প্রিয়ক মিত্র
গত সংখ্যার পর
কানাই গটগট করে রাগতভাবে বেরিয়ে আসছিল গোল্ডস্মিথের আস্তানা থেকে। কীভাবে শায়েস্তা করা যায় সাহেবদের সে ভাবনা মাথার মধ্যে গজগজ করছিল।
গোল্ডস্মিথ সাহেবের পোষা একটা বড় বেড়াল আছে। লোকে বলে বিলিতি বাঘ। মোটা লম্বা লেজ। সাধারণ বেড়ালের থেকে একটু বড় হলদেটে চেহারা। আদতে একটা বনবিড়াল। ভারতবর্ষের কোনও একটি জঙ্গলে শিকার করতে গিয়েছিলেন ম্যাকেঞ্জি সাহেব। হাতির পিঠে চড়ে বাঘ খুঁজতে খুঁজতে আচমকা এই বেড়ালটিকে চোখে পড়ে ম্যাকেঞ্জি সাহেবের। ভারতীয় বনবেড়ালকে শনাক্ত করতে খানিক সময় লাগে ম্যাকেঞ্জির। আর ততক্ষণে জঙ্গলের অন্য কোণে মিলিয়ে যায় প্রাণীটি। বাঘের কথা ততক্ষণে ভুলে গিয়েছিলেন ম্যাকেঞ্জি, পিছু নেন সেই বনবেড়ালের। বেশ খানিকক্ষণ পিছু নেওয়ার পর আচমকা আবিষ্কার করেন কোথাও চিহ্ন নেই হিংস্র জন্তটার। এমনকি জন্তুটি যে হিংস্র তা বুঝতেও খানিক সময় লাগে ম্যাকেঞ্জির। হঠাৎ সামনের একটি গাছ থেকে ম্যাকেঞ্জির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বনবেড়ালটি। ম্যাকেঞ্জির ঘাড়ে নখের তীব্র আঁচড় দিতেই পেছন থেকে গর্জে ওঠে ম্যাকেঞ্জির সঙ্গী গোল্ডস্মিথ সাহেবের বন্দুক।
বনবেড়ালের নিথর দেহ ছিটকে পড়ে নিচে।
আর তখনই আবিষ্কার করা যায়, বনবেড়ালের শাবকটি একটি ঝোপের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বিস্ফারিত চোখে দেখছে এই দৃশ্যটি।
মধ্যভারতের জঙ্গল থেকে সেই শাবকটি উঠে এল গোল্ডস্মিথ-এর কলকাতার বাড়িতে।
চোরাকারবারীদের অনেকেই জানে গোল্ডস্মিথের এই পোষ্যটির কথা। গোল্ডস্মিথের বাড়িতে কোথায় বনবেড়ালটির খাঁচা আছে সে বিষয়ে তার বাড়ির অতিথিরা ওয়াকিবহাল ছিল না, কাজেই সকলেই খানিক চোখকান খোলা রেখে চলত। বাড়ির চাকরবাকরের ধারণা ছিল প্রাণীটি বিলিতি বেড়াল। কাজেই একজাতীয় অজানা ভয় কাজ করত প্রাণীটাকে নিয়ে। তবে কেউ কেউ বলত প্রাণীটা অনেকটা বাঘরোলের মতন। মোদ্দা কথা প্রাণীটাকে নিয়ে গুঞ্জন ছিল একরকমের।
সেদিন গোল্ডস্মিথ সাহেবের বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসার সময় কানাই আচমকা একটা আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়াল।
কান সতর্ক হল কানাইয়ের। কোথা থেকে আসছে আওয়াজটা?
গোল্ডস্মিথের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ওই অদ্ভুত আওয়াজের উৎস খুঁজতে গিয়ে চোখ আটকে গেল কানাইয়ের। সাহেবি কেতার বাড়ি। ব্রিটিশ ধাঁচে তৈরি বারান্দার রেলিং-এ লেগে থাকা বৈভব দেখতে দেখতে কানাইয়ের রাগ আরেকবার চাগাড় দিল।
কোম্পানির আমলে বহু লোকই করে খেল। সেই যে পলাশিতে ক্লাইভ শেষ হাসি হাসল, সে তো এদেশের লোকের দাক্ষিণ্যেই। নইলে ক্লাইভের সাধ্যি ছিল এখানে ঘাঁটি গাড়ার! নবাবের সৈন্য হারল, আর গোটা বাংলার মানুষের মাথায় চেপে বসল কোম্পানি। আর যারা যারা কোম্পানিকে তেল দিল, সবাই ফুলেফেঁপে উঠল। বড়লাট হেস্টিংসের কাছে দুধকলা খেয়ে বেড়ে উঠল কত কালসাপ। যেমন ধরা যাক গোবিন্দরাম। কোম্পানির টাকা লুঠ করল যে গোবিন্দরাম মিত্তির, কালে কালে সেইই হয়ে উঠল কলকাতার পুলিশের শিরোমণি। কুড়িয়েবাড়িয়ে কত শেয়াল যে বাঘের ছদ্মবেশ ধারণ করল, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। আর কানাইয়ের মতন কিছু হতভাগ্যকে এই লুঠেরা সাহেবদের উচ্ছিষ্ট নিয়ে খুশি থাকতে হচ্ছে।
কানাইয়ের ভাবনায় ছেদ পড়ল। আবার ভেসে আসছে আওয়াজটা। আওয়াজ একটা নয়, দুটো। একটা মানুষের হাততালির শব্দ, আর তার সঙ্গে কোনও একটি প্রাণীর ফোঁস করে ওঠার শব্দ।
কোথা থেকে আসছে আওয়াজটা?
কান পেতে শব্দের উৎস খুঁজছিল কানাই।
তার কান বলছে আওয়াজটা আসছে তার ডানপাশ থেকে।
সদর দরজার একটু আগে একটা ছোট সুড়ঙ্গমতন চোখে পড়ল কানাইয়ের।
কানাই জানত গোল্ডস্মিথের পোষ্যটির কথা। তবু ভয়ডর না পেয়ে সে সোজা সেঁধিয়ে গেল সুড়ঙ্গটির ভেতর।
একটু এগোতেই চোখে পড়ল খাঁচাটা। সুড়ঙ্গের এক ধারে।
প্রচণ্ড হিংস্র এই প্রাণীটিকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণই দেখল না কানাই। দেখতে বেড়ালেরই মতন। কানদুটো লম্বা, চেহারাটা বড় আর লেজটা মোটা। একমনে মাংস খাচ্ছে।
কানাইও প্রাণীটিকে বিলিতিই ভেবেছিল। খুঁটিয়ে দেখবার জন্য আরেকটু এগোল সে।
প্রাণীটার মাংস খাওয়ার ধরন দেখে খানিক ভয় করল কানাই-এর। দাঁতের গঠনটাও কেমন অস্বস্তিকর।
এই প্রাণীটাকে খেতে দেয় কে? গোল্ডস্মিথের বাড়িতে সবই তো এদেশি চাকর। তাদের মধ্যে কার এত বুকের পাটা?
বেড়ালটা মুখ তুলে কানাইকে একবার দেখল, এবং পরমুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে এগিয়ে এল সামনে, একটি চাপা গর্জন ছুঁড়ে দিল।
কানাই দু পা পিছিয়ে যেতেই একটা লোহার মতন শক্ত অথচ ক্ষুদ্র হাত কানাইয়ের কোমর জাপটে ধরল। “ও বাবাগো, মাগো” ইত্যাদি চিৎকার করে সেই বাঁধন ছাড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল কানাই, আচমকা থমকাল সে।
বনবেড়ালটির খাঁচার এককোণে চোখ পড়তেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল তার।
ওটা কী? সে ভুল করছে না তো! গোল্ডস্মিথ সাহেবের মাথায় বুদ্ধি তো প্রখর। এমন একটা অমূল্য সম্পদ সে এই মাংসাশী প্রাণীটির খাঁচার ভেতর লুকিয়ে রেখেছে? যাতে আর কেউ নাগাল না পায়?
এ তো খাঁটি হীরে। কানাইয়ের চোখ দূর থেকেই চিনতে পারছে। গরিবগুর্বো হলেও হীরেজহরত চিনতে ভুল হয় না কানাইয়ের। মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হীরেজহরতের ঝুটো চমকও সে চিনেছে, আবার খাঁটি হীরেও সে মর্ম থেকে চেনে।
কিন্তু তার চোখ ভুল না করলে, এই হীরেটার রং আকাশি।
মাথা ঘুরে গেল কানাইয়ের। এমন হীরে সে বাপের জন্মে দেখেনি। বেড়ালটার মতন হীরেটাকেও সে প্রথম দেখছে।
হঠাৎ কেমন অস্বস্তি হতেই মাথা ঘোরাল কানাই। আর ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে তার শিরদাঁড়া দিয়ে খেলে গেল ঠান্ডা রক্তের স্রোত।
তার সামনে দাঁড়িয়ে একটি বছর বারোর বালক। কালো কুচকুচে চেহারা। চোখ কটা। একটা অদ্ভুত ঢোলা জামা ও ঢোলা প্যান্ট পরে আছে।
হাতে একটা ছুরি। কসাইয়ের ছুরি।
কানাই বুঝল এই ছুরি দিয়ে কাটা হয় বনবেড়ালের মাংস। এবং বনবেড়ালকে মাংস খাওয়ায় এই ছোঁড়াটাই। একটু আগে যে শব্দটা কানাই পাচ্ছিল তা গোল্ডস্মিথের পোষ্যকে খাওয়ানোর আয়োজন।
এই বছর বারোর বালকটিকে দেখে এ-ও বুঝল কানাই, যে বালকটি কোনওমতেই এদেশীয় নয়।
গোল্ডস্মিথের বাড়িতে যে বিলিতি চাকর আছে তা জানত কানাই।
আর ওমানও বুঝে নিয়েছিল যে গোল্ডস্মিথের বাড়িতে অনেক ভারতীয়ের আনাগোনা, এবং তারা কেউ সুবিধের লোক নয়।
দুজনের কেউ সেইমুহূর্তে জানল না বা বুঝল না যে দুজনেই আসলে শোষিত, এবং দুজনেই দুটো উপনিবেশের প্রতিনিধি। দুজনেরই শোষক আদতে সমান।
“হোম্যান”
গোল্ডস্মিথ সাহেবের কর্কশ কণ্ঠস্বর ভেসে এল বাড়ির কোনও প্রান্ত থেকে।
হোম্যানটা আসলে ওমান-এর বিকৃত উচ্চারণ।
প্রভুর ডাক আসায় খানিক সতর্ক হল ওমান। ওমানের ছুরিটা উদ্যত হতে হতেও হল না। সে কানাইয়ের ওপর তার ধারালো দৃষ্টি রেখে ইঙ্গিত করল ওখান থেকে সরে পড়তে।
হিংস্র বনবেড়াল এবং ছুরি হাতে উদ্যত ওমান কানাইকে খানিক ঘাবড়ে দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পায়নি। গোল্ডস্মিথের কণ্ঠস্বর পেয়ে সে বুঝল, এখানে এখন থাকাটা তার পক্ষে ঠিক হবে না। সে বেরিয়ে এল গোল্ডস্মিথের বাড়ি থেকে।
কিন্তু সে ঘাঘু লোক। তার চোখ এবং মাথা দখল করে নিয়েছিল ওই আকাশি রঙের হীরেটা।
অতিকষ্টে হীরেটা কিছুদিন নিজের জিম্মায় রাখার পর ওমান একটা নির্ভরযোগ্য জায়গা পেয়েছিল হীরেটা রাখার। গোল্ডস্মিথের পোষা বনবেড়াল, যাকে গোল্ডস্মিথ আদর করে ডাকত ডায়মন্ড, কাকতালীয়ভাবে সেই ডায়মন্ডের খাঁচাই হয়ে উঠল হীরেটা লুকিয়ে রাখার জন্য ওমানের আদর্শ জায়গা। ডায়মন্ডকে খাওয়ানোর দায়িত্ব যখন ওমানকে দিয়েছিলেন গোল্ডস্মিথ, তখনই তিনি বুঝেছিলেন এই দুই প্রাণীর সখ্য হবে; কারণ দুজনেরই যোগ অরণ্যের সঙ্গে। কিন্তু ওমান ডায়মন্ডের বন্ধু হয়ে উঠেছিল, কারণ দুজনের মধ্যেই একটা দাসত্বশৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার বোধ ছিল। ওমান ডায়মন্ডকে মাংস খেতে দিত। তার বদলে ডায়মন্ড রক্ষা করত তার হীরে। আর গোল্ডস্মিথ সাহেবের যেদিন শখ হত তার ডায়মন্ডকে দেখার, সেদিন ডায়মন্ডের খাঁচা থেকে হীরেটা সরিয়ে নিত ওমান।
গোল্ডস্মিথের তলব পড়ল, ওপরতলায় যেতে হবে ওমানকে। ওমান কোনওদিনই গোল্ডস্মিথের বাড়ির ওপরতলায় পা রাখেনি। হঠাৎ আজ ওপরে ডাক পড়ায় একটু চমকাল ওমান।
তার মনের মধ্যে আরেকটা খচখচানি চলছিলই।
এই লোকটিকে চেনে না ওমান। কিন্তু সে ওই সুড়ঙ্গে ঢুকল কেন তা বুঝতে পারছে না ওমান। ওই পথ কেউ মাড়ায় না সে বাদে। গোল্ডস্মিথও চায় না ওই পথে কেউ যাক। তাহলে এই লোকটা হাজির হল কী করে ওখানে?
হীরেটা লোকটার চোখে পড়ে গেল।
আর কি ওখানে ওটা রাখা নিরাপদ?
‘হোম্যান! কাম হিয়ার বয়!’
গোল্ডস্মিথের বাঁজখাই গলার ডাকে ঘোর কাটল ওমানের।
ওমান ওপরতলায় হাজির হল। গোল্ডস্মিথ তার শয়নকক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে। এই ঘরে একজন খাস বেয়ারা ছাড়া অন্য কোনও চাকরেরই ঢোকার অনুমতি নেই।
ওমানের বিস্ময় এবং অস্বস্তি দুটোই কাজ করছে সমানভাবে।
পাইপ কামড়ে গোল্ডস্মিথ ঘরে ঢুকে পর্দা ঠেলে ঢুকতে দিল ওমানকে।
তার দেশেও কিছু সাহেবের শৌখিন ঘর দেখেছে ওমান, এই ঘরের জাঁকজমক তার চেয়ে বেশি নয়। একটা বড় পালঙ্ক, তার গায়ে টাঙানো মশারি, আরামকেদারা, বেলজিয়াম কাঁচের পেল্লায় আলমারি, গোল সেগুনকাঠের টেবিল, যার পায়া হাতির দাঁতের— এজাতীয় নানান আসবাবে ঘরটা ভর্তি। আর চারপাশে চৌশিঙ্গা হরিণের মাথা, বাঘের মাথা দেওয়ালে টাঙানো। একটা বন্দুক দেওয়ালে সাঁটা কোনাকুনিভাবে।
ওমান দাঁড়াল পালঙ্কের সামনে এসে। এবং তার মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগল।
পালঙ্কের ওপর ছড়ানো অজস্র চোখধাঁধানো সোনার অলঙ্কার, হীরে জহরত।
ওমানের স্বর রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। গোল্ডস্মিথের দিকে তাকাতেই তার রক্ত হিম হয়ে গেল।
গোল্ডস্মিথের হাতে একটি পিস্তল, যেটি তার দিকে তাক করা।
ওমান কিছুই বুঝতে পারছে না। তাকে ডেকে এনে এই হীরেজহরত দেখানোর মানে কী? আর এই পিস্তল তাক করানোরই বা কারণ কী?
একটা সম্ভাবনার কথা ভেবে ভয়ে রক্ত জল হয়ে গেল ওমানের।
তাহলে কি হীরেটার কথা জেনে গেল গোল্ডস্মিথ?
গোল্ডস্মিথ আচমকা মৃদু হাসল।
পিস্তলের নলটা নামিয়ে এগিয়ে এসে ওমানের কাঁধে হাত রাখল সে।
“যা দেখছিস এখানে, সেসব শুধু তুইই দেখছিস। আর কোনও কাকপক্ষীও যেন না জানতে পারে এইসবের কথা। নাহলে কিন্তু…”
শেষের দিকে গিয়ে গোল্ডস্মিথের গলাটা ভারী হয়ে গেল।
পিস্তলটা উঁচিয়ে ধরল সে আবার।
ওমান সজোরে মাথা নেড়ে দিল। একথা আর কেউ জানবে না।
কাজ হল এত ধনরত্নের ওজন করা। ওমানকে সেই দায়িত্ব দিয়ে গ্রামোফোনে গান চালিয়ে আরামকেদারায় বসল গোল্ডস্মিথ।
গান চালানোর এই যন্ত্রটাকেও প্রাথমিকভাবে সোনার ভাবত ওমান। পরে বুঝেছে আদতে তা নয়।
চোঙা বহুবার দেখেছে ওমান, কিন্তু ওই যন্ত্রের ভেতর দিয়ে যার কণ্ঠস্বর আসছে তাকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও— এ বিষয়টা বড় ভুতুড়ে লাগত ওমানের।
গোল্ডস্মিথের গ্রামোফোনে বাজা বিলিতি গানের সুরে খানিক আনমনা হয়ে পড়ল ওমান। এইসব গান শুনে সাহেবরা মনে করে তাদের দেশের কথা। তার দেশ কোথায়? ওমান জানে? ছোট থেকে দাসত্বই তো তার নিয়তি। তার বাবা মা এই দুজনের আবছা ছবি ওমানের মনে ভেসে ওঠে। তখন ওমানের জ্ঞান হয়নি সেভাবে। অথচ কোনও এক গ্রামে তাদের বাড়ি ছিল। তার মা তাকে কোলে দোলাতে দোলাতে শোনাত দেশের গান— এমনটা কি হয়নি? না কি এসব শুধুই ওমানের কল্পনা?
সে তার দেশ থেকে কতদূরে চলে এসেছে। সাতসাগর পেরিয়ে।
শুধু মিল একটাই। দুটো দেশই দখল হওয়া। দুটো দেশই উপনিবেশ। ওমান তার স্বল্পবুদ্ধিতেও বোঝে, এই সাহেবরাই এদেশে মনিব। তার দেশের মতনই।
কিন্তু ওমানের বয়ঃসন্ধির মন মুক্তি চায়। মুক্তি সে পাবে কীভাবে? কারুর না কারুর অধীন হয়ে থেকে কী লাভ? যখন তার কাছে এমন অমূল্যরতন আছে।
হঠাৎ ওমানের মাথায় বিদ্যুৎবেগে খেলে গেল একটা বুদ্ধি।
এই এত ধনসম্পত্তি ওজন করানোর কারণ ওমান বুঝতে পেরেছে। গোল্ডস্মিথ এসব কিনেছেন ডাকাতদের থেকে, এবার আরও চড়া দামে এই ধনসম্পদ বিক্রি হবে।
একবার গোল্ডস্মিথের দিকে তাকাল ওমান…
অমন একটা হীরে বেচে সে কত পেতে পারে সে বিষয়ে তার কোনও আন্দাজ নেই, কিন্তু অঙ্কটা নেহাৎ কম হবে না।
গোল্ডস্মিথের দিকে তাকিয়েছিল ওমান। গোল্ডস্মিথের কেমন জানি সন্দেহ হল।
“কী চাই?” সেই বাঁজখাই গলায় ইংরেজিতে প্রশ্ন ভেসে এল।
ওমান এই ভাষায় কোনওকালেই কথা বলেনি। নিজের ভাষাতেই বা বলেছে কতটুকু? মুখ বুজেই তো সে কাটিয়েছে জীবন।
ভাগ্য ভালো গোল্ডস্মিথ নিজে ওমানের মাতৃভাষা জানত।
স্বর একটু নরম করে ওমানের ভাষায় সমান প্রশ্ন আবার করল গোল্ডস্মিথ।
ওমানের মনের ভেতর দুরমুশ চলছে। এত বড় একটা কথা সে বলবে? অত্যধিক লোভে বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে না তো? তার চেয়ে তো এই ভালো…
আবার প্রশ্ন ভেসে এল গোল্ডস্মিথের তরফ থেকে।
আর আচমকা সাপটার কথা মনে পড়ল ওমানের। ওই সাপটাকে মেরেই সে সাময়িক মুক্তি পেয়েছিল, আর ওই সাপটার পেটেই লোকানো ছিল এই হীরেটা।
কিছুদিনের মুক্তির স্বাদের স্মৃতিটা ওমানকে অস্থির করে তুলল।
সে দৃঢ় হয়ে দাঁড়াল গোল্ডস্মিথের সামনে। তাকে সব বলতেই হবে। তাকে স্বাধীন হতে হবে।
আবার আগামী সংখ্যায়