প্রতিভা সরকার
ভাবা যাক, শারদীয়া উৎসবের যাপনস্থলগুলি কমিয়ে আনবার নির্দেশ দিয়েছে শাসক, মানুষের অসুবিধের কারণে। রাস্তা আটকে পুজো চলবে না, আলাদিনের প্রদীপঘষা অট্টালিকা ফুঁড়ে উঠবে না যত্রতত্র। যত দিন যাচ্ছে, তত পাঁচদিন দীর্ঘায়িত হচ্ছে পঁয়ত্রিশ দিনে, বাস ট্রাম নড়ে না। বাঁশের বেড়ায় রাস্তা কণ্টকাকীর্ণ। মানুষের দুর্গতির একশেষ। হাসপাতালগুলো অব্দি ঠ্যাকনা দিয়ে কাজ সারে। অফিসকাছারি স্কুলকলেজ বন্ধ করে সে এক মহা হুলুস্থূল।
দুর্গাপূজা তো অনেক বড় ব্যাপার। রাস্তা বন্ধ করে রথ, উল্টোরথ, রামনবমী, রাখীপূর্ণিমা, হনুমানপুজো কত কিছু যে হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই উৎসবের অর্থনৈতিক শেকড়ের গল্প শুনতে হয়। কিন্তু যতই হুল্লোড়, তামাশা, ছ্যাবলামো হোক না কেন চারপাশে, এটা ঠিক যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অন্যকে আঘাত না করে ধর্মাচরণের অধিকার প্রত্যেক ভারতীয়ের আছে। রাষ্ট্রের তাতে মদত বা বাধা কোনওটাই দেবার কথা নয়।
কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। অর্থনৈতিক কারণে রাস্তাজোড়া দীর্ঘকালীন ধর্মাচরণে সম্মতি দিতে হয় নাকি, কিন্তু সল্টলেকে রাস্তার ধারে আলু পটল বিক্রি করে দিন গুজরান করত যে বেকারবাহিনী তাদের দূর দূর করে তুলে দেওয়া হল সৌন্দর্যায়নের তাগিদে, অথচ রাস্তাজোড়া শনি মন্দিরে বিশাল প্রণামীর বাক্স অটুট থেকে গেল, আর কাঁইনাকাঁনাই কাংস্যধ্বনিতে মন্দিরগাত্রে খোদিত মহাপ্রাণ বিধায়কের সঙ্গে এই মন্দিরের অচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা দূর থেকে দূরান্তর ছড়িয়ে যেতে লাগল।
এই পুজোআচ্চা সম্বচ্ছরের। হনুমান মন্দির, শিব, শনি, জয় মাতাদির মন্দির কী নেই রাস্তা জুড়ে! সল্টলেকে ভাঙাভাঙির সময় এমনকি বটগাছের নীচে সিঁদুরমাখা পাথরও রেখে দেওয়া হয়েছে পরম ভক্তিভরে। ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে গরিবের শেষ সম্বল, তার কিয়স্ক বা মাথার ওপর তেরপলের ছাউনি। অন্য রাজ্যও এর ব্যতিক্রম নয়।
এসবে আমাদের কিছু যায় আসে না, কারণ এগুলো সব সংখ্যাগুরুর ধর্মাচরণ এবং এগুলো হচ্ছে প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় মদতে। কিন্তু ঈদ অথবা প্রতি শুক্রবার কিছু সংখ্যলঘু লোক মিলিতভাবে নতজানু হয়ে ইষ্টের করুণা প্রার্থনা করছে দেখলেই সন্ত্রাসবাদীর মিটিং, খোলা রাস্তায় কেন, ঘেটোতে পাঠানো উচিত, পাবলিক স্পেসের কী অপব্যবহার, ইত্যাদি নানাবিধ প্রতিক্রিয়া আমাদের মনে আসতে থাকে। তারপর তারা যদি হয় তথাকথিত না-ভদ্রলোক, মানে ঠেলাওয়ালা, মুটে, অটো ড্রাইভার, ইত্যাদি তাহলে তো কথাই নেই। তখন আমরা তাড়াতাড়ি পনেরোজনের কমিটি গঠন করি এবং আগামী শুক্রবারের আগে এরকম খোলা মাঠে ক্ষণস্থায়ী প্রার্থনার বাড়বাড়ন্ত রুখতে মাঠের সংখ্যা কমিয়ে আনার কাজটা সেই কমিটিকেই সঁপে দিই।
যেমনটা হচ্ছে গুরগাঁওতে। ছোটখাটো কাজের ধান্দায় ওখানে যারা আসে তাদের মধ্যে মুসলমানরা শুক্রবারের নামাজ পড়ত কয়েকটি খোলা মাঠে অনেকদিন ধরে, কারও কোনও অসুবিধে না করেই। হঠাৎ গত ২০শে এপ্রিল ছ-সাত জন যুবক, পরে পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে তারা কর্মহীন এবং হিন্দুত্ববাদী, হঠাৎ উদয় হয়ে হাততালি মেরে ভাগিয়ে দিল ত্রিশ/চল্লিশজন টুপিপরা মানুষকে যারা সদ্য নতজানু হয়েছিলেন সাদা ফরাসে। ইউটিউবে সে দৃশ্য ধরা আছে। হাততালি এবং তুড়ি মেরে কত তাচ্ছিল্য করে বলা যায়, ‘আপনা গাঁও যা কে নমাজ পড়না’ তা ওই চলমান চিত্র থেকে শিক্ষণীয়। শিক্ষণীয়, প্রচণ্ড অপমান এবং অসহায়ত্ব গিলে ফেলে সেখানে সংখ্যায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও কোনও প্ররোচনায় পা না দেওয়াও।
হরিয়ানা পুলিশ যে ঐ যুবকদের গ্রেপ্তার করে উঠতে পেরেছে তা সন্তোষজনক। কিন্তু তারপরেই উঠে এসেছে সংযুক্ত হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে নতুন এক ধর্মীয় সংস্থার নাম ও হুমকি, যার পরমপিতা স্বয়ং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। তাদের সোচ্চার প্রতিবাদেই ঐ কমিটি গঠন এবং প্রার্থনাস্থলের সংখ্যা কমিয়ে আনার গুরুভার দায়িত্ব সমর্পণ। যারা খেটে খায়, ইতিউতি দৌড়ে বেড়ায়, তারা প্রার্থনা করবার জন্য আরও দূরদূরান্তে ছোটার সময় পাবে? গুরগাঁওয়ের ছ’ লাখ মুসলমানের প্রার্থনার জন্য মাত্র ১৩/১৪টি মসজিদ এবং সমপরিমাণ খোলা জায়গা যে যথেষ্ট নয় সেটা বোঝবার জন্য কি প্রশাসনকে কমিটি বানাতে হয়? গোপন কথাটি রবে না গোপনে, তাই এই নমাজকাণ্ডের মূল বোঝবার জন্য সাত কাণ্ডের দরকার নেই। অতীত ইতিহাসে অল্প ফিরে তাকানো এবং বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় শাসকের মদতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার বিশ্লেষণই যথেষ্ট।
ঐতিহাসিক মেওয়াত প্রদেশের যে অংশ হরিয়ানায় পড়ে তাকে পাঁচটি তহশিলে ভাগ করা হয়। গুরগাঁও, ফিরোজপুর, ঝিরখা, নুহ, পালোয়াল আর রেওয়ারি। অধুনা বিখ্যাত অর্থনৈতিক হাব গুরগাঁও এখন নুহ জেলার কোহিনুর। পূর্বতন মেওয়াতে আরও ছিল রাজস্থানের কিছু অংশ এবং উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলার একটি ছোট অংশ। ইতিহাস বলে মেওয়াতি মুসলমানরা যেমন বীর ছিলেন, তেমনই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে বাদশা বাবরের বিরুদ্ধে হিন্দু রাণা সঙ্গের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন মেওয়াতি শাসক হাসান খান। খানওয়ার যুদ্ধে তাদের চুরমার করে বাবর দিল্লিতে মুঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। পৃথক পৃথক রাজ্য গঠনের পর হরিয়ানাতে এই মেওয়াতি বা মিও মুসলমান প্রধান অঞ্চল হয়ে দাঁড়ায় জেলা নুহ। অর্থাৎ আধুনিক ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র গুরগাঁও গড়ে উঠেছে এই মিও মুসলমানের বসতি দখল করে বা তার নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে।
মিওরা জাত যোদ্ধা। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে তাদের বীরত্ব তুলনাহীন। ছ’ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ দেন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল গুরগাঁওয়ের যে ব্রিট্রিশ কলেক্টর ক্লিফোর্ড, তাকে হত্যার দায়ে খৈরাতি নামে এক মিও মুসলমানকে গ্রামেরই বটগাছ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজ তাদেরই সন্তানসন্ততিদের রুজির দায়ে গুরগাঁও যেতে হয়, থাকতে হয়, কিন্তু জুম্মাবারের নমাজ পড়ার জায়গা তাদের মেলে না!
তারপরেও মিওদের অন্তহীন লড়াই চলে ইংরেজদের হাতের পুতুল আলোয়ারের রাজা জয়সিংহের বিরুদ্ধে ১৯৩১ সালের বিদ্রোহে। মেওয়াটের জমি অনুর্বর। তবু মিওদের গম এবং সর্ষের উৎপাদনের ওপর ভারি কর বসায় রাজা জয়সিংহ। চৌধুরী মহম্মদ ইয়াসিন খানের নেতৃত্বে তাদের বিদ্রোহ দমনের সময় ডিভাইড এন্ড রুলের সোনার কাঠিটি ছোঁয়াতে ভোলেনি উর্বরমস্তিষ্ক ইংরেজ শাসক। রাজাও এই বিদ্রোহকে হিন্দু রাজ্যের বিরুদ্ধে মুসলমান অভ্যুত্থান হিসেবেই বর্ণনা করে। কিন্তু নেহরুর নেতৃত্বে বিনোবা ভাবে এবং কংগ্রেস পার্টি দাঁড়ায় মিওদের পাশে। অত্যাচার এড়াতে চৌধুরী আশ্রয় নিয়েছিলেন জামা মসজিদ সংলগ্ন সি পি আই অফিসে। সেখানে পি সি যোশী তার সঙ্গে গান্ধীজীর সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেন। আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ ও রাজার চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। কিন্তু সুফলা প্রাণদায়ী বৃক্ষের থেকে বিষবৃক্ষের বৃদ্ধি হয় অনেক বেশি ও দ্রুত। ফলে অনেক হিন্দু ধর্মাচারের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও মিওদের ওপর দেশভাগের সময় ধর্মান্ধদের দ্বারা চলেছিল অকথ্য অত্যাচার। তবু গান্ধীজীর আশ্বাসে দেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে ছিল যে মিওরা নতুনভাবে তাদের উত্তরসূরিদের ওপর ধর্মীয় বিভাজনের খাঁড়া নামিয়ে এনেছে “কালা আংরেজ”; ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী শাসককে এই অভিধাতেই ভূষিত করেছেন অধুনা জেলে পচতে থাকা দলিত যুব নেতা চন্দ্রশেখর।
মুসলমান বিদ্বেষ হরিয়ানাতে ঐতিহাসিকভাবেই প্রবল। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার কলঙ্কের বিরুদ্ধে এখনও উচ্চকণ্ঠ মিও মুসলমানেরা। নুহ জেলার গোরক্ষকদের বাড়বাড়ন্ত তাদের বিষণ্ণ করে। গোমাংস না খেলেও তারা কিছু কম মুসলমান থাকবেন না, তাহলে এই বাধ্যবাধকতা কেন! এটাকে তারা দেখেন মেওয়াতি ছত্রিশ ‘বিরাদরি’র (ভাইচারা) মধ্যে বিভাজনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। এই ছত্তিশ বেরাদরিতে মিওদের জায়গা বাইশ নম্বরে।
কিন্তু এই ভাইচারাকে মোটেও প্রশ্রয় দিতে রাজি নয় হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের নেতা ভানিরাম মঙ্গলা হিন্দুস্থান টাইমসে এক ইন্টারভিউতে পরিষ্কার বলেন, ওসব ভাইচারাফারা ছাড়ুন। ওরা (মুসলমানরা) হত্যাকারী। গোমাতা হচ্ছে এক চলমান হাসপাতাল যার নিঃশ্বাসে অক্সিজেন, দুধে অমৃত, প্রস্রাবে ক্যান্সারের ওষুধ! তাকে ওরা হত্যা করে!
গোব্যবসায়ী পহেলু খানের হত্যার পর মিও পঞ্চায়েতে এই প্রস্তাব নেওয়া হয় যে সরকার হয় গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করুক অথবা সারা দেশ জুড়ে গোহত্যা বন্ধে আইন প্রণয়ন করুক। কোনওটাই হয়নি, কারণ গোমাংস রপ্তানি করে ফুলেফেঁপে উঠছে কোন দলের নেতৃবৃন্দ তা আমরা জানি।
শুধু গোরক্ষার নামে খুনজখম নয়, হরিয়ানাতে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। নুহ জেলায় মিও মুসলিমপ্রধান গ্রাম ধিঙ্গান হেরিতে দুটি মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিরিয়ানি ব্যবসায়ীদের হেনস্থা করা হয়েছে। এগুলো খণ্ডচিত্র মাত্র। গোটা হরিয়ানাতেই এই একই চিত্র। তবুও হিন্দু সংঘর্ষ কমিটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হরিয়ানার যে এলাকায় ৫০% মুসলমান আছে সেখানে ছাড়া মুক্ত স্থানে নমাজ পড়া যাবে না। প্রত্যেক শুক্রবার তারা রাস্তায় রাস্তায় টহল দেবে নমাজ রোখার জন্য।
শাসকের তথা স্থানীয় সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের চূড়ান্ত নিদর্শন এই প্রার্থনা বানচালের অপচেষ্টা। হরিয়ানা বিজেপির বিধানসভা জয়ের বন্যায় ছোট ছোট বাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মিও মুসলিম প্রধান তিনটে মাত্র কন্সটিটুয়েন্সি। তারপর থেকেই দেশভাগের ক্ষত কোনওমতে সারিয়ে নেওয়া ধর্মসহিষ্ণু এলাকাটিতে শুরু হল প্রবল ধর্মীয় বিভাজন। সেন্টার অব পলিসি স্টাডিজ নামে আর এস এস অনুগত এক সংস্থা মেওয়াট প্রদেশে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কাল্পনিক হিসেব দাখিল করামাত্র গুরগাঁওয়ের নাম পালটে করা হল গুরুগ্রাম। গুরুগ্রামের খানদানি নাম আর ঝাঁ চকচকে বহিরঙ্গের তলায় চলল নতুন খেলা। আশেপাশের মেওয়াতি গ্রামগুলোতে না খোলা হল স্কুল, হাসপাতাল, না করা হল পিচরাস্তা। পরম্পরাগর্বিত একটা অসাম্প্রদায়িক সম্প্রদায়কে ভাতে মারার চক্রান্ত ফলবতী হয়েছে কিনা বোঝা যাবে গুরগাঁওতে তুচ্ছ কাজ করে পেট চালানো মানুষের ধর্মীয় পরিসংখ্যান নিলে। এমনিতেই হরিয়ানাতে ২০১১ থেকেই হিন্দু ৮৮.২০%, মুসলমান ৫.৮%। তবুও নেটে ছড়িয়ে আছে মণিমুক্তা, কেউ লিখেছে বাংলাদেশের সঙ্গে চক্রান্ত করে মোগলিস্তান বানাবার কাজ এগোচ্ছে দ্রুত। অন্যদের বক্তব্য জন্মহার নিয়ে। যদিও গত সেন্সাসে দেখা গেছে সারা দেশেই ২৯% থেকে এই সম্প্রদায়ের জন্মহারবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২৪%-এ।
এ তো গেল অতীত ইতিহাস এবং আধিপত্যকামী শত্রুতার কথা। বর্তমান আরও নিষ্করুণ, কারণ শাসকের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি, অকারণ হেনস্থায় নিজেদের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং শাইনিং গুরগাঁওয়ের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট। স্থানীয় মুসলমান ছাড়াও ছোটখাটো কাজে পেট চালানোর ধান্দায় এখন স্বাভাবিকভাবেই এখানে জড়ো হয় আর্থসামাজিক কারণে পিছিয়ে পড়া মানবগোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর খাট্টার প্রকাশ্যে খোলা জায়গায় নমাজ পাঠের বিরোধিতা করার পরই সারা শহরে নামাজরত মানুষদের উঠিয়ে দিচ্ছে হাল্লাকারীরা। পুলিশ প্রহরায় নমাজের পর সারে জাঁহা সে আচ্ছা গেয়েও নিস্তার নেই, এখন হিন্দুত্ববাদীদের দাবি মাত্র পাঁচটি জায়গায় নমাজ পড়া যাবে এবং সঙ্গে থাকতে হবে সচিত্র পরিচয়পত্র। আর কোনও মন্দিরের দু কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে নমাজ পড়া নিষিদ্ধ। এরা ঈশ্বরের ধারণাকেও হিন্দু মুসলমানে বিভাজিত করেছে, ঈশ্বর আল্লা আর তাঁর নাম নয়, সবার সুমতি হবার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু কতখানি অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এদেশের সংখ্যালঘুকে তা ভাবলে বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলাই ভালো মনে হবে। গুরগাঁওতে এখন নির্মাণ কার্য চলছে ১,২০০টি সাইটে। নির্মাণশ্রমিকের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষ কাজের খোঁজে আসেন। তাদের তকমা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী বলে। তাই পরিচয়পত্র দেখিয়ে নমাজ পড়তে হবে। আর বাংলা বুলি শুনলে কি রাজস্থানের মতো পুড়িয়ে মারা হবে? অথচ যেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত সেই ওয়াজিরিবাদে খেটে খাওয়া কিছু হিন্দু মুসলমান পরিবার একত্রে থাকে কয়েকবছর ধরে। সাম্প্রদায়িক কোনও অশান্তি ছিল না। তারা স্তম্ভিত, কী করে ছ’ জন মোটরবাইক বাহিত যুবকের এই নামগোত্রহীন এলাকায় নমাজ পণ্ড করে দেওয়া দেশের জাতীয় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে একটি অনামা সদ্য গজানো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অল্প চেষ্টাতেই! আসলে এর পেছনে যে পক্ক মস্তিষ্ক ও দীর্ঘ হাতের খেলা তা শুরুতে কখনওই আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পুরোপুরি বোধগম্য হয় না। যখন হয় তখন বড় দেরি হয়ে যায়।
প্রকাশ্য অপ্রকাশ্যে এ অঞ্চল যে ধর্মীয় মোড়কে ঢেকে যাচ্ছে তা আজ আর লুকোনোর কিছু নেই। যা কিছু অসুন্দর, উচ্ছৃংখল তা থামানোর প্রথম প্রক্রিয়াটা যে সংখ্যাগুরুদের মাধ্যমে শুরু করা যায়, তা ক্ষমতাসীনরা স্বীকার করছে না। আর শান্তশিষ্ট রাষ্ট্রকাঠামোর জন্যও সংখ্যাগুরুদের আচরণ কাম্য পর্যায়ে রাখা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বাংলাদেশ ভারত দুটোই অস্বীকার করছে, বরং রাজনৈতিক সুবিধাবাদের জন্ম নিচ্ছে এসব ক্ষেত্র থেকেই, সবচেয়ে সহজ ক্ষেত্র হচ্ছে ধর্ম।
সহমত দুর্জয়। ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দুটো দেশই।
কার নেতৃত্বের থেকে আমার কাছে এখন যেটা বেশি স্পষ্ট সেটা হচ্ছে কার নেতৃত্বে কখনই নয়।
নেতৃত্বের জায়গাটা তো ভয়ঙ্কর গোলমেলে হয়ে আছে। অস্বীকার করার উপায় নেই।