রাণা আইয়ুব
ভারতের সাংবাদিকতার ইতিহাসে রাজনৈতিক স্টিং অপারেশনের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যে ক'টি হয়েছে তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য সাংবাদিক রাণা আইয়ুবের গুজরাত দাঙ্গা পরবর্তী স্টিং অপারেশন। রাণা ২০১০-এ তদন্তমূলক সংবাদসংস্থা 'তহেলকা'য় কর্মরত ও সেই সংস্থার কমিশনেই গুজরাতে এসেছিলেন। নিজের জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ আট মাস ছদ্মপরিচয়ের আড়ালে থেকে এই দুঃসাহসিক অন্তর্তদন্তের পথে যাত্রা করেছিলেন রাণা। তদন্তের বিষয়বস্তু ছিল গুজরাত দাঙ্গা, ভুয়ো সংঘর্ষে নিরীহ মানুষদের হত্যা ও গুজরাতের গৃহমন্ত্রী হরেন পাণ্ডিয়ার হত্যারহস্য। তদন্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রপোষিত সন্ত্রাসের অনেক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসা সত্ত্বেও 'তহেলকা' শেষ মুহূর্তে তা প্রকাশের পথ থেকে সরে আসে। রাণা পরে নিজ উদ্যোগে Gujarat Files: Anatomoy of a Cover up নামে মূল বইটি প্রকাশ করেন। বর্তমান অংশটি সেই মূল বইয়ের বাংলা অনুবাদ 'গুজরাট ফাইলস -- এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের ময়নাতদন্ত'-এর দশম পরিচ্ছেদের নির্বাচিত অংশ। প্রসঙ্গত, মৈথিলী রাজ রাণা আইয়ুবের ছদ্মনাম।
আমেদাবাদে জীবনটাকে দিব্যি উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম। অথবা অজয়ের ভাষায়, একজন খাঁটি আমদাবাদি হয়ে উঠেছিলাম। রাত একটার সময় আমেদাবাদের ‘আপার ক্রাস্ট’ (একটা বিখ্যাত বেকারি) থেকে কীভাবে আপেলের পিঠে জোগাড় করতে হয়, তা শিখে গিয়েছিলাম। হস্টেলের মেয়েদের সঙ্গে রাত দু’টোর সময় ডিম খাওয়ার জন্য বাইরে বেরোতাম। দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে আর ন-দিন ধরে চলা গরবা-য় নেচে নেচে পানির আর আমার পা লাল হয়ে যেত।
লাঞ্চ খাওয়ার একটা জায়গা আবিষ্কার করেছিলাম আমরা। সেখানে দারুণ কাথিয়াবাড় ঘাটিয়া আর লাল লঙ্কা দিয়ে সাজানো লাঞ্চের নানান চমৎকার পদ পাওয়া যেত। একবার তিন দিনের জন্য নেহেরু ফাউন্ডেশনের ঘর ছেড়ে দিতে হয় আমাকে, তখন ছাত্রী হিসেবে এনআইডির হস্টেলে জায়গা পেয়ে যাই। অন্য একজন ছাত্রীর সঙ্গে একঘরে থাকতাম, সে সারা রাত জেগে একেবারে ভোর পর্যন্ত প্রেমিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলত। গোটা ছাত্রজীবনে হস্টেলে থাকার খুব ইচ্ছে ছিল আমার, জীবনের সেই দিকটা যেন উপভোগ করছিলাম আমেদাবাদে।
তবে সবই খুশির খবর ছিল না। মাইকের চলে যাওয়ার সময় এসে পড়ল। ‘পাকওয়ান’-এ গেলাম আমরা৷ বিদায়ী নৈশভোজ হিসেবে ওর প্রিয় থালি নেওয়া হল। ওর ল্যাপটপে আমেদাবাদের অসাধারণ কিছু ছবি ছিল। এতদিনে বেশ ভালো হিন্দি বলাও শিখে নিয়েছিল ও। সারা রাত গল্প করে যে যার ঘরে ফিরলাম। সকাল দশটায় দিল্লি যাওয়ার বিমান ধরল মাইক। পরের দিন সকালে আমার ঘরের দরজার নিচে একটা ছবি আর একটা ময়ূরের পালক দেখতে পেলাম। ছবিটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের, তার পিছনে মাইক হিন্দিতে লিখেছে : প্যারি মৈথিলি, আপনা খেয়াল রাখনা। আমার বন্ধু, আমার সান্ত্বনা, আমার অপরাধের সঙ্গী চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। কথা বলার মতো এমন আর কেউ নেই যে রাণা আইয়ুবকে চেনে। শেষ কাজটুকুর জন্য ২০১১ সালে একদিনের জন্য আমেদাবাদে আসবে মাইক।
২০১৩ সালে কিছু নথিপত্র পাওয়ার জন্য আবার আমেদাবাদে যেতে হয়। মায়া কোদনানি তখন জেলে। আমার স্টিং অপরাশেন শেষ, সেটা কবে দিনের আলো দেখবে তার জন্য অপেক্ষা করছি এবং তেহেলকা-য় কাজ করে চলেছি। নথিপত্রগুলোর জন্য যে-অফিসারের সঙ্গে দেখা করলাম তিনি বললেন মায়াবেনের সঙ্গে জেলে দেখা করেছেন তিনি। আরও বললেন, জেলে মায়াবেনকে ওশোর কিছু বইপত্র পাঠানোর কথা ভাবছেন। শুনে চমকে উঠলাম। তিনি বললেন, “উনি খুব কাঁদছিলেন, ওঁকে ছাড়িয়ে আনতে বলেছিলেন। প্রায় অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছেন। আধ্যাত্মিকতা হয়তো ওঁকে সাহায্য করতে পারে৷”
স্টিং অপারেশন চালানোর সময় একদিন বিকালে যখন মায়াবেনের বাড়িতে লাঞ্চ খেতে যাই, উনি আমাকে আম খেতে দিয়েছিলেন। আমের মরশুম তখন শেষ৷ আমের চাটনি বানিয়ে নিজের ছেলের জন্য রেখে দিয়েছিলেন তিনি — খুব শিগগিরিই আমেরিকা থেকে তাঁর ছেলের আসার কথা ছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরে উনি বলেছিলেন, ‘তুমি খাও, তাহলে মনে হবে আমার ছেলেই খাচ্ছে। তুমি আমার মেয়ের মতো, মৈথিলী।’
সেদিন বিকালে ওঁর কাছে গীতাসার ব্যাখ্যা করেছিলাম, বলেছিলাম এটা আমার সংস্কৃত-শিক্ষক বাবার কাছে শেখা। যে মেয়ে বিদেশে থেকেছে সে যে এখানকার বাসিন্দাদের থেকেও ধর্ম সম্বন্ধে বেশি জানে, তা দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। ‘বুঝলে মৈথিলী, আমরা আমাদের সংস্কৃতি পুরো হারিয়ে ফেলেছি৷ ওই মুসলিমগুলোর কথা ভাবো। ওদের বাচ্চাগুলো পর্যন্ত একেবারে কট্টর।’ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। লাঞ্চে মাত্র দু’রকম নিরামিষ পদ ছিল — পাঁপড় আর পুরি। মায়াবেন নিজেই রান্না করে পরিবেশন করেছিলেন।
গুজরাত ফাইলস – এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের ময়নাতদন্ত
লেখক – রাণা আইয়ুব
ভাষান্তর – অসীম চট্টোপাধ্যায়
সেতু প্রকাশনী, জানুয়ারি ২০১৭
দাম – দুশো টাকা
সেদিন সন্ধেয় আমরা কথা বলা শুরু করি। মুসলিমদের যে উনি ঘৃণা করতেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু কথাবার্তার সময় মোদির প্রতি ওঁর ঘৃণাটা আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল। নিজের অপছন্দের লোকেদের শেষ করার জন্য ওঁর এবং গোরধন জাদাফিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে যে নিজের সুবিধামতো ব্যবহার করেছেন মোদি, সেটা বুঝিয়ে দিতে কোনও কার্পণ্য করেননি মায়াবেন।
‘এই নতুন প্রজন্ম, এদের কিচ্ছু নেই, কোনও আদর্শ নেই, (চোখের সামনে) কিছু ঘটতে দেখলেও এরা রাস্তায় নামবে না।
‘আমাদের ধর্মে কী শেখানো হয় ভাবো — একটা পিঁপড়েকেও আঘাত কোরো না। একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাচ্চাদের এ-সব শেখানো হয়। আর ওইসব লোকেদের ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় খুন করো, খুন করলে তবেই বোঝা যাবে যে তুমি একজন মুসলিম। ইয়ে লোগ ক্যা শিখাতে হ্যায় কি আপ এক আদমি কো ভি মুসলমান বানাও তো আপনো জন্নতি পরি মিলেগা। মাদ্রাসাগুলোয় এসবই শেখানো হয়। আরে নিজের ছেলেমেয়েকে অন্তত এটুকু তো শেখাও যে তোমরা ভারতীয়। পাকিস্তান জিতলে তোমরা বাজি ফাটাবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’
আভি ইন লোগোঁ কো ২০০২ কে বাদ কম নেহি হুয়া?
হাঁ, আভি থোড়া কম হুয়া হ্যায়।
আচ্ছা, আপনি কি প্রায় আট ঘণ্টা আদালতে থাকেন?
আর কী করব? আমার প্র্যাকটিস কমে যাচ্ছে। কিন্তু আদালতে না গিয়েও উপায় নেই, কারণ আরও ৮০ জন আছে। নইলে তিস্তার মতো লোকেরা চ্যাঁচামেচি জুড়ে দেবে।
আচ্ছা, একটা কথা বলুন। নরেন্দ্র মোদির চারপাশে প্রচুর মোসাহেব আছে, না? মানে সব ভালো কাজের কৃতিত্বই ওঁকে দেওয়া হয়, তাই না?
ব্যাপারটা এখন ঠিক আছে, ভবিষ্যতে এর ফল খারাপ হবে।
আপনি কি ওঁর কাছের মানুষ?
কাছের মানুষ ছিলাম।
গুজরাতিদের জন্য আপনি যা করেছেন, তার জন্য গুজরাতিরা নিশ্চয়ই আপনাকে ভুলতে পারবে না।
ওরা আমাকে কখনও ভুলবে না। ওরা আমার পাশে আছে।
ওই অমিত শাহের ব্যাপারটার পর মোদি কী করছেন?
আমি গ্রেপ্তার হওয়া আর জামিন পাওয়ার পর ওঁর সঙ্গে আর কথা হয়নি আমার। (ওই ঘটনার পর) সম্ভবত দু’জায়গায় দু’বার ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার।
আপনাকে দেখলে ওঁর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়?
কোনও প্রতিক্রিয়াই দেখান না, কোনও কথাও বলেন না। অবশ্য উনি বললেও আমি উত্তর দিতাম না। তবে সেটা আমার সমস্যা, আমিই সমাধান করব। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করবেন। অন্য কারও থেকে সাহায্য চাইতে যাব কেন?
আমি জানি আমি নির্দোষ, ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করবেন। আমি ওখানে ছিলামই না, মৈথিলী। ওখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ছিলাম। সোলায় ছিলাম আমি। বিধানসভায় গেলাম, সাড়ে আটটা থেকে বিধানসভার কাজ শুরু হল। আমি ওখানে গিয়েছিলাম। নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আনন্দীবেনের অফিসে যাই। আমরা দু’জনে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে গল্প করছিলাম।
তার মানে আনন্দীবেনকেও কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?
আমি জানি না। ওখান থেকে আমি হসপিটালে যাই, কারণ সমস্ত মৃতদেহগুলো সোলা সিভিল হসপিটালে রাখা ছিল। আমার নার্সের বাবা গোধরার ঘটনায় নিহত হন, তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য ওখানে যেতে হয় আমাকে। অমিত শাহ আর আমি সিভিল হসপিটালে যাই। সেখানে হিন্দুরা পর্যন্ত আমার ওপর অত্যাচার চালায় — প্রচণ্ড খেপে ছিল ওরা। আমার আর অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওরা চিৎকার করছিল। পিআই তাঁর নিজের গাড়ির দিকে নিয়ে যান আমাকে, গাড়িতে করে আমাকে (বার করে) আনেন।
অভিযোগটা কী?
ওরা নানান সাক্ষীকে দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে যে আমি দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছি, আমিই জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমি আমার হসপিটালে চলে এসেছিলাম… একজন মহিলার বাচ্চা হওয়ার সময় হাজির থাকতে হয়েছিল। বেলা তিনটের সময় হসপিটালে যাই আমি। ওরা বলছে আমার মোবাইল তখন এই এলাকাতেই ছিল। অর্থাৎ আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম।
গোরধন জাদাফিয়া তো গৃহমন্ত্রী ছিলেন। ওঁকেও কি একই কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়?
না। মুখ্যমন্ত্রীর সুনজরে ছিলেন না বলেই সরানো হয় ওঁকে।
তার মানে অমিত শাহের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে সাক্ষীদের ব্যবহার করেছিলেন, গোরধনভাইকে বাঁচানোর জন্য তেমনটা করেননি?
না (হাসি)।
অর্থাৎ দাঙ্গার ছুতোয় গোরধন জাদাফিয়াকেও ঝেড়ে ফেললেন উনি?
একদম তাই।
তার মানে যাঁদের উনি পছন্দ করতেন না, তাঁদের ঝেড়ে ফেলার একটা ভালো উপায় হয়েছিল এটা?
হ্যাঁ।
এই অমিত শাহের ব্যাপারটা কী?
উনি হচ্ছেন ওঁর লোক, ওঁর খুবই ঘনিষ্ঠ।
আমি ভাবতাম আনন্দীবেন হচ্ছেন ওঁর লোক।
আনন্দীবেন হচ্ছেন ডান হাত আর উনি বাঁ হাত। অমিত শাহকে বাইরে আনার জন্য সবরকম চেষ্টা করেন উনি। আদবানি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সুষমা স্বরাজ ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু আপনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর এ-সব কিছুই করা হয়নি?
কী আর করা যাবে। ঈশ্বর আছেন।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে ওঁকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরা হবে। আউর উসকো টক্কর দেনেওয়ালা ভি কোই নেহি হ্যায়। আনন্দীবেনকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে দেবেন উনি।
ইয়ে সব লোগ কিতনা বোলতে হ্যায় উনকে পিছে। ইয়ে আপকে এনকাউন্টার কপস ভি ইয়েহি বোলতে হ্যায় কি ইউজ অ্যান্ড থ্রো কিয়া?
হাঁ, বানজারা বহুত আচ্ছা থা। দেখো, এনকাউন্টার্স তো কিয়া ইন লোগোঁ নে, লেকিন যো সাহি বজা হ্যায়, এনকাউন্টারগুলো কেন ঘটছে ইয়ে কিঁউ নেহি সামনে আ রহা৷ জৈসে কি সোরাবুদ্দিন কো মারা টেররিস্ট বোলকে, উসকি ওয়াইফ কোঁ কিউ মারা, উয়ো তো টেররিস্ট নেহি থি না। ওই কওসর বাই৷ লোকটা খারাপ ছিল, তাকে এনকাউন্টারে মারতে পারো, তার বউকে মারলে কেন?
হরেন পান্ডিয়া আর গোরধন জাদাফিয়া দোনো কো নিকাল দিয়া না?
গোরধনভাই তো ঠিক থে, হরেন পান্ডিয়া খুব কাজের লোক ছিলেন।
লেকিন গোরধন কো ভি তো রায়টস মেঁ ইউজ করকে ফেঁক দিয়া ইসনে?
ঠিক তাই।
সারা গুজরাত জুড়েই দাঙ্গা হল, কিন্তু ওরা শুধু নারোডার বিধায়কের পিছনেই লেগে পড়ল, মানে আমার পিছনে।
আপনাকে বলির পাঁঠা বানাল?
হ্যাঁ।
মোদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যাপারটা কী দাঁড়াল?
উনি সিট-এর সামনে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু ওঁকে রেহাই দেওয়া হয়।
কিন্তু যে-যুক্তিতে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হল, সেই একই যুক্তিতে তো ওঁকেও গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল?
হাহা…….. (ঘাড় নাড়লেন)
আগামীকাল আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করব, আপনাদের মোদির সঙ্গে।
মোদির সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস কোরো উনি এত বিতর্কিত কেন?
তাই?
উনি সবকিছুকেই নিজের অনুকূলে ঘুরিয়ে নেন।
এইসব লোকেরা কি জেলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন?
না, একজনও নয়।
তার মানে আবার যে-কোনও দিন আপনাকে জেলে যেতে হতে পারে?
হ্যাঁ, যে-কোনও দিন, যে-কোনও দিন। বিচারের রায়টা বেরনোর অপেক্ষা শুধু।
আমি মোদিকে জিজ্ঞেস করতে যাব কেন? উনি তো এখন (আমার সব প্রশ্নই) এড়িয়ে যাবেন।
ওঁর সঙ্গে দেখা হলে একটু ঘুরিয়ে প্রশ্ন কোরো। প্রথমে ওঁর প্রশংসা করবে, তারপর জানতে চেয়ো…
আপনার ব্যাপারে?
ঘুরিয়ে প্রশ্ন কোরো, জানতে চেয়ো কেন তাঁর কিছু মন্ত্রী জড়িত ছিলেন? পি. সি. পান্ডেকে জিজ্ঞেস কোরো। উনি সব জানেন, সত্যিটা জানেন। ওঁকে জিজ্ঞেস কোরো, উনি আমেদাবাদের কমিশনার ছিলেন।
তাহলে উনি সত্যিটা বলছেন না কেন?
তা বলতে পারব না।
এখন আমি বুঝতে পারছি কেন ওঁর মুখটা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল (মায়া কোদনানি সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর)
এখন আর উনি আমার সম্বন্ধে কিছু বলতে যাবেন কেন?
মোদি সম্বন্ধে কী বলবেন?
ওঁর প্রশংসা কোরো, ওঁর কাজকর্মের ধারার প্রশংসা কোরো, তাহলেই উনি মুখ খুলবেন। কী উত্তর দেবেন সবাই জানে, বাঁধাধরা বুলি, ‘আমি বিবেকানন্দকে ভালোবাসি, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে ভালোবাসি।’ ওঁকে আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবেন, ‘আচ্ছা হাম ক্যা কঁরে, সিট কাজ করছিল, ফোন কলের রেকর্ড ছিল’, কিংবা মিষ্টি সুরে ছোট্ট করে বলবেন, ‘ওটা বিচারাধীন বিষয়।’
কিন্তু এই সবকটা পয়েন্ট তো ওঁর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
হাহা… কথাটা ওঁকেই বোলো।
ও হ্যাঁ, জয়ন্ত রবির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আমার। গোধরার ঘটনার সময় উনিও ছিলেন নাকি?
হ্যাঁ, জয়ন্তী রবি গোধরার কালেক্টর ছিলেন, অফিসার ইন চার্জ। আনন্দীবেনকে কোনও দাঙ্গা করতে না-দেওয়ার জন্য তখন ওঁকে তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল। তখন উনি সরকারের সুনজরে ছিলেন না। এখন উনি আবার ফিরে এসেছেন। পুরোটা জানি না। ওঁর সঙ্গে দেখা হলে যেন বোলো না যে তুমি আমাকে চেনো বা আমার সঙ্গে দেখা করেছ। বললে সেটা উনি ঠিক মনে রেখে দেবেন।
আরএসএসের কাছে মায়া কোদনানি যে অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন তাঁর সাজা হল অথচ মোদিকে ছেড়ে দিল সিট — তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অমিত শাহকে যে মোদির ঘনিষ্ঠ বলে মনে করতেন মায়া কোদনানি, সেই সঙ্গেই মনে করতেন যে অমিত শাহকে বাঁচানোর জন্য সবকিছু করতে পারেন মোদি — এ ব্যাপারেও কোনও অস্বচ্ছতা নেই। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় আগে বহুবার যে-কথাটা শুনেছিলাম উনিও সেটাই বলেছিলেন — অফিসারদের ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সময়মতো ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।