আশরাফুল আমীন সম্রাট
ভারতে মুসলিমদের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে সমীক্ষা করে সাচার কমিটি একটি রিপোর্ট দেয় ২০০৬ সালে। রিপোর্টে যে চিত্র উঠে আসে তা যথেষ্ট নিরাশাজনক। মুসলিম নারীদের কেবল ৪৯.১ শতাংশ সাক্ষর, উচ্চশিক্ষার দোরগোড়ায় পৌঁছায় মাত্র ৩.০৭ শতাংশ, সরকারি চাকুরে মাত্র ২.১ শতাংশ। স্বাধীনতার ৬৯ বছর পরেও একটি সামাজিক গোষ্ঠীর শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার হারে এত করুণ পরিণতি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের লজ্জা। সাচার কমিটির সমীক্ষা মূলত সরকারি নথিপত্র বিস্তর ঘাঁটাঘাঁটি করে তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীতে অমিতাভ কুণ্ডুর “পোষ্ট সাচার ইভালুয়েশন”-এর সময় “অ্যাসোসিয়েশন স্ন্যাপ” নামে একটি সংস্থা বাংলায় একটি মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এ বাংলার মুসলিম সমাজের ৪২ শতাংশ মানুষই খেটে খাওয়া। তারা দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, ইটভাটার শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে দিন গুজরান করে। দেখা যাচ্ছে বাংলায় মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিই তৈরি হয়নি। যে সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির শেড এত পাতলা সে সমাজের উন্নয়নের ব্যাপ্তি মন্থর হবে সেটাই স্বাভাবিক।
পিছিয়ে থাকার কারণ হিসাবে এগিয়ে থাকা সংখ্যাগুরু শ্রেণি বা রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু দোষারোপ করলে কাজের কাজ কিছু হবে না। যারা এগিয়ে গেছে তারা এমনি এমনি নিজের জায়গা ছেড়ে দেবে না। সেই জায়গায় নিজের অবস্থান পোক্ত করার জন্য দরকার শিক্ষা ও আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন। আবার এটাও ঠিক যে শিক্ষায় দীক্ষায় ও আর্থসামাজিকভাবে যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে থাকলে এই ধর্মসামাজিক গোষ্ঠীর বৃহৎ অংশ ভোটশ্রমিক ও ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহৃত হবে সেটাই ভবিতব্য। এরকম চলতে থাকলে সরকার থেকে সরকার বদলাবে কিন্তু বাংলার মুসলিম সমাজের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি ঘুচবে না। পিছিয়ে থাকা অংশকে তুলে আনার জন্য যাদের উপর সবথেকে বেশি দায় বর্তায় তারা মুসলিম সমাজের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অংশ। যারা স্বচ্ছল, যারা শিক্ষার আলো পেয়েছে, যারা পিছিয়ে থাকা অংশের সমাজজীবন খুব কাছ থেকে দেখেছে তাঁদেরই সংগঠিতভাবে এগিয়ে আসাটা সবথেকে বেশি জরুরি। তবে এমনটাও নয় যে তাঁরা এগিয়ে আসেনি। কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নেই যে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল।
অথচ আমরা জানি ইসলামে জাকাত, উসর ও ফিতরার মতো সুন্দর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে। শুধুমাত্র এই জাকাত ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেই মুসলিম সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেওয়া যায়। অন্য কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। জাকাত কথার অর্থ হল শুদ্ধিকরণ। যাঁর সামর্থ্য আছে তিনি তাঁর সম্পদের আড়াই শতাংশ দান করে থাকেন। যে পরিবারে সংসার খরচ বাদে সঞ্চয় বাহান্ন তুলা রুপো বা সাড়ে সাত তুলা সোনা, তারা জাকাতের আওতায় পড়েন। এ যুগের ইনকাম ট্যাক্সের মতো ব্যাপার। রাজ্যে দেড় কোটি মুসলিমের অর্ধেকও যদি এই সুচিন্তিত সুষম ঐসলামিক নিয়ম মেনে জাকাত দেন তাহলে জাকাতের মোট পরিমাণ বিপুল হবে। দ্বিতীয়ত আছে ‘ফিতরা’। রমজান মাসে ঈদের জামাতে যোগ দেওয়ার আগে অবধি মুসলিমরা এই দান করে থাকেন। ভিখারি ছাড়া সমস্ত সক্ষম ব্যক্তির জন্য এই দান বাধ্যতামূলক। আর আছে ‘উসর’। আরবি ‘উসর’ শব্দের অর্থ এক দশমাংশ। ফসলের এক দশমাংশ দানের বিধান রয়েছে। তবে অনুর্বর এলাকা বা যেখানে চাষের খরচ খুব বেশি সেখানে ফসলের কুড়ি ভাগের এক ভাগ উসর হিসাবে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকাও দান করতে হয় ধর্মীয় বিধান মেনেই। দানের এই বিপুল টাকা খরচ করার কথা ‘কউম’-এর উন্নয়নে। কিন্তু বেশিরভাগ মুসলিমই কউমের উন্নতি বলতে মসজিদ আর মাদ্রাসার উন্নতি বোঝেন। এই টাকায় মসজিদের মিনার আরও উঁচু হয়, টাইলস মার্বেল বসে, পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ হয়, গ্রামে গ্রামে খারিজি মাদ্রাসা নির্মাণ হয়। কিন্তু জাকাতের যারা প্রকৃত হকদার তাদের কাছে জাকাত পৌঁছায় কি? যদি পৌঁছাত তাহলে এই সমাজের ৪২ শতাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত জীবনযাপন করত না।
সেই ভাবনা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বীরভূমের মহম্মদবাজারের কিছু শিক্ষিত দরদী মানুষ বিশেষ ভাবনা ও লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। সংগঠন তৈরি করেছেন “মহঃবাজার সংহতি মহফিল” নামে। তাদের মূল লক্ষ্য সেবা, সংস্কৃতি, সবার জন্য শিক্ষা, পিছিয়ে পড়া অংশের আর্থসামাজিক মানোন্নয়ন, প্রগতিশীল চিন্তার বিকাশ, সমাজ সচেতনতা, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা দূরীকরণ এবং প্রকৃত ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা। তারা চান জাকাত ও উসরের অর্থ সংগ্রহ করে একটি সমবায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে। সংহতি মহফিলের যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিনের কথায়, “আমরা এতদিন দেখেছি যে যাদের জন্য জাকাত-উসর ফরজ (বাধ্যতামূলক) তারা সেসব দিয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছন্নছাড়াভাবে। সংখ্যালঘু সমাজের ‘সোশাল মোবিলাইজেশন’-এ এই অসংগঠিত চ্যারিটি বিশেষ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু সেই অর্থ একত্রিত করে যদি ‘বাইতুল ফান্ড’ গড়ে তোলা যায় তাহলে সেই বিপুল অর্থ বিবিধ সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো যাবে।” মহঃবাজার ব্লকে ২২টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ঘটে চলছে গ্রামীণ কমিটি তৈরির কাজ। গ্রামের শিক্ষিত যুবকযুবতী ও মান্য ব্যাক্তিরা এই গ্রামীণ কমিটির সদস্য হবেন। জাকাত-উসরের অর্থ কীভাবে সংগৃহীত হবে, কাদের জন্য জাকাত ও উসর ফরজ, কারা জাকাত উসরের হকদার, বাৎসরিক সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ কীরকম হবে এবং সেই অর্থে কী কী সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব বিশেষ গ্রামের নমুনাসহ গ্রামের মানুষকে পাওয়ার পয়েন্ট প্রোজেক্টারের মাধ্যমে বোঝানোর কাজ করে যাচ্ছে সংহতি মহফিল।
মহফিলের সভাপতি আলহাজ মোশারফ হোসেন খানের কথায়, “আমরা যথেষ্ট আশাবাদী, গ্রামের মানুষের আগ্রহ আমাদের এই কাজকে বাড়তি উৎসাহ প্রদান করছে।” গ্রামে গ্রামে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হচ্ছে তার কিছুটা সবার সঙ্গে শেয়ার করলেন মহফিলের আহ্বায়ক সেখ নেহেরুল আলি, “গ্রামের মানুষের ধর্মচেতনা রয়েছে, কিন্তু সমাজচেতনা প্রায় নেই, আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি কোন শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে এই পুরো সমাজটা রয়েছে এবং কী করলে ও ভাবলে এই অন্ধকারময়তা থেকে তারা মুক্তি পাবে।” এলাকার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও হিন্দু অন্ত্যজ শ্রেণির মধ্যে শিক্ষা ও আর্থসামাজিক মানোন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে এই সংগঠন। দুঃস্থ ঘরের বেকার যুবক যুবতীরা যাতে ব্যবসাপাতি করে স্বাবলম্বী হতে পারে তার জন্য ফান্ড থেকে পুঁজির ব্যবস্থা করে দেবে সংহতি মহফিল। ল্যাপটপ, সেলাই মেশিন কিনে দেওয়া থেকে শুরু করে পোল্ট্রি ফার্ম সবই রয়েছে মহফিলের ভাবনায় রয়েছে। উচ্চশিক্ষারত দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় বই বা আনুষঙ্গিক জিনিসের খরচ মহফিল বাইতুল ফান্ড থেকে খরচ করবে। শারীরিকভাবে অক্ষম ও অসহায় বয়স্ক মানুষদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থাও এই ফান্ড থেকে করা হবে। যেটুকু অর্থ ফান্ডে এসেছে সেখান থেকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাধীন রুগী ও কন্যাদায়গ্রস্ত দুঃস্থ পিতার কন্যার বিয়ের দিনের যাবতীয় খরচ বহন করছে সংহতি মহফিল। খারিজি মাদ্রাসায় পাঠরত ছেলেরা মাদ্রাসা পাশ করার পর তাদের রুজির সমস্যায় পড়তে হয় তাই এলাকার মাদ্রাসার সাম্প্রতিকীকরণের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যাবস্থা যাতে করা যায় তার জন্য জোর প্রচার চালাচ্ছে মহফিল। কম্পিউটার, অটোমোবাইল, আইটির মতো কারিগরি শিক্ষা যাতে মাদ্রাসায় দেওয়া যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ডিভাইস কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংহতি মহফিল।
পাশাপাশি এলাকায় শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে সেই দিকটি গুরুত্বের সাথে নজরে রাখবে এই সংগঠন। মহফিলের সম্পাদক সেখ সিরাজ ও সহ সভাপতি রাফেউল হকের কথায়, “মহঃবাজার এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে সম্প্রীতির সাথে বাস করে আসছে, সেই ঐতিহ্যকে আমরা যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব, মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক হিংসার আঁচ আমরা আমাদের এলাকায় পড়তে দেব না।” দিন কয়েক আগেই মহঃবাজার সংহতি মহফিল বিশ্বনবী দিবস পালন করেছে। লিফলেটে সংহতি মহফিলের কেন্দ্রীয় কমিটির দাবি, “সাম্প্রতিক কালে জন্ম-মৃত্যুদিন পালন করাটা কতটা শরীয়াসম্মত তা নিয়ে ইসলামিক পণ্ডিত মহলে দ্বিমত রয়েছে, আমরা সেই বিতর্কে যাচ্ছি না, এটা ধর্মবেত্তাদের বিচার্য বিষয়। জন্মদিন পালন করাটাও আমাদের প্রতিপাদ্যের বিষয় নয়। আমরা মনে করি বিশ্বমানবতার মূর্তপ্রতীক বিশ্বনবী (সাঃ) প্রদর্শিত যে পথে সাম্য মৈত্রী শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আজকের এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে তার পুনর্মূল্যায়ন জরুরি।” সেই ভাবনা থেকেই বিশ্বনবী দিবসে তারা বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়ার জন্য সকালবেলা সংহতি মিছিল দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। সেই সম্প্রীতির পদযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন ফাদার জেভিয়ার চিত্তিলাপিল্লি, স্বামী হংসানানন্দ মহারাজ ও মুফতি সাদিরুদ্দীন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের সমাগম সেই মিছিল অন্য মাত্রা দেয়। আগের বছরের মতো এ বছরও তারা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল। সেখানে ১৫০ জন নরনারী রক্তদান করেছে। শিবিরে সংখ্যালঘু নারীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুরে ছিল আলোচনা সভা, যার বিষয় “ভাবনায় বাংলার পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সমাজ”। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন বিশিষ্ট তথ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক সৌমিত্র দস্তিদার, অধ্যাপক ও সাহিত্যিক ডঃ শামিম আহমেদ, লেখিকা ও সমাজসেবী মনীষা বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ। সেই আলোচনাসভায় তাঁরা বাংলার মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক অবস্থান, সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি, শিক্ষা, মিডিয়া ইমেজ, সম্প্রীতির ঐতিহ্য, পশ্চাদপদতার কারণ ও শোচনীয় অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পথ অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেন। প্রায় ৬০০ মানু্ষের সমাগম হয় সেই আলোচনাসভায়।
কোষাধ্যক্ষ মহঃ সেলিম সেখ ও সহ সম্পাদক সৈয়দ সামসুল কালামের কথায়, “আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল পিছিয়ে পড়া অংশের শিক্ষা প্রসারের জন্য এখানে উন্নত মানের শিক্ষা মিশন গড়ে তোলা যেখানে থাকবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মাধ্যমে মেধাবী দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্নত মানের আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা। গিয়াসুদ্দিন, আনোয়ার পারভেজ, মীর মাসুম, সম্রাট আমিন, রফিকুল হাসান, মহঃ নাসিম খান, নবিরুল সেখ, কবির খান, জাহানারা খাতুন, ওয়াহিদ রহমান, মেহেবুব চৌধুরী, সাদ্দাম হোসেন, নওসাদ হোসেন, মোবারক হোসেনের মতো যুব সদস্যরা ইতিমধ্যে একটি অবৈতনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। স্থানীয় মোহম্মদীয়া ক্লাবে চলছে পড়ানোর কাজ। এখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির দুঃস্থ বাড়ির প্রথম প্রজন্মের ১৫০ জন পড়ুয়া পড়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা অব্দি চলে ক্লাস, পড়ায় ১৫ জন উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতযুবতী। তারা চায় পাঁচ থেকে আঠারো বছরের সমস্ত ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়মুখী হবে। স্কুলছুট থাকবে না। যারা স্কুলছুট, তারা কেন স্কুলে যায় না বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার কারণ অনুসন্ধান করবে যুব সদস্যরা। তাদের স্কুলমুখী করে তোলার জন্য নানারকমভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে তারা। সাপ্তাহিক বয়স্ক শিক্ষারও আয়োজন করবে তারা, কারণ তারা চায় না যে এলাকায় একটা পিতামাতাও নিরক্ষর থাক। কোনও দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রী যাতে সংসারের চাপে পড়াশোনা ছেড়ে না দেয় তারা খেয়াল রাখা হবে। এলাকার বহু ছাত্রছাত্রী প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাদের বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। তাই বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে যাতে তাদের জন্য পড়াশোনার পরিবেশ গড়ে দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যেই তাদের এই কর্মযজ্ঞের আয়োজন।
মহফিলের সদস্য সেখ সেরাফত আলি, মহঃ মৈনুদ্দিন, সেখ নওসাদ আলিরা চান ফ্রি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নির্মাণ করতে যেখানে মানুষ নামমাত্র খরচে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারে। তবে এমন নয় যে যারা স্বচ্ছল উচ্চশিক্ষিত তারাই কেবল কন্ট্রিবিউট করবে। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে কৌটো পৌঁছে দিচ্ছে সংহতি মহফিলের সদস্যরা। যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমীন হিসাব দিলেন, “একটি গ্রামে যদি ৪০০টি পরিবার থাকে, প্রতি পরিবার থেকে মাসে যদি কৌটো থেকে গড়ে ৫০ টাকা আসে তাহলে ফান্ডে মাসে কুড়ি হাজার টাকা জমবে, যেটা বছরে প্রায় আড়াই লাখের কাছাকাছি পৌঁছাবে। এই ফান্ড দিয়ে অনেক সামাজিক কাজ করা যায়, তার জন্য আমাদের দরকার উদ্যম, সদিচ্ছা ও নিরলস প্রচেষ্টা।” সেই অর্থ দিয়ে প্রতিটি গ্রামে একটি করে ছোট লাইব্রেরি গঠন করা যাবে। ছাত্রছাত্রীদের লাইব্রেরিমুখী করে জ্ঞানচর্চায় উৎসাহদান সংহতি মহফিলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তার থেকেও বড় কথা মহফিলের যাবতীয় পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য এগিয়ে এসেছেন এলাকার বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী স্বপন ঘোষ, কমল খান, টুলু মণ্ডল, মসিউর মণ্ডল, সুভাষ বন্দোপাধ্যায়ের মতো মানুষেরা। কমল খান সাহেব মহফিলের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “এমন গঠমূলক ভাবনা পরিকল্পনার কথা বাংলার প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে, প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক।” উদ্যম, সদিচ্ছা ও নিরলস প্রচেষ্টা থাকলে সবটাই সম্ভব, আশাবাদী সংহতি মহফিলের প্রতিটি সদস্য।
সম্রাট খুব ভালো লাগলো তোমাদের কাজকর্ম দেখে । তোমাদের মহ ফিলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামণা করি ।