শ্যামলী আচার্য
পর্ব-১
কুড়ি তলার উপর। ১৮৩ নম্বর ঘর। প্যারিসে এটাই ছিল আমাদের ঠিকানা। তিন রাতের আস্তানা আমাদের। তিন রাত তিন দিন। এমেরিটাসের ফ্লাইটে চড়ার সময়ও অত উত্তেজনা হয়নি, যতটা গিলে ফেলতে হল এই কুড়ি তলার উপরে দাঁড়িয়ে। নিজের অজান্তেই গায়ে দু’তিন বার চিমটি কাটি। আমিই তো? সেই আমি? রথতলা গভর্নমেন্ট কোয়ার্টারে বসে ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে যে গোগ্রাসে গিলত, “ছবির দেশে, কবিতার দেশে”?
সম্ভবত আমি তখন নবম শ্রেণি। সেই কোন ছেলেমানুষ বয়সে ফরাসি দেশ আর ফরাসি সাহিত্য নিয়ে আগ্রহের শুরুয়াত। বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদে শার্ল বোদলেয়ারের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা। আর সুনীলের প্রচুর অনুবাদ। অন্য দেশের কবিতা। আর সেই তখন থেকেই কুঁজোর চিৎ হয়ে শোবার শখ। যদি কোনও দিন! যদি যেতে পারি কখনও।
শেষ পর্যন্ত বেড়ালের ভাগ্যেও তো শিকে-টিকে ছিঁড়ে পড়ে। তাই না! এবারে বইটি সঙ্গে করে নিয়েই এসেছি। মনে পড়বে, সে ছিল একদিন আমাদের যৌবনে…
আম্মো প্যারিসে। প্যারিস-ওরলি এয়ারপোর্টে। ভাবা যায়!
ঘরে বসেই পৃথিবীর মানচিত্র এখন গুগলজেঠুর জিম্মায়। হাতের ইঁদুরের পেটে চাপ দিলেই সে চট করে চোখের সামনে মেলে ধরে Avenue de Flandre, 75019, Paris, France… এখানেই AIRBNB-র আস্তানা। আগেভাগেই ছক তৈরি করেছিলাম। দেখে নিয়েছিলাম ঘরের পাশে Crime’e নামক মেট্রো স্টেশন। বং উচ্চারণে তাকে যতবার বলি “কৃমি”, সদ্য ফরাসি ভাষার ব্যঞ্জনবর্ণ শেখা কন্যা চেঁচিয়ে শুধরে দেন– কৃমি নয়, কৃমে! এই মেট্রো স্টেশনটির অবস্থান-নৈকট্যে কী যে উপকৃত হয়েছি আমরা! প্রতি চার মিনিট অন্তর ট্রেন চলছে। কোথায় চলছে, কতদূর যাবে সে ট্রেন, তার জন্য স্টেশনেই আপনার হাতে একটি ম্যাপ ধরিয়ে দেবেন টিকিট কাউন্টারের রাশভারি কোনও সাদা-কালো-বাদামী কর্মী। লেখাও রয়েছে সর্বত্র। স্টেশনের চত্বরে, ট্রেনের অন্দরে, যেদিকেই চাই, সেদিকেই পথ-নির্দেশ। পথ এখানে হাতছানি দিয়ে ডাকে। যেতেই হবে। চরৈবেতি।
রবিবার সকালেই স্বপ্নের দেশে অবতরণ। হাঁ করে গিলে নেওয়া হাভাতের মতো। একটাই মন্তর– যেথায় যাহা দেখিবে, মগজের স্মৃতিকোষে দাও ঠাঁই। দুপুরে ল্যুভর মিউজিয়মের টিকিট কাটা রয়েছে। সেখানে বাড়ি থেকে মেট্রোয় ২৩ মিনিট। টালিগঞ্জ থেকে এসপ্ল্যানেডেও পৌঁছইনি কোনদিন এত তাড়াতাড়ি। Palais Royal Musee’ du Louvre…. এহেন নামের একটি ঐতিহাসিক ইস্টিশনে নেমেই চটাপট সেলফি। কে জানে, কখন কী ফসকে যায়!
মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে শুধু মাটির ওপরে ওঠার অপেক্ষা। এক লহমায় চোখের সামনে ধাঁ করে খুলে যাবে স্বপনপুরীর দরজা। ল্যুভর প্রাসাদ। সকলেই জানেন এই ল্যুভর প্রাসাদেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এক মিউজিয়ম। যেখানে প্রতি মুহূর্তে চোখের সামনে পরতে পরতে খুলে যাবে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সব ছবি আর ভাস্কর্য। একদিনে বা একবেলায় কোনওভাবেই যা দেখা শেষ হবে না। দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরি যে দুর্গটি ছিল পঞ্চম চার্লস আর তার পরবর্তীতে দ্বিতীয় ফিলিপের (ফিলিপ অগাস্টাস) রাজপ্রাসাদ-কাম-সংগ্রহশালা, সেটির সামনে একটি কাচের পিরামিড ঝলসে উঠে দঁড়িয়ে পড়ে এই তো সেদিন। ১৯৮৯তে। তার গায়ে ঠিকরে পড়া রোদের টুকরো চোখে নিয়ে ছুটতে থাকি এক গ্যালারি থেকে অন্য গ্যালারিতে। ১৯৪৮-এর আগে পর্যন্ত, তিন লক্ষেরও বেশি কাজের সম্ভার কী পরম যত্নে! দর্শকের চোখের আরাম আর মনের প্রশান্তির জন্য খোলা রয়েছে তার মাত্র ৩৫,০০০। তার দশ শতাংশ দেখতে পেরেছি কি? ওই মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময়ে? যাঃ। তা আার হয় নাকি! শুধু ল্যুভর ঘুরে ঘুরেই কেটে যেতে পারে সাত-দশ দিন।
ল্যুভরের ছাদ
ফরাসি বিপ্লবের সময়ই ল্যুভর সর্বসাধারণের। ১৭৯৩-র ১০ আগস্ট থেকে সপ্তাহের তিন দিন সাধারণ দর্শকের প্রবেশের অধিকার, তখন ছিল ৫৩৭টি ছবি আর ১৮৪টি স্থাপত্য। নেপোলিয়ন তাঁর নিজের নামে এইটিকে “মিউজি নেপোলিয়ন” বলে দেগে দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু, ওই যে, ইতিহাস! সে যে কাকে কখন অমর করে! নেপোলিয়নের পতন এবং ল্যুভর আবার তার স্বমহিমায়। টানাপোড়েন তো ছিলই। গৃহযুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ– পৃথিবী জুড়ে রণডঙ্কা যতই বাজুক, এই সম্ভার থেকেছে অক্ষত। কোনও অবস্থাতেই সামান্য আঁচড় পড়েনি ভাস্কর্য-স্থাপত্য-চিত্রকলার গায়ে। সময়ের ধুলো সরিয়ে তারা সকলেই আজও দৃপ্ত, ঝকঝকে, ঝলমলে।
“PSYCHE REVIVED BY CUPID’S KISS” — নিওক্যাসিকাল স্থাপত্যের মাস্টারপিস (Antonio Canova)
সেই মোনালিসা
নিওক্লাসিকাল স্থাপত্যের এক একটি মাস্টারপিস দেখে শিউরে উঠি। আন্তোনিও কানোভার “Psyche Revived by Cupid’s Kiss” যেমন, এখান থেকেই সূত্রপাত রোম্যান্টিসিজম আন্দোলনের। প্রাচীন গ্রিসের প্রেম-সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতে বা ভেনাসকে না দেখে, দেবী আথেনার মূর্তির ছবি না তুলে, দা ভিঞ্চির মোনালিসার সামনে চাট্টি গ্রুপ ফোটো না তুলে যে ব্যক্তি ল্যুভর থেকে ফিরে আসেন, তিনি আর যাই হোন, মানুষ নন। আমি সেই তাবৎ হ্যাংলার দলে, যারা মোনালিসা দেখার জন্য আদেখলামো করে। অবশ্য দেখে বেশ হতাশ লাগে! এইটুকু পুঁচকে ছবি! আর তাতেই কেঁপে গেল তামাম পৃথিবী! অথচ ১৮৩০-এ দেলাক্রোয়ের আঁকা পোলিটিক্যাল পোস্টার “লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল” তো এখনও উষ্ণ রক্তপ্রবাহে। মাইকেল এঞ্জেলোর “ডাইং স্লেভ” দেখেও বিস্ময়ে, ভ্রমি। ডাইনে-বাঁয়ে কখনও ছবি, কখনও স্থাপত্য। কখনও রোমান, কখনও গ্রিক। মিউজিয়মের আটটি দপ্তরে কখনও মিশর, কখনও ইসলামিক। কী দেখবেন, কেন দেখবেন তার ছানবিন আগেভাগে করে ফেলাই ভাল।
ভেনাস
খ্রিস্টপূর্ব ১৯০-২২০, যুদ্ধজয়ের গ্রিক দেবীর মূর্তি দাঁড়ানো এক জাহাজের আঙিনায়। ১৮ ফুট উচ্চতায় এই Winged Victory of Samothrace এখন ল্যুভরের স্থায়ী সম্পদ। আশ্চর্যের বিষয়, ডানামেলা দেবীমূর্তির মাথাটি বরাবর নিরুদ্দেশ। মুণ্ডহীন কণিষ্কের কথাই মনে পড়ে যায়!
মাথাটা তাজ্ঝিম-মাজ্ঝিম করতে শুরু করার আগেই ছিটকে বেরোই। ঘড়িতে তখন প্রায় ছ’টা। ল্যুভর মিউজিয়ম থেকে এমনিতেই এই সময় বেরিয়ে যেতে হবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও। বেরোলেই বুদবুদের খেলা দেখায় কেউ। কেউ নিয়ে আসে এক ইউরোয় পাঁচটি আইফেল টাওয়ার। ছোটখাটো। রংচঙে।
শ্যেন নদীর ধার ঘেঁষে চমৎকার চওড়া রাস্তা। রবিবারের জমজমাট বিকেলে অলস হেঁটে যাওয়া। টুকটাক আড্ডা। ব্রিজ পেরিয়েই ওপারে মিউজি ড’রসে। সেখানেও একবেলা কাটানোর কথা। সাইকেল চলে, গড়গড়িয়ে চলে রোলিং স্কেট। আমাদের অনভ্যস্ত পায়ে টান ধরে।
সেদিনের মতো ল্যুভরের ছবিতেই ভরে যায় ক্যামেরা।
আবার কালকের অপেক্ষা।
পর্ব-২
আইফেল টাওয়ার যদি হয় প্যারিসের অবশ্যদ্রষ্টব্য, মঁমার্ত না যাওয়া তাহলে সীমাহীন অপরাধ। একরকম পাপ। যে পাপের জন্য সাত জন্ম টানা ভুগতে হতে পারে। আমার অন্তত সে’রকমই বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের জোরেই সক্কাল সক্কাল মেট্রোয় উঠে পড়া।
সাক্রে ক্যুর ব্যাসিলিকা– এর চারিদিকেই মঁমার্ত অঞ্চল
অঁভের স্টেশনে পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। স্টেশনে নেমেই সামনে যে বিরাট অঞ্চল থরে থরে রঙে সাজানো, গলির দু’পাশে হরেক পসরা, ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া সাক্রে-কুর ব্যাসিলিকায়, সেই সম্পূর্ণ অঞ্চল জুড়েই মঁমার্ত। কলকাতা বইমেলার মধ্যে ছবি-কবিতা-গানের চারণভূমির ধারণা এসে পৌঁছেছিল সেই ছবির দেশ, সেই কবিতার দেশ থেকেই। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ছবি-কবিতা-গান এখানে হাত ধরাধরি করে হাঁটে-খায়-কথা বলে। শিল্পরসিক খুঁজে বেড়ান মিউজি দ’ আর্ট নেইফ ম্যাক্স ফোর্নি, মঁমার্তের নিজস্ব মিউজিয়মের গ্যালারি, সুররিয়ালিস্ট শিল্পী সালভাদোর দালির মিউজিয়ম। অনেক উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক সাক্রে-কুর চার্চের চারিদিকে নানান রাস্তায় ছড়ানো পিয়ানো-বার। প্লেস দে তেরত্রে অঞ্চলে হেঁটে হেঁটে পৌঁছলে শুধু রঙের মেলা। যেদিকে তাকাই, ফুটপাথে ছবি আঁকার সরঞ্জাম সাজিয়ে বসেছেন নানা বয়সের শিল্পী। খোলা আকাশের নিচে এত চমৎকার আর্ট গ্যালারির আশেপাশে ভাল করে তাকালেই নজরে পড়বে অষ্টাদশ শতকে তৈরি হওয়া একের পর এক বাড়িঘর। কোনওটি এখন রেস্তোঁরা, কোনওটি ক্যাফে। খাবারদাবারের তুমুল সমারোহ। বাড়িতে তৈরি টাটকা চকোলেট-ক্রিম-চেরি-ওয়াইন তো আছেই। এই রাস্তার প্রতিটি পাথরে জমানো রয়েছে বিশিষ্ট কোনও শিল্পীর পায়ের ছাপ। দেওয়ালে দেওয়ালে মনের খেয়ালে চক-খড়ি আর রং-তুলির স্বাধীন আঁচড়। এদিকে সেদিকে আপন মনে গিটার-বেহালার মূর্ছনার রেশ মনে জেগে থাকে। ক্যামেরার শাটার ক্লান্ত হয়। কিন্তু মগজের ধূসর কোষেরাও ততক্ষণে চনমনে।
মঁমার্ত মিউজিয়ম
কয়েক শতক আগে, মঁমার্তের চওক তখনও প্যারিস শহরের মধ্যে ঢোকার ছাড়পত্র পায়নি, সে কৌলীন্য অর্জন নিয়ে তার তেমন কোনও মাথাব্যথাও ছিল না। মঁমার্ত তখনও আত্মগরিমায় ঝলমলে। এখনও তাই। জীবন আর শিল্পযাপন এখানে একাকার। পথের ধারে একটা ছোট্ট টুলে বসে পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন বাজিয়ে চলেছেন যে হাসিমুখ বৃদ্ধ, দালির মিউজিয়মের বাইরে গিটার আর বেহালার যুগলবন্দিতে ব্যস্ত যে দুজন অসমবয়সী মানুষ, সুরের সঙ্গে তাঁদের নিত্য ঘরবসত। বিহ্বল হয়ে দাঁড়াই। আহা, কী দেখিলাম! জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না।
ফুটপাথে বসে আঁকছেন মগ্ন শিল্পী
পর্ব-৩
মঁমার্ত থেকে আইফেল টাওয়ারের দিকে যাবার বহু রাস্তা। মঁমার্ত’র মধ্যেকার ছোটখাটো অলিগলি ঘুরে ক্লান্ত। নিউমার্কেট-সুলভ সে অঞ্চলে নানান দোকানের ভিড়। হরেক জিনিসের হাতছানি। স্কুল-কলেজ-অফিস-আত্মীয়-পরিজনের কথা একে একে মনে করে ততক্ষণে ব্যাগ বোঝাই টুকিটাকি উপহারে। সাক্রে-কুর ব্যাসিলিকার দিকে অপলক তাকিয়ে নিই শেষবার। ক্রিমে ডোবানো রসালো চেরিতে গলা ভিজিয়ে দিলখুশ। ঝোলায় একটি রেড ওয়াইনের বোতল ভি মজুত। দিলদরিয়া মেজাজে এবার বাসেই উঠি বরং। কাছাকাছি স্টপের নাম বোধহয় Clichy-Caulaincourt… বেশ ক্লিশে শোনায়। বাস প্রচুর। তার বহু রুট, অসংখ্য নম্বর। উঠবে কোনটিতে, আগেভাগে জেনে নেওয়াই ভাল। ম্যাপ মজুত থাকলে সুবিধে, অন্যথায় প্রতিটি বাসস্টপে বাঁধানো ম্যাপ এবং প্রতিটি মেট্রো স্টেশনে ছাপানো ম্যাপ। বিলকুল ফ্রি। বাসের টিকিট কাটতে হলে মেট্রো স্টেশনে, অর্থাৎ পাতালের গর্তে নামো, টিকিট কাটো। অন্যথায় বাসে উঠে টিকিট কাটলে ঢের বেশি গুনাগার! কী আশ্চর্য! তবে আটঘাট বেঁধে গেলে ‘প্যারিস পাস’ কিনে চড়ে যাওয়া যায় অনন্ত পথ। বাসে, ট্রেনে, মিউজিয়মে– বহু ক্ষেত্রেই প্রচুর ছাড় দেয় এই পাস। আমাদের নিজের প্ল্যানে সেইভাবে ঢুকে পড়েনি কোনও পাস– পাশাপাশি চলেছি। কোথাও তো মিলবে– সব পথ এসে– সেই আশায়।
বাস কখন আসবে তার জন্য মাঝেমধ্যে ঘাড় উঁচিয়ে দেখে নেওয়া ডিজিটাল বোর্ড। সব সুবিধে মজুত। ঠান্ডা বাসে উঠলেই ঘুম-ঘুম ক্লাসরুম। পাশে খোলা, না থুড়ি, বন্ধ জানালা! ডাকছে আমাকে… চিরকেলে হাঁ-মুখো স্বভাব আমার। যা পাই, যা দেখি, সব গিলি। গিলতে গিলতেই তাকিয়ে দেখি “মুল্যা রুঁজ”। আহাহা! উনবিংশ শতকের সেই মোহনিয়া শুরুয়াত।
Welcome bohemians and aristocrats, boulevardiers and mademoiselles to the MOULIN ROUGE!
স্পষ্ট শুনতে পেলাম যেন!
বাস থেকে প্রায় ঝাঁপিয়ে ‘ওরে চল চল নেমে পড়ি’। কেন নামি? কোথায় নামি? এইযযাঃ। ভুলে নেমে পড়েছি যে! এ তো আইফেল নয়। আরও ঢের দেরি যে! ই বাবা! কী হবে এবার? হবে আবার কী? পরের বাসের জন্য দাঁইড়্যে থাকো একন। গাঁইয়া কোথাকার। কত্তবার বলিচি, ওই হাঁপানা মুক করে চেইয়ে থেকো না! তা কে শোনে কার কতা! কত্তা-গিন্নির গালবাদ্যি শুরু করবে শুরু করো। ফোকটে যে নেমে পড়লুম আরেক রাস্তার মোড়ে, আরও শব্দ, গন্ধ, দোকান-পাট, মানুষ-জন। আরও তো খানিকক্ষণ কাটিয়ে গেলাম। কোথাও তো মনে হয়, এ পথে আমি যে… গেছি বারবার।
পরের বাস ক্ষণিক দেরিতে। ততক্ষণ ইধার-উধার ঘাড় ঘুরিয়ে হর্ম্যরাজি দেখেশুনে মোহিত। বাস আসে। উঠি। একই পথ। শুধু তাড়া আছে খানিক। আইফেলের চূড়ায় পৌঁছনোর টিকিট কাটা সাড়ে তিনটেয়। ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে এগোয়। উদ্বেগ বাড়ে। পরের বাস আসে। আঃ। নিশ্চিন্ত!
ধুত। ‘নিশ্চিন্ত’ শব্দটা ওই কিছুক্ষণ সাথ দেয়নি। বাস কিছুদূর গিয়ে সুদৃশ্য মাইক্রোফোন মারফত অপূর্ব ফরাসি ভাষায় সুললিত বামাকণ্ঠে জানিয়ে দেয়, নাঃ। এই বাস আজ আর যাবেনিকো। সামনে মিছিল। রাস্তা বন্ধ। এখানেও? হা ভগবান। এবার কী হবে? মেট্রো আছে না? চালাও পানসি আইফেল টাওয়ার! মেট্রোর গর্তে নামতে যাই… চমকে চেয়ে দেখি, ও মা! ওই তো রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে “আর্ক দ্য ট্রায়াম্ফ”! আমার রিফ্লেক্স চিরকাল জঙ্গলের মাঝে তুঙ্গে থাকে। খামখেয়ালি আরণ্যকদের ছবি তুলতে হয় যে! প্যারিসের রাস্তাতেও সে এত প্রখর হয়ে পড়ল। ভাবা যায় না। একটুও ব্যস্ত না হয়ে কিলিক করে ছবি তুলে ফেলে। “আর্ক দ্য ট্রায়াম্ফ”। আর কি কখনও কবে, এমন সুযোগ হবে!
আইফেল টাওয়ার এবং সেখান থেকে দেখা প্যারিস শহর
আবার ছুট ছুট ছুট। বির-হাকেইম ইস্টিশনটি আইফেল টাওয়ারের কোলের কাছে। মাটির তলা ফুঁড়ে দোতলা স্টেশনে ওঠা মাত্র দুই টিকিট-চেকারের উদয়! ভাবি, একবার চেয়ে বলি, এতদিন কোথায় ছিলেন? তাঁরা পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে সুললিত কণ্ঠে– আরে দূর ছাই, কীসের কী! এক মহিলা, এক পুরুষ চেকার কঠোরভাবে খচাখচ টিকিট মেলান। আমার টিকিট বার করে দেখাই। হেঁড়ে গলায় বলেন, “নো গুড”। মানেটা কী? অন্যদের টিকিট নাচিয়ে বলেন, “দিস গুড। ইউ নো গুড।” হাঁ করে ফরাসি-ইংরেজি-বাংলা-হিন্দি, মানে আমি যা জানি, যতটা জানি, যেভাবে জানি, তা জানিয়ে আমরা জানলাম, আমি এই ট্রিপের টিকিট না দেখিয়ে অন্য কোনও বাস রুট বা মেট্রো রুটের টিকিট দেখাচ্ছি ওনাকে। সেরেছে। সব টিকিট একই রকম দেখতে যে! রেখেছিলাম তো যত্ন করেই। গেল কই? ততোধিক কঠোর গলায় এবার ওঁরা ফরমান জারি করেন, উইদাউট টিকিট মানে পঞ্চাশ ইউরো ফাইন! প-প-প-প-পঞ্চাশ! হে ভগবান! প্রোফেসর ক্যালকুলাস আর ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মুখ স্মরণ করে (যে কোন বিপদে এঁরাই আমার বড় বল-ভরসা) মানিব্যাগটি হাতে তুলে আনি। কাঁধে ঝোলানো সুদৃশ্য ব্যাগের অন্যান্য সমস্ত খাপ, সমস্ত কোণা, সমস্ত লাইনিং ততক্ষণে আঁতিপাঁতি করে খোঁজা শেষ। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে তিনটে বাজতে তখন ঠিক বারো মিনিট বাকি। ঠিক সেই সময় মানিব্যাগের অন্দরে কিছু খুচরো সেন্ট আর ভাঁজ করা ইউরোর পাশ থেকে উঁকি দেয় একটি টিকিট। ইউরেকাআআআআ! পেইচি! আহা…। প্যারিসের জেলে গরাদের আড়াল থেকে জীবনকে উঁকি মেরে দেখে নেওয়ার দুর্ভাগ্য থেকে এ যাত্রা তো বাঁচলাম!
এই এত দীর্ঘ বর্ণনা দেওয়ার একটিই কারণ। যাঁরা যাচ্ছেন বা যাবেন বলে ভাবছেন, প্রতিটি টিকিট একটু যত্নে রাখবেন। সাবধানে। এই হ্যাঙ্গামে পরেও পড়তে হয়েছিল। সে গল্প অন্যত্র।
শেষ অবধি আইফেলের মাঝ চূড়ায় চড়ে অবশিষ্ট প্যারিসের যতটুকু দেখা সম্ভব, তাকে দেখেশুনে ছবি তুলে একাকার।
তবে হ্যাঁ। সেই যে রেড ওয়াইনের বোতল! যারে কেনা হয়েছিল মঁমার্তের পথে… তারে নিয়ে ভুগতে হয়েছে অল্পবিস্তর। আইফেল টাওয়ারের চত্বরে ওয়াইন, অ্যালকোহল নৈব নৈব চ। তবে কিনা, সুন্দরী মহিলা ঘাড় হেলিয়ে সামান্য কটাক্ষে কত কী সম্ভব করে তোলেন। এই পৃথিবীতে এই নজির ভুরি ভুরি। দ্বাররক্ষী মুচকি হেসে একটি অন্য ডাস্টবিন দেখিয়ে দেন। সেখানেই সাবধানে ওয়াইন স্থান পায়। হামলোগ গরিব আদমি সাব… দরিদ্র ভারতবাসী প্যারিসের সিকিওরিটিকে ‘মাই-বাপ’ বলে কাজ হাসিল করে।
ফেরার পথে সেখান থেকেই আবার স্বস্থানে সাবধানে ওয়াইনের বোতল তুলে নিয়ে নাচতে নাচতে প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে ঘটল আরেক মুশকিল। অল্পেই ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নেত্য করলে মাশুল তো দিতেই হবে। আবার দুই রক্ষী ছুটে আসেন। নো, নো। নো ওয়াইন অ্যালাউড। আবার তাঁদের বিনীতভাবে বোঝানো, এ তো আমাদের মেমেন্টো স্যার। হেথা থেকেই কালেকটেড স্যার। এবারের মতো ছেড়ে দিন স্যার। আর কোনওদিন এমনটি করব না স্যার! (যেন রোজ আমরা লিকারের বোতল হাতে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার চত্বরে অনুপ্রবেশ করে থাকি!
দয়া-মায়া কার না থাকে! তাঁদের হৃদয়ও সামান্য গলে যায়। এই গলন্ত সুযোগ কেউ ছাড়ে? রেড ওয়াইনের টাটকা বোতল বগলে পুরে দে ছুট।
আইফেল টাওয়ার এই পর্যন্তই।
কাল যাব মিউজি ডরসে, মিউজি রদ্যাঁ আর ডিজনিল্যাণ্ড। প্যারিসে তৃতীয়দিন।
পর্ব-৪
বাড়িতে বসে অন্তর্জালকের কাছে হাত পেতে থাকা। তার কাছে আকুল প্রশ্ন। প্যারিস শহরে আর কোথায় যাব, কেনই বা যাব। অথবা বলা ভাল, কোথায় না গেলেই নয়, আর সেখানে পঁহুছিব কেমনে। রাশি রাশি মিউজিয়ম প্যারিস জুড়ে। এক জীবনে অনেক জীবন বাঁচলেও আমার মতো মধ্যবিত্ত সব সৌন্দর্যের নাগাল পাবে না। তবে, অতৃপ্তি থাকা ভাল। বুজুর্গ জনেরা তো সেইরকমই বলে এসেছেন। মেনেও চলি সময়-সুবিধে মতো। মঙ্গলবারের সকালে আমরা অতৃপ্তি থেকে আরও তৃপ্তির দিকে হাঁটতে চাইলাম খানিকক্ষণ।
নানান মতামতের মধ্যে থেকে মিউজি ডরসে আর মিউজি রঁদ্যা না দেখলে এ জীবন মরুভূমি-প্রায়, এই ঐকমত্যে পৌঁছনো গেল। সোমবার এই দুটি জাদুঘর বন্ধ। কাজেই সোমবারের জন্য মঁমার্ত আর আইফেল টাওয়ার দেখার কাজ রেখে মঙ্গলবারের সকালে একটি পরিবার তাদের কুচো ছানা-সহ চলে যায় ডিজনিল্যান্ডের দিকে। আমাদের গন্তব্য স্যেন নদীর ধারে মিউজি ডরসে।
স্মৃতিই একমাত্র জায়গা, যেখানে সতর্ক হবার উপায় নেই। সেই স্মৃতিতে শুধু কিছু নাম।
অসতর্ক মুহূর্ত সম্বল আমার। ল্যুভর মিউজিয়ম ছাড়িয়ে স্যেন নদী পেরোলেই রাস্তার ওপর দেখা যায় মিউজি ডরসে। স্যেন নদীর ধারে পাথর মোড়া মসৃণ চওড়া ফুটপাথে ‘ভোগ’ পত্রিকা বিকোয়। ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে আছে ছবির বিজ্ঞাপন। রোদে ঝলমল আকাশ। ধুলো-ধোঁওয়া আর অকারণ হর্ন ছাড়া বয়ে চলা সভ্যতা।
গন্তব্য পর পর দুটি। প্রথমে মিউজি ডরসে। তারপরে মিউজি রদ্যাঁ। দুটির মধ্যে ম্যাপ অনুযায়ী দশ মিনিটের হাঁটা পথের ফারাক। আদতে পথ ভুলে, গুলিয়ে, ভুল শুনে, ভুল বুঝে সে এক যাচ্ছেতাই কাণ্ড। একে একে বলি।
স্যেন নদী
ল্যুভর মিউজিয়ম থেকে ডানদিকে স্যেন নদীর সেতু পেরোলেই রাস্তার ওধারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মিউজি ডরসে। এটি ১৯০০ সালের একটি পুরনো রেলস্টেশন। ওয়ার্ল্ড ফেয়ারের জন্য ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকা পর্যটকেরা পৌঁছবেন নগরীর প্রাণকেন্দ্রে, এই প্রয়োজনে তৈরি হয়েছিল এই স্টেশনটি। সেই স্টেশন চত্বর এখন অপূর্ব এক সংগ্রহশালা। মাথার ওপরে কাচে মোড়া ছাদের মধ্যে দিয়ে অবারিত সূর্যের আলো এসে পড়ে সর্বত্র। বিশাল একটি ঘড়ি জানিয়ে দেয় সেই ঊনবিংশ শতক থেকে একইভাবে সে সকলকে সময় জানিয়ে চলেছে। ক্লান্তিহীন। ১৯৮৬ থেকে সকলের জন্য দরজা খুলেছে এই মিউজিয়মের। একবার ঢুকে পড়লেই ১৮৪৮ থেকে ১৯১৪ ইম্প্রেশানিস্ট যুগের এবং তারও পরের পোস্ট-ইম্প্রেশানিস্ট যুগের ছবির সম্ভার।
দূর থেকে রাস্তার ওপ্রান্তে মিউজি ডরসে
সকাল সাড়ে দশটা। বাইরে বিরাট ভিড়। অগ্রিম টিকিট হাতে থাকলেও যে লাইনে দাঁড়াতে হয়, সেই লাইনে অগণিত মানুষ। তাদের পিছনেই দাঁড়াই। রোদে রাঙা মার্বেল। বসার উপায় নেই। লাইন চলেছে সর্পিল মেজাজে। ঢুকে পড়া মাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়ে সেজান, রেনোয়া, পল গগ্যাঁ, মানে, দেগাস, ভ্যান গঘ, মাতিস, মোনে– একের পর এক পরিচিত নাম। এতদিন বইয়ে পড়া, কানে শোনা, ছবির বইয়ের পাতায় দেখা একের পর এক বিস্ময় খুলে যেতে থাকে চোখের সামনে। কোথাও চড়া রঙের প্রলেপ, কোথাও হাল্কা আভাস, কেউ স্টিল লাইফ, কেউ প্রকৃতি। কোথাও নিদাগ, নির্ভার। কোথাও অসংখ্য আঁচড়ে শুধু না-বলা কথার বুনোট। ক্লদ মোনের “ওয়াটার লিলি” বা ভ্যান গঘের “সানফ্লাওয়ার”-এ যেমন ইম্প্রেশানিজমের ছাপ। পেন্টারলি ব্রাশওয়ার্ক দেখতে হলে হেনরি মাতিসে। ধীরে ধীরে অ্যাবস্ট্রাকশানের দিকে ফিরে দাঁড়ানো পাবলো পিকাসোর একটিমাত্র ছবি রয়েছে এখানে। এদুয়ার মানের “অলিম্পিয়া”, ভ্যান গঘের “স্টারি নাইট ওভার দ্য রোন”, গঘের আত্ম-প্রতিকৃতি দেখে ঘোর কাটতে না কাটতেই সেজানের একরাশ স্টিল লাইফে আপেল আর কমলালেবুর ভিড়। একেকটা ঘরে হেঁটে যাই, দেওয়ালে দেওয়ালে শুধু রঙের ইতিহাস। ছবির ইতিহাস। শিল্পের ইতিহাস।
ভ্যান গঘের আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি
অনেকেই ইন্টারনেটের সাহায্যে দেখে নিতে পারেন কোন ঘরে কী রয়েছে, কার কোন সৃষ্টি সাজানো রয়েছে যত্নে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন, না পিটুলিগোলা জলে, সেটা আপনার চয়েস। আমি একটু পরে পরেই চিমটি কেটে পরখ করে দেখি, আমিই তো?
এস্ক্যালেটরে নামি-উঠি। অনেকেই ক্যাফে এবং রেস্তোঁরায় খেয়ে চলেছেন। মিউজি ডরসের মধ্যেই তিনটি তলায় তিনটি অনবদ্য ঝাঁ-চকচকে রেস্তোঁরা। দেখি, হেঁটে চলে যাই আনমনা। উদাসীন। পেট না ভরলেও চলবে। মনের যা খোরাক, তা তো উপচে পড়ছে। যতটুকু পকেটের সামর্থ্য, সেটুকু দিয়ে কিনে আনা ভ্যান গঘের ছবির কপি। ‘তারাভরা আকাশের নীচে’। মাত্র এগারো ইউরো দাম তার। অমূল্য।
রদ্যাঁর অপূর্ব ভাস্কর্য দেখার আশায় এবার পা বাড়ানো মিউজি রদ্যাঁর দিকে। ওফ। সেই বাড়িয়ে দেওয়া পা যে আমাদের কত লক্ষ যোজন পথ হাঁটিয়েছে! আসলে ম্যাপ দেখে পথে নেমে ইউরোপে অন্তত ‘হুই দ্যাকা যায়’ কনসেপ্টে ভুলবেন না। যেটা দশ মিনিট হাঁটাপথ লেখা, সেটা আসলে মিনিমাম আধঘণ্টা। তার ওপরে মানুষজনকে শুধিয়ে দেখি, তাঁরা কেমন ইধার-উধার দেখিয়ে দেন, কাজের জায়গায় পৌঁছতে পারি না আর। গলদঘর্ম অবস্থা। তিনজনে কেবল হেঁটেই চলেছি। অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন। একটি মেট্রো স্টেশনে নেমে শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক সন্ধান মিলল। কৃষ্ণাঙ্গ এক সুপুরুষ ভদ্রলোক মেট্রোর টিকিট কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে ম্যাপ দেখিয়ে চমৎকার বুঝিয়ে দেন, কোন পথে এগোব। আমরা তৎক্ষণাৎ সেই পথেই। ওই মিনিট দশের মধ্যেই।
দ্য থিংকার — মিউজি রদ্যাঁ
ছায়াময় বাগানঘেরা পরিবেশ। ঢুকেই চিন্তা। এই যে সামনে বসে “দ্য থিংকার”– কোন অ্যাঙ্গেলে ছবি নেব তার? আশির দশকে না কি সত্তর দশকের শেষের দিকে, ঠিক মনে পড়ছে না এখন আর, রদ্যাঁর কিছু ভাস্কর্য এসেছিল কলকাতায়। সেই সময় তার প্রদর্শনীর খবর পড়েছি, পৃথিবীবিখ্যাত ভাস্কর্য ‘থিংকার’কে দেখেছি খবরের কাগজে, ‘দেশ’ পত্রিকার প্রচ্ছদেও সম্ভবত। তাকে চোখের নাগালে দেখতে পেয়ে কেমন যেন শিউরে উঠি। বাগানে আরও ইতিউতি ছড়ানো তাঁর কাজ। তাদের পাশেই বসি। তাকাই, কথা বলি। ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্যে অফুরন্ত প্রাণশক্তি, প্রতিটি দেহভঙ্গিমা নিখুঁত। ছন্দে গাঁথা। রদ্যাঁ যেমন বলেছিলেন, “Sculpture is the art of the hole and the lump.” একের পর এক ব্রোঞ্জ আর মার্বেলের কবিতা। কোর্ট ইয়ার্ড ক্যাফের পিছনে বসে ঝোলা থেকে টিফিনবাক্স বার করি। পেট ভরে খেয়ে নাও সকালে বানানো ডিম-পরোটার বাঙালি ভাঁজের রোল।
তারপর চলো।
অদ্যই শেষ রজনী।