বাসু আচার্য
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল কথাই হল বস্তু থেকে চেতনা। ধর্মপদের শুরুতে যেমন বলা হয়েছে, “চেতনাই সকল বস্তুর উৎসস্থল”,— এটা কোনও বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদীই সমর্থন করেন না, এবং তা সঙ্গত কারণেই। চেতনা যে বস্তুজগৎ নিরপেক্ষ কোনও ব্যাপার নয় এ নিয়ে মার্কস ও এঙ্গেলসের বেশ কিছু লেখা ও ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা উদ্ধৃতি আমরা পড়েছি। বিশেষ করে মার্কসের একটা উদ্ধৃতি তো আমরা ছোট থেকে প্রায় মন্ত্রোচ্চারণের মতোই আউড়ে আসছি— “আমার ডায়লেক্টিক পদ্ধতি হেগেলের পদ্ধতি থেকে শুধু যে ভিন্ন তাই নয়, তার একেবারে বিপরীত। হেগেলের মতে মনুষ্য মস্তিষ্কের জীবনপ্রক্রিয়া অর্থাৎ চিন্তনপ্রক্রিয়া, ‘ভাব’ নামে তিনি যাকে একটি স্বতন্ত্র সত্তায় পরিণত করেছেন, তা হ’ল বাস্তব জগতের স্রষ্টা এবং বাস্তব জগত সেই ‘ভাবের’ দৃশ্যমান বাহ্যরূপ মাত্র। পক্ষান্তরে, আমার মতে মানব মনের মধ্যে বাস্তব জগত প্রতিফলিত হয়ে চিন্তার যে বিভিন্ন রূপে পরিণত হয়, ভাব তা ছাড়া কিছুই নয়।”
উপরোক্ত বাক্য যে বই থেকে নেওয়া হয়েছে, সেই ‘পুঁজি’ আমরা পড়ি বা না পড়ি, কথাটা বুঝতে আমাদের বেগ পেতে হয়নি। আমাদের হাসি, কান্না, লোভ, অধিকারবোধ… সব কিছুর পেছনেই যে এক বা একাধিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বস্তুগত কারণ রয়েছে এটা মোটের ওপর সবাই মেনে নিয়েছি। এমনকি যারা নাকি অধ্যাত্মবাদী, তারাও পূর্বজন্মের পাপের ফল পরজন্মে সুদে-আসলে মিটিয়ে নেওয়ার তত্ত্ব দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, এই উগ্রভাববাদী প্রকাশভঙ্গী সত্ত্বেও এ কথার একটা দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী connotation আছে নিশ্চিতভাবেই। একবার ভেবে দেখুন— পূর্বজন্মের পাপের অস্তিত্বই কি পরজন্মের ক্লেশের কারণ নয়? ফলে, কার্যকারণ সম্পর্ক ছাড়া কোনও অতীন্দ্রিয় শক্তির প্রভাবে কিছু ঘটে যাওয়া যে নেহাতই একটা আষাঢ়ে গপ্প, এটা দুর্বলচিত্ত মানুষ বাদে সকলেই জানেন, বোঝেন। আজ যে আমরা চারদিকে এত তাগা-তাবিজ, জ্যোতিষীদের রমরমা দেখছি তার অন্যতম কারণ হল বিশ্বায়িত লগ্নিপুঁজির সর্বগ্রাসী আক্রমণ, যার আঘাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত। পুঁজির থাবায় বিপর্যস্ত মানুষ হয় ধর্মের কোলে আশ্রয় নিচ্ছে, নয়তো জীবনে খানিক আশার আলো দেখতে চাইছে জ্যোতিষীর স্তোকবাক্য শুনে।
যাই হোক, এত কিছু জানা বা মানার পরেও কোনও কোনও প্রশ্নে এখনও আমাদের মনের ধোঁয়াশা কাটেনি, এবং অদূর ভবিষ্যতেও যে তা খুব সহজে কেটে যাবে এমনও নয়।
আমরা যারা এযাবতকাল মার্কসের বিভিন্ন লেখায় একটুআধটু চোখ বুলিয়েছি, জানি যে পুঁজিবাদের একেবারে সূচনাপর্বে আদিম সঞ্চয়ের (primitive accumulation) ঘটনা ঘটেছিল। পুঁজিবাদ শুরুর ক্ষেত্রে সেটাই ছিল “আদি পাপ” বা “original sin”। এর পেছনের কারণগুলো সম্পর্কেও আমরা অবগত। কিন্তু সমস্যা হল, ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা গড়ে ওঠার পেছনে সেরকম কোনও “আদি পাপ”-এর খবর আমাদের জানা নেই। কেউ কেউ বলবেন, নারীর দাসত্বই এর আদিরূপ। কিন্তু যে কারণে এই দাসত্বের শৃঙ্খল নারীকে পরানো হল তার উৎপত্তি কীভাবে হল এটা অনেকটাই অপরিষ্কার। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের রূপকার ও টীকাকারদের লেখায় বিষয়টা আদৌ ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। কে জানে, হয়তো তাঁরা এটা নিয়ে ভাবার সেরকম কোনও প্রয়োজন বোধ করেননি বা হয়তো ভেবেও কোনও কূলকিনারা পাননি। অথবা গোটাটা আমার চিন্তা প্রক্রিয়ারই ভ্রান্তি।
সত্যি বলতে কি, ব্যক্তি মালিকানার আদি অভিপ্রকাশের পেছনের কারণগুলো খুঁজতে গিয়ে কখনও কখনও যেন সিগমন্ড ফ্রয়েডকেও বেশ প্রাসঙ্গিক লাগে— বিশেষ করে তাঁর প্রজাতিজনিত স্মৃতিভাণ্ডার (phylogenetic memory) ও প্রত্ন অবশেষের (archaic remains) ব্যাপারটা।
ফ্রয়েডের মতে, মানুষের সচেতন মনের বিপরীতে অনেকটাই জুড়ে আছে নির্জ্ঞান বা unconscious, যার পরতে পরতে যুগ যুগ ধরে জমে উঠেছে অবদমিত অবৈধ কামনার অবশেষ। শুধু নিষিদ্ধ যৌনকামনাই নয়, এতে জমে আছে ক্ষমতার লোভ, পররাজ্যগ্রাস, রক্ত লিপ্সা, লুঠেরা মনোবৃত্তি, ইত্যাদি। প্রাগৈতিহাসিক এই আদিম হিংসার সাথেই আছে প্রাণের বিবর্তনের স্মৃতিগুচ্ছ, উদ্ভিদজীবন ও পশুজীবনের অভিজ্ঞতা। ফ্রয়েড একে বলেছেন প্রজাতিজনিত স্মৃতিভাণ্ডার। তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তি জীবনে কখনও কখনও এগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে— পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, দুঃখ, ক্লেশ ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া হিসাবে।
কিন্তু সমস্যা হল, মার্কসবাদী মহলে ফ্রয়েডের নাম শুনলেই সবার নাক কুঁচকে যায়! কোনওভাবেই তাঁরা তাঁর কথাবার্তাকে বিজ্ঞান বলে স্বীকার করেন না। উপরন্তু, তাঁর প্রতি চোখা চোখা শব্দও তাঁরা প্রয়োগ করে থাকেন। প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি, অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামীর জবানীতে বললে, “মার্কসপন্থীরা ফ্রয়েডের মতবাদ সম্বন্ধে আলোচনার সময় আলোকের চেয়ে উত্তাপই বিকিরণ” করেন বেশি। তা এহেন ফ্রয়েডের তত্ত্ব তুলে মার্কসীয় তত্ত্বের অসঙ্গতি পূরণের চেষ্টা যে যেচে গালাগাল খাওয়ার সামিল তা বোধহয় না বললেও চলে। ফলে আগেই বলে নিতে চাই, এই অক্ষম প্রয়াস নিতান্তই কিছু অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য লিখিত। এর পেছনে কোনও hidden agenda-র বালাই নেই।
শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই জানে, মানুষের আধুনিক মানুষ হয়ে ওঠা একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, এবং সেখানে দ্বন্দ্বের একটা ভূমিকা আছে। আধুনিক মানুষের জীবনের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে, যেটুকু জানা যায়, তাতে বলাই যেতে পারে, এই দ্বন্দ্বের চরিত্র ছিল দ্বিমুখী— (১) প্রকৃতির সাথে প্রজাতির দ্বন্দ্ব; (২) মানব প্রজাতির প্রজাতিজনিত স্মৃতিভাণ্ডারে থাকা ব্যক্তিসত্তার সাথে প্রজাতিসত্তার দ্বন্দ্ব। প্রজাতি রক্ষা ও বেঁচে থাকার স্বার্থে প্রথম দ্বন্দ্বটাই ক্রমশ হয়ে ওঠে প্রধান দ্বন্দ্ব, এবং এর প্রভাবে প্রজাতিসত্তা ব্যক্তিসত্তাকে দমন করে ওপরে উঠে আসে, ব্যক্তি-প্রজাতি দ্বন্দ্বের অভিঘাত কমতে থাকে, গৌণ হয়ে যায়— যদিও ফুরিয়ে যায় না।
ইতিমধ্যে, নারীসমাজ আবিষ্কৃত কৃষিব্যবস্থা মানুষকে নিরালম্ব, বর্বর ও যাযাবর জীবনযাপন থেকে মুক্তির উপায় দেখায়। কৃষি ও প্রজনন, এই দুই উৎপাদন ব্যবস্থার কর্ত্রী হয়ে ওঠায় তাঁর সম্মান যায় বেড়ে। সে হয়ে ওঠে সঠিক অর্থেই একজন “producer-procreatrix”। নারীর সৃজনশীলতায় ভর করে ভূমিকর্ষণের আদিমতম লাঠির (digging stick) বিবর্তন ঘটে, আসে হরিণের সশাখ শৃঙ্গ (antler pick), তৈরি হয় পাথুরে ফলাওলা ভারী লাঙল, সাথে যুক্ত হয় পশুশক্তি। এক ধাক্কায় উৎপাদিকা শক্তির ব্যাপক বিকাশ ঘটে যায়। উদ্বৃত্ত তৈরি হতে শুরু করে। ওদিকে, নারীরা ক্রমশ কৃষি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে।
উৎপাদিকা শক্তির বিকাশের সাথে সাথে মানুষের জীবনে প্রতিকূলতার মাত্রা কমে আসে, অবকাশ/অবসর (leisure) দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই, প্রজাতিগত অস্তিত্বের প্রশ্নটা এবার মুখ্য থেকে গৌণ হয়ে যায়। এই শূন্যতার (vacuum) সুযোগ নিয়ে উঠে আসে ব্যক্তিসত্তা, যা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা তৈরিতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। “আমার বীজ”— এই ধারণার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে মানবসমাজ নারী ও পুরুষকে অর্থনৈতিক মানদণ্ড প্রয়োগ করে ভাগ করে, নারীর উর্বরতার বিষয়কে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করে। এবং আরও পরে এই উর্বরতার প্রশ্নেই জমির ওপর ব্যক্তি-অধিকার বা পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে, উৎপাদনের উপকরণগুলো ব্যক্তি মালিকানার অধীনে আসে। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে এতদিন যে প্রকৃতিগত ও জৈবিক শ্রমবিভাজন ছিল তার পরিবর্তন ঘটে, দেখা দেয় শ্রমের অর্থনৈতিক বিভাজন। আর চারটে উৎপাদনের উপকরণের মতোই নারীও একটা উৎপাদন যন্ত্রে রূপান্তরিত হয়— বংশধর সৃষ্টিই যার কাজ।
ব্যক্তিগত সম্পত্তির জন্ম ও বৃদ্ধির অবধারিত পরিণতি হিসাবে আসে শ্রেণীবিভক্ত সমাজ, যেখানে একদল হয়ে ওঠে উৎপাদনের উপকরণের মালিক, আর একদল হয়ে যায় তাদের অধীনস্থ উৎপাদক। প্রাগৈতিহাসিক যুগে শ্রেণীদ্বন্দ্ব ছিল না, কিন্তু খাদ্যের ও ভোগ্যের অপ্রতুলতার ফলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিজিত গোষ্ঠীর মানুষদের বিজয়ীরা মেরে ফেলত। কিন্তু কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রা ও ব্যক্তি সম্পত্তি গড়ে ওঠার ফলে বিজিত গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা না করে সামাজিক উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত করা শুরু হয়, যার ফলশ্রুতিতে একসময় জন্ম হয় দাসপ্রথার। এমতাবস্থায় স্বভাবতই প্রধান দ্বন্দ্ব হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে শ্রেণীদ্বন্দ্ব। এবং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে ব্যক্তি-প্রজাতির দ্বন্দ্ব হয়ে যায় আবারও গৌণ। কিন্তু এই অবদমন সত্ত্বেও নির্জ্ঞানের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকগুলো নানাভাবে প্রকাশ পেতে থাকে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, পাশবিক যৌনতা ইত্যাদির মাধ্যমে।
কেউ কেউ বলবেন, এসবই আসলে গুণবীজের (gene) গুণ। ওতেই সব নিহিত আছে। হয়তো তাইই। হয়তো ফ্রয়েডের ল্যামার্কিস্ট approach-টাই ভুল। কিন্তু এক্ষেত্রে এটা কোনও গুরুতর বিষয় নয়। আসল প্রশ্ন হল, তাহলে সমাজবাদ বা সাম্যবাদ কি আদৌ সম্ভব? যেখানে মানব মনের অভ্যন্তরে রয়েছে উগ্র ব্যক্তিবাদী ধ্যানধারণা, অত্যুঙ্গ হিংসা, রক্ত ও ক্ষমতা লিপ্সা, পররাজ্যগ্রাসের মতো মানসিকতা, সেখানে কীভাবে এগিয়ে যাব আমরা এমন একটা ব্যবস্থার দিকে যেখানে প্রয়োজনের ভিত্তিতে মানুষ পাবে ও নিজ-ক্ষমতা অনুযায়ী দেবে? এ কি আকাশকুসুম কল্পনা নয়? সমাজতান্ত্রিক মানুষ ছাড়া তো সমাজতন্ত্র সম্ভব নয়।
এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের অনুধাবন করতে হবে মানুষের বিকাশের চরিত্রকে। একেবারে সূচনাপর্ব থেকেই মানুষ প্রকৃতির প্রভাব ও প্রভুত্বকে অস্বীকার করেছে। সে প্রকৃতিকে জেনেছে, তার সীমাবদ্ধতাগুলোকে আবিষ্কার করেছে এবং সেগুলো অতিক্রম করেছে এক এক করে— প্রকৃতির নিয়ম নতুন করে না বানিয়ে, এতটুকু না পালটে। মানুষ এগিয়েছে বাস্তব জগত থেকে রসদ সংগ্রহ করে, তার বিকাশ ঘটিয়ে। মার্কস যেটাকে বলছেন মানুষের চিন্তার বিভিন্ন রূপ সেটাকে বুঝতে হলে এখানে বস্তু ও চেতনার সম্পর্ক বোঝা দরকার। এর একটা map বানালে ব্যাপারটা অনেকটা এরকম দেখাবে: বস্তু-নির্ভর মূর্ত বাস্তব (পাখীকে উড়তে দেখলেন দা-ভিঞ্চি) >> চেতনায় তার বিমূর্ত উপস্থিতি (উড়ন্ত পাখির ছবি রয়ে গেল তাঁর চেতনায়) >> বিমূর্ততার বিকাশ ও মস্তিষ্কে তার মূর্ত রূপ দান (পাখির উড়ান থেকে উড়োজাহাজের একটা কাল্পনিক ছবি মনে গড়ে ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করলেন তিনি) >> বিমূর্ততায় অবস্থান করা ছবির মূর্ত বাস্তব রূপ প্রাপ্তি (দা-ভিঞ্চির মতানুসারে নির্মিত হল বাস্তব উড়োজাহাজ)। তাই মনে হয়, মানুষ এবং একমাত্র মানুষই পারে প্রকৃতি ও নির্জ্ঞানের দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে, কারণ সে স্রোতের অনুকূলে নয়, প্রতিকূলে চলে।
সবই বুঝলাম। কিন্তু মূলত দুটো প্রশ্ন…
১. লেখক বস্তুবাদের স্বপক্ষে এত কথা বলেও খামোখা পাপ-পূণ্য নিয়ে এত ব্যস্ত হতে গেলেন কেন? এই ধারণাগুলোই ভাববাদী নয় কি? পুঁজিবাদ যা করে, সামন্তবাদ যা করে বা করত, সবই তাদের শ্রেণী-অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই ঐতিহাসিক কর্তব্য। ভেঙে বললে পুঁজিপতি শোষণ করবে, নইলে সে পুঁজিপতি হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না। শ্রমিক শোষিত হতে চাইবে না, কারণ সেও তার শ্রেণীস্বার্থ। দ্বন্দ্ব হবে, সংঘাত হবে, যতক্ষণ না এই দ্বন্দ্ব মীমাংসিত হচ্ছে। এই তো গল্প। এর মধ্যে পাপ-পূণ্য আসে কোথা থেকে?
২. লেখক সেই ‘পাপের’ উৎস খুঁজতে গিয়ে নারীর দাসত্ব ইত্যাদি অনেক স্পেকুলেট করেছেন, কারণ আগে কেউ তা করে দিয়ে যাননি! বেশ কথা! কিন্তু লেখক এত পড়েছেন, আর “উদ্বৃত্ত মূল্য” শব্দবন্ধটা তার জানা নেই? গোটা লেখায় খুঁজে পেলাম না! পুঁজিবাদের ‘পাপ’ই যদি ধরতে হয়, সেটা হল শ্রম চুরি, যার দ্বারা সে উদ্বৃত্ত মূল্যের জন্ম দেয়। কোনও ‘আদিম সঞ্চয়’ নয়। এটার কী একটু ব্যাখ্যা পাব?
এনিওয়ে, সুলিখিত প্রবন্ধ। চিন্তার খোরাক জোগায়। ধন্যবাদ….
Comment korar jonyo dhonyobad. Tobe jini comment korechhen tini Punji boiti porechhen ki? Sambhabata “NA”. Primitive Accumulation ke Marx nijei bolechhen punjibader “Original Sin” arthat suchona. Ami sei ekibhabe “Private Property”-r “Original Sin” khnojar cheshta korechhi matro… khubi khudra ebong asanglagna bhabe. Paap, punyo ityadi shabdaguloke jantrikbhabe enche na nilei bhalo. “Adim Paap” shabdajugol to within quote achhe. Ami to literate der jonyoi likhi bole jani… dwitito, ami punjibader “paap” khnujini, byektigata sampatti janmer “adim paap” khnujechhi…. sheshata, ami kintu literate der janye likhi, sahitatwa prokash amar kaaj noy. 🙂
বাঃ! বাসুবাবুর জবাব খুবই মনোগ্রাহী! তা কথা বাড়ানোর আগে দুটো জিনিস স্বীকার করে নিই– হ্যাঁ, আপনি পুঁজিবাদের পাপ খোজেননি, খুঁজেছেন ব্যক্তিগত সম্পত্তির ‘পাপ’। আর, হ্যাঁ, আমি খানিক অশিক্ষিতই বটে। তা, আপনি যখন সরাসরি বলেননি যে মূর্খদের সঙ্গে সংলাপে যাবেনই না, সেই ফুঁটো দিয়ে কথাবার্তা জারি রাখার একটা প্রয়াস চালাই। আসলে বুঝলেন কিনা, জ্ঞানার্জনের লোভ তো সবারই থাকে… হেঁ হেঁ…
একটাই প্রশ্ন করব। তার আগে একটু কোট করি আপনাকে…
“কিন্তু সমস্যা হল, ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা গড়ে ওঠার পেছনে সেরকম কোনও “আদি পাপ”-এর খবর আমাদের জানা নেই। কেউ কেউ বলবেন, নারীর দাসত্বই এর আদিরূপ। কিন্তু যে কারণে এই দাসত্বের শৃঙ্খল নারীকে পরানো হল তার উৎপত্তি কীভাবে হল এটা অনেকটাই অপরিষ্কার। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের রূপকার ও টীকাকারদের লেখায় বিষয়টা আদৌ ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। কে জানে, হয়তো তাঁরা এটা নিয়ে ভাবার সেরকম কোনও প্রয়োজন বোধ করেননি বা হয়তো ভেবেও কোনও কূলকিনারা পাননি।”…
আচ্ছা বলুন তো বাসুবাবু, নারীর দাসত্বের কথা আপনার মাথায় আসলো, কিন্তু কৃষিকাজ শুরুর কথা মাথায় আসলো না কেন?
উত্তর পাওয়ার আশা রাখলাম… 🙂
“ইতিমধ্যে, নারীসমাজ আবিষ্কৃত কৃষিব্যবস্থা মানুষকে নিরালম্ব, বর্বর ও যাযাবর জীবনযাপন থেকে মুক্তির উপায় দেখায়। কৃষি ও প্রজনন, এই দুই উৎপাদন ব্যবস্থার কর্ত্রী হয়ে ওঠায় তাঁর সম্মান যায় বেড়ে। সে হয়ে ওঠে সঠিক অর্থেই একজন “producer-procreatrix”। নারীর সৃজনশীলতায় ভর করে ভূমিকর্ষণের আদিমতম লাঠির (digging stick) বিবর্তন ঘটে, আসে হরিণের সশাখ শৃঙ্গ (antler pick), তৈরি হয় পাথুরে ফলাওলা ভারী লাঙল, সাথে যুক্ত হয় পশুশক্তি। এক ধাক্কায় উৎপাদিকা শক্তির ব্যাপক বিকাশ ঘটে যায়। উদ্বৃত্ত তৈরি হতে শুরু করে। ওদিকে, নারীরা ক্রমশ কৃষি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে।”
Uporer para ta dekhechhen? abaro boli, ami kintu literate der jonyo likhi. 🙂
ঠিকই বাসুবাবু… লিটারেটদের জন্য লেখেন, সো ইউ আর আ লিটারেট পার্সন অবভিয়াসলি। কিন্তু আপনার লিটারেসি দিয়ে আমার সরল প্রশ্নটা কেন বুঝলেন না সেটা রহস্য। আপনি যে প্যারাটা উদ্ধৃত করেছেন, সেটা মানুষের আধুনিক হয়ে ওঠার দ্বন্দ্বের ক্রমবিবর্তন দেখাতে গিয়ে লিখেছেন। আরও অনেক কিছুর সাথে। আর আমি প্রশ্নটা করেছি, খুব ডেফিনিটলি অ্যান্ড স্পেসিফিকালি ‘পাপ’ সম্পর্কে। যেটা খুঁজতে গিয়ে আপনি নারীর দাসত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। আমার প্রশ্নটা ঠিক এইটুকুই। কৃষির আবিষ্কার আপনার সেই ‘পাপ’ মনে হল না কেন?
দেখুন, আমি আপনার লেখা পুরোটাই পড়েছি। এবং এখনও অব্ধি একটা ডিসকোর্সই চাইছি। আপনিও বলেছেন, বিষয়টি অভিনব এবং তাতেও আপনি যে খুব কনক্লুসিভ কোনও রায় দিয়েছেন, তা নয়। ফলে খামোখা মেজাজ হারিয়ে সেই ডিসকোর্সের সম্ভাবনাটা নষ্ট করছেন কেন?
Apni no paap” shabder artha bujhechhen? ☺
Apni ki paap” shabder artha bujhechhen? ☺
বুঝিনি? হতে পারে! একটু বোঝান।
Marx Capital e “Adim Paap” ba “Original Sin” er artha korechhen kono kichur suchona. Apni Capital pratham khander “Primitive Accumulation” poricchedti doya kore porun. Agey pore thakle aro ekbar chokh bolan. Happy reading. ☺
একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে এত প্যাঁচ?
আচ্ছা…
১। ‘পাপ’ অর্থ যে ‘কোনও কিছুর সূচনা’ সে আমি বুঝেছি।
২। আবারও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
৩। আপনি ব্যক্তিগত সম্পত্তি গড়ে ওঠার পেছনে সেই সূচনাবিন্দুরই খোঁজ করতে চেয়েছেন গোটা লেখায়।
৪। সেটা করতে গিয়ে আপনার নারীর দাসত্বের কথা মাথায় এসেছে।
৫। কিন্তু কৃষিকাজের সূচনার কথা মাথায় আসেনি।
৬। কেন?
প্লিজ, এবার অন্তত আমি কী বুঝেছি এবং আমাকে কী কী পড়তে হবে সে উপদেশ না দিয়ে উত্তরটা দিন…
বুঝতে গেলে তো একটু পড়তেই হবে, দাদা। 🙂 আপনি আমার উপর রাগুন আর যাই করুন। আর আপনি যে বোঝেন নি প্রথমে সেটা আপনার প্রথম কমেন্ট থেকেই ক্লিয়ার। আর কৃষির কথা কেন ভাবিনি এই প্রশ্নটাই অবান্তর, কারণ কৃষি এবং নারী একসাথে মিশে আছে সভ্যতার বিকাশে। আপনি লেখাটা আইদার ভালো করে পড়েন নি, নতুবা পড়লেও বোঝেন নি। 🙂 আপনার ফার্দার রিডিং-ের জন্য এই বইগুলো দেখতে পারেন।–
Woman’s Share in Primitive Culture – Otis Tufton Mason
Anthropology – Alexander Goldenweiser
The Golden Bough – Sir James Frazer
What Happened in History – Gordon Childe
বেশ, পড়ব, অনেক ধন্যবাদ।
আর আমি রাগব কেন? রাগছিলেন তো প্রথম থেকে আপনি! ‘অশিক্ষিত’ ইত্যাদি কথা তো আমি ব্যবহার করিনি!
তা শেষমেশ আমার প্রশ্নটির উত্তর হল, “কৃষি এবং নারী একসাথে মিশে আছে সভ্যতার বিকাশে।” অতএব, নারীর দাসত্ব এবং কৃষিকাজ শেখা একই ব্যাপার!
বাসুবাবু, লেনিন সম্ভবত আপনাদের দেখেই সেই বেড়ালটাকে মনে করেছিলেন। যে গরম ঝোলের বাটিতে মুখ দিতে না পেরে তার চারপাশে ঘুরঘুর করে! 😀
এক্ষুনি হয়তো ‘না না, ওটা বাসু আচার্য নয়! আপনি তো মশাই ডাহা অশিক্ষিত! লেনিন বাসু আচার্যকে চিনবেন কী করে?? ওটা কাউটস্কি! নিন, এই বইগুলো পড়ে নেবেন…’ বলে চারটে বইয়ের লিস্ট দেবেন! ওয়েলকাম। সেগুলিও পড়ব সময়সুযোগ করে! 🙂
এবার আসল ব্যাপারটা বলেই দিই। মার্কস-উল্লিখিত ‘অরিজিনাল সিন’ আর আপনার ‘পাপ’ এক নয় দাদা! মার্কস পুঁজিবাদের ‘অরিজিনাল সিন’ বলে আদিম সঞ্চয়ের উল্লেখ করেছিলেন। যেটাকে কিন্তু কোনওমতেই আমাদের প্রচলিত ধারণায় ‘পাপ’ বলে অভিহিত করা যায় না। অন্যদিকে আপনি সেই ‘পাপ’-এর প্রচলিত অর্থ থেকে বেরোতে পারেননি বলেই আপনার মাথায় আসলো ‘নারীর দাসত্ব’, যা কিনা প্রচলিত অর্থেই পাপ। এ অবচেতনের খেল মশাই। আপনি ফ্রয়েডীয় চক্করে পড়ে গেছেন! আর এটা বুঝেছিলাম বলেই আমার প্রথম কমেন্টটা! যেটাকে স্পেসিফাই করার জন্য বারবার ওই প্রশ্নটা করছিলাম। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, আপনি বেড়াল বেরোলেন, আর প্রশ্নটা গরম ঝোলের বাটি! 🙁
যা বললাম, একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন। এখানে স্বীকার না করলেও চলবে। সে আশা করছিও না। তবে উপলব্ধিটা জরুরি।
আবারও বলি, লেখাটা দিব্যি। আর এই কাগজটাও খাসা হচ্ছে। এখানেই ভবিষ্যতে আরও আপনাকে পড়ার ইচ্ছে থাকল।
আর, খুবই যদি বিরক্ত হন, পরেরবার লেখার শুরুতেই না হয় প্রয়োজনীয় বইগুলোর লিস্টটা দিয়ে ঘোষণা করে দেবেন, ‘এই এই বইগুলো পড়া থাকলে তবেই লেখাটি পড়ুন! কারণ আমি লিটারেটদের জন্য লিখি!’ 🙂
শুভরাত্রি….
Ami bolechhi apni manetai bojhen ni. ☺ marx punjibader original sin khujechhen, ami private propertyr original sin khujechhi. ☺ nijer murkhami ta apni apnar peatham comment ei prakash korechhen. Ar krishir utpatti private proertyr original sin noy, the idea of fertility ta main. Jar fole projati o fasal er prashnata ase. Fole golaben na. Mone rakhben, ami kintu literate der janye likhi… chalak der janye noy. Apni amar mukhe nijer baktabya bosie dben, eta to cholbe na… apni ekhono otota chalak hon ni… :p
আরে, বললামই তো স্বীকার করতে হবে না! সুস্থ থাকুন… 😀