দুটি কবিতা
রাধারানী
চশমার সামনে ঝাপসা তোমার স্থির চোখ
জানিয়ে দিয়ে গেল
মেলার ভিড়ে হারিয়ে গেছি আমি।
বুকে ধরা নতুন পুতুল,
অন্যহাতে মিয়োনো পাঁপড়
চোখে জল, গলায় হেঁচকি
ঐ ওপরে ঝাঁক ঝাঁক অচেনা মাথা
নাগরদোলা ধুন্ধুমার ঘুরছে,
তেলেভাজা আর ডিমভাজার সুবাস,
বাতাসে উড়ছে ঝালমুড়ির ঝাল
গ্যাসভরা বেলুন সদলে মাথা উঁচিয়ে স্থির
পানের দোকানের সামনে মায়েদের উল্লাস
শীত শীত রাতের ধুলো ধুলো গন্ধ
আলো- ছায়া ছায়া -আলো চারধার
এ সবই চেনা, বড্ড চেনা —-
কিন্তু আমি যে হারিয়ে গেছি।
পালিশ ওঠা লম্বা টেবিলটা
রোজ মলিন ঝাড়ন দিয়েই
ঘষে ঘষে সাফ করি।
এন্ট্রি খাতা, জলের বোতল, বইয়ের স্লিপ
গুছিয়ে রাখি।
রিডিং রুমে একটা পয়সা পড়ার আওয়াজও
শোনা যাবে।
এ সবই আমার অভ্যাস। মনোমত।
বর্ষার নিঝুম দুপুরে বইভাণ্ডারের চেনা চেনা সোঁদা গন্ধে
ঢুলুনি আসে।
তেলতেলে নাক বেয়ে নেমে আসে চশমা।
ঢোলা ব্লাউসের ওপর থেকে আঁচল যায় আলগা হয়ে,
জানলার বাইরে জলপড়ার একঘেয়ে টপটপ
ঝাপসা আলোয় থেকে থেকেই দেখি
দরজার ফ্রেম থেকে সরে সরে যাচ্ছে
লম্বা পাঞ্জাবি পরা পিঠের আদল ।
তখনই ভেঁপুর শব্দ বেজে ওঠে আবার
নাগর দোলার কিঁচকিঁচ শব্দ
মেলার হৈচৈ-
বুঝি, আবার আমি হারিয়ে গেছি।
আড়াল
কোথায় রাখি বলতো তোমাকে !
এখানে খাট, ওদিকে টেলিফোন….
ওঘরে সোফা, এঘরে আলমারি
আলমারির মধ্যে অবশ্য আছে লকার
কিন্তু, লকারও ভরা দলিল দস্তাবেজে।
তাহলে?……
এক, বারান্দার ওই লেবুগাছে
লুকিয়ে রাখতে পারি।
চোখের সামনেই রইলে
তবু চোখের আড়ালে….
পাতা হাতে ডললে
তবেই গন্ধ।
নাহলে?…..
মাটিতে ছুঁড়ে ফেলবো?
ধুলো কাদায় মিশে যাবে!
তারপর…
পায়ের পাতায় পাতায় মিশে
ছাপ ফেলে ফেলে যদি
ফুটে ওঠো আমারই ঘরে ঘরে!
তবে?
লাউয়ের খোলে পুরে
ধ্বনিঘরে বেঁধে রাখি?
সুর হয়ে ছড়িয়ে থাকো
এই – আশেপাশে
শ্বাসে শ্বাসে!
ভালো লাগলো। বিশেষ, দ্বিতীয় লেখাটি।
ভরসা পেলাম সমিধ।
ভালো লেগেছে দুটো কবিতাই।
আন্তরিক ধন্যবাদ।