বিশ্বজিৎ রায়
হাঁসদা সৌভেন্দ্র শেখরের আদিবাসীরা আর নাচবে না, দ্য আদিবাসী উইল নট ডান্স বইটি বহু আলোচিত। বিশেষ করে পণ্ডিতি বিদ্যাচর্চার পরিসরে বইটিকে ঘিরে নানাবুলির ওঠা পড়া। ১৯১৫ সালে সাহিত্য অকাদেমি বইটিকে পুরস্কৃত করেছেন। সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি জুটলে প্রচারের আলো আসে, এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। ইংরেজি ভাষাবাহিত পণ্ডিতি বিদ্যাচর্চায় বইটিকে উত্তর ঔপনিবেশিকতা, প্রান্তজনেরা নিজেদের কথা আদপে নিজেরা বলতে পারেন কি না, এই বইয়ের গদ্যে ব্যবহৃত ইংরেজি ভাষার মধ্যে নানা দেশজ/সাঁওতালি শব্দ ঢুকে পড়ে ইংরেজি ভাষার আঞ্চলিক রূপ কীভাবে গড়ে তুলেছে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সাঁওতালদের অবস্থান স্বাধীনতার আগে কী ছিল ও স্বাধীনতার পরে কী হল এই সবের সূত্রে কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। সঙ্গে এই সব আলোচনায় যে-মহাজনদের নাম ও বই টীকাবৃদ্ধি করে এক্ষেত্রেও তাঁরা এসেছেন— স্পিভাক, ভাবা যথারীতি। সত্যি কথা বলতে কী আজকাল এই জাতীয় আলোচনা পড়তে গিয়ে একটু ক্লান্তই লাগে, মনে হয় কাঠামোটা তো চেনা। এই চেনা কাঠামোর ছকে পাঠ্যটিকে ঢুকিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। সৌভেন্দ্র তাঁর বইতে যাঁদের কথা লিখেছেন তিনি সেই সমাজের মানুষ, সুতরাং আলোচনার ধরতাইতে সে প্রসঙ্গও আসে। আত্মপরিচয়ের সূত্রে এ অভিজ্ঞতার তিনি অংশীদার, ভদ্রলোকদের মতো কল্পনাবিলাস বা বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের শৌখিনতা তাঁর বইতে থাকে না, থাকতে পারে না।
এ সব মিথ্যে নয়। ফেলে দেওয়ার মতো কথাও নয়। তবে পরিমল রায়ের ইদানীং রম্যগ্রন্থের ‘শিউপূজন’ লেখাটির কথা কেন জানি না মনে পড়ে যায়। সে বড় নির্মম কৌতুকের কথা। জীবনের সঙ্গে ব্যবস্থার সম্পর্ক নিয়ে, যোগাযোগহীনতা নিয়ে এমন কৃষ্ণকৌতুক কমই লেখা হয়েছে। শিউপূজন আর তার বেরাদরেরা সবাই গোপনে কী যেন পড়ছে লিখছে। শেষ পর্যন্ত শিউপূজন জানিয়েছিল ‘আগামী বৎসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিশনেয়ার অবসর লইলে তাহার চাকুরিটি খালি হইবে। এই পদটি অত্যন্ত লোভনীয়। চাপরাশি, দারোয়ান, পিয়ন সর্বসমন্বয়ে যে গোষ্ঠীটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচর্যায় নিযুক্ত আছে, তাহাদের সর্বময় কর্তা এই কমিশনেয়ার। বেতন পঁয়তাল্লিশ টাকা, তদুপরি ফ্রি কোয়ার্টার। কর্মের মধ্যে চাপরাশি সম্প্রদায়ের উপর ছড়ি ঘোরানো এবং কর্তৃপক্ষের তাঁবেদারি করা। কিন্তু শিউপূজন লক্ষ করিয়াছে, ইদানীং পি-এইচ ডি টি-এইচ ডি না হইতে পারিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কাহারও আর চাকরি হইতেছে না।’ তাই শিউপূজন ও তার সহযোগীরা সবাই গোপনে থিসিস লিখছে। বিদ্যাবাহী না হলে চাকরি দেবে কেন রাষ্ট্র! পরিমল রায় সেই লেখায় গবেষণা অভিসন্দর্ভের একটি কাঠামোও দিয়েছিলেন। গেটকিপিং সংক্রান্ত থিসিস লেখার কাঠামো।
‘প্রথম পরিচ্ছেদ— ইন্ট্রোডাক্শন্ অ্যান্ড প্ল্যান। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ— সাম থিওরিস্ অফ গেট-কিপিং একজামিন্ড্ : অ্যারিস্টটল, ম্যাকিয়াভেলি, কার্ল মার্ক্স। তৃতীয় পরিচ্ছেদ— গেট-কিপিং বিফোর অ্যান্ড আফটার দি ডিভিশন অফ লেবার— সাম হ্বিয়ুস্ অফ্ অ্যাডাম স্মিথ রেফিউটেড্– দি শূদ্রস অফ দি ইন্ডিয়ান কাস্ট সিস্টেম’ কাঠামোটি দীর্ঘ। ইচ্ছে হলে ইদানীং খুলে আগ্রহী পাঠক পড়ে নেবেন, হাসতে ভুলবেন না। সুকুমার রায়ের হ য ব র ল-র সেই ছাব্বিশ ইঞ্চি মাপের কথা মনে পড়ে যায় জ্ঞানচর্চার উপাধিকাম দেখে। সব কিছুকেই ছাব্বিশ ইঞ্চির মাপে ফেলে দেওয়া চাই, তাতে টাটকা ক্রোধের, আত্মপরিহাসের প্রশমন ঘটে!
ছাব্বিশ ইঞ্চির গবেষণা কাঠামোয় তাঁর গল্পগুলি ধরা পড়ুক এই বাসনা থেকে সৌভেন্দ্র আদিবাসীদের কথা লিখতে বসেননি। তবে সেই কাঠামোয় ধরা পড়ে গেলে তিনি আর কী করবেন! বর্ধমান থেকে রাতের সাহেবগঞ্জ লোকালে ধানকাটার মরসুমে যাঁরা উঠেছেন তাঁরা অবশ্য সৌভেন্দ্রর এই চরিত্রগুলিকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তত্ত্বের কাঠামোর বাইরে এসে এই মানুষগুলির পিছুপিছু যেতেও ইচ্ছে করে। সন্তোষ রাণা আর কুমার রাণার লেখায় এই মানুষদের কথা নানাভাবে উঠে এসেছে। উন্নয়নের রাজনীতি আর অর্থনীতি কীভাবে ক্রমশই মানুষগুলিকে অসহায়, প্রান্তিক, নিজেদের ধর্ম-পুরাণ বঞ্চিত প্রায় অস্তিত্বহীন অসমর্থ শ্রমিকে পরিণত করেছে সে নিয়ে বাংলা ভাষায় নানাকথা তাঁরা অনেকদিন ধরে লিখছেন। কুমার তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে গল্পও লিখেছেন। ‘জলছবি’ গল্পটির কথা মনে পড়বে। সে গল্পে গ্রামবৃদ্ধ বাহাটোলা গ্রামের ইতিহাসের সূত্রে রাষ্ট্রিক উন্নয়নের ইতিহাসের ছবি আঁকেন। সেই উন্নয়ন কিন্তু সাঁওতালদের উন্নয়ন নয়। সাঁওতালদের গানে আছে ‘চেঁড়ে হপন চেঁহড় হপন/ মিহুঁ মেরম ভেড়া/ তকয়ে জম আ কায়রা বিলি’ ‘পাখির ছানা পাখির ছানা/ বাছুর ছাগল ভেড়া/ পাকা কলাটি কে যে খাবে।’ পাকা কলাটি সবাই খেতে পায় না। ‘যখন কয়েকজন লোক টাকার পাহাড় জমাবার জন্য অন্যদের দলে দলে’ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় তখন বাহাটোলা ভেঙে যায়। স্বাধীনতা সাঁওতালদের স্বাধীনতা দেয়নি। গ্রামবৃদ্ধ বলেন, ‘সাদা সাহেবরা সদ্য সদ্য দেশ ছেড়ে গেছে। গান্ধি মহারাজ তাঁদের তাড়িয়েছেন। নেহেরু রাজা তখন দিল্লির মাথায়। আমরা তখন বিহারে। সে অনেক আগের কথা। ঝাড়খণ্ড হয়নি। তবে হাঁ, ঝাড়খণ্ডের কথা তখন উঠেছিল।… সেই সময় হঠাৎ একদিন বাঙালি সাহেব এল। কথা নেই বার্তা নেই, জমি জায়গা মাপতে শুরু করল। খুঁটি পুঁতল, আর আমাদের বলল জমি ছাড়তে হবে।’ ‘মশানজোড়’ বাঁধ দিলে রাষ্ট্র। ফলে ‘নদীর স্রোত আটকাল আর আমাদের [সাঁওতালদের] চোখের জলের স্রোত বইতে লাগল অঝোরে। সেই চোখের জলেই আমরা বেঁচে আছি। নয়তো এই টাঁড়ি-ডাঙ্গর জায়গা, শুকনো মাঠ, এখানে মানুষ বাঁচে কী করে?’ কুমারের নানা গল্পে ফিরে ফিরে আসে সাঁওতালদের চোখের জলের কথা, তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা। কুমারের গল্পের বই মানবাশ্ম প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৪-এ।
আমাদের থাকবন্দি রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় মন্ত্রী, আমলা এঁরা প্রথম স্তরের মানুষ, তাঁদের সঙ্গে সংলগ্ন দ্বিতীয় স্তরে থাকেন পার্টিকর্মীরা, তারপর তৃতীয় পরিসরে দলবিহীন সাধারণ মানুষ, শেষস্তরে আদিবাসী সমাজ। আদিবাসী সমাজের মানুষেরা তাঁদের ওপরের স্তরগুলিতে ব্যক্তিগতভাবে মাঝে-মাঝেই পৌঁছে যান। শিক্ষা ও চাকরি তাঁদের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ। তবে ওপরে উঠলেই যে ওপরে মিশে যাবেন এমন তো নয়। শিক্ষিত উচ্চবর্ণের ভদ্রলোকেরা রাষ্ট্রকাঠামোর ওপরে ওঠা আদিবাসীদের সন্দেহের চোখে দেখেন। ঠারে-ঠোরে জিজ্ঞাসা করেন সাঁওতাল-সংস্কৃতির ‘বেখাপ্পা’ অভ্যেসগুলো খাওয়া-পরার ক্ষেত্রে আর বজায় নেই তো! ‘ভদ্রলোক’ হয়েও ‘ভদ্রলোক’ হতে না পারা আদিবাসী পরিবারগুলির এই সংকটের কথা যেমন লিখেছেন সৌভেন্দ্র তেমন দেখিয়েছেন আদিবাসী সমাজে নানা স্তরে ক্ষমতার রকম-সকম। মাতৃতান্ত্রিকতার সেই অতীত আর নেই। পুরুষটি মারা যাওয়ার পর দুই ছেলেকে প্রাণপণে বড় করেছিল বাসন্তী। ছেলেরা বড় হল তবে মাকে তারা মর্যাদা দিল না। সন্তানের মৃত্যু হলে তাদের মাকে ডাইনি বলে উচ্ছেদ করতেও দ্বিধা করল না। উচ্ছিন্ন বাসন্তী ঘটনাচক্রে এসে পড়ল এক খনি শহরে। খনিশিল্পের টানে বদলে গেছে সেই জনপদ। সোরেনবাবু কিছু ভদ্র হয়েছেন, পুরোপুরি নয়। তাঁর বাড়িতেই আশ্রয় পেল বাসন্তী— বাসো ঝি হয়ে উঠল। খাটাখাটুনিতে পটু বাসো ঝি সোরেনবাবুর গেরস্থালিতে সুখ-সাশ্রয় নিয়ে আসে। তবে কদ্দিন আর! সেখানেও পাকেচক্রে শিশুহত্যার কারণ হিসেবে দাগা পড়ে তার কপালে। আবার ডাইনি অপবাদে নীরবে সে চলে যায় সোরেনবাবুর বাড়ি ছেড়ে। ক্ষমতার চক্র রাষ্ট্রের পরিসরে নানাভাবে ঘোরে, সেই চক্র থাকবন্দি চারটি স্তরে সমান ক্রিয়াশীল। বাসো ঝির অভিজ্ঞতা তো তাই বলে। সৌভেন্দ্র তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছেন সকলেই অবস্থার দাস। প্রতিরোধের চেষ্টার থেকেও অবস্থার সুযোগে পিঠ বাঁচানোই লক্ষ্য। যেখানে যেটুকু সুযোগ রাষ্ট্র দিচ্ছে সেটুকু নিয়ে যেভাবে হোক বেঁচে থাকাই ভালো। সোরেনবাবু হয়ে ওঠাই ভালো। কৌমের বাকিদের কথা কে আর ভাবে? সমূহের আন্দোলনের কাহিনি অতীত। দিকুরা জিতে গেছে। অবস্থার দাসত্ব বাস্তব, সেই বাস্তবের বিবরণ দিতে গিয়ে চাপা কৌতুকের স্বর সঞ্চারিত করেন চরিত্রগুলির বাচনে। নিজেরা যে পারছে না সামূহিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তার জন্যই নিজেদের এই সুবিধেবাদী অবস্থান এবং নিজেদের নিয়ে চাপা কৌতুক। এই কৌতুক আত্মগ্লানি থেকে হয়তো মুহূর্তের জন্য হলেও মুক্তি দেয়।
বইয়ের শেষ গল্প আদিবাসীরা আর নাচবে না। গৌতম ঘোষের শূন্য অঙ্ক (২০১৩) ছবিতে এক তীব্র লড়াইয়ের চিত্র ছিল, ভূমিপুত্রদের পরাজয়ের কথাতেই শেষ হয়েছিল সেই শূন্য অঙ্ক। বহুজাতিক রাষ্ট্রপোষিত কোম্পানির ইচ্ছে জঙ্গল উচ্ছেদ করে ভূ-সম্পদের বিত্ত হরণ করবে, ব্যবসা করবে। সেই ব্যবসা আটকানোর ক্ষমতা ভূমিপুত্রদের নেই, তিরধনুকের বদলে বন্দুক তুলে নিলেও নেই। রাষ্ট্রীয় ফৌজ ঢুকে পড়ে, উন্নয়নের পক্ষে গুলি চালিয়ে রাষ্ট্রবিরোধীদের শেষ করে দেয়। আদিবাসীরা আর নাচবে না লড়াইয়েরই গল্প। সেখানেও শেষ অবধি নাচগানের দলনেতা ষাট বছরের মঙ্গল মুর্মু রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে যায়। সে ভেবেছিল রাষ্ট্রপতি বাঙালিবাবুটি তো বীরভূমের মানুষ। পাকুরের সাঁওতালদের কথা তো এই প্রতিবেশী মানুষটি বুঝবেন। শান্তিনিকেতনে তো সাঁওতালদের লোকে বেশ মান্যিগণ্যি করে। তাহলে রাষ্ট্রপতিই বা তাদের কথা বুঝবেন না কেন? মঙ্গল মুর্মু একসময় চাষ করতেন, পরে নাচগানের দল করেন। তাঁদের সংস্কৃতির প্রতি বাবুদের টান ছিল একসময়, নাচগানে মেডেল-সার্টিফিকেট-টাকা পাওয়া যেত। তবে ক্রমশই বোঝা গেল এতে পেট ভরবে না। তবু মঙ্গল মুর্মু দল ভাঙেনি। বয়ে যাওয়া শ্রমিক হয়ে তার দলের শিল্পীরা চলে গেলে নতুন শিল্পী জুটিয়েছে। এই মুর্মু বায়না পেল রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সামনে নাচ-গানের। আর তখনই সাঁওতালদের নানা জায়গা থেকে উচ্ছেদ করছে রাষ্ট্র, আবার। থার্মালপাওয়ার প্ল্যান্ট হবে, আলোর বন্যা বইবে— এই উজ্জ্বলতার জন্য সাঁওতালরা জায়গা ছাড়বে না! তা কী হয়? মঙ্গল মুর্মু যখন টের পেল তাদের নাচগান দেখতে আসবেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তখন মনে মনে স্থির করল এই মঞ্চই সে ব্যবহার করবে নিজেদের কথা বলার জন্য। যতটা সম্ভব ভালো হিন্দি বলা যায় ততটা ভালো হিন্দিতে বাঙালি রাষ্ট্রপতিকে ‘মেরা ভারত মহান’-এর আঙিনায় সে বলেছিল সাঁওতালরা খেলার পুতুল নয়, এ নাচ গানের সময় নয়, রাষ্ট্র তো সাঁওতালদের জমিহারা করছে। না তার ফল ভালো হয়নি। বোকা-বুড়ো সাঁওতালের ওপর নেমে এল রাষ্ট্রের আঘাত।
মঙ্গল মুর্মুর বয়ানে দিকুদের পরিচয় উন্মোচিত হয়। হিন্দু মুসলমান বাঙালি বিহারি সবাই তাদের দিকু। এমনকি যে সিস্টাররা সহায়তা করতে এল তারাও ক্ষমতারই অংশ। যোগাযোগের সূত্রে প্রতিরোধের ছবি মিডিয়ায় প্রচার করাই উদ্দেশ্য। লড়াই যখন সাঁওতালরা নিজেরা করে তখন মিডিয়া আসে না। লড়াই হেরে গেলে আর সিস্টারদের দেখা মেলে না। যে সাঁওতালরা বেঁচে থাকে তারা জানে নিজেদের দায়িত্বেই তাদের বাঁচার রসদ জোটাতে হবে।
তাহলে কী করবে সাঁওতালরা? সৌভেন্দ্রর লেখার রীতি নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ইংরেজিতে লিখে বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছে তিনি সাঁওতালদের রাষ্ট্রতাড়িত জীবনের কথা পৌঁছে দিয়েছেন সেটাই বড় কথা। কুমারের লেখার পাঠক সীমা সৌভেন্দ্র অতিক্রম করে গেছেন, তাঁর ভাষা ইংরেজি বলেই। তত্ত্বের ছাঁচে না ফেলে ভাবতে ইচ্ছে করে আদিবাসীরা আর নাচবে না এর পর কী যতিচিহ্ন বসাব আমরা? পূর্ণচ্ছেদ? জিজ্ঞাসার চিহ্ন? বিস্ময়বোধক চিহ্ন? না-নাচার সিদ্ধান্ত কি সংকল্পাত্মক? না, বলা যাবে না তা। রাষ্ট্র যে বার বার উচ্ছেদ করে তাদের। নাচতে হয়। প্রাণঘাতী সেই নাচ, প্রাণ বাঁচানোরও নাচ। জিজ্ঞাসা আর বিস্ময়ের অঙ্কে আদিবাসী সমাজ ডুবে আছে। আমাদের রসানুভূতি ও তত্ত্বালোচনা শূন্যগর্ভ আত্মরতি।