অভী আচার্য
সেদিন সকালে রামদেবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বাজারে যাওয়ার পথে প্রায়ই যেমন হয়। যোগগুরু নয়, এই রামদেব সন্তোষপুর জোড়াব্রিজ লাইনে রিকশা চালায়। বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জয়নগর লাইনে, সেখানে তার সামান্য একমুঠো জমিজায়গা আছে। বড় ছেলেটা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বাপের কাছে বায়না ধরেছিল একটা মোটরবাইকের। বংশে এত বড় পাশ এর আগে কেউ দেয়নি, অভিভূত বাপ তাই ধারদেনা করে তাকে একটা বাইক কিনে দেয়। ক’মাস না-যেতেই, একদিন কুয়াশার ভোরে, বাইক-সমেত ছেলে একটা দশচাকার ট্রাকের নীচে ঢুকে যায়। আর বেরোয়নি। পরের ছেলেটা ক্লাস এইট, তার পরে দুটো মেয়ে। এ-হেন রামদেব, এখনও বাইক কেনার টাকা শোধ করে উঠতে না-পারা রামদেব, পঞ্চায়েত ভোটের দিন কাকভোরে উঠে ট্রেন ধরে রিকশা চালাতে চলে এসেছে কেন, তা জানতে কৌতূহল হচ্ছিল। প্রথমে ছোট-ছোট উত্তরে, পরে অনতিবিস্তারে রামদেব যা জানায় তার সারমর্ম এইরকম – গ্রামের সবার কাছেই ক’দিন আগে নির্দেশ এসেছিল ভোটকেন্দ্রে না-যাওয়ার, বলা হয়েছিল ভোট নিয়ে ভাবতে হবে না, যথাসময়ে সবার ভোট জায়গামতো পড়ে যাবে। তাতে রামদেবদের তত দুশ্চিন্তা হয়নি, যতটা হল ভোটের আগের রাতের একটা ঘটনায়। সব গ্রামেই যেমন দু’একজন ঘাড়ত্যাড়া লোক থাকে, তেমনি ওদের গ্রামেও ছিল। তাদেরই একজন সম্ভবত নিজের ভোট নিজে দিতে যাওয়ার ব্যাপারে কিঞ্চিৎ বাড়তি আগ্রহ দেখিয়ে থাকবে। সেই অত্যাগ্রহের ফলস্বরূপ ভোটের আগের দিন রাত এগারোটার কিছু পরে কয়েকজন তার বাড়িতে চড়াও হয়। আততায়ীদের মুখে গামছা জড়ানো থাকলেও গৃহস্বামী তাদের গলার আওয়াজ চিনে ফেলায় সমস্যা ঘোরালো হয়ে ওঠে। ঘর থেকে তাকে টেনে বের করে এনে বাঁশপেটা শুরু করার আগেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সে তার বউ-মেয়েকে খিড়কির দরজা দিয়ে বের করে দিতে পেরেছিল। তারা গিয়ে পেছনের ডোবায় গলা-অবধি ডুবিয়ে বসে থাকে। যারা এসেছিল তাদের হাতে সময় কম থাকায় দ্রুত লোকটির ঘরের চালায় আগুন লাগিয়ে, দু’তিনটি হাতবোমা ফাটিয়ে, রাত বারোটার আগেই তারা ফিরে যায়। সেদিন রাতে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামেও পরপর এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। সে খবর কানে আসার পর রামদেব ভোটের দিন গ্রামে থাকার আর কোনও চেষ্টাই করেনি। সকালের প্রথম ট্রেনেই কলকাতা পালিয়ে আসে। বাড়ির অন্যান্যদের বলে আসে সারাদিন দরজায় হুড়কো লাগিয়ে বসে থাকতে।
রামদেবের গল্পের মধ্যে আর যা-ই থাক, নতুনত্ব কিছু নেই। নতুনত্ব বলতে, খবরের কাগজে বা টিভি-র পরদায় এধরনের খবর পড়লে বা শুনলে অপরিচয় এবং দূরত্বজনিত একধরনের নিরাপত্তাবোধ কাজ করে, কিন্তু পরিচিত কারও মুখে সেই একই খবর শুনলে দুশ্চিন্তা একটু বেশি হয় – মনে হয় বিপদটা যেন বা আর একটু কাছে এগিয়ে এল। কিন্তু, সেটুকু বাদ দিলে, এ খবরের মধ্যে এমন কিছু নেই যা গত দু’তিনমাসে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও পরে সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে আমার-আপনার নজরে আসেনি। এমনটা নয় যে, এধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি, এমনও নয় যে ঘরের পাশে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হাতে গোনা কয়েকটি গ্রামই কেবল আক্রান্ত। বস্তুত উপকূলবর্তী জেলাগুলি থেকে উত্তরের জলপাইগুড়ি-কোচবিহার, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা-নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড-ঘেঁষা বীরভুম-পুরুলিয়া-বাঁকুড়া – সমস্ত জেলা থেকেই প্রায় একইধরনের প্রাক্-নির্বাচনী সন্ত্রাসের ছবি উঠে এসেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রচারের সময়, ভোটের দিনে, এমনকী গণনার সময়ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে – ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনির চোখের সামনেই যথেচ্ছ ছাপ্পাভোট পড়েছে, বুথের পর বুথে প্রকাশ্যে ভোট লুঠ হয়েছে, ব্যালটবাক্স ভাঙচুর হয়েছে, ভোটেরর দিন রাজ্যে এ-পক্ষ ও-পক্ষ মিলিয়ে জনাপঁচিশেকের প্রাণ গিয়েছে, গণনাকেন্দ্রের মধ্যেই ছাপ্পাভোট দেওয়ার অভিযোগ এসেছে, পুকুর থেকে তাড়াতাড়া ব্যালটপেপার উদ্ধার হয়েছে। গোলমাল পাকানোর ঘটনায় কোনও একপক্ষকে সর্বত্র দায়ী করারও সুযোগ নেই, যদিও অভিযোগের সিংহভাগই শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গিয়েছে। পুলিশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে হাতের পুতুলে পরিণত করে, রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের আবহে ভোট করিয়ে, পঞ্চায়েতব্যবস্থাকে বিরোধীশূন্য করে ফেলার জন্য বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি একযোগে শাসকদলকে দায়ী করেছে; যদিও স্থানীয় স্তরে যেখানে বিজেপি-র হাত কিঞ্চিৎ শক্ত সেখানে তাদের বিরুদ্ধেও গোলমাল পাকানোর অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে একাধিক। বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরে শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, রাজ্যজুড়ে উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ চলেছে তা বিরোধীদের না-পসন্দ – সে-কারণেই তারা নাকি তৃণমূলের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে উদ্গ্রীব। যুক্তি হিসেবে তা খুবই ছেঁদো সন্দেহ নেই, কিন্তু দিনের পর দিন গ্রামের কনিষ্ঠতম নেতা থেকে শুরু করে দল ও সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব একই কথা বলে গিয়ে বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। উন্নয়নের বিরোধিতাই যদি বিরোধীশিবিরের একমাত্র নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা হবে, তা হলে ভোটদাতারা তা বিশ্বাসই বা করবেন কেন, এবং উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে আসা নির্বাচকমণ্ডলীকে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের গুণ্ডারা ঘরে বসিয়েই বা কেন রাখতে চাইবেন, সেসব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
রামদেবও আমার সঙ্গে একমত যে, ভোটে সন্ত্রাস ও হিংসার ছবি আমরা যে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই প্রথম দেখলাম তা নয়। লালপার্টিকে ভোট দিতে না-চাওয়ায় পুকুরের পর পুকুরে রাতের অন্ধকারে ফলিডল ঢেলে দিয়ে গিয়েছে কে বা কারা, আর পরদিন ভোর না-হতে সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে জলের ওপর, এ দৃশ্য রামদেবরা অনেকবার দেখেছে। দেখেছে বাড়ির চালা, ধানের মরাই আগুনে পুড়তে। দেখেছে নদীবাঁধ কেটে চাষের জমিতে রাতারাতি নোনা জল ঢুকিয়ে ফসল নষ্ট করে দিতে। ভোটে এসব হয়, ওরা জানে। মারদাঙ্গা হয়, বোমাবাজি হয়, বডিও পড়ে। কিন্তু সেসব সত্ত্বেও এবারের ভোটটা যেন অনেকটাই আলাদা। কেন, তা নিয়ে রামদেবের ব্যাখ্যা খুব পরিষ্কার। কীরকম? “এবার তো আমাদের ওদিকে মারপিটটা সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে হয়নি, হয়েছে ওদের নিজেদেরই মধ্যে। গ্রামের দিকে সিপিএমের এখন তো কিছু আর অবশিষ্ট নাই। না আছে লোকবল, না আছে ক্ষমতা। গুড় না-থাকলে পিঁপড়ে আসবে কেন? গত সাতবছরে ঘাসফুল পার্টি ওদের একেবারে মাজা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু এখন ঘাসফুলের মধ্যেই অনেকগুলো দল। ওপর থেকে দেখলে বুঝবেন না। কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখেন, গ্রামে যতগুলো নেতা ততগুলো দল। আর সকলেরই দরকার পয়সা। পঞ্চায়েতে তো এখন অনেক টাকা। ওটা তাই কবজায় রাখা দরকার।” এ-পর্যন্ত বলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি হাসে রামদেব। যেন উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছে এমন মুখ করে বলে, “ভাঙড়ে দেখলেন না কী হল?”
বুঝতে পারি, দিন পালটাচ্ছে। রামদেবরা এখন কেবল আর ছায়াসুনিবিড় গ্রামের বাসিন্দা নয়, তারাও দেশ-সংসারের খবরাখবর রাখে। পেটের দায়ে, নিতান্ত বাধ্য হয়েই রাখে। না-রেখে আর উপায় নেই বলে রাখে। প্রতিদিন সকালের ট্রেনে শহরে আসে রিকশা চালাতে, রাতে বাড়ি যায়। চাষের ক’দিন আর ধান কাটার সময়টা নিজের জমিতে খাটে। খবর না-রাখলে ওদের চলে না। প্রসঙ্গ পালটে জিগ্যেস করি, আর কী কী অন্যরকম দেখলে এবারের ভোটে? খানিক কিন্তু-কিন্তু করে সে জানায়, “এবার যেন বড্ড বেশি মরিয়া লাগল ওদের দেখে, জানেন…”
মরিয়া? কেন? উত্তর দিতে গিয়ে যেন একটু চিন্তিত দেখায় রামদেবকে। “আমরাও সেটাই ভাবছি। এত মরিয়া কেন? সরকার ওদের। পুলিশ ওদের। ব্লক অফিসের সরকারি বাবুরা ওদের। টাকাপয়সা সব ওদের। ভোটে জিততে যা যা লাগে সব ওদের। তা হলে এত মরিয়া কেন?”
বলার চেষ্টা করি, এইসব যাতে ওদেরই হাতে থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্যই হয়তো। রামদেবের চোখমুখই বলে দেয়, আমার উত্তরটার সঙ্গে ও একমত হতে পারছে না। “কী জানি। আপনারা শহরে থাকেন তো, আপনাদের দেখার চোখ আলাদা। আমরা গ্রামের লোকেরা অন্যভাবে দেখি। ওরা যে পঞ্চায়েত ভোটে এমনিতেও জিতবে তা কি ওরা জানত না? খুব জানত। ওদের মেরে জেতার মতো দম আর আছেটা কার? কিন্তু তাও ওরা যে এত মরিয়া হয়ে উঠল তার কারণ, নিজেদের লোকজনেদেরই ওরা আর বিশ্বাস করতে পারছে না। যদি টাকার থলি আমার পালটা গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়, সেটা তো কোনও কাজের কথা হতে পারে না। তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ফতোয়া দিয়েছেন, একশো শতাংশ সিটেই জিততে হবে। সামনের বছর লোকসভা ভোট, তার দু’বছর পর বিধানসভার। তার আগে স্থানীয় স্তরে পয়সা যাতে হাতে থাকে তা নিশ্চিত করার এটাই শেষ সুযোগ। এই টাকা তো ভোটের বাজারে খাটবে। একে দিতে হবে, তাকে দিতে হবে। জেলায়-জেলায় মেলা করাতে হবে। ক্লাবকে দিতে হবে। উনি তাই দেখছেন, টাকা যেন দলের হাতে থাকে, তা সে বাঁ পকেটেই থাকুক বা ডান পকেটে বা পাছ-পকেটে। আর আমার এলাকায় আমি দেখছি, আমার এলাকায় টাকা যেন আমার হাতেই থাকে। বুঝলেন? সেই জন্যই এত বেশি মারপিট এবার। যেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর হাতেই ক্ষমতা মোটামুটি সমান, সেখানে মারপিট বেশি। মারো, আর তারপর বলে দাও সিপিএম বা বিজেপি মারছে। হয়ে গেল। পুলিশ তো ওদের হাতে। বেছে বেছে কেস দেবে। দেখলেন না, ভাঙড়ে এতদিন ধরে গোলমাল চলছে অথচ আরাবুলের গায়ে হাত দেওয়ারও ক্ষমতা ছিল না পুলিশের, আর যেই মুখ্যমন্ত্রী বললেন অমনিই রাতারাতি ভেতরে ঢুকে গেল। বীরভুমেও দেখুন একই ঘটনা। মাঝখানে একবার কয়েকদিনের জন্য অনুব্রতর ওপর রাগ হয়েছিল দিদির। সভা করে সকলের সামনে বকে দিলেন। কিন্তু ভোটের সময় বিজেপি-কে আটকাতে ওখানে অনুব্রতকে দিদির দরকার। অতএব সব দেখেও চোখ উলটে থাকলেন। আর অনুব্রতর পেটোয়া গোষ্ঠীর সবক’টা লাইন দিয়ে জিতে বেরিয়ে এল।”
কিন্তু মালদা, মুর্শিদাবাদ? সেখানে তো কংগ্রেসের গড় ধসিয়ে জিতেছে তৃণমূল। বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-বর্ধমান একসময়ে সিপিএমের খাসতালুক ছিল। সেসব জায়গায় বিরোধীরা স্থানীয় স্তরে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারল না কেন? আমার প্রশ্ন শুনে একগাল হাসে রামদেব। “দেখেন, ওদের অঙ্ক খুব পরিষ্কার। কোত্থাও কোনও বিরোধী থাকতে দেওয়া চলবে না। মালদা-মুর্শিদাবাদে টাকা দিয়ে কংগ্রেসের মাথাগুলোকে কিনে নিয়েছে। আর মাথা চলে গেলে সাধারণ কর্মীদের ভাঙিয়ে নেওয়া কি কোনও ব্যাপার? দেখেননি, রাস্তা দিয়ে যখন ছাগলের পাল নিয়ে যায়, লোকটা শুধু পালের সামনেরটাকে সোজা রাখে। বাকিগুলো আপনিই সোজা থাকে…” নিজের রসিকতায় নিজেই খুব খুশি হয়ে ওঠে রামদেব।
কিন্তু সিপিএম? তাদের এই ভরাডুবির কারণ? তাদেরও কি টাকা দিয়ে কিনে নিল? “কিছুটা তো বটেই। তা বাদে, ধরেন, লালপার্টির সঙ্গে গ্রামের দিকে মানুষের যে যোগাযোগটা ছিল, সেটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আপনার মনে আছে, একসময় এমন ছিল, গ্রামে প্রত্যেকটা লোকের হাঁড়ির খবর জানত সিপিএম। ভোটের একমাস আগে পার্টি অফিসে বসে চোখ বুজে বলে দিতে পারত, অমুক বুথের অমুক পার্টে ঠিক কত লিড পাবে। ভোটের ফল বেরোলে দেখা যেত হুবহু মিলে গিয়েছে। অথচ গত কয়েকটা ভোটে নেতারা বলতেই পারেননি রেজাল্ট কী হবে। চোখের সামনে জেলার পর জেলায় গ্রামস্তরের সংগঠন ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, সেটাও বুঝতে পারেননি। এখন কান্নাকাটি করে আর কী হবে?”
বাজারের সামনে রিকশা লাগিয়ে প্যাডেল থেকে নেমে দাঁড়ায় রামদেব। ভাড়ার পয়সা গুনে নিয়ে পকেটে ঢোকায়। নামতে গিয়ে মনে পড়ে, আরও একটা প্রশ্ন বাকি রয়ে গেল। জিগ্যেস করি, তারপর এখন কী ভাবছ তোমরা? এভাবে পালিয়ে পালিয়ে কতদিন চলবে? উত্তর দিতে গিয়ে আবারও হাসে রামদেব। বলে, “জোরের জিনিস বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। কেন জানেন? জোরের গোড়ায় থাকে ভয়। তার শিকড় মাটিতে বেশিদূর যায় না। লালপার্টি যতদিন মানুষের সঙ্গে ছিল, ঠিক ছিল। তারপর যখন ওরা জবরদস্তির রাস্তা নিল, কমজোরি হয়ে গেল। তৃণমূল পার্টি শুরু থেকেই সেই রাস্তা নিয়েছে। ভয় দেখিয়ে লোকের মুখ বন্ধ করে দেশ চালানোর রাস্তা। এ রাস্তা যে বেশিদূর যাবে না সে খবর ওদের কাছে নাই। হঠাৎ একদিন দেখবে পথ ফুরিয়ে গিয়েছে। সে দিন খুব দূর নয়।”
রিকশা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যেতে গিয়েও রামদেব আবার দাঁড়িয়ে পড়ে। একটু দূর থেকে চেঁচিয়ে বলে, “গ্রামের মানুষ এমনিতে ঠাণ্ডা, জানেন। তারা সয়, সয়। তারপর যেদিন টের পায় আর পিছনে যাওয়ার পথ নাই, তখন রাতারাতি উলটে দেয়। যে শেখে সে শেখে। যে শেখে না, সে শেখে না…”
ঘামে পিঠের সঙ্গে লেপ্টে থাকা রামদেবের ফতুয়াটা ভিড়ে হারিয়ে যায়। আমি বাজারে ঢুকে পড়ি…