চার নম্বর নিউজডেস্ক
সেল্ফ কন্ট্রাডিকশন জানেন? মানে এই ধরুন এ মুহূর্তে— ‘আমি ভাই ভীষণ প্র্যাক্টিক্যাল আর র্যাশনাল’ বলেই আপনি তার পর মুহূর্তে ‘বিপ্লব আসবেই’ মর্মে কম্যুন খুলে বসলেন। এটা হলে ওটা আসবে না আর ওটা এলে এটা হবে না। ভারতবর্ষও তেমনই একটি চমৎকার সেল্ফ কন্ট্রাডিক্টরি দেশ৷ কি, বিশ্বাস হল না? আচ্ছা বলুন তো এ দেশে সব চাইতে দামি জিনিস কী? না না অ্যান্টিলার সাথে এর কোনও যোগসূত্র নেই৷ এ জিনিস চোখে দেখা যায় না, কানে শোনা যায়। সেই প্রাক নির্বাক যুক থেকে এই নির্বাক পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন নামের ছবি টবিতে আপনি হামেশাই শুনে (বা পড়ে) থাকবেন, সব চাইতে দামি জিনিস হল লজ্জা৷ আর সেটায় পার্টিসিপেটকারী কারী না হয়ে কারিনী হলে তো কথাই নেই৷ হেথায় স্থান যাক, মান যাক, ম্যারিটাল রেপে জান যাক কিন্তু উঁহু, লজ্জা গ্যাছে কি কলসিদড়ি৷ আজকালকার শহুরে ‘মেয়েছেলেগুলো’ যদিও এসব নিয়ে বেশি ভাবিত নয়। তবুও, আমাদের তো ভাবতে হবে! ঢেকে ঢুকে রেখে দিতে হবে একদম৷ ঘরে মধ্যে৷ সেথাই খাটবে, খাবে, খাটবে, শোবে, খাটবে ঘুমোবে, বাইরে যাবে শুধুমাত্র হাগুমুতু করতে৷ ব্যস৷ এইবার আপনি বলবেন— ‘এই দাঁড়া দাঁড়া, এটা ক্যামন হল? আগেরগুলো ডিমান্ড করা তো অপরাধ, কিন্তু সবচেয়ে লজ্জার যেটা, প্রকৃত লজ্জার, সেটাই কিনা বাইরে গিয়ে? ত্যাত! এরম হয় নাকি?’ তখন আমি বলব, আজ্ঞে হয়। আলবাত হয়। একেবারে হয়৷
যেমন হত কানপুরের রাজা কা পুরওয়া বস্তিতে৷ পরিবার সংখ্যা ৭০০। বাথরুমের সংখ্যা গোটা দুনিয়া। এবার আপনি বলবেন— ‘অ্যাঁ! এতে তো শুধু অপ্রেশন অ্যাঙ্গেল নেই৷ অ ওটা তাহলে ভূমিকা? খালি ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডা ছড়ানো! বরং এ তো চূড়ান্ত আনহাইজিনিক! আর সাতশো পরিবারের মলমূত্র, নোংরা আবর্জনা এক জায়গায় মানে তো! ইয়ে ম্যাগো! তারপর বৃষ্টির সময়… ওয়্যাক… আর রোগটোগ তো মানে?’ কিন্তু এরপর আর আমি বলব না। বলবেন কলাবতী দেবী৷ পেশায় রাজমিস্ত্রি, দু’সন্তানের মা, এক সাতান্ন বছরের সুপারহিরো৷
মোটে তেরো বছর বয়সে আঠারোর স্বামীর সাথে বিয়ের পর (আজ্ঞে হ্যাঁ। বাল্যবিবাহ।) রাজা কা পুরওয়া বস্তিতে এসে ওঠেন কলাবতী দেবী। তারপর যা হয়, স্বামী সংসারে নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু গোল সাধল শৌচকর্মের সময়। চারপাশের ওই নারকীয় পরিস্থিতি মেনে নিলেন না তিনি। প্রথম লক্ষ্য একটু সর্বজনীন একটি শৌচালয় গড়ে তোলা। অনড় স্বামীর সমর্থন সম্বল করে পৌঁছোলেন একটা গ্রামীণ NGO-তে। মূল কাজটা সহজ তো ছিলই না, বরং ছিল সবচাইতে কঠিন। মানুষকে সচেতন করা, নিজের মল নিজের দায়িত্বে। মানুষের দোরে দোরে গিয়ে কলাবতী দেবী চেষ্টা করে গ্যাছেন তাদের বোঝানোর৷ হাজার প্রতিকূলতা, কটাক্ষ, কিছুই থামাতে পারেনি তাঁকে। তাঁর প্রথম পদক্ষেপে সুনিশ্চিত হয় সেই ছোট্ট গ্রামের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। আর সেই থেকে আস্তে আস্তে নিজের চেষ্টায় উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম ও কানপুরের আশেপাশে ৪০০০ শৌচালয় গড়ে তুলেছেন তিনি।
সম্প্রতি ‘নিউরোবিওন ফর্টে’ কলবাতী দেবীকে চিহ্নিত করেছেন একজন সত্যিকারের হিরো বলে, এবং পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর। যাতে করে আপামর জনসাধারণ জানতে পারে তাঁর এই অসামান্য কর্মযোগ্যের কথা।
আসুন, আমরাও দাঁড়াই…