সিদ্ধার্থ দত্ত
দেয়াল রং করাটা একটা আর্ট। অবশ্য রঙমিস্তিরিরা সেটা যে সবসময় বুঝে করে তা না, রঙ করার পর নানারকম অসঙ্গতি তার চোখে আপনিই ধরা পড়তে থাকে। সেগুলোই টাচ আপ করতে করতে একটা সৌন্দর্য ফুটে বেরোয়। ঝন্টুও তাই। খুব মন দিয়ে ইট ইট ডিজাইনের খাঁজগুলো মেরামত করছিল। ম্যাট ব্রাউন কালারের খাঁজে সাদা রং দিয়ে। হঠাৎ তুলিটা কেমন চোখ মটকে, জিভ ভেংচে ম্যাট ব্রাউনের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। ব্যাপারটা ঝন্টু বুঝে ওঠার আগেই থ্যাপ করে রঙটা লেগে গেল! খানিকটা হকচকিয়ে গিয়ে, “ও ঠিক আছে, পরে মেকাপ করে দেব” ভেবে নিয়ে আবার কাজ শুরু করে।
মেন দেয়ালের লাইল্যাক রঙটা সবে এক কোট লাগানো হয়েছে, চওড়া ব্রাশ দিয়ে সেকেন্ড কোট টানতে টানতে হাতটা ক্লান্ত হয়ে আসে। মইয়ের আগায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে বিড়ি ধরায়। বারবার ওই সাদা ছোপওয়ালা জায়গাটার দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। দুটো অসম রং যেন ঠাট্টার মতো তাকিয়ে আছে। ঝন্টু কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছে না, তার দীর্ঘদিনের কাজ করা হাত এভাবে সাবোতাজ করতে পারে। বিড়িটায় শেষ টান মেরে ফেলে দিয়ে ব্রাশ রেখে তুলিটা হাতে নেয়। দেয়ালের কোণাগুলো টানতে হবে। জলে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে লাইল্যাকের ডিব্বাটায় ডোবায়। এবার খুব সতর্ক হয়ে টানতে থাকে। খানিকটা নিশ্চিন্তও বোধ হয়। রঙের ওপরচড়ানের রিস্কটা নেই। এই সুযোগ! তুলিটা আবার তাকে চোখ মারে, মুখ ভেটকে ঝন্টুর হাত থেকে পিছলে বেরিয়ে গিয়ে সটান আবারও ম্যাট ব্রাউনটাকে ছুঁয়ে মেঝেতে ঠিকরে পড়ে!
ঝন্টু এবার সত্যি সত্যি ভড়কে যায়। আগাপাশতলা ভেবেও বুঝে উঠতে পারে না, আজ এমন কেন হচ্ছে! কাজ থামিয়ে বাড়ির সামনের মাঠে গিয়ে বসে।
–কী রে ব্যাটা, আজ এরকম করছিস কেন? বারবার লোকটাকে নিয়ে খিল্লি করছিস। ব্রাশটা মৃদু ধমক দেয়।
–ধুসস, আজ কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।
–কারণটা কী?
–দেয়ালের কোণাগুলোতে বিচ্ছিরি মাকড়সার ঝুল লেগে আছে।
–সুড়সুড়ি লাগছে? ব্রাশ খিক করে হেসে দেয়।
–একদম হাসবে না। আমি সুড়সুড়ির জ্বালায় মরছি আর উনি রাক্ষুসে গোঁফ নিয়ে হেসে খুন হচ্ছেন!
–তা কী কাজ করতে মন চাইছে মহারানির?
–ছবি আঁকার কাজ। জানো, কী নরম হাতে, কতখানি ভালোবেসে কাজ করে আর্টিস্টরা। তুলিকে কী যত্নটাই না করে, রাখেও ভারী আরামে!
তুলির গলা বুজে আসে কল্পনার আবেশে।