মাসুম মাহমুদ
অনুভূতি
বুড়োর পানের মাতলামি আছে। ঐ একবেলা, মধ্যাহ্নভোজের পর। আহার শেষে আজ পান মুখে দিতে যাবে অমনি ভাতিজার সমাগম। সদ্য অষ্টম শ্রেণিতে উন্নতি লাভ করা ভাতিজা ক্ষিপ্রবেগে বলছে, জেঠা হুনছো? পাশের বাড়ির ইয়াছমিন গলাত ফাঁস দিছে।
ভাতিজা দম নেয়। বুড়োর হাত ফসকে পড়ে যায় পানের খিলি। গোসা সীমালঙ্ঘন করে। উদ্দ-মনস্তাপে তিনি চ্যাঁচামেচি করেন, কাপুরুষ কোথাকার, একেবারে জ্ঞান-বুদ্দি নেই, সঠিক শিক্ষার অভাব, এমন অস্থির-অধৈর্য মেয়েছেলের বেঁচে না থাকাই সমীচীন।
কৌতূহলী ভাতিজা দম ছেড়ে ফের বলে, ফাঁস লওনের সময় হের জেঠাতো ভাই দেখছিল। মরতে পারে নাই।
মুহূর্তে জ্বলজ্বল করে ওঠে বুড়োর সম্মুখভাগ। উৎসাহে ভরে যায় বক্ষস্থল। মেয়েটির বেঁচে থাকার আনন্দে দু’চোখ ভিজে আসে। জীবন সুন্দর ইস্তেহারে বুড়ো আরও একবার বলেন, আহা! মানুষটা বেঁচে গেল।
প্রহসন
নাম, রসিক মিয়া।
বলে সে মৃদু হাসে। এমন হাসির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকায় পাত্রীর বড় ভাই, জিজ্ঞেস করে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কিছু আছে?
পাত্রের চটপটে উত্তর, চুলকানি আছে।
পাত্রীর স্বল্পভাষী বড় ভাই খানিকটা অবাক হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে, আপনি কী করেন?
পটাপট উত্তর তার, চুলকাই।
পাত্রের শিষ্টাচারবহির্ভূত জবাবে তাকে পাগল আখ্যা দিয়ে বিয়েতে অমত প্রকাশ করে পাত্রীর পরিবার।
এর দিন কয়েক পর, গঞ্জের বাজারে সন্দেহপ্রবণ ঘোরাফেরায় রসিক মিয়াকে পুলিশ আটকায়। তার আধ পুরানো পাঞ্জাবি আর প্যান্টের পকেট হাতিয়ে পুলিশের বড় কর্তার প্রশ্ন, কী করা হয়?
একই সেই উত্তর, চুলকাই।
থাকিস কই? বাড়িঘর নেই? বড়কর্তার পরের প্রশ্ন।
আত্মস্থ উত্তর তার, চুলকানি আছে।
ঠিক তখনই বড়কর্তার সঙ্গে থাকা লম্বা গড়নপেটনের গোঁফ সমেত এ এস আই মল্লিকবাবু বলেন, সম্ভবত পাগল স্যার।
পাগলে সময় নষ্ট করবে না তাই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পরিবার ছাড়েনি ক্ষুদ্র কণা। রসিক মিয়ার এহেন আচরণে তারা চিন্তায় পড়ে যায়। অগত্যা মানসিক ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার তাকে নেড়েচেড়ে দেখে, তাতে ডাক্তারের বোধশক্তি সম্পন্ন হল কিনা ঠাওর করা না গেলেও ডাক্তারকে বলতে শোনা গেল, কী করেন আপনি?
হৃষ্টতা নিয়ে সে বলে, চুলকাই।
পাশে থেকে কেউ একজন টনক নাড়েন, এটাই গোলযোগ তার।
শুনতে পেয়ে ডাক্তার জিজ্ঞেস করে, রোগী আপনার কী হয়?
লাজুক ভঙ্গিতে সে বলে, স্ত্রীর বড় ভাই।
স্ত্রীর বড় ভাইকে চুপ থাকার বার্তায় ডাক্তারের পরের প্রশ্ন, আপনার হয়েছে কী বলুন তো?
চুলকানি। রসিক মিয়ার দৃঢ়চেতা জবাব।
শুনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তার প্রেসক্রিপশনে লেখেন — রেফার টু ডার্মাটোলজিস্ট।
তৎপরে বোন জামাইয়ের বদৌলতে বাড়িতেই ডাক্তারের আগমন। ষাটোর্ধ্ব বয়সের চর্মবিশেষজ্ঞ, কাঁচাপাকা দাড়ির চেহারা। কণ্ঠে আহ্লাদী সুর, চুলকানিটা ঠিক কখন হয় বেটা?
পরিশোধিত মেজাজে সে রসিয়ে রসিয়ে বলে, ন্যাকামি দেখলে।
ফাঁদে পড়ে ডাক্তার। তার তির্যক চোখে চোখ রেখে রসিক হাসে, মিছে বক্তৃতা শুনলেও আমার চুলকায়। প্রহসনে চুলকায়। অসার পাণ্ডিত্যে চুলকায়। চাটুকারিতা অধিকন্তু চাতুর্যতাতেও চুলকায়। এসব বেহায়াপনা আর ভণ্ডামি দেখে দেখে গা জ্বলে যায়। সহ্য করতে না পেরে চুলকায়। মাথা চুলকায়। বগল চুলকায়। অতি জ্বললে পাছাও চুলকায়। আমি চুলকাইয়া চুলকাইয়া সুখ পাই।
সব শুনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তার প্রেসক্রিপশনে লেখেন — রেফার টু সাইকিয়াট্রিস্ট।
চাতুরি
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী মৌখিক দিতে এল। প্রশ্নকর্তা বললেন, সাধারণত প্রার্থীকে আমরা প্রশ্ন করি। আজ ব্যতিক্রম। মেধার পরিচয় দিতে প্রার্থী আমাদের প্রশ্ন করবে।
প্রার্থীর প্রথম প্রশ্ন, এই চাকরি করতে আমি আগ্রহী কেন?
প্রশ্নকর্তা চুপ।
দ্বিতীয় প্রশ্ন তার, কেমন মাইনে প্রত্যাশা করি?
প্রশ্নকর্তা এবারও চুপ।
তৃতীয় প্রশ্ন করে প্রার্থী, এই কাজের অভিজ্ঞতা আছে আমার?
প্রশ্নকর্তা কথা বলে না।
মুখ গম্ভীর করে প্রার্থী জানায়, আপনি একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেননি। সুতরাং আমার চাকরি হবে না।