প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

অশোক মুখোপাধ্যায়

 

প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ইতিহাস প্রসঙ্গে প্রায়শই দুটো কথা শোনা যায়। একদিকে একদল মানুষ প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের ব্যাপারে অসম্ভব কাল্পনিক অবিশ্বাস্য নানারকম দাবি উত্থাপন করতে থাকেন: বৈদিক বিমান, প্লাস্টিক সার্জারি, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব, বিবর্তন তত্ত্ব, কোয়ান্টাম বিদ্যা, ইত্যাদি। আর অন্যদিকে, তার যুক্তি ও তথ্যভিত্তিক সমালোচনা শুনে আর এক দল লোকের মনে হয়, যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক ও মার্ক্সবাদীদের মধ্যে প্রাচীন ভারতের প্রতি কোনওরকম শ্রদ্ধাবোধ নেই। তারা জানতেও চায় না, প্রাচীন কালে এই দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা বিকাশ হয়েছিল এবং কীভাবে। সব কিছুই তারা আজগুবি কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়। অথচ, তাদের কি অন্তত একবার দেখে নেওয়া উচিত না, কী কী আবিষ্কার এদেশে হয়েছিল? সেগুলিকে আধুনিক জ্ঞানের তালিকাভুক্ত করে নেওয়াও উচিত।

সঙ্ঘ-বৃত্তের দাবিগুলির ভিত্তিহীনতা এবং অযৌক্তিকতা নিয়ে আমি কিছু দিন আগে অনীক পত্রিকার ২০১৫ সালের “মৌলবাদ এখন” শীর্ষক শারদ সংখ্যায় একটি প্রবন্ধে সবিস্তার লিখেছিলাম। [মুখোপাধ্যায় ২০১৫খ] সেই লেখাটি একাধিক জায়গায় পরে নানা আকারে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। তাই এখানে সেই সব বিষয়ের পুনরুল্লেখের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয় বিষয়টিই, অর্থাৎ, সত্যি সত্যিই আমাদের দেশে কী কী জানা গিয়েছিল, এখানে আলোচনা করতে চাইব।

প্রাচীন ভারতের প্রাচীনত্ব

প্রাচীন ভারত বলতে ভারতবর্ষের ইতিহাসের কোন সময়কালকে বোঝায়, সেটাও আমাদের বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। কেন না, এখানেও একটা বিরাট বিভ্রান্তি অনেক দিন ধরে বাসা বেঁধে রয়েছে। ভারতে আধুনিক কায়দায় গুছিয়ে ইতিহাসের পাঠ লেখা শুরু হয় ইংরেজ আমল ও শাসনের হাত ধরে। তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থেই ইংরেজ শাসকরা ভারত ইতিহাসের যে পাঠ রচনা করেছিল, তাতে যুগ বিভাজন করেছিল এইভাবে: হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগ। তাদের লক্ষ্য ছিল, স্কুল স্তরে ভারতীয় ছাত্রদের প্রাক ব্রিটিশ সময়কালের ইতিহাস পড়ানোর নাম করে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিকাশ ঘটানো। পরবর্তী কালে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী ইতিহাস লেখকরা যখন থেকে নিজেদের জ্ঞানমতে লিখতে শুরু করলেন, তাঁরা নামগুলো বদলে দিলেন, প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ ও আধুনিক যুগ। কিন্তু সময়ের মাইলফলকগুলি সেই একই থেকে গেল। “হিন্দু যুগ”-টাই হল প্রাচীন যুগ। মুসলমান রাজত্ব প্রতিষ্ঠার কাল থেকেই শুরু হল এঁদের “মধ্য যুগ”। আর এর ফলে প্রাচীন ভারতের সময় সীমানা চলে এল ১১৯২ সাল অবধি। যখন তরাইনের যুদ্ধে মহম্মদ ঘোরি পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন।

মজার কথা হল, এই ইতিহাসবিদদের অনেকেই আবার প্রাচীন ভারতের প্রাচীনত্ব যতটা পারেন অতীতের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। সম্ভব অসম্ভব, বাস্তব অবাস্তব, সাক্ষ্য-প্রমাণ — এই সব ভাবনা তাঁদের কখনই তাড়িত বা বিচলিত করে না। অর্থাৎ, যেখানে ইতিহাসের মূল কথাই হল সময়ের নিরিখে মানুষের কার্যকলাপ [Bloch 1984, 27], এঁরা সেই সময়কেই উপেক্ষা করে ইতিহাসের পাঠ নির্মাণ করে চলেন। অনেক সময় এঁদের হাবভাব দেখে সন্দেহ হয়, এঁরা ভারতের গোটা ইতিহাসকেই পারলে বুঝি প্রাচীন ইতিহাস বানিয়ে দেবেন!

যাই হোক, আমরা এই রচনায় আধুনিক পদ্ধতিতে যুগ বিভাজনের রীতি মেনে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল অবধি প্রাচীন যুগ হিসাবে ধরব এবং সেই মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের ইতিহাস আলোচনা করব।

প্রথম পর্ব: হরপ্পা সভ্যতা

অনেকেই জানেন, বর্তমান পাকিস্তানের বালুচিস্তান জেলার বোলান পাসের কাছে মেহেরগড়ে যে নবপলীয় গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতির উন্মেষ হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে হরপ্পা তাম্রব্রোঞ্জ সভ্যতার সূত্রপাত। এই কৃষি সংস্কৃতির কালানুক্রমিক বিস্তার আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ ৭০০০-২০০০, অর্থাৎ, হরপ্পা সভ্যতার প্রায় অন্তিম কাল পর্যন্ত। মেহেরগড় আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৭৪-৭৫ সালে এক দল ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকের খননকার্যের মধ্য দিয়ে। এর ফলে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশের পশ্চাদপ্রেক্ষাপটটি খুব সুন্দরভাবে জানা গেছে।

সমস্যা হচ্ছে, হরপ্পা যুগের মানুষদের নিজস্ব কোনও বক্তব্য আজ অবধি আমাদের গোচরে এসে পৌঁছয়নি। তারা নিজেরা সেই সভ্যতাকে কী নামে সম্বোধন করত, তাদের রাজা কেউ ছিল কিনা, থাকলে কে বা কারা, ইত্যাদি, জানার কোনও উপায় আমাদের হাতে এখনও নেই। বিভিন্ন সিল বা মুদ্রার গায়ে লিখিত যে লিপি পুরাতত্ত্ববিদরা উদ্ধার করেছেন, তার সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু তাদের পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি। ফলে একটা বিরাট সময় ধরে যারা এই সভ্যতা নির্মাণ করেছে, রক্ষা ও বিকশিত করেছে, এবং অবশেষে পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে, সেই জনমণ্ডলী সম্বন্ধে কোনও প্রত্যক্ষ খবর আমাদের কাছে নেই।

তবে, কৃতি সাক্ষ্যও যা আছে তার পরিমাণ এবং গুরুত্ব খুব কম নয়। অবিভক্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রায় দশ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অন্তত আটটি বড় নগর সহ তারা যে প্রায় ১২০০ নগর সংস্কৃতির ক্ষেত্র নির্মাণ করেছিলেন, সেই সব ক্ষেত্র সমীক্ষা করে বিপুল সংখ্যক প্রত্নসাক্ষ্য পাওয়া গেছে। তার থেকে অনেক কিছুই সরাসরি জানা যায়, আরও অনেক কিছু আন্দাজ করা সম্ভব। বিজ্ঞানের জগতে তারা কতখানি তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী হয়েছিল জানা না গেলেও যে প্রযুক্তিবিদ্যা তারা আয়ত্ত করেছিল বলে দেখা গেছে, তাও অত্যন্ত বিস্ময়কর।

হরপ্পা সভ্যতার তিনটে পর্যায়:

  1. খ্রিঃ পূঃ ৩৫০০-৩০০০: উন্মেষ কাল;
  2. খ্রিঃ পূঃ ৩০০০-২৪০০: বিকশিত কাল;
  3. খ্রিঃ পূঃ ২৪০০-১৮০০: অন্তিম কাল।

এই নগর সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট হল অসংখ্য পাকা দালান; সাজানো সুবিন্যস্ত রাস্তাঘাট; রাস্তার বিভিন্ন দূরত্বে জনসাধারণের জন্য নির্মিত স্নানঘর; নগরের ময়লা জল বের করে দেবার জন্য চমৎকার পয়ঃপ্রণালী; কৃষির জন্য সুপরিকল্পিত সেচব্যবস্থা; নগরের নানা জায়গায় ফসল সংরক্ষণের উদ্দেশে নির্মিত শস্যগৃহ; ইত্যাদি। প্রতিটি নগরের চারদিকে ছিল সুরক্ষা প্রাচীর। তারা চাকা উদ্ভাবন করেছিল; পোড়া মাটির শক্ত সুঠাম ঠাসা চাকা বানিয়ে তার উপর তক্তা লাগিয়ে মালপত্র রাখার ব্যবস্থা করত; এইভাবে তারা তৈরি করেছিল সেকালের মালবাহী গাড়ি। তারা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রয়োজনে বিভিন্ন দ্রব্যের পরিমাণ মাপার উপযোগী বাটখারা নির্মাণ করেছিল। এই সমস্ত কাজের পেছনে যে সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের কিছু দূর অবধি বিকাশ লাভের একটা ভূমিকা ছিল, তা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।

জ্ঞানের এই বিকাশকে লিপিবদ্ধ করে ধরে রাখার প্রয়োজন তারা নিশ্চয়ই অনুভব করেছিল। সেই সূত্র ধরেই উদ্ভাবন করেছিল লিপি এবং সংখ্যালিপি। এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার করা না গেলেও কতগুলি বৈশিষ্ট প্রায় সর্বসম্মতভাবেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। যেমন, এক: এদের লিপিগুলি ঠিক একক ধ্বনিবাচক অক্ষর নয়, বরং অনেকটা ভাববাচক ছবি (pictograph) বা বাক্যাংশের চিত্ররূপ (ideograph)। দুই: এরা খুব সম্ভবত ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লিখত।

খুব স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত হরপ্পা ক্ষেত্র থেকে অসংখ্য পোড়া মাটির নানারকম কাজে ব্যবহার্য বিভিন্ন আকারের পাত্র এবং দেবদেবী পশুপাখি ও মানুষের বহু মূর্তি পাওয়া গেছে। এছাড়া পাথরের পাত্র বা বাসনপত্র এবং ধাতব পাত্রও পাওয়া গেছে অনেক। যা দেখে বোঝা যায়, এদের সময়কালে নানা রকম কুটিরশিল্প গড়ে উঠেছিল। তাম্রব্রোঞ্জভিত্তিক ধাতুশিল্প বহু দূর অবধি বিকশিত হয়েছিল। হরপ্পা নগরগুলিতে সোনা রুপো তামা টিন ও সিসা পাওয়া গেছে। কিন্তু এরা লোহার ব্যবহার জানত না।

এত সমুন্নত ও বিস্তৃত একটি সভ্যতার শেষ পর্যন্ত পতন হল কেন?

একটা দীর্ঘ সময় ধরে মনে করে আসা হয়েছে যে বাইরে থেকে আগত বৈদিক জনজাতিগুলির প্রবল অনুপ্রবেশ ও আক্রমণই এই ধ্বংসের জন্য দায়ী। ১৯৫৩ সালে পুরাতত্ত্ববিদ মর্টিমার হুইলার [Wheeler 1968] এবং তার ভিত্তিতে বিশিষ্ট মার্ক্সবাদী ইতিহাস রচয়িতা বিজ্ঞানী দামোদর ধর্মানন্দ কোশাম্বিও [Kosambi 1975, 72-73] এই তত্ত্বকল্পেই আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই পতনের পেছনেও রয়েছে এই সভ্যতার নিজেরই অবদান। বহিরাক্রমণ নয়, সমগ্র হরপ্পা ক্ষেত্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এক বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় নেমে আসার ফলেই একটা সময় এই এলাকাগুলি ছেড়ে এর অধিবাসী সমস্ত মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। সিন্ধু নদীতন্ত্রের অববাহিকায় প্রায় দুই সহস্রাধিক বছর ধরে গাছপালা বনজঙ্গল কেটে ফেলে নগরায়নের ফলে সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে সবুজ ধ্বংসের দীর্ঘমেয়াদি পরিণামে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যেতে থাকে, ধীরে ধীরে ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের জমিতে ব্যাপক শুষ্কায়ন ঘটে এবং মরুভূমি বিস্তার লাভ করতে থাকে। চাষবাসের পক্ষে হরপ্পা তার সমস্ত সুবিধা হারিয়ে ফেলে। হয়ত এরই পরিণামে কোনও একটা বছরে অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়ায় যে মানুষজন খুব তাড়াহুড়ো করেই এই সব নগর ছেড়ে পূর্ব ও দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য হয়। এই দিক থেকে হরপ্পা তার উত্তরাধিকারী হিসাবে আমাদের কাছে একটা বড় শিক্ষা রেখে গেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, কার্ল মার্ক্সের ১৮৬০-এর দশকে লেখা এক গুচ্ছ নোটে কার্ল ফ্রাস সহ এমন কিছু সমকালীন বিজ্ঞানীর মতামত লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে দেখা গেছে, যাঁরা ব্যাবিলনিয়া, পারস্য, মিশর, গ্রিস, প্রভৃতি স্থানের উন্নত কৃষিব্যবস্থার এই একইরকম ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা বলেছেন। সেকালে হরপ্পা সভ্যতার কথা জানা ছিল না। থাকলে সেই তালিকায় হয়ত এর নামও যুক্ত হত। [Saito 2016]

বৈদিক সংস্কৃতি

খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ নাগাদ যখন হরপ্পা নগর সভ্যতা ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে চলে যায়, তার কয়েকশো বছরের মধ্যেই একই ভূমণ্ডলে পশ্চিম এশিয়ার তুরস্ক পার্শ্ববর্তী আনাতোলিয়া অঞ্চল থেকে আগত মানবগোষ্ঠী, যারা পারস্য ও আফঘানিস্তানে বসবাস করছিল, তাদেরই কিছু কিছু জনজাতির মানব দল সিন্ধুনদীর খরস্রোত উপেক্ষা করে পুব পারে চলে আসে। ইতিহাসে ভুল করে এদের আর্য, ইন্দো-আর্য ইত্যাদি নামে পরিচয় দেওয়া হয়। আমরা এদের পরবর্তী সুকৃতির কথা স্মরণে রেখে এই মানবদলকে বৈদিক জনজাতি হিসাবে উল্লেখ করব। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিঃ পূঃ নাগাদ এদের আগমন শুরু হয় এবং মোটামুটি ১০০০ খ্রিঃ পূঃ পর্যন্ত এই পূর্বমুখী অভিবাসন চলতে থাকে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে এই জনপ্রবাহ থিতিয়ে আসে এবং গঙ্গা যমুনা অববাহিকায় একটা স্থিতিশীল গোষ্ঠিজীবনের বিকাশ ঘটে।

এই সময় থেকে ভারতে এদের যে জীবনযাপনের পদ্ধতি দেখা যায়, যার ব্যাপ্তি মোটামুটি খ্রিঃ পূঃ ১৫০০-৫০০, তাকে নৃতাত্ত্বিক পরিভাষায় বৈদিক সংস্কৃতি বলা যেতে পারে। এবং বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের নিরিখে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়:

  1. খ্রিঃ পূঃ ১৫০০-১০০০: উন্মেষ কাল; বৈদিক সাহিত্য, মৌখিক রচনা;
  2. খ্রিঃ পূঃ ১০০০-৫০০: সংস্কৃত ভাষার বিকাশ কাল; পাণিনি — বিশ্বের প্রথম বৈয়াকরণ, ভাষার বৈজ্ঞানিক নির্মাণ; কৃষির সূত্রপাত; ভারত ও রামকথার বীজ বপন; লিপি ও লিখন শুরু;
  3. খ্রিঃ পূঃ ৫০০-০: মহাকাব্য রচনা শুরু।

একে আমরা বৈদিক সভ্যতা না বলে কেন সংস্কৃতি হিসাবে চিহ্নিত করছি, সেটাও এই জায়গায় এসে আমাদের স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়া দরকার।

নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের নিরিখে সংস্কৃতি ও সভ্যতার কিছু সুনির্দিষ্ট পার্থক্য আছে। মানুষের অপশুসুলভ জীবনযাপন পদ্ধতিকে (অর্থাৎ, নিছক জৈবিক অস্তিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে বেঁচে থাকার সামাজিক প্রক্রিয়াকে) নৃতত্ত্বের পরিভাষায় সাধারণভাবে সংস্কৃতি বলা হয়ে থাকে। অস্তিত্বের এই যাপনে জীবিকার যে মূল হাতিয়ারটি ব্যবহৃত হয়, বা তার যে উপাদান তাদের সদ্য করায়ত্ত হয়েছে, তার নামেই সেই সংস্কৃতির পরিচয় দেওয়া হয়। অনেক সময় সেই উপাদানের যে নমুনা সাক্ষ্য আবিষ্কৃত হয়েছে, বা যে স্থানে তা প্রথম পাওয়া গেছে তার নামেও এই সংস্কৃতি পরিচিতি লাভ করে। যেমন: নবপলীয় সংস্কৃতি, মৃৎপাত্র সংস্কৃতি, চালকোলিথিক সংস্কৃতি কিংবা নিয়ান্ডারথাল সংস্কৃতি, ইত্যাদি।

সভ্যতা হচ্ছে এইরকম একটি বিশেষ মানব সংস্কৃতি, যেখানে প্রথম কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। যথা: নগর জীবন, পাকা দালানবাড়ি, প্রাচীর, পরিখা, লিপি, সংখ্যালিপি, ওজনমাপক, ধাতব হাতিয়ার, মুদ্রা, যানবাহন, ইত্যাদি।

বৈদিক জনজাতিগুলির জীবনযাপন পদ্ধতি বৈদিক সাহিত্যের ভিত্তিতে অনুসরণ করলে দেখা যায়, শুরু থেকে প্রায় প্রাক-বৌদ্ধ কাল পর্যন্ত এদের বৈশিষ্ট্য ছিল শিকার সংগ্রহ ও পশুপালন। এরা ছিল এক যাযাবর সমরপ্রিয় (nomadic martial) গোষ্ঠী। সিন্ধু-গঙ্গা অববাহিকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এরা যতটুকু বনজঙ্গল পেয়েছিল, তার মধ্যেই ঝুপড়ি বা কুঁড়েঘর বানিয়ে ছোট ছোট দল বেঁধে বাস করত এবং আশপাশ থেকে শিকার ও সংগ্রহ করে খাদ্য সংস্থান করত। অনেক সময় অন্য জনজাতির সংগ্রহে হানা দিয়েও এরা খাদ্যদ্রব্য লুটে আনত।

কিন্তু এরকম একটা অবস্থার মধ্যে থেকেও এরা জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে করতে এক বিপুল মৌখিক সাহিত্যের জন্ম দিয়েছিল, যার তুলনা অনুরূপ অবস্থায় থাকা বিশ্বের আর কোনও যাযাবর শিকার-সংগ্রহকারী জনজাতির মধ্যে দেখা যায় না। অসংগঠিত অবিন্যস্ত ভাষায় হলেও ছন্দবদ্ধ কবিতার ঢঙে রচিত এই সমস্ত ছড়াগুলি তারা মুখে মুখে রচনা করেছে, আবৃত্তি করেছে এবং বংশ পরম্পরায় রক্ষা করে গেছে। কমপক্ষে সাত-আটশো বছর। যতদিন না তারা লিপি ও লিখিত সাহিত্যের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিল। ঋক-বেদ এই অর্থে বিশ্বের এক প্রাচীনতম সাহিত্য এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের এক অনুপম কীর্তি।

আবার যখন, আনুমানিক ৮০০-৫০০ খ্রিঃ পূঃ কালের মধ্যে কোনও এক সময়ে তারা লিপি আবিষ্কার করে লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করল, সেই সময় থেকেই তারা ভাষার প্রতি আরও যত্নবান হয়ে বেদের যুগের মৌখিক ভাষাকে সংস্কার ও সংগঠিত করার দিকে মন দিল। তার ফলে জন্ম নিল “সংস্কৃত” ভাষা। পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যা কোনও স্থান বা জাতির নামে পরিচিত হয়নি। ইংলিশ, ফরাসি, স্প্যানিশ, চিনা, জাপানি, গারো, মুন্ডারি, তামিল, তেলুগু, পাঞ্জাবির মতো নয়; এর নামটি এল এক কৃৎ প্রত্যয় হিসাবে — সংস্কার দ্বারা নির্মিত, অর্থাৎ, সংস্কৃত।

আর সে এক বিরাট নির্মাণ! মানুষের কথোপকথনকালে উচ্চারণযোগ্য প্রায় সমস্ত (সব নয় কিন্তু) ধ্বনির জন্য অক্ষর তৈরি হল। ধ্বনিগুলোকে সাজানো হল প্রথমে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ হিসাবে। স্বরধ্বনিগুলোকে বিন্যস্ত করা হল উচ্চারণের ক্রমিকতা অনুযায়ী। অ অ্যা আ ই ঈ উ ঊ এ ঐ ও ঔ . . . ইত্যাদির আকারে। ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকেও প্রথমে এক বর্গাকারে স্থাপন করা হল। উচ্চারণের শারীরস্থান অনুসারে সারি; উচ্চারণের তীব্রতা অনুসারে স্তম্ভ। প্রতিটি বর্গেই রাখা হল এক একটি নিজস্ব আনুনাসিক ধ্বনি। অঙ্ক চঞ্চল কণ্টক দন্ত আর স্তম্ভ — কেউ নাসিক ধ্বনির জন্য কারও নিজের বর্গের বাইরে থেকে ধার নেবে না। অন্যান্য উচ্চারিত ধ্বনিগুলিকে রাখা হল তারপর। পৃথিবীতে আর কোনও ভাষাই তার মৌল কাঠামোতে এতটা সুবিন্যস্ত ও সুগঠিত নয়। পাণিনির ব্যাকরণ “অষ্টাধ্যায়ী” খ্রিঃ পূঃ ৮০০-৫০০ সময়কালের মধ্যেকার রচনা। কিন্তু গ্রন্থটি গত (অন্যূন) আড়াই হাজার বছর ধরে প্রায় সমান প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে। যা প্রাচীন কালের কোনও বই সম্পর্কেই বলা চলে না, বা বলার প্রশ্ন ওঠে না।

অষ্টাদশ শতাব্দের শেষ ভাগ থেকে ব্রিটিশ ফরাসি জার্মান ওলন্দাজ পণ্ডিতেরা সংস্কৃত সাহিত্য নিয়ে চর্চা করতে করতে এই সব বৈশিষ্ট্য দেখে শুনে একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন। ওয়ালটার ইউজিন ক্লার্ক এই প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, তার মধ্যে এতটুকুও অত্যুক্তি নেই: “The study of language in India was much more objective and scientific than in Greece or Rome. The interest was in empirical investigation of language rather than in philosophical theories about it. Greek grammar tended to be logical, philosophical and syntactical. Indian study of language was as objective as the dissection of a body by an anatomist.” [Clark 1937, 339-40]

তিনি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন: “It would be very strange if this analytical and empirical spirit had been confined entirely to the study of language. There are reasons for believing that it extended into other matters as well.” [Clark 1937, 340] সত্যিই তো। চিন্তার বাহন ভাষা নিয়ে যাদের এত মাথাব্যথা, তারা যে জাগতিক আরও পাঁচটা বিষয়ে মাথা ঘামাবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সত্য খুঁজে বের করবে, তাতে কি সন্দেহ করা চলে?

চলে যে না, তার প্রমাণ মিলতে শুরু হল বেদোত্তর বা বৌদ্ধযুগের সময়কাল থেকেই। লিখিত ভাষা আয়ত্ত করার মানে হল কৃষিকর্ম ততদিনে এই ভূখণ্ডে আবার শুরু হয়ে গেছে।

বৌদ্ধযুগে বিজ্ঞান

আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকের কোনও এক সময় থেকে বৌদ্ধযুগের শুরু বলে ধরা হয়। ইতিহাস চর্চার স্বার্থে আমাদের জেনে রাখা ভালো, গৌতম বুদ্ধ বা মহাবীর জৈন — এঁদের দুজনের কারওই কোনও ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যক্তি-অস্তিত্ব নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু দুজনের প্রায় একইরকম জীবন কাহিনি শুনে বা পড়ে মনে হয়, এরকম কাছাকাছি কোনও (এক বা একাধিক) চরিত্রের হয়ত জন্ম হয়েছিল যিনি (বা যাঁরা) সমকালে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি এবং ধর্মচর্চায় বেশ কিছু রদবদল করেছিলেন।

তার ভিত্তিমূলে ছিল কৃষি সংস্কৃতির পুনরাবির্ভাব। ক্রমে ক্রমে এসে গেল নগর সভ্যতা। মগধ রাজ্যের পত্তন। সমাজে শ্রেণি বিভাজন এবং শ্রেণি শাসন এই প্রথম খুব স্পষ্টভাবে দেখা গেল। তার জাগতিক ফল হয়েছিল বেশ যুগান্তরিক। অচিরেই শিক্ষা ও বিজ্ঞানের বিস্তার ঘটতে দেখা গেল উত্তর ভারতের একাধিক জায়গায়। এই সময়েই গড়ে উঠল তক্ষশীলার বৃহৎ শিক্ষাকেন্দ্র খ্রিঃ পূঃ ৬ষ্ঠ-৪র্থ শতকে। সেখানে দর্শনের পাশাপাশি চিকিৎসাবিদ্যার চর্চা শুরু হল খুব গুরুত্ব সহকারে। ইতিপূর্বে অথর্ববেদ থেকে আয়ুর্বেদ নামক এক শাস্ত্রের জন্ম হয়েছিল, যার অন্যতম কাজ ছিল মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা এবং কিছু কিছু রোগভোগের ক্ষেত্রে গাছগাছালির শেকরবাকড় রস পাতা ইত্যাদি খেয়ে আরোগ্য লাভের পন্থা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত ও সচেতন করা।

তক্ষশীলা পর্যায়ে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়। আত্রেয়, জীবক, অগ্নিবেশ, চরক এবং শুশ্রুত। এঁদের মধ্যে বেনারস অঞ্চলের শুশ্রুতর নাম শল্যবিদ্যা প্রয়োগের সাথে যুক্ত হয়ে আছে। তাঁর নামে প্রচলিত “শুশ্রুত সংহিতা” নামক যে বইটা আছে তাতে এক জায়গায় তিনি বলেছেন: “No accurate account of any part of the body, including even its skin, can be rendered without a knowledge of anatomy; hence anyone who wishes to acquire a thorough knowledge of anatomy must prepare a dead body, and carefully examine all its parts. For it is only by combining both direct ocular observation and the information of the textbooks that thorough knowledge is obtained.” [Cited by Hoernle 1907]

আবার এই যুগেই প্রথম ইহজাগতিক মানব জীবনকে দুঃখময় বলে জানা গেল। শ্রেণি শাসনের কালে অনেকের জীবনই তো সত্যিই দুঃখময়! অতএব সেই দুঃখের হাত থেকে মুক্তির উপায় অনুসন্ধান এবং ধর্ম ভাবনারও জন্ম হল।

প্রসঙ্গত বলা যাক, অথর্ববেদ এবং শতপথ ব্রাহ্মণে মানুষের অস্থিসজ্জা সম্পর্কে অনুরূপ বিবরণ আছে। পরবর্তী হিন্দু ঐতিহ্যে স্মৃতি সাহিত্যে শব ব্যবচ্ছেদ নিষেধের কারণে শুশ্রুতের রচনা যথেষ্ট প্রাচীন বলেই প্রতিভাত হয়।

এই প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার মধ্যে যে একটা সংস্কারমুক্ত বৈজ্ঞানিক ধারা বর্তমান ছিল, তা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর “প্রাচীন ভারতে বস্তুবাদ” গ্রন্থে খুব সুন্দর আলোচনা করে দেখিয়েছেন। তবে গিরীন্দ্রনাথ মুখার্জীর বই থেকে ছবি দিয়ে তিনি যে সমস্ত শল্য হাতিয়ারের উদাহরণ দিয়েছেন, সেগুলো বেশ কষ্টকল্পিত এবং পশ্চাদ-প্রক্ষিপ্ত বলেই আমাদের মনে হয়। কেন না, সমকালীন সময়ে ধাতুবিদ্যা এতটা উচ্চস্তরে পৌঁছেছিল বলে কোনও অনুকূল তথ্য পাওয়া যায় না। এর অনেক পর, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে চিনা পরিব্রাজক ইত-সিং বাগভট নামে একজন চিকিৎসকের কথা বলেছেন, যিনি “অষ্টাঙ্গসংগ্রহ” নামে ভেষজবিদ্যার উপর একখানা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ততদিনে অবশ্য ভারতে প্রকৃত বিজ্ঞান চর্চা অবক্ষয়ের দিকে হেলে পড়েছে।

বৌদ্ধযুগেই ভারতে গণিতের বিকাশ শুরু হয়। তার আগে অবধি বিবিধ সংখ্যার উল্লেখ দেখা গেলেও স্পষ্টভাবে গণিত চর্চার কোনও সাক্ষ্য মেলে না। প্রাথমিক পর্যায়ে পাটিগণিত ও জ্যামিতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের সূত্রপাত হয় বলে দেখা যায়। কল্পসূত্রের অন্তর্গত শূল্বসূত্রের মধ্যে নানা রকমের গণনা আছে। এই সূত্রের সম্ভাব্য সময়কাল খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় শতক বা তার কাছাকাছি বলে আন্দাজ করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শতপথ ব্রাহ্মণ ও তৈত্তিরীয় সংহিতা-তে বেদী নির্মাণের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। বিভিন্ন ধরনের বেদী নির্মাণের জন্য বাহুগুলির আনুপাতিক মাপ নির্ধারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই সূত্রের উদ্ভব তার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকতে পারে। কেন না, এতে পিথাগোরীয় উপপাদ্যের অনুসারী বিভিন্ন ত্রিভুজের বাহুগুলির দৈর্ঘ্যের অখণ্ড পরিমাপের উল্লেখ আছে। তার ভিত্তিতে অনেকে অনুমান করেন, এই সূত্রে পিথাগোরীয় উপপাদ্যের বিকাশ ও প্রয়োগ ঘটেছিল। কিন্তু তা সমর্থন করার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্য নেই। কেন না, সাধারণীকৃত কোনও তাত্ত্বিক সিদ্ধান্ত সেখানে অনুপস্থিত।

কিন্তু বর্গক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের জন্য এতে এক চমৎকার প্রয়াসের দেখা মেলে। তাতে বলা হয়েছে, বাহুর দৈর্ঘ্যের মাপ নিয়ে তার সঙ্গে তার একের তিন অংশ যোগ করতে হবে, তারপর একের তিনের একের চার অংশ যোগ করতে হবে, সেই যোগফল থেকে বাহুর দৈর্ঘ্যের একের তিনের একের চারের একের চৌত্রিশ অংশ বিয়োগ করলে যে মান আসবে তাই সেই উদ্দিষ্ট কর্ণের দৈর্ঘ্য। আধুনিক অঙ্কের পরিভাষায় বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য a হলে কর্ণের দৈর্ঘ্য হবে:

a2 = a[1 + 1/3 + 1/(3.4) – 1/(3.4.34)] = 1.4142156 . . .,

অর্থাৎ, 2 = [1 + 1/3 + 1/(3.4) – 1/(3.4.34)] = 1.4142156 . . .

এই গণনা আধুনিক মানের খুব কাছাকাছি।

পাঠককে লক্ষ করতে বলি, এই হিসাবটা কীভাবে পাওয়া গেল আন্দাজ করুন। জ্যামিতির সাহায্যে 2–এর মান বের করে নিয়ে এই মানটিকে পাটিগণিতীয় পদ্ধতিতেও বের করার চেষ্টা হয়েছে। আজকাল যাকে পৌনঃপুনিক পদ্ধতি (iteration method) বলা হয়, অনেকটা সেইভাবেই ১ এর সঙ্গে কিছু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ভগ্নাংশ যোগ-বিয়োগ করার দ্বারা উদ্দিষ্ট মানে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সেকালের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই গাণিতিক বোধ ও প্রয়াস খুবই বিস্ময়কর!

একইভাবেই সেদিনকার মানুষ চেষ্টা করেছিল বর্গের সমান ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট বৃত্তের ব্যাসের মান, বৃত্তের সমান ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য ইত্যাদির পাটিগণিতিক হিসাব নির্ধারণ করতে। এরকম ধারণা করতে পারাটাই এক বিকাশমান গণিত বোধের সাক্ষ্য বহন করে।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...