যশোর রোডের গাছ : প্রয়োজন বৃহত্তর আন্দোলন

সুরজিৎ দাস

 

যশোর রোডের গাছ কাটা শুরু হলে গত বছর (২০১৭) ৯ই এপ্রিল বনগাঁয় পথে নেমে জানান দেওয়া হয় এই হত্যাযজ্ঞ কিছুতেই মুখ বুজে মেনে নেওয়া হবে না। কিন্তু এভাবে গাছ কাটা বন্ধ করা যায়নি। গাছ কাটা প্রথম বন্ধ হয় হাবড়া বিডিও অফিসের সামনে। হুমকি উপেক্ষা করে গাছ জড়িয়ে গাছ কাটার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তুলে, যা হিন্দুস্থান টাইমস্ সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে গাঢ়োয়ালের চিপকো আন্দোলনের সাথে তুলনা করা হয়। রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট সেই কাঠ মাফিয়ারা সেদিন ফিরে যায়। অর্থাৎ প্রথম থেকেই রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখেই এই আন্দোলন এগিয়েছে। ‘অরাজনৈতিক শুদ্ধ পরিবেশ আন্দোলনে’র মতো ভাঁওতাবাজির মুখোশ পরে নয়। সরাসরি প্রতিরোধের পথে গিয়ে। কারণ এই ভাঁওতাবাজি করে সিম্প্যাথি আর ফোকাসে আসা যায়, ওতে গাছ বাঁচে না। পরিবেশ বাঁচে না। তুতিকোরিন সহ এই মুহূর্তে আমাদের সামনে একাধিক জলন্ত উদাহরণ।

২৩শে এপ্রিল, ‘১৭ পরবর্তী বনগাঁ জমায়েতে আরও সংগঠিতভাবে পরিকল্পনামাফিক আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে তৈরি হয়েছিল “যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি”। হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে গাছ কাটার বিরুদ্ধে দিনের পর দিন লাগাতার মিটিং মিছিল প্রচার চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যাওয়া হয় আইনি পথে। ২৬শে এপ্রিল হাইকোর্টে মামলা করে জানা যায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রিজ ইন নন-ফরেস্ট এরিয়াল অ্যাক্ট ২০০৬ অনুযায়ী ৬ মাস আগে মেয়াদ শেষ হওয়া অবৈধ কাগজ দেখিয়ে চলছিল এই বৃক্ষনিধন। ২৮শে এপ্রিল হাইকোর্টের নির্দেশে গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ জারি হয়। দেড় বছরের বেশি সময় স্টেট পলিসিকে চ্যালেঞ্জ করে নজিরবিহীন ভাবে গাছ কাটা বন্ধ ছিল।

ঐতিহাসিক যশোর রোডকে বাঁচাতে গত তিন বছর ধরে আন্দোলন চলছে। কর্পোরেট পুঁজির আগ্ৰাসন যে পরিবেশের উপরও পড়েছে, তা যশোর রোডের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো গাছগুলি কেটে এই যে অপরিকল্পিত উন্নয়নের পরিকল্পনা, তাতেই স্পষ্ট। এই গাছগুলো যেমন একাধারে ইতিহাস, পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জনগণের সংঘবদ্ধ লড়াই আর আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি এই অশুভ আঁতাতকে ভাঙতে আজ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট তার নিজের তৈরি করা বিশেষজ্ঞ কমিটির সার্ভে রিপোর্টকে অস্বীকার করে গাছ কাটার পক্ষে রায় দিয়েছে, আমাদের পক্ষ থেকে জনবিরোধী এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আগামী ভবিষ্যৎকে বাঁচাতে ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একান্ত প্রয়োজন। এবং আরও বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে তা বাস্তবায়িত করতে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...