অভিজিৎ সিরাজ
“The problem is not triple talaq. The real problem is women’s financial dependence on men. If women become educated and independent, talaq or divorce won’t scare them. It is hell for dependent women who won’t find any place to stay or any money to survive.” (Q&A– Times of India 05.05.17)
অবশেষে বললেন তসলিমা নাসরিন।
কিন্তু খুব নিচু স্বরে। অনেক গরম কথার আড়ালে। তবু এই বিপন্ন সময়ে তাঁকে কুর্নিশ না করে থাকতে পারছি না। তাঁর মন কি বাত— অন্দর কি মামলা হয়তো এটাই। তামাম উপমহাদেশে তসলিমাই সেই বিরল শিক্ষিত আধুনিক মননের অধিকারী, যিনি সংস্কৃতির ছদ্মবেশেও ধর্মাচরণে অভ্যস্ত হতে শেখেননি। অথচ ইতিহাসের চূড়ান্ত শ্লেষ এই যে, ব্যক্তিজীবনে আপন ধর্মাচরণে আস্থাবানেরাই তাঁর তুমুল সমর্থক। এর মূলে আছে যে বিভেদজনিত অবচেতন দ্বেষভাব, তা কোনওদিন ফাঁস করতে সচেষ্ট হননি নাসরিন। বরং তার সুফল ভোগ করতে চেয়েছেন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে।
সমাজ রক্ষার ছদ্মবেশে তালাক-রাজনীতির এই যে কদর্য বজ্জাতি প্রায়শই বুজকুড়ি তোলে মধ্যবিত্ত মেধাচর্চায়, তার মুখোশটা সংস্কৃতি বিলাসীদের মঞ্চে অনায়াসে খুলে দিতে পারতেন তসলিমা। তালাক-রাজনীতি কার্যত পর্যদুস্ত করতে সমর্থ হয় মুসলিম নারীর অগ্রগতিকেই। তার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের প্রশ্নটি কৌশলে গৌণ রাখা হয়। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই গৌণকরণ প্রক্রিয়ায় সদাই ঢুকে পড়েন সংস্কৃতি-বিলাসীরাও। বিজেপি শিবিরাশ্রিত হওয়ার বহুপূর্বকালে, একদা বলেছিলেন সমাজসেবী-সম্পাদক (‘মানুষী’ পত্রিকা) মধু কিশওয়ার— নারীকে ঘাড়ধাক্কা দেওয়া আর ‘তিন তালাক’ বলে বিচ্ছিন্ন করার মধ্যে তফাৎ কোথায়?
প্রাতিষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব ধর্মের বিরুদ্ধে গলাবাজির মতোই আজ জরুরি হয়ে উঠেছে এই নগ্ন সত্য উন্মোচনের বিষয়টি। তাই তসলিমার কণ্ঠ মৃদু স্বরে হলেও, তা শ্রবণযোগ্য হয়ে উঠবে বলেই আমার বিশ্বাস।
তবে শঙ্কার কারণ একটিই। অমর্ত্য সেনের মতোই হয়তো বা ‘ট্রোল্ড’ হবেন নাসরিন। হে রাম! তালাকের পক্ষে সওয়াল করলেন তিনি! যেমনটি হয়েছিলেন অমর্ত্য। প্রতীচি ট্রাষ্টের এক সমীক্ষার ফল তুলে ধরে তিনিও মুসলিম নারীর মূল সঙ্কটটিকে স্পষ্ট করেছিলেন। বলেছিলেন, তালাক গৌণতর দিক।
দেরিতে হলেও, তসলিমা আপনাকে অভিবাদন।