকদের সঠিক কাউন্সেলিং। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে আমাদের আশেপাশের জগতে, আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিসরে এখনও সমকামিতা/উভকামিতা/রূপান্তরকামিতাকে ‘অসুখ’ হিসেবে দেখা হয়, জোর করে আয়ুর্বেদ-হোমিওপ্যাথি-স্পিরিচুয়াল কাউন্সেলিং-ইলেক্ট্রোশক-কনভারসন থেরাপির সাহায্যে ‘চিকিৎসা’ (পড়ুন অত্যাচার) করা হয়, বাবাজি অথবা পীরের শরণাপন্ন হয়ে প্রাণপণ ‘সারিয়ে দেওয়ার’ প্রচেষ্টা, পরিবারের তরফ থেকেই করা হয়। কখনও কখনও শোনা যায় ‘কারেক্টিভ’ ধর্ষণের ঘটনা, যেটাও কিনা পরিবারের চাহিদাতেই হয়ে থাকে। তথ্য তেমন নেই, অভিযোগ হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণকারীও পরিবারের সদস্য। এছাড়াও তো রয়েছে আকছার ঘটে যাওয়া আত্মহত্যার অসংখ্য উদাহরণ। ভারতবর্ষে ৩৭৭ ধারার বিরুদ্ধে আন্দোলন যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটাই প্রয়োজন বৃহত্তর সমাজে সমস্ত জেন্ডার ও সেক্সুয়াল আইডেন্টিটি সম্পর্কে শিক্ষা।

এই লেখাটা লেখবার সময় সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু স্কুল ছাত্র-ছাত্রী, নাবালক-নাবালিকা বেশিরভাগই, খবরের কাগজের শিরোনামে। এই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে, ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড শহরে মারজোরি স্টোন ডগলাস হাই স্কুলে নৃশংস হামলা চালায় এক বন্দুকবাজ। ১৭ নিহত হন, আরও ১৭ জন আহত। সেই মর্মান্তিক ঘটনার পরে মারজোরি স্টোন ডগলাস হাই স্কুলের এই ছেলেমেয়েরা সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তুলেছে বন্দুকজনিত ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে, হ্যাশট্যাগ #নেভারএগেন ব্যবহার করে জনমত গড়ে তুলেছে বন্দুক আইন নিয়ে। তাদের আন্দোলনে সামিল হয়ে এই আজকেই, অর্থাৎ ১৫ই মার্চ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানান প্রান্তে ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ওয়াকআউট করেছে — সমস্ত বাধা, বিরোধিতা, এমনকি সাসপেনশনের ভয় উড়িয়ে দিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এদেরই মধ্যে একজন কিউবান-আমেরিকান কিশোরী এম্মা গঞ্জালেজ। সবে ১৮ বছর হয়েছে, কিন্তু টুইটারে একাউন্ট খোলার সাথে সাথে তার ফলোয়ার সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র সমান সাবলীল এই মেয়ে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এম্মা বলেছে, “শেম অন ইউ”। মারজোরি স্টোন ডগলাস হাই স্কুলের গে-স্ট্রেট অ্যালায়েন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এম্মা, প্রসঙ্গত নিজেও উভকামী হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকে। তার রাজনীতি ও তার সেক্সুয়াল আইডেন্টিটির জন্য যে তাকে হেনস্থা হতে হয়নি তাও নয়। মেইন রাজ্যের রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ লেসলি গিবসন টুইটারে তাকে ‘স্কিনহেড লেসবিয়ান’ (এম্মার মাথার চুল খুব ছোট করে কাটা, যাকে বাজ কাট বলা হয়) বলে সর্বসমক্ষে গঞ্জনা করবার পরেই আবার ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ তাঁকে তাঁর দলীয় সেনেটর-সহ অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এই ধরণের মন্তব্য তাঁদের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না।

আমাদের এম্মা গঞ্জালেজরা মুচলেকা লেখে, আর আমরা তাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-অশ্লীল ব্যবহার নিয়ে মুখরোচক আলোচনা করে থাকি।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4660 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...