ছাতাবাহার
(দ্বিতীয় ভাগ)
“স্বপ্ন যখন নীল ঝিলমিল ছাতা
দুঃস্বপ্ন ডাক দিলে তুমিই পরিত্রাতা”
১
বাবু শ্রী মহেন্দ্রলাল দত্ত; তিনি আমাদের ছাতাবাচক প্রেম
এবং ক্রমাগত ছাতাপূর্বক ভালোবাসা
এক্ষণে দত্ত কোম্পানির অনেক জয় হোক
মনে হয়, তিনি আমাদের এই বয়সের ছাতাবাহার
মেশামিশিগুলি যথেষ্ট পছন্দ করেছেন
এ বড়ো পছন্দের সময়, এ বড়ো আনন্দের সময়; সম্পর্ক জানাজানি হোক
এ সময় বড়ো সন্দেহ; দুঃসহ, এ বড়ো সুন্দর সময়
এই মুহূর্তে দত্তবাবুর কণ্ঠে একটি পুরাতনী রবীন্দ্রসঙ্গীত বসিয়ে দিলে
আমার মনোবাঞ্চা কিছুটা পূরণ হতে পারে
কোনও দৃশ্য তো অনন্তকাল টিকে থাকে না; ফলে গান
একদিন শেষ হবে। আর তখন
ছাতার পশ্চিম দিকের বঙ্গদেশ থেকে
মহেন্দ্রবাবু বাইরে বেরিয়ে এসে বলবেন
‘যাও, এবার দু’জনে শুধু পূর্বজন্মের যুগলছায়া হয়ে বেঁচে থাকো’
২
কালো ছাতাটির নাম রেখেছিলাম বংশীবদন।
সে একদিন সুর হয়ে কথা হয়ে গানের খাতা হয়ে
বৃষ্টি-শেখার স্কুল হয়ে
আমাকে সোজাসুজি বললো ‘তুমি একজন সাংঘাতিক বয়স-চোর,
এক্ষুণি দুপুরের ঘুম-ভাঙানো দিদিমণিকে ডেকে দাও
আমি তাকে আন্দোলনের গান শেখাবো’
রঙিন ছাতাটি বললো ‘আমার নাম রাসলীলা বেগম, আমার যাবতীয় পেখম
প্রকাশ হোক। আকাশের গায়ে যে-গান বাতাসের মতো
চিরদিন লেপ্টে থাকে
আমি তো একমাত্র সেটাই লিখতে পারি
‘স্বপ্ন যখন নীল ঝিলমিল ছাতা
দুঃস্বপ্ন ডাক দিলে তুমিই পরিত্রাতা…‘
আমাকে এখন নবীন সাহস হয়ে ভালোবাসো
আমাকে রঙিন তোমাকে দু’বেলা ভাত রেঁধে দেবে’
এদিকে ডোরাকাটা ছাতাটির জন্য একটা জোরালো নাম রাখতেই
গানের ইস্কুল দু’ভাগ হয়ে গেল…।
কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে এপারে সাত-পাকে বাঁধা বাঘ
ও বাঘিনী; হারমোনিয়ামের এত হাড়গোড়, এত রক্তপাত, এত মাংস…
শ্রীচৈতন্যের দেশে একটা ছাতা যে এত হিংস্র হয়ে উঠতে পারে
সেটা জানা ছিল না