অথ সুপারহিরো কথা : মুজাফফরনগরের মনোজ সাইনি

সুপারহিরো

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

সুপারহিরো খুঁজছেন? মার্ভেলের সিনেমা বা কমিক বুক দুনিয়াতে, মহাকাব্যে বা বলিউডি নায়ক, অজস্র দেখে এসেছেন চিরকাল। লেখকের কল্পনাকে সেলুলয়েডে ফেলে এক ‘সব পেয়েছির দেশ’ তৈরি হয় যেখানে একজন, খারাপ যা কিছু সব ধ্বংস করে ভালোর ভাণ্ডার এনে দেয় মানুষকে। যেখানে দুষ্টের দমন হয় আর মানুষ কখনও অপঘাতে মরতে পারে না। আছে তো একজন সুপারহিরো যে বাঁচিয়ে দেবে সবাইকে। কিন্তু বাস্তবে? বাস্তবে এমন কোথায়? রোজকার খুন, ধর্ষণ, জোচ্চুরি, পণের জন্য গৃহবধূ হত্যা, অনার কিলিং পড়তে পড়তে মনে হয় যে আহা যদি সেই সিনেমার মতো হত! একটা, মাত্র একটা সুপারহিরো হলেই অপরাধ কমে যেতে পারত অনেকটা। যদি কেউ চোখ থেকে লেজার লাইট বের করে অথবা শক্তিমানের মতো ঘুরতে ঘুরতে বাঁচিয়ে ফেলত সবাইকে।

হয়, সুপারহিরো থাকে। আমাদের মধ্যেই।

উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের বাসিন্দা মনোজ কুমার সাইনি একজন ফলের রস বিক্রেতা। গঙ্গার পাড়ে তার দোকান। সামান্য একজন দোকানি হলেও লোকালয়ে তিনি সুপারহিরো বলেই পরিচিত। বয়স্ক থেকে জোয়ান, সবার মধ্যেই তিনি তার কাজের জন্য বিখ্যাত এবং বরেণ্য।

গঙ্গার এই খালপাড় অংশটি ‘সুইসাইড পয়েন্ট’ হিসেবে কুখ্যাত। বহু মানুষ এখানে এসে আত্মাহুতি দেয়। ঘটনাচক্রে মনোজের দোকানও এই সুইসাইড পয়েন্টের পাশে এবং একটি ভয়ানক ঘটনা তাকে নায়কোচিত হতে সাহস যোগায় এবং সে শুরু করে এই আত্মহত্যাকামী মানুষদের বাঁচাতে।

‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’কে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে মনোজ বলেন, “প্রথম যখন এক ভদ্রলোককে ওই খালে ঝাঁপ দিতে দেখেছিলাম, বিস্মিত হয়ে যাই। এক বছর আগের ঘটনা এটা। তারপর থেকে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। যখনই কাউকে ঝাঁপাতে দেখি, আমিও ঝাঁপিয়ে পড়ি।”

এখনও পর্যন্ত মনোজ বাঁচিয়ে ফেলেছেন সাত সাতটি প্রাণ। সবথেকে অদ্ভুত ঘটনা, মনোজ একজন পেশাদার সাঁতারু নন বা ‘লাইফ সেভিং’ ট্রেনিং নেই তার কোনও

আমজাদ নামের এক স্থানীয় যুবক জানালেন, “আমার কাকা বহুদিন ধরেই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। অশেষ ধন্যবাদ মনোজকে, এমন সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে উনি আমার কাকাকে বাঁচালেন। এলাকার প্রত্যেকে এখন ওঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।”

স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে মনোজকে সাহসিকতার প্রতীকি পুরস্কার হিসেবে ১০০০ টাকা দেওয়া হয়। ডি.এস.পি রাজীব কুমার গৌতম জানান, পুলিশ স্টেশন, মনোজের নাম ‘ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড অফ ইয়ার’-এর জন্য সুপারিশ করতে চায়।

এই সমস্ত প্রশংসার প্রত্যুত্তরে লাজুক মনোজ বলেন, “আমি শুধু জানি চোখের সামনে আমি কাউকে মরে যেতে দিতে পারি না, ব্যস…”

সুপারহিরো হয়। একটু চেষ্টা করলেই আয়নায় দেখা যায় তাকে…

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...