৪৬ সপ্তাহে মাহিম সমুদ্রতট প্লাস্টিকমুক্ত করলেন দম্পতি

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

গোটা বিশ্ব যখন প্লাস্টিক দূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়নে আক্রান্ত, বিজ্ঞানীরা দিবারাত্রি হিমসিম খাচ্ছেন পৃথিবীর জ্বর কমানোর আপ্রাণ চেষ্টায়, ঠিক তখনই মুম্বাইয়ের এক দম্পতি নেমে পড়লেন প্লাস্টিক দূষণ নিধনের কাজে। মাত্র ৪৬ সপ্তাহে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী রাবিয়া তিওয়ারি প্লাস্টিকমুক্ত করেছেন একটা আস্ত সমুদ্র সৈকত! ২০১৭তে যখন তারা এই কাজে নামেন, তখন কাজটা প্রায় অসম্ভবই মনে হয়েছিল। কোনওরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু একজোড়া গ্লাভস আর অদম্য ইচ্ছেকে সঙ্গী করে এই দম্পতি মুম্বাইয়ের অপেক্ষাকৃত অপরিচিত মাহিম সমুদ্রতটকে দূষণমুক্ত করার কাজে নেমে পড়েন। কিন্তু অচিরেই এই আন্দোলনে কাঁধ মেলান আরও বেশ কিছু মানুষ এবং ৪৬ সপ্তাহে সরানো হয় প্রায় ৬৫০ টন প্লাস্টিক।

ভিয়াকম ১৮-র প্রাক্তন সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে একটি ডিজাইন ফার্মের মালিক ইন্দ্রনীল ও সেই ফার্মেরই ব্যবসায়িক আধিকারিক স্ত্রী রাবিয়া মাহিমের সি-ফেসড অ্যাপার্টমেন্টে এসে বুঝতে পারেন, জায়গাটা তাদের স্বপ্নের অ্যাপার্টমেন্টের ধারেকাছেও নয়। যতদূর দেখা যায়, প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক, এককণা বালির আভাসমাত্র নেই! ইন্দ্রনীল জানান ব্রিহানমুম্বাই মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের (বি এম সি) কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। “যে ঠিকাদারদের বিচ পরিষ্কারের জন্য রাখা হয়েছিল তাদেরও কোনও হেলদোল নেই, তখন আমি আর আমার স্ত্রী নিজেরাই জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজে হাত দেব ঠিক করি,” ইন্দ্রনীলবাবু জানান।

মুম্বাইনিবাসী আইনজীবী আফরোজ শাহের শহরের সর্ববৃহৎ ক্লিন-আপ ড্রাইভের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে এই দম্পতি ওই বিল্ডিঙের আরও দুজনকে সঙ্গী করে ৯ই সেপ্টেম্বর মাহিম দর্গা লেন থেকে হিন্দুজা হাসপাতাল অব্দি এক কিলোমিটার দীর্ঘ বিচ পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই প্রত্যেক শনি-রবিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা অব্দি চলত এই পরিষ্কারের কাজ।

ইন্দ্রনীলবাবুর কথায়, “এভাবে পরিষ্কার করাটা খুবই খাটনির, কিন্তু কোনও মল বা পাবে যাওয়ার বদলে আমরা প্রত্যেক শনি-রবিবার কয়েক ঘণ্টা ধরে বিচ পরিষ্কার করতাম।” তাঁরা সবচেয়ে বেশি করে চেয়েছিলেন আশেপাশের বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষ ও পৌর সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, কারণ মাহিম সমুদ্রতট বহুদিনের উপেক্ষিত। যদিও তারা যেমন আশা করেছিলেন সেরকম প্রতিক্রিয়া পাননি একেবারেই। মাত্র ২৫-৩০ জনের দল নিয়ে তাঁদের পক্ষে এক কিলোমিটারের বেশি এগোনো সম্ভব হয়নি।

যদিও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ইন্দ্রনীল ও রাবিয়া প্রতিনিয়িতই আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে আর্জি জানান। এমনকি এই দম্পতি ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করতে দেখে বিএমসি-র লোকেরাও এসে হাত লাগায়। ৪৬ সপ্তাহ আগে যেখানে শুধুই প্লাস্টিক ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না, এখন সেই সমুদ্রতটই তার পুরনো শ্রী ফিরে পেয়েছে, আবার চকচকে বালি দেখা যাচ্ছে, যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের স্তূপ আর নেই। যদিও ইন্দ্রনীল ও রাবিয়া এখনও প্রতি সপ্তাহেই এই পরিষ্কারের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন, কারণ কাজ বন্ধ করলে আবার হয়তো পুরনো পরিস্থিতিতেই ফিরে যেতে হবে।

এই সমুদ্রসৈকত দূষিত হবার প্রধান কারণ দূষিত মিঠি নদী। নদীটা এখন শুধুই একটা নোংরাবহনকারী নদীতে পরিণত হয়েছে এবং সেটা মিশেছে মাহিম বিচের কাছে আরব সাগরে। ইন্দ্রনীল জানান তাঁরা নদীতে দূষণমাপক যন্ত্র বসানোর জন্য সরকারকে অনেকবার আর্জি জানিয়েছেন। তাছাড়াও ইন্দ্রনীলের মতে এই স্বল্পপরিচিত সমুদ্রতট মাদকাসক্তদের আড্ডাখানা। “অন্য বিচের মতো এখানে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা নেই, যার জন্য বিচটা একদমই নিরাপদ নয়,” ইন্দ্রনীল জানান। মাহিম সমুদ্রতটকে প্লাস্টিকমুক্ত করা ছাড়াও তাঁরা পুলিশ-টহল ও আলোর ব্যবস্থার জন্য আর্জি জানান, যাতে সমুদ্রতটটা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়।

যদিও সম্প্রতি একবার-ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞায় দূষণের হার হয়তো কমবে, তবু ইন্দ্রনীল-রাবিয়া মনে করেন প্রত্যেকেরই পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাঁর প্রয়োজনীয় কাজটুকু করা উচিত। যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজন এখনই সবচেয়ে বেশি। এই দম্পতি তাঁদের কাজ চালিয়ে যাবেন এবং তাঁরা আশা করেন ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে তাঁরা পাশে পাবেন। খুব শিগগিরই ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮তে তাঁরা মাহিম সমুদ্রসৈকত পরিষ্কারের বর্ষপূর্তি পালন করতে চলেছেন — সেই দিন আবার কোস্টাল ক্লিন আপ ডেও বটে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4658 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...