নদীকে নিয়ে কয়েকটি চরণ
কাদামাখা তট জুড়ে পদছাপ,
তারও পারে শান্ত ইছামতী।
এইখানে থেমে আছে মানুষের সব ইচ্ছা,
সব আত্মরতি। সমস্ত প্রগতি
ক্রমাগত আমাদের মিথ্যা স্বপ্ন দিয়েছে সাজিয়ে।
তাই নিয়ে এত সাধ, এত বলাবলি। যতবার চলি – কাঁকরে, পাথরে, জলে,
আকাশে বা পাতালের দিকে,
কোথাও প্রদীপ জ্বালা নেই। তুমি তো কবেই
দেখে এসছো কৃষকের ঘরবাড়ি,
কারখানার শ্রমজীবী গান।
দু’পাশে শ্মশান ছিঁড়ে ছিঁড়ে
বানিয়েছ স্বপ্নে দেখা নৌকার পাল।
এমন উথাল হবে ভেবেছো কি একদিন রাজপথে ঢেউ।আজো কেউ কেউ
গোপনে আগুন জ্বালে –
ডেকে আনে অচেনা ঋত্বিক।
হয়তো বেঠিক সুরে
গেয়ে ওঠে যজ্ঞের সংগীত। আজো আচম্বিত
শহরের বুকে জাগে রক্তধোয়া হাসি।
নদীটি উদাসী তাই বয়ে যায় সাগরের পানে।
যদিও সে জানে,
একদিন আমরাই ডাকবো তাকে ঘরে ও সংসারে।
আজ বারে বারে
এইটুকু লিখে রাখো দিনলিপি ভরে –
ভেসে যাবে বীজ সার ফসল ও ঋণ,
ভেসে যাবে সাইরেন চিমনীর শুষে নেওয়া দিন।
ভেসে যাবে মধ্যপন্থা , সুবিধাবাদের সাদা মুখ।
ভেসে যাবে আমাদের মধ্যবিত্ত রুপোলি অসুখ।
লোহিত কিংশুক
ফুটে উঠবে পললে ও পিচরাস্তার ইতিহাসে,
এবং বাতাসে
উড়ে আসবে রঙিন সুবাস।
আর একবার নদী আঁকবে
আমাদের পতাকায় কুসুমসঙ্কাশ।
প্রতিশ্রুতিসমূহ
ফিরিয়ে আনিনি কিছু। ফেরানোর কথা কি ছিলই?
নেমে আসে জলফোঁটা। ভিজে যায় বই
অক্ষরের ধুলোসহ – ভিজে ওঠে সকল দর্পণ।
ঝাপসা মুখের পাশে খুব যেন চেনা চেনা মন।
প্রতিস্পর্ধী রাত আসে। জেনে যায় সব পাঠ্যসূচি,
ব্যক্তিগত সংবিধান ছিঁড়ে ফেলি আজ কুচি কুচি।
তবুও উড়ান থেকে ভেসে আসছে পুণ্যার্থী আলো-
এইভাবে কত ভোর অকারণ আমাকে জাগালো।
দুপুরিয়া ঠোঁট থেকে খসে পড়ে বারুদের গান
আমাদের বুকে মুখে। চন্দনের আকুল আঘ্রাণ
বাকি আছে, এখন তো গাঢ় কণ্ঠে তোমাকে বলবই-
ফিরিয়ে আনিনি কিছু। ফেরানোর কথা কি ছিলই?
নরকের পাঠ্যসূচি
ত্রিবেণী, তোমাকে নিয়ে
স্বর্গে যাব না
তার থেকে নরকের রাস্তার পাশে
কালো গোলাপের ছোট বাগান বানাবো
বেহালা বাজাবে শয়তান
গোলাপি রঙের বুকে বড় বেশি মায়া
তার চেয়ে
বেগুনি ঠোঁটের ভেজা লালায় জড়াব
সমস্ত বকুলগন্ধ
সমস্ত ফ্যান্টাসির দীর্ঘ ইউক্যালিপ্টাস
ত্রিবেণী, তোমার পাশে
সঙ্গম লিখো না কখনো
কারণ, কতটা বয়ে গেলে
নদী হয়ে ওঠা যায়
সেইসব ইতিহাস
আগে তো নরকে পড়া হোক।