অনিকেতরা বুঝিয়েছে ওরা ‘বাচ্ছা ছেলে’ নয়

অভী আচার্য

 

মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের অনশন-আন্দোলনের একেবারে শেষ পর্বে যেদিন গণকনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়, সেদিন সন্ধের পর কলকাতায় ফিরছিলাম। তার আগে পেশাগত কারণে ক’দিন শহরের বাইরে থাকতে হয়েছিল, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষত ফেসবুকে, আন্দোলনের খবরাখবর মোটামুটি সবিস্তার জানতে পারছিলাম। সেটা সম্ভবত ছাত্রদের অনশনের দ্বাদশ দিন – অনিকেত ও তাঁর আরও কয়েকজন সহপাঠী ততদিনে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা নিছক ছেলেখেলা করতে অনশনের সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁদের দাবিদাওয়ার প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষ যতই উদাসীন হন না কেন, বিষয়টা নিয়ে তাঁরা নিজেরা আদ্যন্ত সিরিয়াস। আশার কথা, সেই সিরিয়াসনেসটা তাঁদের কথাবার্তায় ধরা পড়েছে – সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী-মহল থেকে আন্দোলনকে সমর্থন করে বার্তা আসতে শুরু করেছে, মিডিয়াও তাদের প্রবাদপ্রতিম উন্নাসিকতাকে পাশে সরিয়ে রেখে নড়েচড়ে বসেছে। এমন সময় দুটো ঘটনা ঘটল। এক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের তরফে বিষয়টিকে ‘প্রতীকী অনশন’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনটিকে লঘু করে দেওয়ার চেষ্টা দেওয়া হল। এবং দুই, ফেসবুকে আন্দোলনের সহমর্মী কিছু মানুষ দেখা গেল বলতে শুরু করেছেন, ‘বাচ্ছা ছেলেরা’ যে দাবি নিয়ে অনশন-আন্দোলনে বসেছেন সেগুলির প্রতিটিই ন্যায্য, এবং মুখ্যমন্ত্রী চাইলেই নিমেষে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারেন – তিনি এতদিন ২১শে জুলাই নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এবার নিশ্চয় দৃকপাতমাত্রে সমূহ জট অবলীলায় কাটিয়ে দেবেন। কেউ-কেউ আরও এক-পা এগিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখলেন, “দিদি, পায়ে ধরছি, বাচ্ছাগুলো এতদিন না-খেয়ে আছে, আপনি তো অনশনের যন্ত্রণা বোঝেন, আপনি কিছু করুন।”

এই দুটো মন্তব্যই দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মঘাতী, প্রায় সেমসাইড গোলের মতো, এবং সে-কারণেই, অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। একদিকে যেমন ক্রমাগত জোর বাড়িয়ে চলতে থাকা একটা আন্দোলনকে ‘প্রতীকী’ আখ্যা দিয়ে সরকারপক্ষ আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিজেদের কোণঠাসা অবস্থান একেবারে স্পষ্ট করে দিলেন, এবং সেই সঙ্গে আন্দোলনের চাপ আরও বাড়ার সুযোগ করে দিলেন; অন্যদিকে তেমনই আন্দোলনের সহমর্মীদের কেউ-কেউ ছাত্রদের অধিকারের মৌলিক প্রশ্নটিকে পাশে সরিয়ে রেখে সরাসরি আবেদন-নিবেদনের আবেগসিক্ত পথে হাঁটা শুরু করলেন এমন একটি বার্তা দিয়ে, যেন মুখ্যমন্ত্রীর করুণাঘন দৃষ্টিক্ষেপই এই আন্দোলনের অন্তিমতম অভিলক্ষ্য – বাচ্ছারা যেন বা স্রেফ এটুকুর জন্যই এতদিন না-খেয়ে বসে আছে।

দ্বিতীয় আত্মঘাতী গোল-প্রয়াসটির বিষয়ে আগে বলা দরকার। আন্দোলনটিকে বাইরে থেকে দেখে, আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষত যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের এবং তাদের বন্ধুবান্ধব-সহমর্মী-সমর্থকদের বিভিন্ন পোস্টে ও পোস্টারে বিষয়টি সম্পর্কে পড়ে এবং তাঁদের কারও-কারও সঙ্গে কথা বলে যেটুকু বুঝেছি – জরাজীর্ণ ও বসবাসের অযোগ্য হস্টেলের পরিবর্তে নবনির্মীয়মান হস্টেলে জায়গা পাওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য হলেও এর সঙ্গে সমূহ জড়িত ছিল ছাত্রদের অধিকারের ব্যাপকতর প্রেক্ষাপট। ছাত্র হিসেবে একটি সুস্থ, সম্পূর্ণ ও ক্রিয়াশীল শিক্ষা-পরিকাঠামোয় আমার পূর্ণ অধিকার রয়েছে – বিদ্যায়তনে নিয়মিত ক্লাস হওয়া, সুযোগ্য শিক্ষক পাওয়া, যথাযথ মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও ছাত্রভর্তির স্বচ্ছ বন্দোবস্ত থাকা যেমন আমার অধিকার, তেমনই বাইরের জেলাগুলি থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের অধিকার রয়েছে বাসযোগ্য হস্টেল পাওয়ারও; এবং এর প্রতিটিই সুনিশ্চিত করা স্বাস্থ্যশিক্ষা-কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। যদি অন্য কোনও ব্যস্ততায় বা পৃথক কোনও উদ্দেশ্যসিদ্ধিতে ব্যাপৃত থাকার কারণে কর্তৃপক্ষ এই বিষয়গুলিতে নজর দেওয়ার অবকাশ না-পান তবে সে ব্যর্থতা তাঁদেরই, এবং সে ক্ষেত্রে আমার অধিকার রয়েছে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার। মনে রাখতে হবে, আমাকে সুস্থ একটি শিক্ষা-পরিকাঠামো দেওয়া কর্তৃপক্ষের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে – ছাত্র-হস্টেল বাসযোগ্য রাখা তাঁদের দাক্ষিণ্য নয়, অবশ্যকর্তব্য। অনশনরত ছাত্ররা আসলে এই বিষয়টিই কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে চেয়েছিলেন বলে আমার বিশ্বাস।

এবং সে-কারণেই মেডিক্যাল কলেজের অনশন-আন্দোলনকে স্রেফ বাসযোগ্য হস্টেলের দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে না-দেখে ছাত্র অধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে দেখা উচিত। ঘটনা হল, অনশনের একেবারে প্রথম দিনটি থেকেই অনশনকারীদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে একবারও মনে হয়নি যে, তাঁরা নিছক খবর হওয়ার জন্য এত কাণ্ড করছেন – বস্তুত, তাঁদের বিবৃতিতে ও ফেসবুক-বার্তায় বারবারই ধরা পড়েছে তার ঠিক উলটোটাই – নির্ভুল বোঝা গিয়েছে যে, তাঁরা হঠকারিতাবর্জিত ও আদ্যন্ত সিরিয়াস, নেহাৎ ছেলেখেলা করতে এমন একটি সিদ্ধান্ত তাঁরা নেননি। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের ক্রিয়াকর্মে কোত্থাও কোনও অসংযম বা অতিরেক ধরা পড়েনি, কর্তৃপক্ষকে তাঁরা অনন্তকাল ঘেরাও করে রাখেননি, তাঁদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়ার মতো গরমাগরম বিবৃতি দেননি, তাঁদের যখন-খুশি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, কার্যভার গ্রহণ করা বা দায়িত্ব ছেড়ে সরে দাঁড়ানোয় বাধা দেননি, শিক্ষায়তনের কোনও ক্ষতি করেননি, এমনকী উত্তেজনার মুহূর্তে যে সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেললেও তাতে কিছুমাত্র ব্রহ্মহত্যার শাপ লাগত না, সেই ক্যামেরাও তাঁরা পরম মমতায়, কেবলমাত্র অবস্থানে সামিল মহিলাদের শালীনতারক্ষার প্রশ্নে, সাময়িকভাবে ঢেকেই দিয়েছেন। অনশনে যাওয়ার আগে, বা নতুন ছেলেমেয়েরা অনশনে যোগ দেওয়ার আগে প্রতিবার তাঁরা কর্তৃপক্ষকে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছেন, তাঁদের সিদ্ধান্তের জন্য সংযতভাবে অপেক্ষা করেছেন, নিজেদের আন্দোলনকে মিডিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেননি, এবং সর্বোপরি, কোনও রাজনৈতিক দলের অযাচিত পৃষ্ঠপোষণ দাবি করেননি। বস্তুত, অবস্থান-স্থলে মুকুল রায়কে ঠাণ্ডা কাঁধ দেখিয়ে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতির ক্ষীর খাওয়ার জায়গা অন্যত্র থাকলেও  মেডিক্যালে কদাচ নেই।

এমন একটি সংযত ও পরিণত মানসিকতাসম্পন্ন আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে অনশনরতদের জন্য তা হলে কেন ‘বাচ্ছা ছেলে’র অভিধা? যাঁরা ফেসবুকে ক্রমাগত না-বুঝেই এই ন্যারেটিভটি রচনা করে গিয়েছেন, তাঁদের অনেককেই ব্যক্তিগতভাবে চেনার সুবাদে বিলক্ষণ জানি, তাঁরা এটা করেছেন কোনও হঠকারী বা অন্তর্ঘাতমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, একেবারেই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর আন্তরিকতা থেকে। আমার বন্ধু বা ভাইয়েরা যখন দিনের পর দিন না-খেয়ে রয়েছে, চোখের সামনে দেখছি তাদের ব্লাড প্রেশার নামছে, নাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ছে, রক্তে শর্করার মাত্রা ও জলের পরিমাণ দ্রুত কমে আসছে, এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে ওঠাই তো স্বাভাবিক। মনে হওয়াই তো স্বাভাবিক যে, ওরা অন্তত প্রাণে বেঁচে থাক। কিন্তু তা বলে অনশনরতদের ক্রমাগত ‘বাচ্ছা ছেলে’ বলে উল্লেখ করা হতে থাকলে, তাদের ক্রিয়াকর্মকেও পরোক্ষে বালঃক্রীড়ারই নামান্তর বলে মেনে নেওয়া হয় না কি? আমি যদি অনশনকারীদের দাবির সমর্থক হই, তাদের আদর্শগত অবস্থানের প্রতি আস্থাবান হই, এবং সেই দাবি আদায়ে তারা যে পথ বেছে নিয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই, তা হলে আমার তো আরওই সতর্ক থাকা উচিত যাতে দুশ্চিন্তায় আমার মন আর্দ্র হয়ে এলেও সে আর্দ্রতা তাদের যেন কদাচ স্পর্শ না-করে, আমার দুর্বলতা যেন তাদের মধ্যে সংক্রামিত না-হয়। কিন্তু ক্রমাগত আমি তাদের বাচ্ছা ছেলে বলেই উল্লেখ করে চললাম, এবং ‘চোখের-জলে-ভিজিয়ে-দিলেম’ সূচক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এমন বার্তা দিতে থাকলাম যেন তাঁরা দয়াপূর্বক একটু নমনীয় হলেই সব সমস্যার সর্বাঙ্গসুন্দর নিরসন হয়। এমন একটি দুর্বল মানসিক অবস্থান নেওয়ার ফলে কর্তৃপক্ষের ওপর থেকে চাপ একটু হলেও যেন বা সরিয়েই নেওয়া হল, তাদের প্রতি এমন একটি অনুচ্চারিত বার্তাও হয়তো বা চলে গেল নিজেদের অজান্তেই যে, আমার অনশনদৃপ্ত (অনশনক্লিষ্ট নয়) বন্ধুরা নয়, ইতিহাস রচনার গুরুভার মহামহিম কর্তৃপক্ষেরই ওপরে। কপাল ভাল, আমার-আপনার দুর্বলতা ছাত্রদের মধ্যে সঞ্চারিত তো হয়ইনি, পরন্তু তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের সমর্থন তাঁদের কাম্য হলেও আমাদের হৃদয়দৌর্বল্য তাঁদের অভিপ্রেত নয়। অনিকেত ও তাঁর বন্ধুদের তরফে এই বার্তা তাঁদের পরিণতিবোধ ও বিচক্ষণতারই পরিচয়।

বাকি রইল ‘প্রতীকী অনশন’। অধিকার-রক্ষার আন্দোলন যে কতদূর শক্তিশালী হতে পারে, তার অন্তর্নিহিত শক্তি যে আদর্শের কত গভীর থেকে উঠে আসে, সুবিধাবাদী রাজনীতি ও পাইয়ে দেওয়ার টোটকায় বিশ্বাসী ক্ষমতাসীন শাসকদল স্বভাবতই তার মর্মোদ্‌ঘাটন করে উঠতে পারেননি। শাসকদলের ধ্বজাবাহী ভদ্র বা মাজীরা ভেবেছিলেন, ‘বাচ্ছা ছেলেদের’ ব্যাপার যে-হেতু, অচিরেই তা মাটি নেবে। কিন্তু কালক্রমে যখন দেখা গেল সমুদ্রঝড়ের মতো অনশন আন্দোলন ক্রমান্বয়ে তার শক্তি বাড়াচ্ছে, গণকনভেনশনে উপস্থিত বিদ্বৎসমাজের প্রতিনিধিরা যখন জানালেন এই আন্দোলনকে কিছু দিতে নয়, এর থেকে তাঁরা কিছু নিতেই এসেছেন, স্পষ্টতই বোঝা গিয়েছিল ‘হু ব্লিঙ্কস ফার্স্ট’-এর চোখে-চোখ রাখা লড়াইয়ে ক্রমে মাটি নিচ্ছে সরকারপক্ষই। ভুললে চলবে না, ভাঙব-তবু-মচকাব-না অবস্থান নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, সিনিয়র ছাত্রদের মধ্যে নবনির্মিত হস্টেলে শয্যাবিতরণ নিয়ম-বিরুদ্ধ। আফসোস, মূঢ় ও দাম্ভিক তাঁরা বুঝতেই পারেননি যে স্বার্থান্বেষী সেই নিয়মটার অচলায়তনেরই বিরুদ্ধে লড়াই চলছে মেডিক্যালে।

বুঝতে যে পারেননি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এ-হেন পরিস্থিতিতে অনশন-আন্দোলনকে সরকারের তরফে ‘প্রতীকী’ আখ্যা দেওয়া। ‘প্রতীক’ শব্দটির অর্থ সম্পর্কে তাঁরা যে যথার্থ অবহিত নন, তা অবশ্য তাঁদের বহুলপ্রচারিত ‘সততার প্রতীক’ বাক্যবন্ধ থেকেই পরিষ্কার। কিন্তু সে-প্রসঙ্গ থাক। আন্দোলনটিকে প্রতীকী আখ্যা দিয়ে কার্যত হিতে বিপরীত করলেন সরকার। আন্দোলনকে গুরুত্বহীন প্রমাণ করার নির্বুদ্ধিতাপ্রসূত এষণার বিষবৃক্ষে ফলও ফলল তৎক্ষণাৎ – এতে অনিকেতদের জেদ বাড়িয়ে আন্দোলনকে আরও জোরালো, আরও ক্ষুরধার করে তোলা হল। গোটা আন্দোলনটি তৈরিই হয়েছিল স্বাস্থ্যশিক্ষাক্ষেত্রে অযোগ্যদের হাতে ক্ষমতার নিরঙ্কুশ কেন্দ্রীভবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বীজ থেকে, আন্দোলনের প্রতিটি পর্বে সেই একই ভুল করে চলার প্রবণতা বজায় রেখে চূড়ান্ত মূর্খতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিল সরকার। আর শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল, শাসকদল নয়, কলেজ-কর্তৃপক্ষ নয়, এমনকী তাঁদের তাঁবেদার দালালচক্রও নয়, ইতিহাস রচনা করে আন্দোলনই। এমনকী ছাত্রদের জয়ঘোষণার মুহূর্তেও প্রমাণিত হল, স্বেচ্ছায় নয়, কোনও স্ব-আরোপিত মহত্ববোধের তাড়নায় নয়, স্রেফ বাধ্য হয়েই তাদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। মেনে নিয়েছে পশ্চাদপসরণের অন্য কোনও সম্মানজনক উপায় ছিল না বলেই।

এ-রাজ্যের মানুষ অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন অঙ্কুরে বিনষ্ট হতে দেখেছেন। আন্দোলনের ভেতরে খোচড় ঢুকিয়ে দিয়ে, আন্দোলনের নেতৃত্বকে ক্ষমতার স্বাদ পাইয়ে দিয়ে, বাড়িতে নোটের বান্ডিল পৌঁছে দিয়ে বা শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় টেনে নিয়ে লড়াইয়ের হাওয়া বের করে তাকে চুপসে দিতে হয় কীভাবে – পুরনোদের কাছ থেকে নতুনেরা সে শিক্ষাও নিয়েছেন দস্তুরমতো। কিন্তু, নিজেরা হাতেকলমে করে আসেননি বলেই সম্ভবত, স্বার্থবোধহীন ছাত্রদের অধিকার-রক্ষার আন্দোলনের চেহারা সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন না তাঁরা। ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। আর আমরা যারা গত বছরকয়েকের অভিজ্ঞতা থেকে ধরেই নিয়েছিলাম যে, শাসকদলের সর্বোচ্চ স্থানটিতে সমস্যার কথা পৌঁছে দিতে পারলেই আশীর্বাদের মতো আকাশ থেকে খসে পড়বে সমাধানসূত্র, তারাও যারপরনাই হতাশ হয়েছি বই কী! যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি ও মেডিক্যাল দেখিয়েছে, অধিকার কথাটির অর্থ – অস্যার্থ ও গূঢ়ার্থ উভয়ই – ছাত্ররা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে ও বোঝে।

আপাতত এটুকুই পরম ভরসার কথা।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...