বিধান দে’র লেখা

বিধান দে 

 

হেফাজতে ইসলামের ভাষ্যমতে ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি ইসলামের চোখে হারাম। তাই সরকারের কাছে তাদের ১৩ দফা দাবির ৭ নং দাবি ছিল মসজিদের শহর ঢাকা থেকে সকল প্রকার ভাস্কর্য ও মূর্তি সরিয়ে ফেলতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে তৈরি ভাস্কর্যটি ন্যায়বিচারের প্রতীক। এমনটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই গ্রিক দেবীর আদলে আদালতের সামনে এইরূপ ভাস্কর্য রয়েছে। এমন কি ইরানে ইসলামি হুকুমত ও শরিয়া আদালতের সামনেও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে “লেডি জাস্টিসিয়া”-র ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

এই বিষয়ে নির্মাতা মৃণাল হক বলেন, “গ্রিক দেবীরা কিন্তু শাড়ি পরতেন না। আর এই আদল বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারের প্রতীক। বিদেশে বেশিরভাগ নারীরূপী ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে গাউন ও মেক্সি পরা দেখা যায়। আমাদের দেশে নারীদের পোশাক শাড়ি বলে সেটিই ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় ব্যাখ্যা আসছে কীভাবে!”

কিছুদিন আগে কলকাতার বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি ওঠে। সেখানে যুক্তি তুলে ধরা হয় যে হোস্টেলে একটি মসজিদ থাকায় এখানে কোনও মূর্তি রাখা যাবে না।

এরাই অনেক আগে থেকে “অপরাজেয় বাংলা” ভাস্কর্যকে “তিন শয়তানের মূর্তি” বলে আসছে। বিমান বন্দরের লালনের ভাস্কর্য এদের সহ্য হয় না।

আবার এরাই পয়লা বৈশাখ কে বলে হিন্দুর সংস্কৃতি। শহীদ মিনার এদের কাছে হারাম, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হারাম, জাতীয় সঙ্গীত এদের কাছে কাছে হারাম। হিন্দু লেখকের লেখা গল্প কিংবা কবিতা পাঠ্যসূচি থাকা হারাম।

এরাই সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এর সংগ্রহশালা ধ্বংস করে, ধ্বংস করে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর।

আবার এদেরই দেওয়া আগুনে পীচ ঢালা রাস্তায় পুড়তে দেখেছি ধর্মগ্রন্থ।

অনেকেই ভাববেন, একটা ভাস্কর্যই তো!!! এ নিয়ে এতো লাফালাফি করার কি আছে। এদিকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি হচ্ছে সেদিকে তো খেয়াল নাই।

এটা সত্যি। তবে হাজার হাজার কোটি টাকার আগে সেই শুরুটাও এক টাকা থেকেই শুরু হয়েছিল। আর আজ শুরু হল একটা ভাস্কর্য দিয়ে……

কী যেন বলব ভুলে যাচ্ছি।

ধুর, চশমাই খুঁজে পাচ্ছি না!!!

হুমায়ূন আজাদ স্যারের কথা দিয়ে শেষ করি, “পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ”।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...