সমাপতন

অভিজিৎ সেন

 

প্লেনে ঢাকা যাচ্ছে অনিমেষ। ঢাকা থেকে জাহাজে বরিশাল যাবে। বিগত পঞ্চাশ বছরের ইচ্ছা এতদিনে সফল করতে পারল সে। চাকরি থেকে অবসর নেবার পর পাঁচ বছর কেটে গেছে। এই পাঁচ বছর সে একটা সরকারি প্রকল্পে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে। সারা জীবন অবশ্য বেসরকারি নামী কারখানায় সে জবরদস্ত ইঞ্জিনিয়ার ছিল। ভালো মাইনে এবং আনুষঙ্গিক ভাতা ইত্যাদিও ভালো ছিল। সুতরাং জীবনটা অনিমেষের মন্দ কাটেনি। অসুবিধে যেটুকু ছিল, তা হল, তাদের প্রজন্মের অসংখ্য মানুষজন, যার মধ্যে তার নিজের আত্মীয়স্বজনই বেশি, তাদের সাহায্য করা।

এ ব্যাপারটা সে স্বেচ্ছায়ই নিয়েছিল। পুববাংলার গ্রাম ছেড়ে যারা এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল তাদের মধ্যে অনিমেষের মতো পরিবারও ছিল। সেই অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের দিনে যারা সহযাত্রী অনিমেষ তাদের দায়িত্ব কিছুটা নিয়েছিল। পঞ্চাশ বছর আগের সেই অসহনীয় দিনগুলো হয়তো সে সব মানুষের আর অত তীব্র নেই। বেশিরভাগ পরিবারই আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। অনিমেষের আর তাদের দায়িত্ব, যতটুকুই হোক, পালন করার প্রয়োজন হয় না।

ফলে এখন তার অখণ্ড অবসর। অখণ্ড অবসরের সাথে ক্রমশ নিঃসঙ্গ হবার পালা। শরীর এমন কিছু ভেঙে পড়েনি যাতে ঘরেই শুয়ে বসে টিভি দেখে দিন কাটাবে সে।

এই সময় মানুষ স্মৃতিমেদুরতায় বড় আক্রান্ত হয়। স্মৃতিভারাক্রান্ত অনিমেষ একদিন ঠিক করল পুব বাংলার যে গ্রামটিতে তার জন্ম, যে গ্রামে জীবনের প্রথম পনেরো বছর সে কাটিয়েছে, সেই গ্রামটিতে সে আরেকবার যাবে। সারা জীবনে অসংখ্যবার মনে পড়েছে সেই গ্রামখানার কথা। তাদের অত্যন্ত জীর্ণ মাটির বাড়িখানার কথা। পনেরো বছরের পনেরোটি বর্ষার কথা, যখন ঘরের চালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির জল গড়িয়ে নামত। সে আর তার দু ভাইবোন ঘটি বাটি যথাযথ জায়গায় বসিয়ে সেই জলের হাত থেকে ঘর, বিছানা, বাক্স বাঁচাবার চেষ্টা করত। পরদিন সকালে উঠে দেখা যেত, উঠোনে জল এবং সবার উপরে, ঘরে চাল নেই। মা বলত ‘চল আইজকা ভাইগনার বাড়িতে বেড়াইতে যাই আমরা, অ্যাঁ?’ ছোট দুই ভাইবোন সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে লাফালাফি করতে থাকত। তাদের পিসেমশায়ের বাড়ি তাদের গ্রাম থেকে খুব কম হলেও দু মাইল দূরে। জল কাদা ভেঙে সেখানে যাওয়াও খুব একটা সহজ নয়। তবুও সেখানে গেলে, সমাদর তেমন না পাওয়া গেলেও, খাওয়া পাওয়া যেত। ভাই বোন সেই সম্ভাবনাতেই নাচানাচি করত।

কিন্তু অনিমেষের ব্যাপারটা মোটেই ভালো লাগত না। পিসেমশাইয়ের বাড়িতে অনেক লোক। অনেক শরিক সেই বড় দালান বাড়িটায়। তার মধ্যে অনেক আশ্রিতও ছিল। তারা নানারকম চক্রান্ত করত। এ ঘরের কথা ও ঘরে গিয়ে লাগাত। এদের সঙ্গে ওদের মনোমালিন্য লাগিয়ে দিত। তাতে নানারকম অশান্তি হত। অনিমেষের তখন এসব বোঝবার মতো বয়স হয়েছে, সে যেতে চাইত না। কিন্তু না গেলে বর্ষার সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে অনিবার্য উপোসের হাত থেকে রেহাই ছিল না। তাদের বাবার কোনও ধরাবাঁধা রোজগার ছিল না। কোনও চাকরি-বাকরি করার যোগ্যতাও ছিল না তার। সোজা কথায় উঞ্ছবৃত্তি করেই সংসার চলত তাদের। তার বাবার একটা বড় আশ্রয় ছিল এই বড়লোক ভাগনে। কিন্তু যে সম্পর্কে সেই আশ্রয় অনিমেষের পাঁচ-ছ বছর বয়সেই সেই পিসেমশাই মরে গিয়েছিল। পিসি মারা গিয়েছিল তার জন্মেরও আগে। সেই বড় বাড়ির কর্তা ছিল তার পিসতুতো দাদা। যে মানুষটা তার বাবার বয়সের কাছাকাছি বয়সের।

অনিমেষ এই লোকটির কাছ থেকে একটা বিচিত্র সমর্থন পেত। সেই শৈশবের হতদরিদ্র অবস্থার মধ্যেও সে স্কুলে যেত। এবং সবাইকে বছরের পর বছর ধরে বিস্মিত করে সে প্রতিবছরই ক্লাসে প্রথম হত।

পিসতুতো দাদা বড়বাবু মন্মথনাথের অসম্ভব রাশভারি কর্তৃত্বের আড়ালে তার জন্য একটা অত্যন্ত গোপন আশ্রয়স্থল ছিল। ও বাড়ির ছেলেমেয়েরা সবাই প্রায় পড়াশোনায় গবেট। অত সহায় সম্পত্তি থাকলেও দাদা এ কারণে প্রবল মনোকষ্টে থাকত। অনিমেষ যখন ও বাড়িতে যেত বৈঠকখানা ঘরেই তাকে ধরত দাদা।

‘অঙ্কে যেন কত পাইছ তুই?’

শরিকদের কেউ হয়তো তখন পাশেই বসে, তাকে শোনানোর গরজই প্রধান।

অনিমেষ মিনমিন করে বলে — ‘বিরানব্বই।’

‘ফার্স্ট ক্লাস! পজিশন?’ দাদা জিজ্ঞেস করত। সবাই জানত। এর আগেই অন্তত দু-তিনবার এসব জিজ্ঞেস করা হয়ে গেছে।

‘ফার্স্ট,’ বলত অনিমেষ!

অহংকার নয় — সে মুহূর্তে লজ্জাই লাগত তার।

‘তোগো ক্লাসে সেকেন্ড হয়, সেই শ্যাখের পোলাডার নাম কী যেন?’

‘শেখ শামীম হুসেন।’

শামীম শুধু সহপাঠী নয়। অনিমেষের বয়সী।

‘আগে শ্যাখ না পরে শ্যাখ?’

‘আগে শেখ পরে হোসেন।’

অনিমেষ মন্মথনাথের এসব অনুসন্ধানের কারণ বুঝতে পারে। সংখ্যালঘু ঘরের সন্তান হিসেবে এ মানসিকতার ভাগীদার সে নিজেও যে একেবারে নয়, একথা জোর দিয়ে বলতে পারে না। আবার উল্টোদিকের অভিযোগও শুনেছে সে। শামীমের বাড়িতে একদিন শামীমের এক নানার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে।

‘তুমি কেলাসে ফাস্ট হও?’

‘জে হ্যাঁ।’

‘শামীম তো একবারও ফাস্ট হইতে পারে নাই?’

‘জে?’

‘আসলে ইস্কুলের মাস্টাররা তো বেবাক পেরায় হিন্দুই। তেনারা যদ্দিন আছেন, তদ্দিন শামীমরা ফাস্ট হতে পারবে না। কী কও?’

শামীম সেবারে বাংলা এবং ইংরাজিতে অনিমেষের থেকে অন্তত প্রতি পেপারে দশ-বারো নম্বর করে বেশি পেয়েছিল। কিন্তু অঙ্কে সে ছিল ভারি কাঁচা। শামীম কিছুতেই তার এই প্রতিবন্ধকতা পূরণ করতে পারত না। কিন্তু নানার কথার মধ্যে যা ইঙ্গিত ছিল, অনিমেষ জানত শামীম, রশিদ, নাসিরেরও সেরকম ধারণাই ছিল মনের মধ্যে।

 

প্লেনের ঘোষক সিটবেল্ট আটকে নিতে বলল। ছোট প্লেন, মাত্র পঁয়তাল্লিশ কি খুব বেশি হলে পঞ্চাশজন যাত্রী। চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিটের উড়ান মাত্র। এখনি ঢাকা নামবে প্লেন। নামছে। মাটি ছুঁয়েছে। ঠিকই তখনই মনে হল শামীমের নানা যেটা বলেছিল, সেটার মধ্যে সত্যতা থাকতে পারে। হয়তো ছিলই। সেই সময় তার ভারি অপমান বোধ হয়েছিল। সংখ্যালঘুর নিরুপায় ক্রোধ। এখন জানে যে ব্যাপারটা সর্বত্রই হয়। সংখ্যালঘুর ভবিতব্যই সাম্প্রদায়িক হওয়া। সে তখন এ ব্যাপারটা জানত। মন্মথ দাদা ওই কথার লেজুড় হিসেবে জুড়ে দিয়েছিল ‘খবরদার! কোনও শ্যাখের বাচ্চারে ফার্স্ট হইতে দিবি না।’

প্লেনের দরজাটাই বোধহয় জোরালো স্প্রিং-এর চাপে খুলে গিয়ে নিচে নামার সিঁড়ি হয়ে গেছে। সামনের যাত্রীরা নামছে একজন-দুজন করে। অধিকাংশ যাত্রীই অত্যন্ত সাধারণ চেহারার। দুজন আরবি জোব্বা পরা বিদেশি, তিনজন বোরখা পরা মহিলা, দাড়ি-গোঁফের বিশিষ্ট ভঙ্গিতে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকটিত, এইরকম পাঁচ ছয়জন এবং একজন সম্ভবত রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু, এনাদের মোট সংখ্যা জনা দশেক হবে। এরা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশিষ্ট। এছাড়া বাকি জনা পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ স্ত্রী-পুরুষ নির্ভেজাল বাঙালি প্রথমত। চেহারা সংস্কৃতি আচার আচরণ — কতটুকু আর তফাত! অথচ কত কিছুই যে হয়ে যাচ্ছে, এখনও হচ্ছে!

এয়ারপোর্ট থেকে বেরোবার শেষ বাধা ইমিগ্রেশন। ইমিগ্রেশনের ছেলেটি দেখেই তাকে যেন চিনল। বলল কাকা, দ্যাশের বাড়ি দ্যাখতে আইছেন?

অনিমেষ আশ্চর্য হয়ে খাটি বাঙাল উচ্চারণেই জবাব দিল ‘বোঝলেন ক্যামনে?’

‘হ হ… বইশশাল?’

‘হ।’

‘কী আছে সেখানে?’

‘কিছুই নাই শুনছি।’

‘বাড়িঘর? ভিটা?’

‘বাড়িঘর না থাকারই কথা। ভিটাখানা তো আর উড়িয়া যাইতে পারে না। সেইখানই দ্যাখতে যাব।’

দুজনের ভাষাতেই মিশ্রণ এসে গেছে।

‘কেডা কইল উড়িয়া যাইতে পারে না? আপনে সুকুমার রায়ের লেখা পড়েছেন? ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল?’

‘হাঃ- হাঃ-হাঃ-’

‘আপনে হাসতাছেন! ভিটা জমি ধানী জমি হইয়া যাইতে পারে। কেউ যদি পুকুর কাটাইয়া সেখানে মাছের চাষ করে, হইবে জলা। আবার যদি কোনও বুদ্ধিমান মন্দির কি মসজিদ বানাইয়া ফেলে, হেইলে তো কাম সারা। তখন আপনের জমি হইবে দেবস্থান, দেবোত্তর, আল্লার মোকাম।’

‘তা ঠিকই কইছেন… হা-হা-হা-হা…’

‘এখন শোনেন এই কাগজখানা ফিল আপ করেন। এত কথা কইলাম এই কারণে যে এই যে কলমটা দেখতাছেন, এখানে লিখবেন ট্যুর। আপনে ট্যুরিস্ট মনে রাখবেন। অন্য কিছু লিখলে অকারণে ঝামেলায় পড়বেন, বোঝলেন?’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।’

একপাশে সরে এসে অনিমেষ একটা বন্ধ কাউন্টারের সামনের সংকীর্ণ পরিসরে কাগজখানা রেখে নানা অনুসন্ধানের জবাব লিখতে লাগল। ইমিগ্রেশনের ছেলেটি পরের লোকটিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ফর্ম পূরণ করে দপ্তরের সামনে এসে আবার দাঁড়াল সে। প্লেন আসতে প্রায় চার ঘণ্টা দেরি করেছে। প্লেন ছাড়ার সময় দমদমে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল। ঝড়বৃষ্টি হচ্ছিল ঢাকাতেও। সে সব মিটে যেতে তবেই প্লেন ছেড়েছিল। ক্ষীণ জানাশোনার সূত্রে বিমানবন্দরে যে ব্যক্তির আসার কথা ছিল, সে বোধহয় এসে ফিরে গেছে। এদিকে রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে ঘড়িতে। উঁচু ঘেরার বাইরে চোখ তুলে অনিমেষ দেখতে চেষ্টা করল কোনও উৎসুক মুখ এদিকে তাকিয়ে আছে কিনা। না তেমন কেউ নেই!

‘কাকা দেন।’

কাগজখানা টেবিলে রাখল অনিমেষ।

‘কার আসার কথা ছিল? আসে নাই?’

অনিমেষ চিন্তিত মুখে বলল একটি ছেলের আসার কথা ছিল, আমাকে সে একটা হোটেলে তুলে দেবে, এরকম কথা ছিল। এই দুর্যোগে বোধহয় ফিরে গেছে।’

‘ক্যান যে আসেন এই পোড়া দ্যাশে!’

কাগজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কাউন্টারের ছেলেটি।

কাজ শেষ হয়ে গেলে সে বলল, ‘ব্যাস আমার কামও শ্যাষ, আপনার কামও শ্যাষ। চলেন এখন।’

পাশের টেবিলের দ্বিতীয় ব্যক্তি সতর্কবার্তা জানানোর ভঙ্গিতে বলে উঠল ‘সাবির আবার!’

বোঝা গেল ছেলেটির নাম সাবির।

সে বলল ‘কী করুম? যাইবে কোথায় মানুষটা? এই এত রাত্তিরে রাস্তায় বাইর হইলে — একলা মানুষ তার ওপর ইন্ডিয়া থিকা আইছে। আর সবার ওপরে বইশশালের মানুষ। এখনও তো গেরামের নাম জিগাই নাই! কাকা, কোন গেরামে — কোন থানায় বাড়ি আপনের?’

অনিমেষ বলল ‘জলাভিটা, গৌরনদী থানা।’

সাবির সোল্লাসে তার সহকর্মীকে বলল, ‘দেখলি তো দেখলি তো? আরে আমি চোখ মুখ দেইখ্যাই আন্দাজ করতে পারি। কাকা, আমার বাড়ি মানিকপুর, জলাভিটার উত্তর পাশে? চেনেন তো?’

অনিমেষ আশ্চর্য হল। এমন সমাপতন বরিশাল জেলার মানুষের মধ্যেই সম্ভব, এমন মনে হল তার। সে বলল, ‘মানিকপুর চিনি না, কয়েন কী? আমার স্কুলের বন্ধু শামীম হোসেনদের বাড়ি কত গেছি!’

সাবির বিস্মিত হয়ে বলল ‘কোন শামীম হোসেন? আগে শ্যাখ না পরে শ্যাখ?’

অনিমেষ ঘটনাযুগ্মের যুগপৎ সংঘটনে এবার আর খুব আশ্চর্য হল না। পঞ্চাশ বাহান্ন বছর আগে রাশভারি পিসতুতো দাদা একেবারে ভিন্ন অর্থে এই প্রশ্নটাই করেছিল তাকে।

সে আগেরবারের মতো একই উত্তর দিল।

বলল, ‘আগে শ্যাখ।’

সাবির লাফ দিয়ে উঠে তার সহকর্মীকে বলল ‘দেখলিরে শুয়ার? এরে কয় বইশশাল! কাকায় কিন্তু তর কাউন্টারে দাঁড়াইলেই পারতেন! কিন্তু দাঁড়াইলেন আমার কাউন্টারেই। চলেন কাকা। একি তগো ঢাকাই কুটুম্বিতা যে নৌকায় ঠেলা দিয়া ক’বি ‘‘আইজ আপনারে আটকামু না, বেয়াই, তবে পরের বারে কিন্তু না-খাওয়াইয়া ছারুম না,’’ চলেন, কাকা।’

বেয়াইয়ের রসিকতাটা বহু প্রাচীন আর ঢাকাই কুটুম্বিতা সম্পর্কেই শুধুমাত্র প্রযোজ্য নয়। এই রসিকতা অনিমেষ শুনেছে অন্তত পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছর আগে। বিদায় দিতে ঘাটে এসে বেয়াইয়ের নৌকো গভীর জলের দিকে ঠেলে দিয়ে বলা যে, আর আপনাকে আটকাব না, আপনি কাজের মানুষ। কাজের ক্ষতি করব না। কিন্তু এর পর যে দিন আসবেন সেদিন কিন্তু ছাড়ব না। খাওয়া তো খাওয়া রাত্রিবাসও করতে হবে।

আরতি আর সাবিরের সঙ্গেই বরিশাল এসেছিল অনিমেষ, দুদিন পরেই ফিরছেও তাদের সঙ্গে। বড় আকারের জলযানটির তিনতলার ডেকের সামনের দিক থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে গেছে গলুইয়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে অনিমেষের মনে হল যেন পৃথিবীর বাইরের কোনও অভিযাত্রায় সে একাকী এক যাত্রী। গলুইয়ের একেবারে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে প্রায় নিঃশব্দ-গতি যানটি মধ্যরাতের আকাশের চাঁদের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে। আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের সচল অস্তিত্ব। চাঁদ কখনও দৃশ্য, কখনও অদৃশ্য। ক্ষয়রোগাক্রান্ত, নির্দিষ্ট অবয়বহীন অর্ধেক দৃশ্যমান উপগ্রহটির বিমর্ষ আলোয় বিস্তীর্ণ নদীর জল বা দুই তীরের প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনিমেষ অবশেষে টের পেল, গত দু-দিন দু-রাতে যে গ্রামটি তার গাছপালা, নদী-পুকুর, আকাশ-বাতাস নিয়ে তাকে আশ্রয় দিয়ে প্রতি মুহূর্তে জানিয়ে দিচ্ছিল যে তারা আছে, সেই বাড়িটি, সেই আকাশ, বাতাস, নদী, বৃক্ষলতা নিয়ে সেই গ্রামটি ফের আস্তে আস্তে অনস্তিত্ব হয়ে যাচ্ছে তার কাছে। যেন এই দুদিন দুরাত সে এক মায়ার কুহকে আবদ্ধ হয়ে ছিল। পৃথিবীর যে প্রান্তে অনিমেষের অগোচরে পঞ্চাশ বছরের দূরত্বে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই বাড়িটা, গ্রামটা আবার এই দুদিন দুরাতের ব্যবহারিক দৈনন্দিনতা কাটিয়ে অবিশ্বাস্য দুঃখী স্মৃতির ভাণ্ডারে ফিরে যাচ্ছে। অনিমেষ আর কোনওদিন তাদের ধরতে, ছুঁতে পারবে না। পঞ্চাশ বছর পরে এই একবার যে বাস্তবতাকে সে স্পর্শ করেছিল, আর একবার এই জীবনে তা কখনওই সম্ভব হবে না। পঞ্চাশ বছর আগে যে স্থান তাদের কাছে বিদেশ বলে নির্ধারিত হয়েছিল, কোনও মাত্রাতেই সে দেশকে আর নিজের বলা যাবে না কোনওদিন।

 

গ্রাম্য কুটুম্বিতার মাধুর্য বাংলাদেশের শহরের মানুষের মধ্যে এখনও পাওয়া যায়। সেদিন মাঝরাত্তিরে ঘুম ভাঙিয়ে সাবির তার স্ত্রীকে বলেছিল, ‘আরতি, আরে ওঠো… ওঠো…। আরে কইলকাতা থেকে তোমার কাকায় আইছে। আসেন কাকা, আসেন।’

আরতি ঘুম চোখে উঠে অবাক হয়ে বলেছিল, ‘কাকা? আমার কাকা?’

সাবির বলল, ‘আরে সেই যে তোমার ছোটকাকা, পঁচিশ বছর আগে কইলকাতায় চইলা গেছিল! আরে ওই যে কইছিলা মেট্রো রেলের চিফ একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, নাম অনিমেষ মুখার্জী…’

সাবিরের বাঙাল রসিকতা বা প্র্যাকটিক্যাল জোকে অনিমেষ যদি কিছুটা ইন্ধন দিত তাহলে আরেকখানা ভ্রান্তিবিলাস হয়ে উঠত ক্রমে ক্রমে, সন্দেহ নেই। সাবিরের কথায় তারও যে ধন্দ লেগে যাচ্ছিল! ইঞ্জিনিয়ার তো সেও ছিল, তবে মেট্রো রেলের ওই চিফ একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, যদি ওরকম একটা পোস্ট থাকেও, তবে সে সবের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক কোনও কালেই নেই। আরতি যখন তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল, তার চোখে তখন আর ঘুমের ক্লেদ নেই। সে বলেছিল ‘আমার কাকা পঁচিশ বছর আগে কলকাতা চলে গেছিল। তখন তার বয়স চোদ্দ-পনেরো। খুব বেশি হলে এখন তার বয়স হবে চল্লিশ।’

সাবির বলল ‘উনি গৌরনদী থানার জলাভিটা গ্রামের মুখুজ্জে। উনি ইঞ্জিনিয়ার। ওনার নাম অনিমেষ মুখুজ্জে। উনি তোমার কাকা হতে বাধ্য।’

আরতি তখন এগিয়ে এসে পায়ে হাত দিয়েছিল। বলেছিল ‘ভুল। আমার কাকার নাম অনিমেষ নয়, অভিষেক। তবে তোমার ভুলটা রসিকতা হলেও এটা ঠিক যে, উনি আমার জ্যাঠামশায় হতে বাধ্য। কেননা জলাভিটায় ছয় ঘর মুখার্জী পরিবার ছিল। উনি নিশ্চিত তাদের একঘর। আমার বাবার নাম পরিতোষ মুখুজ্জে, আপনারা কোন ঘরের মানুষ?’

অনিমেষ এটা লক্ষ করেছে যে বাংলাদেশের মেয়েরা পুরুষদের অনেক আগেই মান্য বাংলায় কথা বলতে শেখে। আরতির ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সে বলল ‘আমরা দক্ষিণ ঘরের মানুষ।’

আবার সেই সমাপতনের মায়াবী খেলা। একটু পরেই বোঝা গেছিল সে খেলার শেষ হতে আরও কিছু বাকি আছে। কোনও এক মায়াবী যেন অদৃশ্যে বসে সোনালী তন্তু দিয়ে তাদের সবার সম্পর্কগুলিকে সমাপতনের চমৎকারিত্বে একটার পর একটা গেঁথে চলেছে। না হলে কী করে সাবির হোসেনের নামের আগে শেখ যুক্ত হয়ে সে অনিমেষের কৈশোর কালের বন্ধু শামীমের ভাইপো হয়ে যায়!

সত্যিই কি আর এই দেশ, এই গ্রাম, এই নদীকে নিজের বলা যাবে না? আশির দশকেও কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, কোথায় বাড়ি আপনার? কোথায় দেশ? অনিমেষেরা প্রায় সবাই বলত, বরিশাল। কেন যে বলত, কে জানে?

তাকে খুঁজতে খুঁজতে সাবির আর আরতি তিনতলার উপরের এই গলুইতে এসে হাজির।

‘কাকা, শোবেন না?’

‘এই নদীখানের নাম জানো তুমি জামাই?’

‘আমি ঠিক কওয়ার পারুম না। আপনাগো মাইয়ায় কইতে পারে।’

সম্পর্ক গ্রাম্যতায় ঘনীভূত হয়েছে।

আরতি বলল ‘এখন আমরা মেঘনার ওপর দিয়ে যাচ্ছি, জেঠামশাই। মেঘনা পার হচ্ছি আমরা।’

‘মেঘনা পার হতে কত সময় লাগবে?’

‘ঠিক বলা যাবে না, জেঠামশাই, মেঘনা পার হওয়া মানে তো আর আড়াআড়ি পার হওয়া না, মেঘনার উত্তর ধরে অনেকটাই যেতে হবে। তারপর মুন্সীগঞ্জের পাশ দিয়ে শীতলাক্ষা-ধলেশ্বরীর সঙ্গম ছুঁয়ে আমাদের জাহাজ বুড়িগঙ্গায় পড়বে। ঢাকা পৌঁছতে ভোর চারটে কি পাঁচটা।’

‘দিনের বেলা হলে এইসব নদী, ছোটবেলা থেকে যাদের নাম শুনে আসছি, দেখে এ জীবন সার্থক হত।’

‘অবশ্য আপনি এখন যে জায়গাটা দিয়ে ভেসে যাচ্ছেন, সেটা কোন নদী বরিশালের মাঝি-মাল্লারাও তা ঠিকমতো বলতে পারবে না। বেভারিজ সাহেব কতদিন আগেই বলে গেছেন যে বাখরগঞ্জে সব গ্রামের নামেই নদী আছে। মেঘনার কথা আলাদা। কিন্তু সে নদীকেও কোন জায়গা থেকে শাহবাজপুর নদী বলা হবে, পঞ্চাশ বছর যে মাঝি মেঘনায় কাটিয়েছে সেও নির্ঘাত বলতে পারবে না। যে জায়গা থেকে এই জাহাজে উঠলেন সেই জায়গার নাম কীর্তনখোলা। কোনও মানচিত্রে এই নদীকে পাবেন না আপনি। বরিশাল নদী কখন যে আড়িয়াল খা হয়ে যাবে, বুঝতে পারা যাবে না, এমন আপনার দেশ।’

অনিমেষ মুগ্ধ হয়ে শুনছিল আরতির কথা। আরতি থামতে অবশেষে বলল, ‘কলেজে তুমি ভূগোল পড়াও নাকি, আরতি?’

আরতি বলল, ‘না জেঠামশাই, আমি ইতিহাস পড়াই। নদী আমার অবসেশন। কলকাতার অনেক মানুষ আমার কাছে বরিশালের ধানসিঁড়ি নদীটা কোথায় জানতে চেয়েছে। শুধু ওই নদীটার অবস্থানই ঠিকমতো বলতে পারিনি।’

তিনজনে শব্দ করে হেসে উঠল।

নীচের ইঞ্জিনের শব্দ এখান থেকে শোনা যায় না। এখানে শুধু গতিশীল হাওয়ার শব্দ দুই কানের পাশে। জলাভিটায় আরতির বাপের বাড়িতে এক রাত ছিল। এক রাত ছিল শামীম হোসেনের বাড়িতে। শামীম থাকে আমেরিকায়। সেখানে সে বড় ডাক্তার। শামীমের বাড়ি সাবিরেরও বাড়ি।

তাদের নিজেদের বাড়িটা এখন আর নেই। অনুরূপ একটি বাড়ি তাদের ভিটায়। সেই বাড়ির চালা টিনের। একটি মুসলমান পরিবার সে বাড়িতে থাকে। অনিমেষের পরিচয় পেয়ে সে বাড়ির বৃদ্ধ গৃহকর্তা একটু ভুরু কুঁচকাল। পরক্ষণে তার ছেলে অনিমেষের হাত ধরে দাওয়ার একমাত্র চেয়ারটায় বসাল। বলল আইজকার রাইতটা থাকিয়া যান।’ থাকার প্রশ্নই নেই। থাকবে না শুনে বৃদ্ধের মুখ স্বাভাবিক হল। বলল, খুব পয়মন্ত আপনাগো এই ভিটা। শরিকি বিবাদে নিজের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হইয়া আপনাগো এই ভিটাতে উঠছিলাম। পোলার তখন মরণাপন্ন অসুখ। বাঁচার কোনও আশাই নাই। কইলে বিশ্বাস করবেন না, সাতদিনের মধ্যে অসুখ সারিয়া গেল।কইলে আরও বিশ্বাস করবেন না, ছমাসের মধ্যে শরিক মামলায় হারিয়া গেল। আমি আমার ভাগের জমিজিরাত ফেরত পাইলাম। এ বেবাক আপনাগো পুণ্য ভিটার দৌলতে।’

আরতির বাবাকে অনিমেষ চিনল জ্ঞাতিসম্পর্ক সূত্রে। সে বছর তিনেক আগে মারা গেছে। আরতির এক দাদা, দুই ছোট ভাই আছে। আরতির বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। এতদিনে যদিও তার মা ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে কিন্তু রান্নাঘরে তাকে ঢুকতে দেয় না। এখন মায়ের মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের স্ত্রীও কি দেবে?

গভীর রাতে মেঘনার উত্তাল, এলোমেলো হাওয়া বইছে তাদের শরীরের উপর দিয়ে। মনে হচ্ছে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের অলিগলিতেও ঢুকে পড়ছে সেই হাওয়া। ভিজে নোনা স্বাদ লাগছে ঠোঁটে, জিহ্বায়। নদীর কুল নাই, কিনারা নাই। কোন পার দিয়ে যাচ্ছে জাহাজ? যে পারে মাঝে মাঝে গ্রাম বা শহরের মিটমিটে আলো দেখা যাচ্ছে, সেটা কোন পার? পুরনো ফরিদপুরের শরিয়তপুর, না পুরনো নোয়াখালির চাঁদপুর? কোনটা উত্তর? দক্ষিণ বা কোনটা? পুব? পশ্চিম?

ছয় ঘর মুখুজ্জে বামুনের মধ্যে জলাভিটায় শেষ পর্যন্ত রয়ে গেছিল পরিতোষ মুখুজ্জে, ঘটনাচক্রে আরতির বাবা। ছয় ঘরের মধ্যে সবচেয়ে দুঃস্থ, সবচেয়ে নিরুপায়। ছয় ঘরের মধ্যে সবচেয়ে অবস্থাপন্ন যারা ছিল তাদের ছিল মাত্র পঁচিশ-তিরিশ বিঘা জমি, যার থেকে তাদের সম্বৎসরের ভাত হত কোনওমতে। আর ছিল এক শালগ্রাম শিলা। সেই নারায়ণ শিলা এবং তাঁর সেবার জন্য দশ বিঘা জমি পরিতোষ মুখুজ্জেকে দিয়ে গেল সেই অবস্থাপন্ন মুখুজ্জেরা।

চোখের ওপর পর্যন্ত ঘোমটা টেনে পরিতোষের স্ত্রী কথা বলেছে অনিমেষের সঙ্গে। ‘কথা দিছিলাম তাদের যে শালগেরামেরে প্রাণ থাকতে অপবিত্র হইতে দিমু না।’

‘মাইয়ারে ঘরে ঢুকতে দিলে কি শালগ্রাম শিলা অপবিত্র হইবে আরতির মা?’ অনিমেষ জিজ্ঞেস করেছিল।

অন্য যে কোনও ধর্মপ্রাণ মহিলাকে এই প্রশ্ন করলে উত্তর পেতে একটুও দেরি হত না। কিন্তু আরতির মা চুপ করে ছিল। শেষে বলল, ‘এ কথা যে আমি ভাবি নাই, তা নয় দাদা। কিন্তু কথা দিছিলাম যে! সেই কথার জন্যই দশ বিঘা জমি পাইছিলাম। সেই জমিই তো পোলাপান লইয়া এতকাল বাঁচাইয়া রাখছে। শুধু শালগ্রাম শিলা নয়, এই বিশ্বাসও তো ধর্ম। জামাইরে কই, আরতিরে কই, একটু মানাইয়া চলতে। যার যার ধর্ম তার তার কাছে থাকুক না।’

দেশ ছেড়ে আসার পর নিজের পেশা ছাড়া আর একটা বিষয় নিয়েই অনিমেষ চিন্তা করেছে। সেটা হল এই উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক। এখানে আসার পিছনেও লুকিয়ে আছে সেরকমই একটা উদ্দেশ্য। নিজের চোখে একবার দেখতে চেয়েছে কেমন আছে বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের হিন্দু ও মুসলমান। সভ্যতার বেশি সময়টা ধরেই ধর্ম সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সব থেকে দামী উপাদান। অবশ্য যাবতীয় আধুনিক তত্ত্ববাগীশরা অত্যন্ত অস্বস্তি নিয়ে বিষয়টাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। আরতির মা বোকা নয় বা অশিক্ষিত নয়। ব্যাপারটা নিজের মতো করে বুঝেছে।

 

পদ্মা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খা, ধলেশ্বরী, এই সমস্ত নদীরা যেন বৃদ্ধ অনিমেষের রক্তে ঢেউ তুলেছে। এই সব নদীর হাওয়া জাহাজের ছাদে এত জোরালো যে সাবির এবং আরতি তাকে দুপাশ থেকে ধরে রেখেছে যাতে সে পড়ে না যায়। নীচে যাবার জন্য অনিমেষ পিছন ফিরল। বলল, ‘আচ্ছা আরতি, হিন্দু রক্ষণশীল ঘরের মেয়ে তুমি, আবার মুসলমানের ঘরও করছ। তোমার উপলব্ধিটা শুনতে চাই। হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে কাকে তোমার সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক মনে হয়?’

আরতি যেন বিষয়টা আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল। বলল, ‘হিন্দুকে।’

অনিমেষ একটু আশ্চর্য হল, বলল ‘কেন?’

আরতি বলল, ‘শুনুন জেঠামশাই, হিন্দুরা যে শুধুই মুসলমানদের প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক তাই নয়, হিন্দুরা নিম্নবর্ণ এবং বর্ণহীনদের ব্যাপারেও সাম্প্রদায়িক। নিম্নবর্ণ এবং বর্ণহীনদের তারা জাতের জন্য ঘৃণা করে। মুসলমানদের ঘৃণা করে ধর্মের কারণে এবং তাদের বিচারে নিচু জাত বলেও।’

অনিমেষ বলল, ‘তোমার বিশ্লেষণ ভাববার মতো। সাবির, এ বিষয়ে তোমার মত কী?’

সাবির বলল, ‘আমি আরতির সঙ্গে একমত নই, কারণ এই উপমহাদেশের মুসলমানেরাও জাতপাত খুব মানে। যে সব মুসলমানের পূর্বপুরুষ স্মরণকালের মধ্যে ধর্মান্তরিত হয়েছে, তাদের সবাই বলে যে তারা হিন্দু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল। এছাড়া আরও অনেক বিষয়ে মুসলমানেরা ঘোরতর এবং হিন্দুদের চেয়ে বেশি কট্টর সাম্প্রদায়িক।’

অনিমেষ বলল, ‘তাহলে শুক-শারির দ্বন্দ্ব এ বিষয়ে মেটেনি। এটাও একটা কো-ইন্সিডেন্ট যে এই ভয়াবহ বিদ্বেষের দিনে তোমরা দুজনেই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে দোষী মনে করছ! হয়তো কোনওকালে আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে বিদ্বেষ কমে আসবে। জয় হোক তোমাদের। সুখী হও তোমরা। চলো নীচে যাই।’

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4881 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. অসাধারণ। এই সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত এই গল্প।

  2. অপূর্ব একটা গল্প… ঘোর লেগে রইল অনিমেষের মতো…

আপনার মতামত...