চার নম্বর নিউজডেস্ক
চিপকো আন্দোলন– আজ্ঞে না, কোলকাতা শহরের বিখ্যাত নটসম্রাজ্ঞী হৈচৈতালি সৃষ্ট মেট্রোওয়ালা চিপকো আন্দোলন নয়, প্রায় তিন শতাব্দী আগের সেই রাজস্থানের বিশনইদের গল্প– একটি গাছকে জড়িয়ে থাকা এক একজন রমণী, বিনিময়ে তিনশোরও বেশি তাজা প্রাণের বলিদান। যে পদ্ধতি এর পরে বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে ভারতে এবং ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন নামী অনামী দেশে– একটি গাছ তথা অনেক প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে।
সিটি সেন্টারের নীচে অনেকক্ষণ ধরে বাকবিতণ্ডায় রত শুভম আর মালবিকা। গ্রাজুয়েশনের পরে জেএনইউ-তে এম এ করবার সুযোগ সকলের মেলে না, আর মালবিকা কিনা কিছুতেই দিল্লি যেতে রাজি নয়! “দিল্লির অবস্থা একবার দেখেছিস তুই? নিউজে রোজ দেখতে পাই শীতকালে একহাত দূরের মানুষ দেখতে পাওয়া যায় না, ধোঁয়াশায় দম বন্ধ হয়ে আসে। গরমে 45 ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচার– তার ওপরে রাস্তাঘাটেও সর্বক্ষণ তটস্থ থাকতে হয়, নির্ভয়া কাণ্ড মনে নেই? ভালো কিছু হয় দিল্লিতে? কোন ভরসায় যাব আমি?”
বাইকে হেলান দিয়ে সিগেরেটটা শেষ করতে করতে ছেলেমেয়েদুটোর কথোপকথন শুনে ফেলেছিলাম, মাপ চাইছি। পাঠক এতক্ষণে হয়তো আপনি ভাবছেন আমার মাথা খারাপ। সে আপনি ভাবতেই পারেন, কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে তখন থেকে– সত্যিই ভালো কিছু হয় দিল্লিতে?
সরোজিনীনগর, নেতাজিনগর, নওরোজনগর জুড়ে প্রায় সতেরোশো বৃক্ষছেদন হবে– নতুন আবাসন তৈরি হবে নাকি। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই কিছু মানুষ সাথে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাছ বাঁচাও প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির। অসম্ভব আর্বানাজাইড, পরিবেশ সচেতনতা যে শহরে প্রায় নেই বললেই চলে তার হঠাৎ হল কী! আসলে ক্লাস ওয়ানের ছোট্ট জিনিয়া একটু চললেই হাঁপিয়ে যায়, দিল্লি পাবলিক স্কুলের ক্লাস থ্রির আরমান– ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, এই বয়সেই হাতে ইনহেলার। কিন্তু অবাক কাণ্ড, জিনিয়ার বাবা আরমানের মা ছাড়াও আরও অনেক মানুষ যে ধীরে ধীরে জড়ো হচ্ছে সরোজিনীনগরের আশপাশে– আর আপনিও সর্বভারতীয় মিডিয়ার কল্যাণে নীল সাদা শহরে বসে এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে ফেলেছেন দিল্লির মিনি চিপকো আন্দোলনের কথা। কীভাবে অবিচারে বৃক্ষছেদনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন দিল্লির মানুষ– বাড়ছে সচেতনতা, আর যা নজর কেড়েছে একশো ত্রিশ (নাকি চল্লিশ) কোটি মানুষের। ফলত হাইকোর্টের স্টে অর্ডার– আপাতত জুলাই মাসের মাঝামাঝি অব্দি।
“দেখলি তো? দিল্লির ও দিল আছে, ভালো খবর দিল্লিতেও হয়। এখন টিকিট কাটলে ইন্ডিগোতে দুই হাজারে পেয়ে যাবি। এই সুযোগ ছাড়িস না।” একদমে কথাগুলো বলে ফেলল শুভম।
আমি ছাতা চিপকো-মিনি চিপকো এসব কিছুই জানতাম না। কিন্তু কথাগুলো শোনার পর থেকে খালি একটা শব্দই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, ভালো খবর– সিগেরেটটা আদ্ধেকও শেষ হয়নি, কিন্তু কেমন যেন তেতো লাগছে হঠাৎ। সাড়ে সাত টাকা পায়ে দলে বাইকে স্টার্ট দেই, করুণাময়ীর দিকে।
মাথার মধ্যে এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল– সাইকেলের ধুলো ঝাড়ব ভাবছি কাল সকালে। পেট্রোলের দামটাও আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। সামনের নাম না জানা গাছটা একটু বেশি সবুজ লাগছে কি? কে জানে!
এ আপাতত স্বস্তির খবর। দিল্লীর বাইরে ভারতের বিভিন্ন অংশ, এমনকি বাংলাদেশেও এ খবর ধরে বৃক্ষের জন্য, সবুজ শ্যামলিমা যতটা সম্ভব নিজেদের পাশে তার জন্য দাঁড়াবে এমন আশা করাই যায়। যশোর রোড ধরে শতবর্ষী বৃক্ষ কাঁটার বিরুদ্ধে দুই বাংলা দাঁড়িয়ে খানিকটা সচেতনতার ইঙ্গিত দিয়েছেও ইতোমধ্যে।